দেয়ালচাপা পড়ে শ্রমিক নিহত

আগের সংবাদ

জাপানযাত্রা ঠেকালেন মন্ত্রী

পরের সংবাদ

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি, আশার মাস ফেব্রুয়ারি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চলছে বাঙালির চিরকালীন আবেদনের মাস ফেব্রুয়ারি। এ মাসটি এলেই বাঙালি জাতি ফিরে যায় সেই ১৯৫২ সালের মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকায় ঘটে যাওয়া বহু স্মৃতিবিজড়িত ঘটনাবলিতে। মূলত ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির প্রথম সোপান। যে আন্দোলন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের বীর জনতা সেদিন সালাম, রফিক, বরকতের রক্তের বিনিময়ে অর্জন করে নিয়েছিল মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার। সে যে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানিদের ওপর অত্যাচার, নিপীড়ন এবং শোষণ শুরু করেছিল তাদের সে অত্যাচার, জুলুম শেষ হয়েছিল এদেশ মুক্তি লাভ করার পর। প্রকৃতপক্ষে ফেব্রুয়ারি মাস এলেই বাঙালি আবেকতাড়িত হয়। ভাষার জন্য শহীদ হওয়া বিভিন্ন শহীদদের স্মরণ করে নানা ধরনের অনুষ্ঠান সাজায়। দেশের প্রতিটি জায়গায় মানুষ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এ মাসটি বাঙালির হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে সেই ১৯৫২ সাল থেকেই। এ মাসটিতে যেহেতু আমরা আমাদের প্রাণের ভাষাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছি সেহেতু এ মাসটি আমাদের জাতীয় জীবনে আশার মাসও। এ মাসে বাঙালি জাতি সবসময় আশা করে বাঙালি জাতিসত্তার সব মানুষ এক হয়ে দেশের জন্য কাজ করবে। এ মাসটি এলে স্বাধীনতার সপক্ষের মানুষ এক হয়ে আশায় বুক বাঁধে। এদেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের আস্ফালন বন্ধ হবে এবং একদিন এরা রাষ্ট্রের সব গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ থেকে বিদায় নেবে এবং রাষ্ট্র গঠনে স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তিরা আরো বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে। এ মাসে আমরা যেমন মাতৃভাষা বাংলাকে অর্জন করেছি তেমনি আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এ মাস থেকে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মুক্তির আন্দোলনও শুরু হয়েছিল। যদিও এ মুক্তি পেতে আমাদের আরো বেশকিছু দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল তবুও বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরুটা হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। যদি ভাষার জন্য সেদিন আন্দোলন না হতো তাহলে বাঙালিদের সেদিন পশ্চিম পাকিস্তানিরা চিনত না। তারা বুঝতে পারত না পূর্ব পাকিস্তানিরাও বীরের জাতি। যারা সেদিন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বাংলা ভাষার জন্য রাজপথে নেমে মিছিল করেছিল এবং যারা বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বুলেটের আঘাতে শহীদ হয়েছিল তাদের ঋণ কখনো শোধ হওয়ার নয়। মূলত এরাই আমাদের শিখিয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে কীভাবে রুখে দাঁড়াতে হয়। কীভাবে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে দাবি আদায় করে নিতে হয়। এ মাসে ভাষার জন্য আত্মত্যাগের কথা মনে করে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের পরপরই ১৯৭২ সাল থেকে শুরু হয় বইমেলা উৎসব। মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ধমান হাউস সংলগ্ন বটতলায় বাবু চিত্তরঞ্জন সাহা কলকাতা থেকে ৩২টি বই এনে একটি চটের বস্তায় বিক্রি শুরু করেছিলেন সেই থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে এ বইমেলা শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে বাংলা একাডেমি উক্ত বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত বিস্তৃত করে। বর্তমানে এ বইমেলাও ফেব্রুয়ারি এলে বাঙালিদের প্রাণের মেলায় রূপান্তরিত হয়। ফেব্রুয়ারিজুড়ে চলে এ বইমেলা। তার সঙ্গে সঙ্গে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয় ভাষা শহীদদের। মূলত যে জাতি ভাষার জন্য প্রাণ দেয় সে জাতিকে দাবিয়ে রাখা কার সাধ্য। আর তাই সেই ভাষা আন্দোলনের বীজ পত্রপল্লবে বিস্তৃতি লাভ করেছিল ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। একটি নতুন দেশ হিসেবে আমরা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করলাম। বাংলাদেশ পেল একটি লাল সবুজের পতাকা। প্রকৃতপক্ষে এসব কিছু সম্ভব হয়েছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেরণায়। ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের দামাল ছেলেরা যদি তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ভাষার অধিকার আদায় করতে না পারত তাহলে সম্ভবত আমাদের মুক্তিও বিলম্বিত হতো। তাই এ মাসটি আমাদের জাতীয় জীবনে বেশ অর্থবহ এবং আত্মগৌরবের। কারণ এ মাসে ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদরা যুগে যুগে আমাদের কাছে আন্দোলন সংগ্রামের প্রেরণার উৎস হয়ে আমাদের পথ দেখিয়ে যাবে অনন্তকাল।

রতন কুমার তুরী : লেখক এবং শিক্ষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়