দেয়ালচাপা পড়ে শ্রমিক নিহত

আগের সংবাদ

জাপানযাত্রা ঠেকালেন মন্ত্রী

পরের সংবাদ

স্মার্ট বাংলাদেশ : নিশ্চিত হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪ , ৯:২০ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ বিশ্বে দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির একটি দেশ। বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের উত্তরণ, যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেয়ার ইতিহাস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী, সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ও অগ্রগতিমূলক উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে দেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে ধাবিত করেছে। এর মধ্যে সরকারের ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়ন একটি বড় সাফল্য অর্জন। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু, শিক্ষার হার, জনশক্তি রপ্তানি, রাজস্ব আয়, শিল্প উৎপাদন ও জিডিপি ইত্যাদি বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। প্রমাণিত হয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনার এক উন্নয়ন দর্শন। এখন সরকারের লক্ষ্য ও অঙ্গীকার ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা।
ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প ২০২১-এর গৃহীত দর্শনের সফল বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলায় সরকারের একটি প্রতিশ্রæতি ও নতুন লক্ষ্য হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। সরকার দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার পর এখন স্মার্ট বাংলাদেশ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেছে। স্মার্ট বাংলাদেশে সব কাজ সম্পাদন করা হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। যারা স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ প্রতিষ্ঠা করার জন্য নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সুপারিশ করবে। এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারের অঙ্গীকারও ছিল স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্তম্ভ বা ভিত্তি চারটি। যথা- ক) স্মার্ট নাগরিক, খ) স্মার্ট অর্থনীতি, গ) স্মার্ট সরকার ও ঘ) স্মার্ট সমাজ। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ ব্যবস্থার সম্মিলিত প্রয়াসই হবে আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ। স্তম্ভ বা ভিত্তিগুলো নিম্নলিখিতভাবে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। যেমন-
ক) স্মার্ট নাগরিক : এই স্তম্ভের আওতায় সব নাগরিক প্রযুক্তিগত সুবিধা লাভ করবে। স্মার্ট বাংলাদেশের সব নাগরিকও হবে স্মার্ট। যেখানে প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি ইউনিভার্সাল ডিজিটাল আইডি থাকবে। নাগরিকরা হবেন ডিজিটালি লিটারেট, ফলে তারা সব ধরনের ডিভাইস ব্যবহারে সক্ষম হবেন এবং যে কোনো জায়গায় যে কোনো সময়ে বাধামুক্ত সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। স্মার্ট নাগরিক তৈরিতে দেশব্যাপী স্মার্ট ডিজিটাল বাংলা প্রচারাভিযান চালানো হবে। যাতে করে নাগরিকবৃন্দ উদ্ভাবনী ও সহযোগিতামূলকভাবে সরকার ও ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে বিভিন্ন সেবা প্রদান ও গ্রহণ প্রক্রিয়া বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন।
খ) স্মার্ট অর্থনীতি : এই স্তম্ভের আওতায় দেশের অর্থনীতিকে ডিজিটাল করা হবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বাক্ষরতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি ক্যাশলেস সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করা হবে। স্টার্ট আপ তৈরি করার লক্ষ্যে সিস্টেমাইজেশন, স্ট্রাকচারালাইজেশন ও স্টান্ডার্ডাইজেশনের মাধ্যমে একটি স্মার্ট ইনোভেশন ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা হবে।
গ) স্মার্ট সরকার : এই স্তম্ভের আওতায় দেশের সরকারি কার্যক্রমসমূহ অনলাইন পরিসেবার আওতায় নিয়ে আসা হবে। যেমন- স্মার্ট প্রশাসন, স্মার্ট হেলথ কেয়ার, স্মার্ট ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, স্মার্ট কৃষি, স্মার্ট বিচারিক, স্মার্ট সোশ্যাল সেফটি নেট, স্মার্ট পেমেন্ট সিস্টেম ইত্যাদি সবকিছুই হবে স্মার্টলি। ফলে স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, শিক্ষা, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, জননিরাপত্তার মতো প্রশাসন ব্যবস্থাও হবে স্মার্ট। সরকারি কার্য সম্পাদন করা হবে কাগজবিহীন। থাকবে অফিস এবং হাইপার-পারসোনালাইজড পরিসেবা প্ল্যাটফর্ম।
