দেয়ালচাপা পড়ে শ্রমিক নিহত

আগের সংবাদ

জাপানযাত্রা ঠেকালেন মন্ত্রী

পরের সংবাদ

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নারীর ভূমিকা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে গড়ে উঠেছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুকন্যার দিকনির্দেশনায় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ যাত্রা করেছে এবং নিদের্শনা মতে, ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র সব শর্ত পূরণ করতে হবে। বাংলাদেশ যাতে ২০৪১ সালে উন্নত দেশের সমপর্যায়ে পৌঁছতে পারে সে কারণে উক্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র সব কাজ সম্পাদিত হবে স্মার্টলি মূলত প্রযুক্তিনির্ভর। ঘরে বসে যেমন বাইরের সব কাজ করা যাবে তেমনি অন্যের কাজের তদারকি ও জবাবদিহিতা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে চারটি ভিত্তি নির্ধারিত হয়েছে। ১. স্মার্ট নাগরিক ২. স্মার্ট অর্থনীতি ৩. স্মার্ট সরকার ৪. স্মার্ট সমাজ। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হবে- সাশ্রয়ী, টেকসই, জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিদীপ্ত ও উদ্ভাবনীমূলক। এর প্রতিটির সঙ্গে নারীর ভূমিকা ওতপ্রোত। কারণ দেশের অর্ধেক জনসংখ্যাই নারী। সেই নারী যদি জ্ঞানী ও বুদ্ধিদীপ্ত হয় তবে সে উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী হয়ে দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, সমাজ গঠন ও দেশ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হবে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর নাগরিক, সমাজ, অর্থনীতি ও সরকার হবে স্মার্ট। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, অর্থনৈতিক কার্যক্রম হবে স্মার্ট পদ্ধতিতে। আর সেই লক্ষ্যে সরকার ব্যবস্থার আধুনিকীকরণসহ সব ক্ষেত্রের সমন্বিত উন্নয়ন সাধন করতে হবে আর সেই ক্ষেত্রে দেশের প্রতিটি মানুষের অন্তর্ভুক্তি একান্ত অপরিহার্য। নাগরিকদের অর্ধেক জনগোষ্ঠী যে নারী তারা আজ ঘরের কাজের সঙ্গে শিক্ষা, কৃষি, অর্থনীতি, উৎপাদন, বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনসহ সব ক্ষেত্রে সমান দক্ষতার এগিয়ে যাচ্ছেন। ফলে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নির্মাণে নারীর ভূমিকা সর্বমুখী।
স্মার্ট বাংলাদেশের প্রথম ভিত্তি ‘স্মার্ট নাগরিক’। এই স্তম্ভের আওতায় দেশের সব নাগরিক প্রযুক্তির সুবিধা পাবে। সব নাগরিক হবে স্মার্ট যেখানে প্রতিটি নাগরিকের একটি ইউনিভার্সেল ডিজিটাল আইডি থাকবে। আর এই সুবিধা পেতে হলে সেবাদাতার মতো সেবা গ্রহীতাকেও হতে হবে প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত। তবেই প্রতিটি নাগরিক স্মার্ট অ্যাক্ট করতে পারবে। আর ‘স্মার্ট নাগরিক’ তৈরির প্রাথমিক ক্ষেত্র পরিবার, আর প্রধান উপায় শিক্ষা। জন্মের পর থেকে মা-ই শিশুকে সুস্থ-সবল-শিক্ষিত করার ভিত্তি রচনা করেন। পরিবার, রাষ্ট্রের ক্ষুদ্রতম একক। পরিবার থেকে ক্রমে সমাজ ও রাষ্ট্র। আর পরিবার সন্তানের প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সেই প্রতিষ্ঠানের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক মা। সুতরাং সন্তানের শিক্ষায় মা সরাসরি কার্যকর প্রভাব রাখেন। অর্থাৎ মা স্মার্ট হলে সন্তান স্মার্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। বিশেষত বাংলাদেশের মতো সামাজিক অবস্থানের দেশে মা-ই সন্তানের সার্বিক দেখভাল করে থাকেন। অহরাত্র সন্তানের কাছাকাছি থাকেন মা অথবা বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ নারী সদস্য। সে কারণে সন্তানের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন পরিবারের নারীরা। মা যদি সচেতন হন তবে তিনি বুঝতে এবং বোঝাতে সক্ষম হন সন্তানের মেধা ও যোগ্যতা অনুসারে তাদের শিক্ষাজীবন কোন পথে ও কোন সীমা পর্যন্ত পরিচালিত হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রে সন্তানকে দিকনির্দেশনা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রভাবিত করতে পারেন, পরামর্শ দিতে