দেয়ালচাপা পড়ে শ্রমিক নিহত

আগের সংবাদ

জাপানযাত্রা ঠেকালেন মন্ত্রী

পরের সংবাদ

বইমেলা : সভ্যতা ও ঐতিহ্যের স্মারক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে জার্মানির পুস্তক প্রকাশক সমিতি ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে আনুষ্ঠানিক বইমেলার প্রচলন করে। এ মেলা এখন বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন বইমেলা। বিশ্বে শতাধিক দেশ থেকে ২০ হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠান এ মেলায় অংশ নিয়ে থাকে। ফ্রাঙ্কফুর্টের পর লন্ডন বুক ফেয়ার বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয়। এই মেলাটি মূলত প্রকাশকদের মেলা, পাঠকরা এখানে ততোটা গুরুত্ব পায় না। প্রকাশিতব্য বইয়ের প্রচারের জন্য, অন্য প্রকাশক থেকে বইয়ের স্বত্ব অথবা বইয়ের অনুবাদ স্বত্ব কেনাবেচার জন্য প্রকাশকরা এ মেলায় অংশ নেয়। ১৯৬৯ সালে আরব বিশ্বের সবচাইতে বড় মেলা অনুষ্ঠিত হয় মিসরের রাজধানী কায়রোতে। কাতারের দোহা ও ইরানের রাজধানী তেহরানেও বড়সড় বইমেলা হয়। ১৯৭৭ সালে শুরু হওয়া মস্কো ইন্টারন্যাশনাল বুক ফেয়ার বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বইমেলা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে বৃহত্তম বইমেলা কলকাতা বইমেলা শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। অনেকের মতে, এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বইমেলা। ২০১৩ সালে কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ ছিল থিম কান্ট্রি। বাংলাদেশে বইমেলার ইতিহাস কলকাতার থেকে প্রাচীন।
পাকিস্তান আমলে বাংলাভাষা ও সাহিত্যের প্রসারে ১৯৫৫ সালে বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠা হয়। বাংলা একাডেমির প্রাক্তন মহাপরিচালক ও বর্তমান চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান খান তার এক লেখায় বলেছেন, বইমেলার চিন্তাটি এ দেশে প্রথমে মাথায় আসে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সরদার জয়েনউদদীনের। তিনি বাংলা একাডেমিতেও একসময় চাকরি করেছেন। বাংলা একাডেমি থেকে ষাটের দশকের প্রথম দিকে তিনি গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক পদে নিয়োগ পান। তিনি যখন বাংলা একাডেমিতে ছিলেন, তখন বাংলা একাডেমি প্রচুর বিদেশি বই সংগ্রহ করত। এর মধ্যে একটি বই ছিল Wonderful World of Books. এ বইটি পড়তে গিয়ে তিনি হঠাৎ দুটি শব্দ দেখে পুলকিত বোধ করেন। শব্দ দুটি হলো : ‘Book’ এবং ‘Fair’, কত কিছুর মেলা হয়। কিন্তু বইয়েরও যে মেলা হতে পারে এবং বইয়ের প্রচার-প্রসারের কাজে এই বইমেলা কতটা প্রয়োজনীয়, সেটি তিনি এই বই পড়েই বুঝতে পারেন। বইটি পড়ার কিছু পরেই তিনি ইউনেসকোর শিশু-কিশোর গ্রন্থমালা উন্নয়নের একটি প্রকল্পে কাজ করছিলেন। কাজটি শেষ হওয়ার পর তিনি ভাবছিলেন বিষয়গুলো নিয়ে একটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করবেন। তখন তার মাথায় আসে, আরে প্রদর্শনী কেন? এগুলো নিয়ে তো একটি শিশু গ্রন্থমেলাই করা যায়। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। তিনি একটি শিশু গ্রন্থমেলার ব্যবস্থাই করে ফেললেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির (বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি) নিচতলায়। যত দূর জানা যায়, এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম বইমেলা। এটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে।
