দুই মামলায় আলতাফ ও আলালের জামিন

আগের সংবাদ

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চিন্তা

পরের সংবাদ

কে এই সাগরিকা?

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের বিপক্ষে জোড়া গোল করে বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন। এরপর ভারতের বিপক্ষে করেন জয়সূচক গোল। ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়ে সাগরিকাকে নিয়ে তখনই শুরু হয়ে গিয়েছিল আলোচনা। সেই তিনিই ফাইনালে যোগ করা সময়ে গোল করে ভারতকে জিততে দেননি। পরে সেই ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ায়। আর পরের গল্পটা তো সবারই জানা। লঙ্কান ম্যাচ কমিশনারের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দারুণ একটা আসরের সমাপ্তিটা হয়েছে কলঙ্কমাখা। সাফ অবশ্য দুদলকেই চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে চেয়েছে সব কূল রক্ষা করতে। ম্যাচ কমিশনার নাটকে অবশ্য মøান হয়নি সাগরিকা কীর্তি। বাংলাদেশের এই সাফল্য যে পুরোটাই সাগরিকা মোড়ানো।
ছোট থেকেই ফুটবলের প্রতি সাগরিকার টান ছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় বঙ্গমাতা টুর্নামেন্ট দিয়ে ফুটবল খেলা শুরু তার। এরপর রাঙ্গাটুঙ্গী ফুটবল একাডেমির মেয়েদের ফুটবল প্রশিক্ষণে যোগ দেন সাগরিকা। সে সময় মেয়েদের ফুটবল খেলা দেখে কটূক্তি করতেন গ্রামের অনেকে। তাদের কথায় বিরক্ত হয়ে সাগরিকার বাবা লিটন আলী মেয়েকে মাঠে যেতে বারণ করে ঘরে আটকে রাখলেন। এসব উপেক্ষা করে মাঠে চলে যেতেন সাগরিকা। হাজারো প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ফুটবল অনুশীলন কখনো থামাননি তিনি।
সবশেষ নারী ফুটবল লিগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এফসি দলের হয়ে খেলেছিলেন সাগরিকা। সেখান থেকেই তাকে বয়সভিত্তিক দলে টানেন তৎকালীন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। কিন্তু সে সময় তার শারীরিক গঠন দেখে কেউ কেউ অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ছোটন অনেকটা জোর করেই বাফুফের আবাসিক ক্যাম্পে নিয়ে নেন। সেই সাগরিকাই আজ বাংলাদেশের নারী ফুটবলের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। অথচ একটা সময় সাগরিকার ফুটবল খেলাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। মেয়ে মাঠে বল নিয়ে দৌঁড়ে বেড়াবে, এটা মেনেই নিতে পারেননি চা বিক্রেতা বাবা লিটন আলী। এলাকার মানুষও নিন্দে-মন্দ করেছে অনেক। পরে অবশ্য মেয়ের খেলায় সায় দেন। আর এই আসরে মেয়ের কারণেই লিটন হয়েছেন সারাদেশের সুপরিচিত। ঘরে টিভি নেই বলে মেয়ের প্রথম খেলা দেখেছিলেন এক আত্মীয়ের কাছ থেকে টিভি ধার করে এনে। আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় এটা করতে বাধ্য হন বাবা লিটন আলী ও মা আরজু বেগম। সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি চাউর হলে ওয়ালটন গ্রুপ ম্যাচ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ঘটা করে লিটন ও আরজুর হাতে তুলে দেয় একটি স্মার্ট টিভি। ঠাকুরগাঁওয়ের রাঙ্গাটুঙ্গী থেকে এসে হাজির হন স্টেডিয়ামে সরাসরি মেয়ের খেলা দেখবেন বলে। অথচ ব্যাপারটি জানতেন না সাগরিকা। ম্যাচের আগে যখন জানলেন তার বাবা-মা মাঠে এসেছেন, সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান তাদের কাছে। ম্যাচ শেষে সাগরিকা বলেন, ‘জানতাম না বাবা-মা আসবেন। ম্যাচের আগে একজন এসে যখন বলল আমার বাবা-মা এসেছেন, সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে তাদের কাছে যাই। খুব ভালো লেগেছে বাবা-মা এতদূর থেকে এসেছেন আমার খেলা দেখতে।’ বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সাগরিকা আরো বলেন, ‘আমার বাবা প্রথমে আমাকে খেলতে দিতে চাননি। পরে তিনি রাজি হয়েছেন, সমর্থন দিয়েছেন। আমি বাবাকে বলেছিলাম, একদিন তোমাকে বড় খেলোয়াড় হয়ে দেখাব। বাবা-মায়ের সামনে খেলেছি। দেখিয়ে দিয়েছি যে আমি পারি।’
একসময় মেয়েকে খেলতে দিতে না চাওয়া লিটন আলী ও আনজু বেগম এখন মেয়ের জন্য গর্ব করেন। লিটন বলেন, ‘মেয়ের জন্য কত সম্মান পেলাম। মেয়ের জন্য এখন আমাদের অনেক গর্ব হয়। মেয়ের খেলা বন্ধ করতে গিয়ে আমি যে কতটা ভুল করতে গিয়েছিলাম, এখন তা বুঝতে পেরেছি।’
– সোহানুর রহমান

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়