দেয়ালচাপা পড়ে শ্রমিক নিহত

আগের সংবাদ

জাপানযাত্রা ঠেকালেন মন্ত্রী

পরের সংবাদ

স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাঙালি জাতি এবার বিজয়ের ৫২ বছর অতিবাহিত করেছে। আর এই সময়ে বাংলাদেশের যথেষ্ট উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশের এ উন্নয়নের অগ্রযাত্রার এক সফল পরিসমাপ্তি চান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য নিজে স্বপ্ন দেখেছেন এবং এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সব রকম প্রস্তুতি তিনি এরই মধ্যে নিয়েও নিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ হলো বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিশ্রæতি ও স্লোগান, যা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের পরিকল্পনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বপ্রথম এই প্রতিশ্রæতি ও স্লোগান দেন। এ কারণে বাংলাদেশে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রধান স্লোগান ছিল ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নির্মাণ। তাই নির্বাচনে বিজয় লাভ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন। সেই মন্ত্রিসভা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, অর্থ, পরিকল্পনা, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর এই পরিবর্তনেই বলে দেয় প্রধানমন্ত্রী তার মিশন বাস্তবায়নের জন্যে যথেষ্ট সচেতন রয়েছেন। আমরা জানি, একটি দেশকে স্মার্ট বানাতে হলে দরকার হয় একজন আদর্শ রাষ্ট্রনায়কের। এই রাষ্ট্রনায়কের থাকতে হবে দেশকে নিয়ে সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা এবং তার সফল বাস্তবায়নের সদিচ্ছা। সততা, সৎ সাহস ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে তিনি কাজ করে যাবেন আপন ইচ্ছায়। বিশ্বের স্মার্ট দেশও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে থাকতে হবে তার বিশাল অভিজ্ঞতা আর সেই অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি তৈরি করবেন তার আগামীর পথ। সফলতার জন্য তাকে অনেক দূরের পথ পাড়ি দিতে হবে জেনেও তার কোনো ক্লান্তি আসবে না। তিনি যেন থামতে জানেন না। সব বাধা উড়িয়ে দেয়ার মতো দুর্নিবার চেতনা নিয়ে তিনি এগিয়ে যাবেন আপন গতিতে। দুর্নীতি আর বিলাসিতা তার জীবনে স্পর্শ করবে না। নিজেকে প্রমাণ করার মতো যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে তার মাঝে। যিনি নিজেও আত্মনির্ভরশীল এবং তার জাতিকেও বানাতে চাইবেন আত্মনির্ভরশীল। আর সেই নেতা বা রাষ্ট্রনায়ক হলেন শেখ হাসিনা। তিনি আপন কর্মগুণে বিশ্বের বিস্ময় হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪টি মাইলস্টোন দিয়েছেন। প্রথম ২০২১ সালের রূপকল্প ডিজিটাল বাংলাদেশ, যা আজ অর্জন করে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, দ্বিতীয় ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, তৃতীয় ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং চতুর্থ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ সালের জন্য। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সরকার ১২ ডিসেম্বরকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে ১২ ডিসেম্বরকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। স্মার্ট রাষ্ট্র বলতে আমরা এতটুকু বুঝি, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর নির্মল ও স্বচ্ছ তথা নাগরিক হয়রানিবিহীন একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রে থাকবে না কোনো বৈষম্যও ভোগান্তি। বাংলাদেশকে সেই স্মার্ট রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য তার সরকার বাংলাদেশের রূপরেখাকে চার ভাগে ভাগ করে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি- এ শব্দগুলোর বাস্তবায়নের মাধ্যমেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চান তারা। তারা মনে করেন, দেশের প্রত্যেক নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে এবং অর্থনীতির সব কার্যক্রম প্রযুক্তি ব্যবহার করে করা হবে। স্মার্ট গভর্নমেন্ট ইতোমধ্যে অনেকটা হয়ে গেছে, বাকিটা করে নিতে হবে এবং গোটা সমাজই একদিন স্মার্ট সোসাইটি হবে এ বিবেচনায় ২০২১ থেকে ২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও শুরু হয়ে গেছে। অর্থাৎ ’২১ থেকে ’৪১ পর্যন্ত সময় কীভাবে বাংলাদেশ উন্নয়ন হবে, তার কাঠামো পরিকল্পনা বাংলাদেশ ইতোমধ্যে প্রণয়ন করেছে, যা জনগণের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনবে বলে বিজ্ঞজন মনে করেন। এ জন্য শেখ হাসিনা ২১০০ সালেও এ বঙ্গীয় ব-দ্বীপ যেন জলবায়ুর অভিঘাত থেকে রক্ষা পায়, দেশ উন্নত হয়, দেশের মানুষ যাতে ‘সুন্দর, সুস্থ ও স্মার্টলি বাঁচতে পারে, সে জন্য ডেল্টা প্ল্যান করে দেয়ার কথা বলেন। স্মার্ট বাংলাদেশ কী এবং কীভাবে তা অর্জন করা সম্ভব, তা ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সাল নাগাদ আমাদের দেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকল্পনা এ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত। কেননা উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তো এরই মধ্যে স্মার্ট দেশে রূপান্তরিত হয়েছে, এমনকি অনেক উন্নয়নশীল দেশও স্মার্ট দেশে রূপান্তরের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তাই দেশের উন্নতি ও অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে দেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে হবে। আগামীতে যেসব দেশ প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে থাকবে, তারাই ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক লেনদেন এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় নিজেদের নিয়ে যেতে পারবে। দেড় যুগ আগে হাতে নেয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের পরিকল্পনা এখন শতভাগ সফল। বিগত করোনা মহামারির ক্ষয়ক্ষতি অনেক উন্নত দেশের চেয়েও সুন্দরভাবে সামাল দিতে পেরেছে বাংলাদেশ, যার অনেক কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়ন। ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে, দেশের সবকিছু উন্নত বিশ্বের মতো প্রযুক্তিনির্ভর করে তোলা, যাকে এককথায় ডিজিটালাইজেশন বলা হয়ে থাকে। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তিনির্ভর ডকুমেন্টের গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি। একসময় আমাদের দেশের পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা অনেক দেশেই কম ছিল, সেই পাসপোর্ট যখন সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে (ই-পাসপোর্ট) রূপান্তর করা হলো, তখন এর গ্রহণযোগ্যতা অনেকগুণ বেড়ে গেল। সরকার সব নাগরিকের জন্য ন্যাশনাল আইডি (এনআইডি) চালু করেছে, যেহেতু এনআইডি সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর একটি ডকুমেন্ট, তাই এর গ্রহণযোগ্যতা শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, দেশের বাইরেও অনেক বেশি। অথচ বিদেশিরা আগে আমাদের দেশের কাগজপত্র খুব সহজে বিশ্বাস করতে চাইত না। আবার বর্তমান যুগে সবকিছু ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর না করতে পারলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে কী মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, তার দৃষ্টান্ত আমাদের দেশের ব্যাংক খাত। দেড় যুগ আগে ডিজিটাল বাংলাদেশের সূচনা হলেও দেশের ব্যাংক খাত সেভাবে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠতে পারেনি কিংবা প্রযুক্তিনির্ভর হলেও রয়েছে সমন্বয়হীনতা। তিনি বলেন, বিচ্চিন্নভাবে একেক ব্যাংক একেক রকম প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ঠিকই, কিন্তু তাতে প্রকৃত ডিজিটাল ব্যাংকিং থেকে আমাদের দেশের ব্যাংক খাত অনেক দূরে। আজ বিশ্বের নামকরা সব ব্যাংক যে আমাদের দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করছে তার কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে উপযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারে আমাদের ব্যাংকগুলোর পিছিয়ে থাকা। এ কারণে স্মার্ট বাংলাদেশ এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী এক কর্মপরিকল্পনা। অনেকেই হয়তো বলার চেষ্টা করবেন, দেশকে প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে নেয়ার জন্য স্মার্ট বাংলাদেশ নামের স্লোগানের কী প্রয়োজন? প্রয়োজন অবশ্যই আছে। স্মার্ট বাংলাদেশ তো শুধু একটি স্লোগান নয়, আগামী দুই যোগ ধরে চলবে এমন এক বিশাল কর্মযজ্ঞের নাম স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল গ্রহণের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হলে প্রয়োজন স্মার্ট সিটিজেন। সামান্য চোখ-কান খোলা রাখলেই ভবিষ্যতে যাদের যোগ্যতা থাকবে তারাই ভালো কাজ পেতে পারেন। অনেক বেশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ফলে। তখন বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বর্তমানের চেয়ে ৫-১০ গুণও বাড়তে পারে। তাই এই দিকে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা-২০২৩-এর উদ্বোধন উপলক্ষে আবার এক ভিডিও বার্তায় বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট জাতি গঠনই আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য। এ সম্পর্কে কিছু অবতারণা করে তিনি বলেন, দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ পরিণত করার প্রধান হাতিয়ার হবে ডিজিটাল সংযোগ এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল চাবিকাঠি হবে ডিজিটাল সংযোগ। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজের জন্যে ডিজিটাল সংযোগ মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। আর তার অধিকাংশ এখন বিশ্বের মানুষের কাছে দৃশ্যমান হয়ে গেছে। স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ প্রতিষ্ঠা ও উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট বাংলাদেশ রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। এ রোডম্যাপের চারটি পিলার- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট গভর্ন্যান্স। স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার নি¤œবর্ণিত সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে। ১। বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি এবং উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠায় স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১ ভিশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ গঠিত হবে। এটি বাস্তবায়ন করবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। ২। অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ গড়ে তোলা এবং পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল ধারায় নিয়ে আসতে ডিজিটাল ইনক্লুশন ফর ভারনারেবল এক্সেপশন (ডাইভ) উদ্যোগের আওতায় আত্মকর্মসংস্থানভিত্তিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ। বাস্তবায়নের দায়িত্ব তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের। ৩। শিক্ষার্থীদের অনলাইন কার্যক্রম নিশ্চিতে ‘ওয়ান স্টুডেন্ট, ওয়ান ল্যাপটপ, ওয়ান ড্রিম’ এর আওতায় শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, যা বাস্তবায়ন করবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। ৪। স্মার্ট ও সর্বত্র বিরাজমান সরকার গড়ে তুলতে ডিজিটাল লিডারশিপ একাডেমি স্থাপন। বাস্তবায়ন করবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। ৫। ক্ষুদ্র, কুটির, ছোট, মাঝারি ব্যবসাগুলোর জিডিপিতে অবদান বাড়াতে এন্টারপ্রাইজভিত্তিক ব্যবসাগুলোকে বিনিয়োগ উপযোগী স্টার্টআপ হিসেবে প্রস্তুত করা। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে রয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। ৬। অন্টারনেটিভ স্কুল ফর স্টার্টআপ এডুকেশন অব টুমোরো (এসেট) প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এটি বাস্তবায়ন করবে। ৭। বাংলাদেশ নলেজ ডেভেলপমেন্ট পার্ক নির্মাণ ও পরিচালনা। এটি বাস্তবায়নে থাকছে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। ৮। সেন্টার ফর লার্নিং ইনোভেশন অ্যান্ড ক্রিয়েশন অব নলেজ (ক্লিক) স্থাপন। বাস্তবায়নে থাকছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। ৯। এজেন্সি ফর নলেজ অন অ্যারোনটিক্যাল অ্যান্ড স্পেস হরাইজন (আকাশ) প্রতিষ্ঠা। বাস্তবায়নে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। ১০। সেলফ অ্যামপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড এন্টারপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট (সিড) প্ল্যাটফর্ম স্থাপন। এটি বাস্তবায়ন করবে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। ১১। কটেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড লিংকেজ ল্যাব (সেল) স্থাপন। তথ্যপ্রযুক্তি অধিদপ্তর এটি বাস্তবায়ক করবে। ১২। সার্ভিস এগ্রিগ্রেটর ট্রেইনিং (স্যাট) মডেলে সরকারি সেবা ও অবকাঠামো নির্ভর উদ্যোক্তা তৈরি করা। বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। ১৩। সব ডিজিটাল সেবাকে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত ক্লাউডে নিয়ে আসা। এটি বাস্তবায়নে থাকবে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। ১৪। ডেটা নিরাপত্তা আইন, ডিজিটাল সার্ভিস আইন, শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি (শিফট) আইন, ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড এন্টারপ্রেনিউরশিপ একাডেমি (আইডিয়া) আইন, এজেন্সি ফর নলেজ অন অ্যারোনটিক্যাল অ্যান্ড স্পেস হরাইজন (আকাশ) আইন, ডিজিটাল লিডারশিপ একাডেমি আইনও জাতীয় স্টার্টআপ পলিসি প্রণয়ন। এ বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করবে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। উল্লেখ করা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৭০ মিলিওন মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছে, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪২ শতাংশ। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০২৩ সালের মধ্যে আরো ২০ লাখ মানুষ বাড়তে পারে। বর্তমানে দেশের ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে ৬৩ শতাংশের বেশি মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহারের আওতায় আসবে। তাই স্বপ্ন যে বাস্তবায়ন হচ্ছে, তা এখন আমরা অনুভব করতে পারছি। ইতোমধ্যে যারা আমাদের একদিন তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ দিতেন, তারাই আমাদের এই মাইলফলক উন্নয়ন দেখে হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরার মতো অবস্থা হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এ দেশের নাগরিকের চিন্তাভাবনা, মনমানসিকতা, রুচিবোধ, জীবনদর্শন, সৃজনশীলতা ইত্যাদি যদি স্মার্ট না হয়, তাহলে এই নাগরিকদের কোনোভাবেই স্মার্ট নাগরিক বলা যাবে না। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমাদের অবশ্যই স্মার্ট মানুষ, স্মার্ট পরিবার এবং স্মার্ট সমাজ গড়ে তোলার জন্য প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে। এককথায় দেশের মানুষকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য কোনো ছাড় দিলে চলবে না। শেখ হাসিনার সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেল, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১, সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। আর তাই মহাকাশে সফলভাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ হয়েছে, দক্ষিণবঙ্গের মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে দিয়েছে পদ্মা সেতু, রাজধানীর নাগরিক জীবনে স্বস্তি এনে দিয়েছে মেট্রোরেল। শিক্ষা, নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, তথ্যপ্রযুক্তি, পোশাকশিল্প, ওষুধশিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ সবকিছুতে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে। তাই বিশ্বাস এবং আস্থা রাখা যায় শেখ হাসিনার ওপর। যদি তিনি ক্ষমতায় থাকেন এবং দেশের জনগণ এ বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতা করেন তবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১’ ও এক দিন বাস্তবায়ন হবে ইনশাল্লাহ।

ড. আজিজুল আম্বিয়া
কলাম লেখক ও গবেষক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়