পারেন একজন নারী। তড়িঘড়ি শিক্ষাজীবন শেষ করে অর্থ উপার্জন ও বৈবাহিক জীবনে প্রবেশ করানো থেকে বিরত রাখতেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন মা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে তার সামাজিক আচার-আচরণ ঠিক আছে কিনা, সেটা মা যতটা খেয়াল রাখেন এবং তাদের সামাজিক ও মানবিক করে গড়ে তোলার কাজে ব্যাপৃত থাকেন সেটা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আর সে জন্য দরকার স্মার্ট মা বা নারী। বর্তমানে নারীরাই পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষার সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব রাখছেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ভিত্তি যে প্রাথমিক বিদ্যালয়, সেখানেও নারীই মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন। প্রাথমিক শিক্ষার নারী শিক্ষক ৬৪ শতাংশের বেশি। এই অধিক সংখ্যক নারী শিক্ষক, সন্তানতুল্যে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে শিক্ষার বীজ রোপণ করছেন। ঢাকা পোস্টের তথ্য মতে, প্রাথমিকে ৬৪.২ শতাংশ, মাধ্যমিকে ২৮.৮৯ শতাংশ আর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৯ শতাংশ নারী শিক্ষক রয়েছেন। চিকিৎসা পেশায় নারীদের অবস্থান প্রায় ৫৫ শতাংশ। প্রকৌশলেও নারীরা পিছিয়ে নেই। সুতরাং নারীদের হাতেই শিক্ষিত ও সুস্থ নাগরিক তৈরির কাজ বর্তেছে। সুতরাং ‘স্মার্ট নাগরিক’ তৈরিতে নারীই মুখ্য ভূমিকা রাখছেন। প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে। আর এসডিজি-৪ অনুসারে সব শিশুর জন্য সাসটেইনেবল মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ আবশ্যক। আর সেই কাজে নারীই প্রধান কাণ্ডারি। শুধু শিক্ষক নয়, শিক্ষার সব স্তরে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যাধিক্য বিদ্যমান। সে কারণে তারাই ভবিষ্যতের স্মার্ট নাগরিক হয়ে উঠে স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট সরকার গঠন করবে। সেই সব কারণে ‘স্মার্ট নাগরিক’ সৃষ্টিতে নারী শিক্ষক ও নারী শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কারণ তাদের হাতেই যেহেতু প্রজন্মের শিক্ষার ভার, সেহেতু তারা যদি প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে না ওঠে তবে তারা ‘স্মার্ট নাগরিক’ তৈরিতে সফল হতে পারবে না। আবার শিক্ষার প্রতিটি স্তরে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। ব্যানবেইসের তথ্য মতে, প্রাথমিকে নারী শিক্ষার্থী ৫১ শতাংশ, মাধ্যমিক স্তরে ৫৪ শতাংশ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৫২ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী। এই অধিক সংখ্যক নারী শিক্ষার্থীর জন্য প্রযুক্তি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে তবেই তারা শিক্ষাজীবন শেষে স্মার্ট নাগরিক হয়ে কর্মজীবনে স্মার্ট ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবেন। আজকের এই শিক্ষার্থীরা, শিক্ষাক্ষেত্রসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে স্মার্ট তথা দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র দ্বিতীয় ভিত্তি ‘স্মার্ট অর্থনীতি’। ‘স্মার্ট অর্থনীতি’ হলো সম্পদ ব্যবস্থাপনায় স্থিতিস্থাপকতা এবং দক্ষতা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, ডিজিটাল রূপান্তরসহ টেকসই সমৃদ্ধি। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ হবে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত একটি উন্নত বাংলাদেশ। নাগরিকদের মাথাপিছু আয় হবে ১২ হাজার ৫শ মার্কিন ডলারেরও বেশি। আর এই লক্ষ্য অর্জনকল্পে আগামী দুই দশকে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, পরিবহন ও যোগাযোগ, ব্যবসায় এবং কর্মক্ষমতা অর্জনের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসবে। আগামী দুই দশকে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৯.০২ শতাংশ। কিন্তু সন্ধ্যায় প্রদীপ জ¦ালানোর জন্য সকালে তার সলিতা পাকানোর কাজ সারতে হয় আর সেই কাজটাতেও নারীরাই আছেন এগিয়ে। বর্তমানে নারীরাই অর্থনেতিক সমৃদ্ধির অন্যতম চালিকা শক্তি। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান উৎস পোশাক শিল্প। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসে পোশাক শিল্প থেকে। আর পোশাক শিল্পে নারী প্রায় ৭০ শতাংশ। অর্থনীতির দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠনো বৈদেশিক অর্থ। সে ক্ষেত্রেও নারীরাই অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন অনেক বছর ধরে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীর বরাত থেকে জানা যায়, বর্তমানে মোট ১ লাখ ৫০ হাজার ৮১৯ জন প্রবাসী নারী শ্রমিক রয়েছে। রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটি মুভসেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) তথ্য মতে, করোনাকালে মোট বৈদেশিক মুদ্রার ৬৯ শতাংশ পাঠিয়েছিল প্রবাসী নারী শ্রমিকরা। দেশীয় আয়ের অন্যতম বড় খাত চা শিল্প। আর চা শিল্পের অধিকাংশ শ্রমিক নারী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সার্ভে অব ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজের জরিপ মতে চা শিল্পে নারী শ্রমিক ৭০ শতাংশ। কৃষিপ্রধান অর্থনীতিতেও নারীদের অবদান পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি। কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য মতে, কৃষিকাজে ৭১.৫৫ শতাংশ নারী। সিএসআরএলের প্রতিবেদন অনুযায়ী কৃষি খাতের ২১ ধরনের কাজের মধ্যে ১৭ ধরনের কাজে নারীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। শিল্প কারখানাগুলোতে স্থায়ী শ্রমিকের হার ৬৩.২৩ শতাংশ। নারী আজ আর পুরুষের অধীন শ্রমিক নয়, নিজেই উদ্যোক্তা। মাস্টার্সকার্ড ইনডেক্স অব উইমেন এন্টারপ্রেনিউরস (গওডঊ)-এর জরিপ মতে ৫৪টি স্বল্প উন্নত দেশের নারী উদ্যেক্তাদের মধ্যে বাংলাদেশ ষষ্ঠতম। প্রতিদিনের সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বর্তমানে মোট উদ্যোক্তাদের মধ্যে নারী ৩১.৬ শতাংশ। মোট দেশীয় আয়ে নারীর অবদান ৬৭ শতাংশ। নারীরা নির্মাণকর্মী, বিজ্ঞানী, ব্যাংকার, শিল্পী, সাহিত্যিক, গণমাধ্যমকর্মী, সাংবাদিক। বিসিএসের সমীক্ষা অনুসারে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে গৃহকর্মীর পেশায় কাজ করছেন ৯ হাজার নারী। ব্যাংক, বিমাসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন ৭০ হাজার নারী। নারীর গড়া অর্থনীতিতে দেশ দাঁড়িয়ে আছে, যায় ওপর গড়ে উঠবে ‘স্মার্ট অর্থনীতি’, বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ। ‘স্মার্ট অর্থনীতি’ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নারীর অন্তর্ভুক্তির কোনো বিকল্প নেই। নারীর হাত ধরে যে অর্থনীতি আসছে তাতে নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে নারীকে প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। যাতে করে অর্থনৈতিক সব লেনদেন এবং উৎপাদনকে প্রযুক্তিনির্ভর করে সময় ও শ্রম কম অপচয়ের মাধ্যমে একদিকে উৎপাদন বাড়ানো যাবে আবার গুণগতমান বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। নারী তার অর্জিত অর্থ সম্পর্কে সচেতন থেকে সেটাকে সুরক্ষিত রাখতে পারবে। নারী ঘরে বসে সব ব্যবসায়িক লেনদেন, বিভিন্ন বিল পরিশোধ, ব্যাংকে টাকা সঞ্চয় ইত্যাদি করতে পারবে। স্মার্ট বাংলাদেশের সব কাজ হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। আর এ ক্ষেত্রেও নারী পিছিয়ে নেই। প্রথম আলোয় প্রকাশিত তথ্য মতে প্রযুক্তি শিক্ষায় নারী ৩০ শতাংশ আর এই খাতে নারী পেশাজীবী ১২ শতাংশ। শিক্ষায় শুধু নয়, পেশায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীরা ঘরে বসে ব্যবসা করছেন। অনলাইনে দেশ-বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করছেন, কেউবা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশান অব সফটওয়ার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) মতে, দেশে মোট ৩ লাখ মানুষ অনলাইন ব্যবসায়ে যুক্ত, যাদের অর্ধেকই নারী। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর তথ্যমতে, দেশের ৫৮৬৫টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে পুরুষের পাশাপাশি কাজ করছেন একজন করে নারী।
‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র তৃতীয় ভিত্তি ‘স্মার্ট সরকার’। স্মার্ট বাংলাদেশের সরকার হবে সম্পূর্ণ স্মার্ট। স্মার্ট প্রশাসন, স্মার্ট হেলথকেয়ার , ব্লেন্ডেড লানিং, স্মার্ট কৃষি, স্মার্ট বিচারিক ব্যবস্থা, স্মার্ট পেমেন্ট সিস্টেম। এক কথায়, সব স্মার্ট। আর এর প্রত্যেকটি ক্ষেত্র প্রযুক্তিনির্ভর। আর সে ক্ষেত্রে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। কারণ অর্ধ শতাব্দী বয়সি বাংলাদেশে মোট আটবার সরকারপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে নারী, জাতীয় সংসদের স্পিকারও নারী, একাধিকবার বিরোধীদলীয় নেতাও হয়েছেন নারী। জাতীয় সংসদের মোট আসন সংখ্যা ৩৫০, এর মধ্যে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৫০। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সরাসরি নির্বাচিত নারী সংসদ ১৪ জন। স্থানীয় সরকারে রয়েছে নারীর সক্রিয় উপস্থিতি। মোট ১২টি সিটি মেয়র পদে দুজন নির্বাচিত নারী মেয়র আছেন। বিডি নিউজ ২৪-এর তথ্য মতে, উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত নারী চেয়ারম্যান ৪৫ জন। বর্তমানে স্থানীয় সরকারে এক-তৃতীয়াংশ নারী আসন সংরক্ষিত আছে, সেখানে মোট ১৮ হাজার নারী জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করছেন। নারী সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকারের নারী প্রতিনিধিরা জাতীয় নীতিনির্ধারণে যেমন ভূমিকা রাখছেন তেমন তারা নারীর সমস্যা-সংকট নারীর দৃষ্টি দিয়ে দেখে সেসব সমস্যার সমাধানে যথাযথ পথ নির্দেশ করে থাকেন। নারীর প্রযুক্তি শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে পলিটেকনিকে নারীর জন্য ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হয়েছে। নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে নারী ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছেন।
‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র চতুর্থ ভিত্তি ‘স্মার্ট সমাজ’। সমাজের মৌল উপাদান জনসংখ্যা। সেই জনসংখ্যার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, সেবা, আর্থিক সাপোর্টের অধিকাংশটাই নারী জোগান দিচ্ছেন। পুলিশ, সেনা, বিমান, নৌবাহিনী ও আনসারে নারীরা সক্রিয় ভূমিকায় আছেন। সেনাবাহিনীতে নারী মেজর জেনারেল, পুলিশে অতিরিক্ত আইজিপি, অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপারসহ, পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী পুলিশ বাহিনীতে ১৫ হাজার ১৬৩ জন নারী রয়েছেন। প্রশাসনে নারী ২৬ শতাংশ, সেবা খাতে ৩৭ শতাংশ। মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের ২০২০ সালের তথ্য মতে, নারী নার্স ৯০.৬ শতাংশ। সুতরাং নারী ‘স্মার্ট সমাজ’ গঠনের প্রধানতম নিয়ামক। ‘প্রতিদিনের সংবাদ’ থেকে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর মন্তব্য উদ্ধৃত করা যায়- ‘সংসার পরিচালনা থেকে শুরু করে শ্রমজীবী, পেশাজীবী ও উদ্যোক্তা হিসেবে সব ক্ষেত্রে নারীরা সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে।’ কথাটির সত্যতা উল্লিখিত তথ্য-উপাত্ত থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। সুতরাং স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের চারটি ভিত্তি বাস্তবায়নে নারী এবং নারীই মুখ্য, আর সেই পথের সুযোগ্য পথ নিদের্শক জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।
কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা, সেবা, প্রযুক্তি, শিল্প, বাণিজ্য, অর্থনীতি, নীতিনির্ধারণ, প্রতিরক্ষাসহ দেশ পরিচালনায় নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। সুতরাং নারীর হাত ধরে ‘স্মাট নাগরিক’, ‘স্মাট অর্থনীতি’, ‘স্মার্ট সরকার’ ও ‘স্মার্ট সমাজ’ গঠিত হয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে।

ড. নীলিমা শীল
কবি ও লেখক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়