প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
সোহেল শামসুদ্দোহা
স্থপতি ও উদ্যোক্তা
ঘরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা তখনই হয়, যখন ছোট ছোট মুহূর্ত, স্মৃতিরা ভিড় জমায় সেখানে। সময়ের নিয়মে তা ফিকেও হয়ে আসে। আবার তাতে রং চড়িয়ে, সাজপোশাক বদলে নতুন প্রাণের সঞ্চার করার চেষ্টা করি আমরা। আসবাব এদিক-ওদিক করে নতুনত্ব আনা সম্ভব, কিন্তু দেয়ালের রং? ঘরের অন্দরের রং কী হবে, সেটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভরশীল। এই যেমন ঘরের আসবাব, লাইট থেকে শুরু করে বাসিন্দাদের মেজাজমর্জি। পুরো ঘরে একই রং ব্যবহার না করে নানা ধরনের থিম ব্যবহার করতে দেখা যায় আজকাল। কেউ কেউ দেয়ালে চিত্রকর্মও করান। তাই অন্দরের রং বেছে নেওয়ার আগে সঠিক প্ল্যানিং জরুরি।
ঘর অনুযায়ী রং
ঘরের রং বাছার আগে ঠিক করুন, সেই ঘরে কী ধরনের আসবাব থাকবে, কী ধরনের ডেকর রাখবেন ঘরে। সিলিং নিউট্রালই রাখুন। বাকি ঘরে একটা প্রাইমারি কালার রেখে সেটাকে ঘিরেই পুরো ঘরের কালার স্টোরি তৈরি করুন। ডেকর ও আসবাবের কনট্রাস্টে বাছুন দেয়ালের রং।
ঘরের অবস্থানের সঙ্গেও কিন্তু রঙের সম্পর্ক রয়েছে। দক্ষিণের ঘরে মোটামুটি সারাদিনই সূর্যের আলো পড়বে। ফলে ঘরে সবসময়ই ওয়ার্ম টোনের আধিপত্য থাকবে, যা ব্যালান্স করতে দেয়ালে কুল আন্ডারটোনের কোনও শেড লাগালে ভাল। উত্তরমুখী ঘরে ভাল লাগবে ওয়র্ম আন্ডারটোনের শেড।
অন্দর জুড়ে একাধিক রং ব্যবহার করলেও, পুরো বাড়ির কালার স্কিম যেন কোহিসিভ হয়। মোটামুটি সাদার একটা শেড, কোনও একটা নিউট্রাল শেড এবং তিনটে অ্যাকসেন্ট শেড থাকলে ভাল। তবে বাচ্চাদের ঘর যত বেশি কালারফুল হয় ততই ভাল। মোট কথা, ঘরের আকার, রোদের আসা-যাওয়া, ঘরের ব্যক্তি আর কাজ এসব বিবেচনা করে রং বেছে নিতে হবে।
প্রধান ফটকের চারপাশ
ঘরের প্রধান দরজা দিয়ে আমরা ক্লান্ত হয়ে ঘরে ঢুকি কিংবা সতেজ হয়ে বের হই। তাই প্রধান দরজার আশপাশে উজ্জ্বল রং যেমন হলুদ, কমলা, ম্যাজেন্টা, হলদে সবুজের মতো রংগুলো ব্যবহার করতে পারেন। কালো, নীল, ধূসর এ ধরনের রং এখানে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
টেক্সচার অ্যান্ড অ্যারেঞ্জমেন্ট
অনেকেই এখন দেওয়ালে রঙের অ্যারেঞ্জমেন্ট কিংবা টেক্সচার্ড পেইন্ট করাতে পছন্দ করেন। এই ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করার ক্ষেত্রে কয়েকটা কথা মাথায় রাখুন।