১৯৭২ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠানে কোনো বইমেলা হয়নি। তবে বাংলা একাডেমির দেয়ালের বাইরে স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্সের রুহুল আমিন নিজামী তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রগতি প্রকাশনীর কিছু বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন। তার দেখাদেখি মুক্তধারা প্রকাশনীর চিত্তরঞ্জন সাহা এবং বর্ণমিছিলের তাজুল ইসলামও ওভাবেই তাদের বই নিয়ে বসে যান। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে একটি বিশাল জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সে উপলক্ষে নিজামী, চিত্তবাবু এবং বর্ণমিছিলসহ সাত-আটজন প্রকাশক একাডেমির ভেতরে পূর্ব দিকের দেয়ালঘেঁষে বই সাজিয়ে বসে যান। সে বছরই প্রথম বাংলা একাডেমির বইয়েরও বিক্রয়কেন্দ্রের বাইরে একটি স্টলে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। এভাবেই বিচ্ছিন্ন বই বিক্রির উদ্যোগের ফলে ধীরে ধীরে বাংলা একাডেমিতে একটি বইমেলা আয়োজনের জন্য গ্রন্থমনস্ক মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। এ বিচারে দেখা যায়, বাংলাদেশে বইমেলার প্রাণপুরুষ কথাসাহিত্যিক সরদার জয়েনউদদীন। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক ড. আশরাফ সিদ্দিকী এই বইমেলার সাথে বাংলা একাডেমিকে সম্পৃক্ত করলে বইমেলা শক্ত ভিত্তি লাভ করে। ১৯৭৯ সালে এ বইমেলার সাথে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি যুক্ত হলে মেলার পরিধি অনেক বৃদ্ধি পায়। ওই সময় ৭ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বইমেলা অনুষ্ঠিত হতো। ১৯৮১ সালে বইমেলার মেয়াদ ২১ দিনের পরিবর্তে ১৪ দিন করা হয়। এরপর প্রকাশকদের দাবির মুখে ১৯৮২ সালে মেলার মেয়াদ আবার ২১ দিনে বৃদ্ধি করা হয়। মেলার উদ্যোক্তা থাকে বাংলা একাডেমি। সহযোগিতায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। ১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে প্রথম অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন করেন। মূলত ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্য আত্মোৎসর্গের করুণ স্মৃতিকে অমøান করে রাখতেই এই মেলার নামকরণ হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’, যা নিয়মিতভাবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।
একুশের বইমেলা যদিও জাতীয় বইমেলা কিন্তু নানা বিচারে এটি যে কোনো আন্তর্জাতিক বইমেলার সাথে পাল্লা দেবার সমকক্ষতা রাখে। বইমেলা নানা নামে সারা বিশ্বেই হয়ে থাকে। এর রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। জ্ঞানের বাহন হিসেবে বই বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন মাধ্যম। জ্ঞানের প্রসারে বইয়ের প্রয়োজনীয়তা প্রাচীনকাল থেকেই অনুভূত ছিল। তবে মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের আগে বইয়ের বিস্তার তেমনভাবে ঘটেনি। হাতে লেখা বইয়ের প্রচার কষ্টসাধ্য ছিল। পঞ্চদশ শতকে জার্মানির গুটেনবার্গ মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার করলে বইয়ের জগতে বিপ্লব সাধিত হয়। গুটেনবার্গ নিজের আবিষ্কৃত ছাপাখানায় ছাপা বই বিক্রির জন্য ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে নিয়ে আসতেন। তার দেখাদেখি স্থানীয় অন্যান্য বই বিক্রেতাও তাদের প্রকাশিত বই নিয়ে সেখানে বসতে শুরু করেন। সে সকল বই কিনতে বিভিন্ন শহর থেকে ক্রেতারাও আসতে শুরু করে। আর এভাবেই বিশ্বে বইমেলার প্রচলন হয়। এভাবেই বিশ্বের প্রাচীন বইমেলা শুরু হয় জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে। রেনেসাঁ ও শিল্প বিপ্লবের হাত ধরে জার্মানির দেখাদেখি ইউরোপের অন্যান্য শহরেও বইমেলার প্রচলন হয়। ১৮০২ সালে ম্যাথু কেরির উদ্যোগে প্রথম বইমেলা বসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে। ১৮৭৫ সালে প্রায় ১০০ জন প্রকাশক মিলে নিউইয়র্কের ক্লিনটন শহরে আয়োজন করে বৃহৎ এক বইমেলার।
