দেয়ালচাপা পড়ে শ্রমিক নিহত

আগের সংবাদ

জাপানযাত্রা ঠেকালেন মন্ত্রী

পরের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু রচিত বাঙালির মুক্তির ইতিহাস

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এই ইতিহাস বাংলার ইতিহাস, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস, মুমূর্ষু নর-নারীর আর্তনাদের ইতিহাস, রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস। যা বঙ্গবন্ধু রচিত বাংলার মানুষের মুক্তির ইতিহাস, বাঙালির সংগ্রামের ইতিহাস আর স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস, আজ বিশ্বের প্রতিটি নিপীড়িত মানুষের মুক্তির সনদ। যা সাত কোটি বাঙালির এক কণ্ঠে গর্জে উঠে সেদিন বজ্রকণ্ঠে। যে ইতিহাস বাংলার মানুষের স্বপ্ন আর স্বপ্ন পূরণে মানবিক বিশ্বকে মুক্তিকামী বাঙালির সপক্ষে তাদের সমর্থন আদায়ে বাংলার স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। সেদিন মানবতাকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বাঙালি তাদের স্বাধীন একটি ভূখণ্ডের মানচিত্র মানবিক বিশ্বের সামনে তুলে ধরে।
পাকিস্তানের বিতর্কিত রাজনীতির বিপরীতে রাজনীতির আদর্শ ধারণা থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান কোনো আদর্শকে ধারণ করে না। ধর্মের ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রের কোনো আদর্শ থাকে না, ধর্ম মানুষের জন্য তার ব্যক্তি আচরণ নিয়ন্ত্রণে। ব্রিটিশ অবসানে পাকিস্তান মূলত দানে পাওয়া একটি রাষ্ট্র। তাই আদর্শ কোনো রাষ্ট্র ভাবনা থেকে পাকিস্তানের জন্ম হয়নি। সামাজিক, রাজনৈতিক এমনকি ভৌগোলিকভাবে কোনো মিল না থাকা সত্ত্বেও শুধু ধর্মের ওপর ভিত্তি করে হাজার হাজার মাইল ব্যবধানে দুটি ভৌগোলিক অংশ নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হয়, যা রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হিসেবে অতি দুর্বল নৈতিক কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। বাঙালির প্রতি ভীতি আর ভারত বিভাজন ব্রিটিশ নীতি, পাকিস্তানের শোষণ নীতি এবং ভারতের কলকাতাপ্রীতি, যার ফলে বাংলা একটি পৃথক রাষ্ট্র হতে পারেনি। পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অংশ হয় মূলত শোষণের ক্ষেত্র বিবেচনায়। পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই পূর্ব বাংলার মানুষ এই সত্যটি উপলব্ধি করে। তারা বুঝতে পারে পাকিস্তান বাঙালির নয়। প্রথম আঘাত আসে ভাষার ওপর, প্রতিবাদের শুরুটাও সেখান থেকেই। ভাষা আন্দোলনে সফলতা বাংলার মানুষের মনে স্বাধীনতার স্বপ্ন জাগিয়ে তোলে। সরকারের নিপীড়নের প্রতিবাদে আন্দোলনের যে পথ রচিত হয় ছয় দফা দাবির মধ্য দিয়ে, ’৭০-এর নির্বাচনে সে দাবির বৈধতা প্রমাণিত হয়। সাত মার্চের ভাষণে যার গন্তব্য নির্ধারিত হয় স্বাধীনতার লক্ষ্যে। আর স্বাধীনতা নিশ্চিত হয় ২৬ মার্চের ঘোষণায়।
ব্রিটিশ অবসানে বাংলার মানুষের ভাগ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং শোষণ আর নিপীড়নের মাত্রা বেড়ে যায়। সরকার পূর্ব বাংলার মানুষকে তাদের সব নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। কেড়ে নেয় ভাষার অধিকার। বুকের রক্ত দিয়ে বাংলার মানুষ তাদের সে অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। রাজনৈতিক অধিকার এমনকি সব মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত ছিল বাংলার মানুষ। এমনিতর বঞ্চনা বাঙালিকে প্রতিবাদী করে তোলে এবং আন্দোলনমুখী হতে তাদের বাধ্য করে। পরিণতিতে যা স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপে নেয়। সঠিক নেতৃত্ব আর আন্দোলনে জন সম্পৃক্ততা অর্থাৎ শতভাগ আন্দোলন বিজয় নিশ্চিত করে। বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল তেমনি একটি, যা বাংলার স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। বিচক্ষণ নেতৃত্বের সঠিক সিদ্ধান্ত আর জনসম্পৃক্ততায় আন্দোলনে আসে এই সফলতা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ছয় দফা