বড় ঘরে দেয়াল জুড়ে একাধিক রঙের ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে উজ্জ্বল বা গাঢ় রংটি হবে প্রধান। তাকে ঘিরে থাকবে একই কালার ফ্যামিলির হালকা কোনও শেড। এছাড়া টেক্সচার্ড পেইন্ট করাতে চাইলেও ঘরের কোনও একটা দেয়াল বেছে নিন। প্রধান আসবাব ওই দেওয়ালের আশেপাশে বা তাকে সেন্টার করে অ্যারেঞ্জ করুন। পাশাপাশি দরজা বা জানলা বন্ধ করলে যেদিক যে ঘরে থাকে, সেদিকে সেই ঘরের হাইলাইট শেড করান। তাও কনফিউশন হলে কাঠের ফিনিশ বা টেক্সচার সবচেয়ে নিরাপদ অপশন।
নান্দনিক আবহ তৈরি
কোন ঘরে কী ধরনের আমেজ রাখতে চাইছেন, সেই অনুযায়ী রং বেছে নিন। লোকজনের জমায়েত যে সব ঘরে হয়, সেখানে ওয়ার্ম শেড এবং বেডরুম, স্টাডি, অফিস রুম ইত্যাদিতে কুল শেড করানো ভাল। লিভিং রুমের পাশাপাশি হইহুল্লোড়, আড্ডা এগুলো খাবার ঘরেই বেশি হয়। তাই খাবার ঘরের যেকোনো উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার সুন্দর অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করে। আবার মাস্টার বেডরুমের মেন ওয়াল কালার হিসেবেও লাল ভাল। নীল এবং সবুজ সাধারণত মন শান্ত করে, তাই বাথরুম, স্টাডি কর্নারের পক্ষে আদর্শ। ছোটদের ঘরের জন্য সবচেয়ে মানানসই পার্পল চিয়ারফুল। হলুদ বা কমলার মতো ‘ওয়েলকামিং’ রং তুলে রাখুন লিভিং বা এন্ট্রান্সের জন্য।
ফিনিশিং টাচ
রং বাছার ক্ষেত্রে তার ফিনিশের প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে। রঙে মোটামুটি পাঁচ ধরনের ফিনিশ দেখা যায়— গøস, সেমিগøস, স্যাটিন, এগশেল এবং ম্যাট। রং যত বেশি গøসি হবে, তত তা পরিষ্কার করা সহজ। কিন্তু গøসি রঙে দেওয়ালের খুঁতও সহজেই ধরা পড়ে। সাধারণত এই রং কিচেন, বেসবোর্ড বা ট্রিমে দেখতে ভাল লাগে। বাথরুমে লাগান সেমি গøস। বড় দেওয়ালের জন্য আদর্শ স্যাটিন। বসার ঘর বা বেডরুমে, যেখানে আসবাসের বাহুল্য সবচেয়ে বেশি থাকে, সেখানে ব্যবহার করুন এগশেল। যে দেওয়াল প্রায় ছোঁয়াই হবে না, যেমন বিছানার উপরের দেওয়াল, সেখানে লাগাতে পারেন ম্যাট।
সঠিক সময়ে রং
নভেম্বর থেকে জুন দেয়াল রং করার আদর্শ সময়। কারণ, এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা থাকে কম। আবার বৃষ্টিও একেবারে হয় না বললেই চলে। ফলে দেয়াল থাকে শুষ্ক আর আর্দ্রতামুক্ত। তাই দেয়াল রং করাতে চাইলে বর্ষা মৌসুমের আগেই উদ্যোগ নিতে পারেন।তবে মনে রাখবেন, রং একবার করা হয়ে গেলে সহজে তা পরিবর্তন করা যাবে না। তাই রং করার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত।
সাহায্য নিন এ্যাপের
আজকাল প্রচুর অ্যাপ রয়েছে, ঘরের ছবি আপলোড করলে ডিজিট্যালি রং করে দেখা যায়, কোন ঘর কেমন দেখাবে। সেরকম অ্যাপের সাহায্য নিতে পারেন। নাহলে চোখ বন্ধ করে নিজের অ্যাস্থেটিক্সের উপর ভরসা রাখুন। দেখবেন, ঠিক রংটাই বেছেছেন।
ছবি সূত্র: ইন্টারনেট
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।