ঘ) স্মার্ট সমাজ : একটি টেকসই পরিবেশে বেড়ে ওঠা সম্পূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ স্মার্ট সোসাইটি হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক। যেখানে সকলের উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবনমান নিশ্চিত করা হবে। গড়ে তোলা হবে একটি টেকসই ও স্মার্ট বাধামুক্ত পরিবেশ। সোলার এনার্জি, গ্রিন এনার্জি, ক্লিন ও পরিবেশবান্ধব উচ্চতর এনার্জি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। আইওটিভিত্তিক স্মার্ট ইউটিলিটি মিটার ও বিগ ডেটা এনালাইসিসের মাধ্যমে স্মার্ট ইউটিলিটি ও এফিশিয়েন্ট রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করা হবে। প্রযুক্তিগত শিল্প ও অবকাঠামোগত বিকেন্দ্রীকরণের জন্য সারাদেশে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ও হাই টেক পার্ক, ডিজিটাল সার্ভিস ও এমপ্লয়মেন্ট ট্রেনিং সেন্টার, ডিজিটাল ভিলেজ হাব স্থাপন করা হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারসমূহে একটি করে শেয়ারেবল ওয়্যারহাউস সৃষ্টি করা হবে। এর মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে একটি স্মার্ট সাপ্লাই চেইন গড়ে তোলা হবে। স্মার্ট সোসাইটির যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ডিজিটাল করা হবে।
অর্থাৎ স্মার্ট নাগরিক ও স্মার্ট সরকারের সমন্বয়ে সব সেবা ও মাধ্যম ডিজিটালে রূপান্তরিত হবে। অপরদিকে স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বিশ্লেষকদের মতে, ২০৪১ সাল নাগাদ আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিদীপ্ত এবং উদ্ধাবনী শক্তিতে বলীয়ান। যা আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া বর্তমানে যেসব কার্যক্রম ম্যানুয়ালি চলছে তার সবই ডিজিটালাইজেশন করা হবে। ফলে সব নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দক্ষ হয়ে স্মার্ট জীবনে অভ্যস্ত হবে। আধুনিক সব ধরনের সুযোগ থাকবে হাতের নাগালে ও বাধামুক্ত। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বহুমাত্রিক ব্যবহারের মাধ্যমে সেবা সহজলভ্য করে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের উন্নয়ন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও জীবনমানের উন্নয়ন হবে। এক কথায়, কাজকর্ম হবে স্মার্টলি। যেমন- স্মার্ট গ্রাম ও স্মার্ট শহর বিনির্মাণের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট গণপরিবহন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, স্মার্ট নগর প্রশাসন, স্মার্ট জননিরাপত্তা, স্মার্ট কৃষি, স্মার্ট ইন্টারনেট সংযোগ ও স্মার্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সরকার ধারাবাহিক ও সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক দর্শন বা মডেলের মূল উপজীব্য হলো অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন। বর্তমান বিশ্বেও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সমাজের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক গণমুখী অর্থনীতিতে বিশ্বাসী। সমাজের প্রান্তিক মানুষের আয় বাড়লে পুরো অর্থনীতির চাহিদা বাড়বে, বাড়বে ভোগ। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে সমষ্টিক অর্থনীতির ওপর। প্রধানমন্ত্রী তা অনুভব করেই মানবকল্যাণ সুরক্ষায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন বলতে এমন একটি উন্নয়ন প্রস্তাবনাকে বুঝানো হয় যেখানে লক্ষ্যই হলো পিছিয়ে পড়া (তৃণমূল, নিঃস্ব, দরিদ্র, ভূমিহীন, গৃহহীন, বেকার, অশিক্ষিত, অক্ষরজ্ঞানহীন, সুবিধাবঞ্চিত, শ্রমিক, দিনমজুর, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, শ্রমজীবী শিশু, নির্যাতিতা নারী, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গ, জেলে, দলিত, তাঁতি, কামার, কুমার, হাওর, উপকূলীয়, পার্বত্য এলাকাবাসী, জলবায়ু উদ্বাস্তু, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ইত্যাদি) সমাজের সব শ্রেণি-পেশার লোকজনের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক সমস্যার সমাধানে ও তাদের উন্নতি সাধনের জন্য উপযুক্ত নীতি, কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ ও তাদের অনুকূলে যাবতীয় ন্যায়সঙ্গত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা। যাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল ভোগে সমাজের উল্লেখিত জনগোষ্ঠীসমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকে। এটি হলো এমন এক ধরনের উন্নয়ন, যা জনগণের জন্য শুধুমাত্র নতুন অর্থনৈতিক সুযোগই তৈরি করে না, বরং এটি এমন এক প্রক্রিয়া, যা সমাজের সব শ্রেণির মানুষের জন্য তৈরি সুযোগগুলোতে সবার সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে। ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’-এ মূলত সমাজের সয শ্রেণি-পেশার মানুষের উন্নতির জন্য বহুমাত্রিক ও সমন্বিত জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এজন্য নির্ধারিত এলাকার বসবাসরত জনসংখ্যাকে বিবেচনায় এনে তাদের জন্য চাহিদাভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও সাফল্য অর্জন করা হয়। এভাবে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে গেলে দারিদ্র্য বিমোচন বা দারিদ্র্যমুক্ত দেশ ও সমাজ বিনির্মাণ করা সম্ভব হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নকে টেকসই করার জন্য প্রয়োজন স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত্তিসমূহের কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল পিছিয়ে পড়া সব স্তরের জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া।
বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ (১) ও ২৮ (৪) ধারা অনুযায়ী ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, লিঙ্গ বৈচিত্র্য বা জন্মস্থান ও পেশার কারণে রাষ্ট্র কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বিভিন্ন ভিন্নতার কারণেই মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ অর্থাৎ পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য এখনো প্রকট। তাদের অধিকার আদায়ও চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তাদের অনেকে পিছিয়ে আছে কর্মসংস্থানসহ নানা মৌলিক সেবা ও অধিকার সুরক্ষায়।
স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে চারটি ভিত্তির বিভিন্ন ধাপের বাস্তবায়নে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও স্থানীয়ভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য প্রত্যেক স্তম্ভে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হলে অবশ্যই তাদের জন্য চাহিদাভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা জরুরি। সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক ব্যক্তিবর্গের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং তাদের উন্নয়নের মূলস্রোতধারায় নিয়ে আসতে কর্মসংস্থানভিত্তিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। ক্ষুদ্র, কুটির, ছোট, মাঝারি উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও তাদের ব্যবসাগুলোতে ঋণ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কারিগরি সহায়তা বাড়ানো দরকার। এছাড়া ডিজিটাল প্রযুক্তির ও উদ্ভাবনী প্ল্যাটফর্মের ব্যবহারের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজারে যোগাযোগ সুবিধার সুযোগ করে দেয়া, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেবা প্রদান ব্যবস্থাকে তাদের ব্যবহার উপযোগী করা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও চলাচলের সুবিধা প্রদান, চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই সমাজ গঠন ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে কাউকে পিছিয়ে রাখা যাবে না। স্মার্ট বাংলাদেশে পিছিয়ে পড়া ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার মতো বড় ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও পাশাপাশি ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার অধিকার অর্জনে সুযোগ থাকবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া নিশ্চিত করতে হলে সর্বস্তরে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের বিকল্প নেই।
পৃথিবীতে এখনো অসংখ্য জনগোষ্ঠী প্রান্তিক জীবনযাপন করছে। বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সামাজিকভাবে বঞ্চিত না হলেও বাস্তবিক বিচারে তারা বঞ্চিত ও নির্যাতিত হয়েই থাকে। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ব্যবস্থায় এই গোষ্ঠীগত ভেদাভেদও দূর করা দরকার। স্মার্ট বাংলদেশে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা, সহায়ক উপকরণ ও অন্যান্য চাহিদাভিত্তিক সেবা, উপকরণাদি অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রদানের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া নাগরিকরা সমাজের সাধারণ মানুষদের মতোই সমানভাবে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ-সুবিধা লাভ করবে। দেশে সমতা এবং শান্তিও প্রতিষ্ঠিত হবে, যদি সব শ্রেণির নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়। যদি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সমাজের প্রত্যেক কাজে সমান অধিকার পায়, নিজের সক্ষমতা ও দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ পায় তাহলে সমাজে মর্যাদাসহ বাঁচার পথ খুঁজে পাবে। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে লক্ষ্য স্থির হয়ে আছে, ভিত্তিমূলও টেকসই আছে। এখন প্রয়োজন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে সমাজের পিছিয়ে পড়া সব শ্রেণির মানুষকে মূলস্রোতধারায় ও কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করায় সরকারকে সহযোগিতা করা।
বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাতে (এমডিজি) স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সফলতা লাভ করেছে। এমডিজির ধারাবাহিকতায় পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা হিসেবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অন্যান্য কর্মপরিকল্পনার পাশাপাশি সব স্তরের জনগণকে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্তকরণ ও এর সুফল ভোগে ব্যাপকভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।
সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশের উন্নয়ন দর্শনে অবশ্যই মানুষ বা জনগণই প্রাধান্য পায়। হোক না সে নিঃস্ব, দরিদ্র, ভূমিহীন, গৃহহীন, বেকার, অশিক্ষিত, অক্ষরজ্ঞানহীন, প্রতিবন্ধী, জেলে, তৃতীয় লিঙ্গের! তারা সমাজের বাইরের কেউ নয়। তাদের কর্ম পরিকল্পনায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিশেষে স্মার্ট বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক মানুষগুলোর মেধা, জ্ঞান, প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণে মানব পুঁজি হিসেবে বিনিয়োগ করতে হবে। তবেই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাবে অদম্য, অপ্রতিরোধ্য আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ দর্শন।

মো. আরিফুর রহমান
উন্নয়ন সংগঠক ও লেখক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়