দাবি ছিল শতভাগ সঠিক একটি সিদ্ধান্ত। বৈধতার প্রশ্নেও যা ছিল একটি বৈধ দাবি। তথাপি পাকিস্তান সরকারের পক্ষে সে দাবি মেনে নেয়া সম্ভব ছিল না। কারণ ছয় দফার ভিত্তিতে প্রাদেশিক সরকারের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সামরিক সরকারের পক্ষে সহজ ছিল না। সে ক্ষেত্রে সরকারকে পূর্ব পাকিস্তান ছাড়াও পাকিস্তানের অন্য সব প্রদেশের কথাও মাথায় রাখতে হয়েছিল। একই চিন্তা অর্থাৎ সরকারের করণীয় কী হতে পারে মাথায় রেখেই বাংলার সাত কোটি মানুষের বিচক্ষণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার দাবির বৈধতার প্রশ্নেই পরিকল্পিতভাবে ছয় দফা দাবি পেশ করেন, যার মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতা বাদের প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে বিকল্প পথে বৈধ পন্থায় বাঙালির স্বাধীনতার দাবি স্পষ্ট হয়ে উঠে। দাবির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যেমন সুযোগ ছিল না তেমনি সে দাবির প্রতি বাংলার মানুষের সমর্থন ছিল শতভাগ। ’৭০-এর নির্বাচনের ফলাফল তারই প্রমাণ। নির্বাচনের ফলাফল আরো প্রমাণ করে ছয় দফা দাবি মেনে নেয়া ছাড়া পাকিস্তানের দুই অংশ একত্রে ধরে রাখা সম্ভব নয়। আর মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের অন্যান্য প্রদেশের কথাও সরকারকে বিবেচনায় রাখতে হতো। সে বিবেচনা থেকেই পাকিস্তান সরকারকে করণীয় নির্ধারণ করতে হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে সরকার বল প্রয়োগে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। বৈধভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর পাক রাজনীতিতে বড় সমস্যা। কারণ সেখানে রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয় রাজনীতির বাইরে থেকে। আলোচনার নামে চলে বাঙালিদের দমনের আয়োজন। সব বুঝেও বঙ্গবন্ধু আলোচনা চালিয়ে যান। সংঘাতে নয় বঙ্গবন্ধু আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চান। এ ছাড়াও বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু পূর্ণ সচেতন ছিলেন। তিনি জানতেন আঞ্চলিক রাজনীতি বিশ্ব রাজনীতিকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। কিন্তু বিশ্বের সব সাধারণ মানুষ শুধু মানবিক বিবেচনায় তারা প্রভাবিত হয়। আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে তাদের সমর্থন অপরিহার্য ছিল। ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধুর সেই পরিকল্পনারই প্রতিফলন ছিল। সরকারের নিপীড়ন আর বাংলার মানুষের প্রতিবাদ এবং আন্দোলনের চিত্র বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধারার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু সে আন্দোলন এবং সংগ্রামের পক্ষে তাদের সমর্থন আদায়ে সচেষ্ট হন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন এমন ধারণা থেকে সবার কাছেই ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। সেদিন বিশ্বের প্রতিটি মানুষ সেই ঘোষণা শোনার অপেক্ষায় ছিল। স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর বাঙালি স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে সেদিন ভাষণ শোনার অপেক্ষায় ছিল। পাকিস্তান সরকার অপেক্ষায় ছিল স্বাধীনতার ঘোষণায় বিচ্ছিন্নতাবাদের অজুহাতে গণহত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালির সব আন্দোলনের সমাপ্তি টানার। আর স্বাধীনতা ঘোষণার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষায় ছিল বিশ্ববাসী। বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে স্বাধীনতা অর্জন। স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা বাঙালির নেতা বঙ্গবন্ধু তাই নিজ বিচক্ষণতায় স্বাধীনতার ঘোষণা নয় ৭ মার্চ সরকারের নিপীড়নের চিত্র বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরার পাশাপাখি স্বাধীনতা সংগ্রামের আহ্বান জানান। এই একটি ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষকে একটি সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করে তোলেন এবং বাঙালির সেই সংগ্রামে বিশ্বের মানুষের সমর্থন আদায়ে সক্ষম হন। অন্যদিকে পাকিস্তান সরকার হতাশ হয় এবং অনেকটা বেকায়দায় পড়ে। নেতৃত্বের বিচক্ষণতায় সেদিনের পর করণীয় নির্ধারণে সরকার অনেকটাই চাপে পড়ে। বিনা উসকানিতে অর্থাৎ যুক্তিসংগত কোনো কারণ ছাড়াই অপারেশন সার্চ লাইটের মতো ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমাদের স্বাধীনতা ঘোষণার বৈধতা নিশ্চিত করে। সে বিবেচনায় স্বাধীনতা অর্জনে ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ, ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব তার চেয়ে অধিক। তারও অধিক গুরুত্ব বহন করে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ঘোষিত ৬ দফা দাবি। স্বাধীনতা অর্জনে সবই ছিল বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পিত পদক্ষেপ। ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের পথে তিনি বঙ্গবন্ধু আর দাবি বাস্তবায়নে স্বাধীনতা অর্জনে তিনি জাতির পিতা। স্বাধীনতা ঘোষণার বৈধতায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ৭ মার্চের ভাষণ। ৭ মার্চের পর বিশ্বের সব সাধারণ মানুষ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে তাদের সমর্থন জানায়।
সফলতার ওপর আন্দোলনের বৈধতা নির্ভরশীল। ব্যর্থতায় যৌক্তিক আন্দোলনও অবৈধ বিবেচিত হয়। তাই বৈধতা বিবেচনায় বিকল্প হাতে রেখেই বঙ্গবন্ধু আন্দোলন পরিকল্পনা করেন। সেই বিকল্প মূলত প্রতিপক্ষের দৃষ্টি আড়াল করতে নয় বরং প্রতিপক্ষের ব্যর্থতা, তাদের দুর্বলতা মানুষের কাছে তুলে ধরে মানুষকে মূল আন্দোলনের পথে চালিত করে। বৈধতার প্রশ্নেই আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের পথপরিক্রমায় ছয় দফা দাবি তেমনি একটি বিকল্প, স্বাধীনতা আন্দোলনে স্বাধীনতার পথে সেতু স্বরূপ। সেই পথ রচিত হয় বঙ্গবন্ধুর বিচক্ষণতায় এবং বঙ্গবন্ধুর সাহসী নেতৃত্বেই সেই পথপরিক্রমায় সফলতা আসে। স্বাধীনতা আন্দোলনে গৃহীত ছোট বড় প্রতিটি পদক্ষেপই বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পিত ছিল। ৭ মার্চের ভাষণটি ছিল বঙ্গবন্ধুর তেমনি একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ, আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে যা অপরিহার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন স্বাধীনতার ঘোষণায় সেই অপরিহার্যতাই ব্যর্থতার কারণ হতে পারত। তাই সবার কাক্সিক্ষত এবং সাত কোটি বাঙালির স্বপ্নের দাবি হওয়া সত্ত্বেও সেদিন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা নয়, স্বাধীনতা সংগ্রামের আহ্বান জানান। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু যেমন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেশ বিভক্ত করতে পারেন না, তেমনি তাকে সমর্থন দেয়ার অপরাধে এ দেশের মানুষের ওপর গণহত্যা শুরু হলে স্বাধীনতার ঘোষণা ছাড়া তার কাছে অন্য কোনো পথও খোলা থাকে না। তাই বৈধতার প্রশ্নে তিনি যেমন ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা করতে পারেননি তেমনি তাকে সমর্থন দেয়ার অপরাধে বাংলার মানুষের ওপর সরকারের পক্ষ থেকে গণহত্যা শুরু হলে বৈধতার প্রশ্নেই ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষণা করতে হয়। ’৭০-এর নির্বাচনে বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুকে এই বৈধতা প্রদান করে। ছয় দফা দাবি পেশ করা থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা পর্যন্ত আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপই ছিল সুপরিকল্পিতভাবেই বৈধ। আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে নেতৃত্বের সঠিক সিদ্ধান্ত স্বাধীনতা নিশ্চিত করে।
