দেয়ালচাপা পড়ে শ্রমিক নিহত

আগের সংবাদ

জাপানযাত্রা ঠেকালেন মন্ত্রী

পরের সংবাদ

স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় নাগরিক সমাজের ভূমিকা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হাজার বছরের বাংলার ইতিহাসে অসহায় নিপীড়িত ও বঞ্চিত বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য যিনি আলোর দূত হয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে এসেছিলেন তিনিই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালে তাঁর নেতৃত্বেই কৃষক, মজুর, শ্রমিক, যুবক, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ আপামর জনসাধারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এবং তিনিই বাংলাদেশ নামক একটি জাতিরাষ্ট্র আমাদের উপহার দিয়েছেন। তাঁর সংগ্রামের কারণেই আজ আমরা স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র পেয়েছি। যে জাতিরাষ্ট্রের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আজীবন বাঙালি জাতির জন্য সক্রিয় সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল সোনার বাংলায় সোনার জাতি গঠন করা। প্রতিটি নাগরিকের জন্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। বঙ্গবন্ধুই একমাত্র বাঙালি যিনি আমাদের ভাগ্যের উন্নতির জন্য জীবনের অধিকাংশ সময় পাকিস্তানি শাসকদের জেল, জুলুম ও নির্মম অত্যাচার সহ্য করেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা একটি ভঙ্গুর, যুদ্ধ বিধ্বস্ত রাষ্ট্র পেলাম। এই ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে বঙ্গবন্ধু সুন্দর ও সুচারুরূপে গড়ে তোলার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করতে লাগলেন। ঠিক এ সময়ই তাঁকে অতি নিষ্ঠুরভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এই পিতৃহত্যার দায় আমরা কি কেউ অস্বীকার করতে পারি? স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হয়েছে। আজও আমরা একটি উন্নত দেশে উন্নীত হতে পারি নাই। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আজ হয়তো বাংলাদেশ অনেক আগেই একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতো। আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হতো। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার কাজে হাত দিয়েছেন এবং তিনি জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করবে। তার নেতৃত্বেই অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ দেখতে পাব, এ বিশ্বাস করতেই পারি। আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে। স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে কী বুঝি? আমি মনে করি, স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে বোঝায়: বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক শিক্ষিত হবে, স্বাস্থ্যবান ও কর্মঠ হবে, সৎ ও দেশের জন্য উপযুক্ত হবে, কর্মমুখী হবে, বিজ্ঞানমনষ্ক হবে, দেশপ্রেমিক হবে, অন্যের অধিকারের প্রতি সহনশীল হবে, নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধে সচেতন থাকবে, প্রতিটি নাগরিক তার বাসস্থান পাবে, উন্নত চিকিৎসা পাবে, প্রয়োজনীয় খাবার পাবে, প্রয়োজনীয় বস্ত্র পাবে ও তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করতে পারবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণের অঙ্গীকার করেছেন। এ জন্য তিনি সর্বদা কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের প্রত্যেকের উচিত প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে শামিল হওয়া। কেন না ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রত্যেকটি নাগরিকের কর্তব্য; উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ রেখে যাওয়া। যাতে আমাদের নতুন প্রজন্ম সুন্দর ও সুখী জীবনযাপন করতে পারে। যে স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু সারাটা জীবন। বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য ও বাঙালি জাতির সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য। সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য।
স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে নাগরিকদের ভূমিকা কী হতে পারে? আসুন একটু জেনে নিই। আমরা যারা দেশের নাগরিক, প্রত্যেকেই আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারি। প্রথমেই প্রতিটি পরিবারের শিশুদের শিক্ষার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক পাঠাতে পারি। কারণ শিক্ষাই পারে মানুষের মনের অন্ধকার দূর করতে। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে। আশপাশের প্রত্যেকটি শিশুকেও বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারি এবং এসব শিশু অল্প বয়স থেকেই যাতে স্বনির্ভরতার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারে, সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে পারি। প্রতিটি নাগরিকের অবশ্যই তথ্যপ্রযুক্তির বিশেষ জ্ঞানে দক্ষ হতে হবে। নাগরিকদের বিজ্ঞানমনষ্ক হতে হবে। তা না হলে মন থেকে অন্ধকার দূর হবে না। আমরা আমাদের শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞানভিত্তিক শিখন অনুশীলন বা চর্চার দিকে অবশ্যই উৎসাহ প্রদান করতে পারি। আগামী যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে দেখতে চাইলে অবশ্যই আমাদের দেশের নাগরিককে তার উপযুক্ত করে গড়ে উঠতে হবে। হাতে-কলমে শিক্ষার পাশাপাশি কীভাবে দেশকে উন্নত করা যায় সেসব কাজে গবেষণা করাও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে সহায়তা করবে। স্মার্ট নাগরিক তৈরি করতে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উন্নত ও উপযুক্ত শিক্ষা কারিকুলামের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং এই উন্নত শিক্ষা কারিকুলামের জন্য আমাদের সরকার অহর্নিশ কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের শিক্ষক সমাজেরও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে অনেক বেশি ভূমিকা রয়েছে। একজন দক্ষ শিক্ষকই পারে উপযুক্ত মানুষ তৈরি করতে। শিক্ষক সমাজের বিজ্ঞানমনষ্ক হতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞানে দক্ষ হতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রম দিতে হবে। প্রতিটি শিক্ষককে শিক্ষার্থীর মনোভাব বুঝতে হবে। শিক্ষার্থীর মনোভাব বুঝেই তাকে শিখন কার্যক্রমে আনতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিশ্ব অনেক দূর এগিয়েছে। তার সাথে টিকে থাকতে আমাদের প্রতিদিন লড়াই করতে হবে। আমাদের আরো মনে রাখতে হবে, আজও অনেক মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পায় না। আজও অনেক মানুষ গৃহহীন। এ কারণে আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা বাঙালি। আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রয়েছে। আমাদের এসব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বাঁচাতে হবে। সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের নতুন প্রজন্মের পরিচয় করাতে হবে। একজন নাগরিক সংস্কৃতিবান হলে সে খারাপ কাজের দিকে ধাবমান হতে পারে না। প্রতিটি নাগরিককে অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী হতে হবে। মনে ও মননে দেশপ্রেমিক হয়ে সমাজের প্রতিটি স্তরে বৈজ্ঞানিক ধ্যান-ধারণার পতাকাবাহী হতে হবে। ইতোমধ্যেই আমাদের দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজকে দ্রুততর করছে। যেখানে প্রত্যেক নাগরিক তাদের প্রযুক্তিসেবা গ্রহণ ও প্রদান করে উপকৃত হচ্ছে। যেমন- জমির খাজনা প্রদান, চাকরির আবেদন, সরকারি তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ, বিভিন্ন ভাতা গ্রহণ, চাকরির বেতন ভাতা গ্রহণ-প্রদান, বিভিন্ন অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তি জানা, চাকরির গোপন তথ্য সংরক্ষণ করা, ইমেইল, ফেসবুক ব্যবহার, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ব্যবহার করা, ফোর-জির থেকে ফাইভ-জির যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, ক্লাসরুমে ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহার, ব্যাংকের ব্যবস্থার ডিজিটাইলেশন, অনলাইনে লাইভ প্রোগ্রাম ইত্যাদি সেবা বা সুবিধা বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক গ্রহণ করছে। এছাড়া নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নির্মাণ, চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বঙ্গবন্ধু টানেল, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুল্লি নির্মাণ, ঢাকার যানজট নিরসনে মেট্রোরেল, ঢাকার যানজট নিরসনে পাতাল রেল নির্মাণ প্রকল্প সরকার বাস্তবায়ন করছে। আমাদের অর্ধেক জনগোষ্ঠী মেয়ে। এই মেয়েদের পিছিয়ে রেখে বা ঘরের মধ্যে বন্দি করে আমাদের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নতি করতে পারবে না। এজন্য আমাদের সরকার মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য উৎসাহ প্রদান করছে। যার জন্য মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছে। মেয়েদের উপবৃত্তিও প্রদান করছে। চাকরির ক্ষেত্রে নারীসমাজের কোটা ব্যবস্থা চালু করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেও মেয়েদের নিয়োগ করছে আমাদের সরকার। ব্যবসা-বণিজ্যের ক্ষেত্রেও মেয়েদের সরকারের পক্ষ থেকে উৎসাহ অব্যাহত রেখেছে। এরই মধ্যে আমাদের দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মানব সম্পদ সূচক ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে বাংলাদেশ উন্নীত হয়েছে। সর্বোপরি লিঙ্গ সমতা, ঔষধ শিল্প, গড় আয়ু বৃদ্ধি, গরিব মানুষের জন্য শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান ও দরিদ্রতা হ্্রাসে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট গঠন করেছে সরকার। গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে প্রতিটি গ্রামকে শহরের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য ছিল বর্তমান সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানের চারটি মূলনীতি ছিল। এই মূলনীতির আলোকে দেশের প্রত্যেক নাগরিককে বিশ্বাসী হতে হবে। যে চেতনায় বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য প্রতিটি নাগরিক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেই অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে পরিচালিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধুই একমাত্র বাঙালি যিনি প্রত্যেক বাঙালির মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা ও বীজ বপন করতে পেরেছিলেন। যেখানে থাকবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, রবীন্দ্রনাথের চেতনা ও নজরুলের সাম্যবাদ। আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা বাঙালি। আমরাই পারি। আমাদের ৫২ আছে, ৬৬ আছে, আমাদের ৬৯ আছে এবং আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন ৭১ আছে। আমাদের দেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও উপজাতি যারাই বসবাস করুক না কেন, আমরা বাঙালি। এটিই আমাদের পরিচয়। আমরা বীরের জাতি। আমরাই পারব। আমাদের দেশকে সবাই মিলে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে। আমাদের মধ্যে যেন কুসংস্কার, কুপমণ্ডুুকতা বাসা না বাঁধে। আমাদের মধ্যে যেন ধর্মান্ধতা বাসা না বাঁধে। আমাদের প্রত্যেককে সচেতন থাকতে হবে। সে বীজমন্ত্রেই উজ্জীবিত হয়ে দেশের প্রতিটি নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশকে সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। তাহলেই এদেশ স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে- এটি আমাদের প্রত্যাশা। আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন আমরাই করব। আমরা সুখী, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে সুখী জীবনযাপন করব- এটাই আমাদের শপথ। আমরা বাঙালি। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে আমরাও প্রতিষ্ঠিত হতে পারি স্মার্ট নাগরিক হিসেবে বিশ্বনাগরিক হয়ে।

আদ্যনাথ ঘোষ
কবি ও লেখক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়