প্রসঙ্গত, দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের বইমেলার পরিসর ও প্রবণতাও আমরা খানিকটা জেনে নিতে পারি। অনেকেই জানেন- পৃথিবীবিখ্যাত বইমেলা ফ্রাংকফুর্ট জার্মানির বইমেলা। প্রিন্টিং মেশিনের আবিষ্কারক গুটেনবার্গ তার কিছু মেশিনারিজ ও প্রকাশিত কয়েকটি বই বিক্রির জন্য ফ্রাঙ্কফুর্টে এসেছিলেন। তারপর ধীরে ধীরে ওখানে বসে যায় বইয়ের আসর। বর্তমানে সারা পৃথিবী থেকে শতাধিক দেশের প্রকাশক-ক্রেতা-লেখক-পরিবেশক-আমদানি-রপ্তানিকারক ভিড় জমায় অক্টোবরের ৫ দিনব্যাপী এই বইয়ের আসরে। গ্রন্থাগার এবং তথ্যবিজ্ঞান-বিষয়ক চিন্তা-পরিসর সম্প্রসারণের জন্য ফ্রাঙ্কফুর্ট মেলার গুরুত্ব অপরিসীম। এটিকে বলা চলে বই প্রডাকশন এবং বিপণনের ধারণা প্রচার ও প্রসারের তীর্থস্থান। প্রতি বছর একটি দেশকে ‘গেস্ট অব অনার’ মনোনয়ন প্রদান এবং তাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি সমাদর প্রদর্শন এই মেলার বিশেষত্ব। বিভিন্ন ভাষার বইয়ের সমাহার নিয়ে ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু করেছে দিল্লি আন্তর্জাতিক বইমেলা। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট আয়োজিত এই মেলা সবার নজর কেড়েছে উঁচু মানের বই প্রদর্শনীর ব্যবস্থার করার জন্য। শিশুর মনন বিকাশে সহায়ক জনপ্রিয় বইয়ের ডালি নিয়ে প্রতিবছর মিসরের কায়রোতে বসে ঐতিহ্যবাহী বইমেলা। পাণ্ডুলিপি, পুরনো বই এবং ভৌগোলিক ম্যাপের বাজার বসে ক্যালিফোর্নিয়ার আন্তর্জাতিক বইমেলায়। প্রায় ৩০টি দেশের লোকে এখানে সমবেত

হয় দামি সব পুস্তক ক্রয়-বিক্রয় করতে। তাইওয়ানের তাইপেতে ফেব্রুয়ারিতে ৬ দিনব্যাপী যে বই প্রদর্শনীর উৎসব জমে, তাতে থাকে চীনের প্রাচীন সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক যাবতীয় প্রকাশনা। এই বইমেলার ভিন্নতর চরিত্র হচ্ছে এখানে তাইওয়ান তাদের প্রকাশনাশিল্পের সম্ভাবনার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সাফল্য ও শান্তি সম্বন্ধে ভাব-বিনিময় করে। মধ্যপ্রাচ্যের জেরুজালেমে ৪০টি দেশের সমন্বিত প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে একটি বহুজাতিক বইমেলা। এই মেলায় প্রতি বছর মানবাধিকার বিষয়ক বইকে পুরস্কৃত করা হয়। কাজেই যুদ্ধাক্রান্ত আধুনিক বিশ্বে মানবতা বিকাশে এই বুক ফেয়ারের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। চার মহাদেশের বিভিন্ন দেশের বইয়ের সমাবেশ ঘটে কলকাতা বইমেলায়। এই মেলার বিশেষত্ব হলো একেক বছর একেক দেশের সাহিত্য-বিষয়কে আয়োজনের থিম হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ভারতের জয়পুরে প্রতি জানুয়ারিতে আয়োজিত হয়ে আসছে এশিয়া-প্যাসিফিক সাহিত্য উৎসব।
নিবিড় পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বিশ্বের নানা প্রান্তের বইমেলার পেছনে লুকিয়ে রয়েছে সভ্যতা ও ঐতিহ্যের লালন ও পরিচর্চার অভিপ্রায়। বাংলাদেশের বইমেলাও আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য এবং সাহিত্যের অপার ভাণ্ডারের সমাহারকে প্রকাশ করার জন্য নিবেদিত। দেশে দেশে যে বইমেলার আসর বসে, তাতে বিভিন্ন শ্রেণি ও অভিরুচির লেখক-পাঠক-প্রকাশকের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি হয়। বই রচনা ও প্রিন্টিংয়ের নতুন নতুন দ্বার উন্মোচিতও হয়। প্রকাশনায় পেশাদারিত্বটা বেশ জরুরি। দুঃখজনক হলেও সত্যি বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে তা আজো ভালোভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি। প্রফেশনাল প্রæফ রিডার, ভাষা-সম্পাদক, বিষয়-সম্পাদক, প্রডাকশন এক্সপার্ট, ক্রিয়েটিভ ম্যানেজার প্রভৃতি আমাদের দেশে নেই। বইমেলাকে ঘিরে আমাদের যে চিন্তা আবর্তিত হয়, তাতে নিমজ্জিত থাকে জাতিসত্তা বিকাশের আন্তরিক প্রেরণা। বিশেষ করে বিশ্ব-পরিসরে আমাদের সাহিত্যকে প্রমোট করা, লেখক ও তার রচনাকে জনগণের কাছে সহজলভ্য করা, নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস গঠনের মাধ্যমে শিক্ষার বিকাশ সাধন, বিদেশি ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ এবং বাংলা সাহিত্য অন্য ভাষায় অনুবাদ করার জন্য আন্তঃদেশীয় ভ্রমণের ব্যবস্থা করা। লেখক ও প্রকাশক সম্বন্ধীয় তথ্য প্রকাশের জন্য নানাধরনের ওয়েবসাইট তৈরি করা প্রয়োজন। শৈল্পিক সৃজনশীলতা বিকাশের জন্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়াদিও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভাবতে হবে। প্রকাশনার ব্যয় এবং লেখক-সম্মানীর ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। বইয়ের মান উন্নতকরণ বা নিশ্চিতকরণের জন্য এই বিষয়টি খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। সম্মানী না পেলে ভালো লেখা তৈরি হবার সম্ভাবনা যেমন কম থাকে, অপরদিকে সম্মানী দেয়ার ভয়ে প্রকাশকও নিম্নমানের বই প্রকাশ করতে উৎসাহী হবেন। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে আয়োজিত বইমেলায় সাহিত্যানুষ্ঠান, প্রদর্শনী, ওয়ার্কশপসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপস্থাপনা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কেড়েছে। মিলনমেলা এবং বাণিজ্য এই মেলার মূল প্রতিপাদ্য। লেখকদের সাক্ষাৎকার এবং পুস্তক পরিবেশকদের আনাগোনা এই মেলার বিশেষ আকর্ষণ। এলিজাবেথ হার্ডউইক বলেছিলেন : ‘ঞযব মৎবধঃবংঃ মরভঃ রং ঃযব ঢ়ধংংরড়হ ভড়ৎ ৎবধফরহম. ওঃ রং পযবধঢ়, রঃ পড়হংড়ষবং, রঃ বীপরঃবং, রঃ মরাবং ুড়ঁ শহড়ষিবফমব ড়ভ ঃযব ড়িৎষফ ধহফ বীঢ়বৎরবহপব ড়ভ ধ রিফব শরহফ. ওঃ রং ধ সড়ৎধষ রষষঁসরহধঃরড়হ.’
বইমেলা দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়–ক এমনটা অনেকেই ভেবে থাকেন। বিভিন্ন পার্বণ ও দিবসকে ঘিরে সারাদেশে বছরের বিশেষ কোনো সময়ে পাঠাগার প্রাঙ্গণে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ও আশপাশে জমে উঠতে পারে বইমেলা। অবশ্য এসবই আমাদের স্বপ্নের কথা। বাস্তব অবস্থা খুবই খারাপ। কর্তাব্যক্তিরা কিংবা আয়োজক কমিটি অনেক বড় বড় সম্ভাবনা এবং সম্পৃক্ততার কথা বলে থাকলেও বইয়ের প্রতি আমাদের মমতার প্রকৃত চেহারা মোটেও ভালো নয়। বিশ্বব্যাপী বর্তমানে বইমেলার পরিসর বাড়ছে। যেহেতু বই উৎপাদনের সাথে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যাপারাদি সরাসরি সম্পৃক্ত, তাই বইমেলায় লেখক-প্রকাশকের পাশাপাশি বিপণনের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে বইটি লেখা হলো, সেটা যদি মানসম্মত না হয় এবং তা যদি যথাসময়ে পাঠকের কাছে না পৌঁছে, তাহলে রচনা ও প্রকাশনা আমাদের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনতে পারবে না। বর্তমানে কিছু নতুন প্রকাশনী ভালো কাজ করছে। তাদের উৎসাহিত করার জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। পাশাপাশি সার্বিকভাবে প্রকাশনা শিল্পের দিকে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের আন্তরিক প্রচেষ্টা বিনিয়োগ করার ব্যাপারটিও নতুন করে ভেবে দেখতে হবে।

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ, কলাম লেখক ও গবেষক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়