স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর সুচিন্তিত ও পরিকল্পিত পদক্ষেপের একটি হচ্ছে ৭ মার্চের ভাষণ, যেখানে ছয় দফা দাবিকে পাশ কাটিয়ে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আসে স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণা। যা ছিল শুধু প্রতিরোধের লক্ষ্যে অহিংস পন্থায় একটি সশস্ত্র সংগ্রামের আহ্বান। বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রতিবন্ধকতা সেখানে বাধা হতে পারেনি। কারণ মৌলিক অধিকারের প্রশ্নেই বঙ্গবন্ধুকে সেদিন এই আহ্বান জানাতে হয়েছিল। নীতির প্রশ্নে আপসহীন বঙ্গবন্ধু ছিলেন অহিংস তথাপি সংগ্রামী চেতনায় বিশ্বাসী। সংগ্রামে শুভাষ শান্তিতে গান্ধি দুয়ে মিলেই তিনি, তাইতো তিনি বঙ্গবন্ধু সবাইকে ছাড়িয়ে। নিপীড়িত মানুষের মুক্তি আর বিশ্ব শান্তির অন্বেষণে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে শুধু এই ভাষণ বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু হতে পারতেন নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য শ্রেষ্ঠ বাছাই। আর বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে তুলনামূলক আলোচনায় ভাষণটি হতে পারে বিশ্বের প্রতিটি নিপীড়িত মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ভাষণ। সত্যের ধারক হিসেবে বঙ্গবন্ধু নীতির প্রশ্নে আপসহীন ছিলেন শতভাগ। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাদের তুলনামূলক আলোচনায় বলা যেতেই পারে আজ অবধি বঙ্গবন্ধুই সর্বশ্রেষ্ঠ। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর আজ যখন বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়ার সৌভাগ্য হয়, তখন মনে হয় শুধু আদর্শ মানুষ কেন বিশ্বের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধু হতে পারেন রাজনীতির আদর্শ। আর বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ হতে পারে সেই আদর্শ রাজনীতির দর্শন, যা রাজনীতি সম্পর্কে মানুষের ধারণা পাল্টে দেবে। যাকে রাজনীতির ধর্মগ্রন্থ বা চড়ষরঃরপধষ ইরনষব বললেও অত্যুক্তি হবে না।
সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত বিজয় নিশ্চিত করে। ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চ লাইট নামে গণহত্যা শুরুর পরপরই রাত ১২টার পর ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। এর পরপরই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। স্বাধীনতা ঘোষণায় সময়ের ব্যতিক্রমে ব্যর্থতা অনিবার্য ছিল। সময়ের পূর্বে অর্থাৎ অপারেশন সার্চ লাইট শুরুর পূর্বে স্বাধীনতা ঘোষিত হলে বাঙালির কাঁধে বিচ্ছিন্নতাবাদের দায় চাপত। সে ক্ষেত্রে স্বাধীনতার ঘোষণা গণহত্যার অজুহাত হিসেবে বিবেচিত হত। আর স্বাধীনতা ঘোষণার পূর্বেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হলে অর্থাৎ স্বাধীনতা ঘোষিত না হলে সরকার আর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মাঝে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামো ঠিক রেখে সমঝোতার চেষ্টা হতো আন্তর্জাতিকভাবে। বাঙালির স্বাধীনতা অধরাই থেকে যেত। কারণ স্বাধীনতা ঘোষণার বৈধতা শুধু বঙ্গবন্ধুরই ছিল। ‘সাত কোটি বাঙালি আর বঙ্গবন্ধু এক ও অভিন্ন’- শুধু সেøাগান নয়, বৈধতার প্রশ্নেও তাই।

নেতৃত্বের বিচক্ষণতায় ঘোষিত যে স্বাধীনতা তার বিজয় অর্জিত হয় বাংলার মানুষের আত্মত্যাগ আর ৭ মার্চের ভাষণে অর্জিত বিশ্ব জনমতের ওপর ভিত্তি করে। জেনেভা কনভেনশন উপেক্ষা করে একটি অমানবিক এবং অনৈতিক যুদ্ধ ’৭১-এ বাংলার মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়, হত্যা করা হয় ৩০ লাখ নিরপরাধ মানুষকে। এমন অনৈতিক যুদ্ধেই বিশ্বের মানবিক পরিচয় প্রশ্নবিদ্ধ হয়। অথচ মানবিক এই বিশ্বে এর বিচার আজও হয়নি। বলা হয় যুদ্ধে সবই বৈধ, কিন্তু ’৭১-এ বাংলার মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধটাই কি বৈধ ছিল? যুদ্ধ মানুষকে ধ্বংস করে, কিন্তু এমন অনৈতিক যুদ্ধ মানবতাকে ধ্বংস করে, যা পাকিস্তান সরকারের যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

মো. নাসিরুল আলম চৌধুরী, কলাম লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়