পাঠ্যবই থেকে বিতর্কিত দুই লাইন প্রত্যাহারের আহ্বান চুন্নুর

আগের সংবাদ

চাঁদাবাজির লাইসেন্স ‘ইজারা’

পরের সংবাদ

মেয়েরা কেন দাবায় উন্নতি করতে পারছে না, ভাবলে অবাক লাগে

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ক্রীড়াজগতে তিনি রানী হামিদ নামেই পরিচিত। দাবার জন্যই যেন তার জন্ম। দাবাই তার ধ্যান, দাবাই জীবন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা আন্তর্জাতিক দাবা মাস্টার। রানী হামিদের পুরো নাম সৈয়দা জসিমুন্নেসা খাতুন, ডাক নাম রানী। বিয়ের পর তিনি স্বামীর নাম যুক্ত করে রানী হামিদ হন। বর্তমান দাবা নিয়ে তার অনুভূতি কী, তা-ই জানিয়েছেন ভোরের কাগজকে।

ভোরের কাগজ : এত খেলার মধ্যে দাবাকেই কেন বেছে নিয়েছিলেন?
রানী হামিদ : আমিতো সারা জীবন সব খেলাই খেলেছি। তবে পরে যখন অন্য খেলার বয়স আর নেই, তখন দাবাকেই বেছে নিলাম (হাসি)। দাবাতো সব বয়সেই খেলা যায়। আমি সব খেলাই খেলতাম। স্কুলে পড়ার সময় স্পোর্টসের ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন্স’ ট্রফি আমারই থাকত সব সময়। সে সময় যেসব খেলা হতো, সব খেলাই খেলতাম।
ভোরের কাগজ : তাহলে দাবায় এলেন কীভাবে? কী অনুপ্রেরণা ছিল এর পেছনে?
রানী হামিদ : আমার আব্বা দাবা খেলতেন। অফিস থেকে এসে বন্ধুদের সঙ্গে বসে আব্বা দাবা খেলতেন। তো আমার তখন পড়ার টাইম, হাউস টিউটরও ছিল, আমি ফাঁকি দিয়ে বসে বসে আব্বার খেলা দেখতাম। আব্বাও আমাকে প্রশ্রয় দিতেন। সে সময়ে অদ্ভুদ একটা আকর্ষণ ছিল দাবার প্রতি। ছোটতে তো কিছুই বুঝতাম না, শুধু তাকিয়ে থাকতাম বোর্ডের ওপর। চাল দেয়া কী, এসবের কিছুই বুঝতাম না। তো দেখে দেখেই দাবা শেখা আর তখন তো সেই পরিবেশও নেই, পজিশনও নেই। ছোট বাচ্চারা ঘরে বসে দাবা খেলবে, সেটা কেউ চিন্তাই করতে পারত না, বাচ্চারা মাঠে গিয়ে খেলবে সেদিকেই সবার লক্ষ্য ছিল। এখন তো ঠিক উল্টো, আগে বুড়োরা দাবা খেলত এখন তরুণরা খেলে (হাসি)।
দাবা আমি পছন্দ করতাম। প্রায় ৪০ বছর বয়সে যখন আমি চার বাচ্চার মা, তখন আমি পেশাদারভাবে দাবা খেলা শুরু করি। তার আগে আমাদের দেশে দাবা খেলার তেমন সুযোগও ছিল না। বাংলাদেশে দাবা খেলা হতোও না তখন।
ভোরের কাগজ : আপনি এত বছর ধরে খেলছেন, কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি কি হয়েছিলেন?
রানী হামিদ : না, প্রতিবন্ধকতা থাকলে তো আমি এতদূর আসতে পারতাম না। আমার হাজব্যান্ড নিজেই আমাকে এগিয়ে দিয়েছেন। তিনি একজন উদারমনা মানুষ ছিলেন, একজন ক্রীড়া সংগঠকও ছিলেন। কোনো রক্ষণশীল ধ্যান ধারণা তার মধ্যে ছিল না। যার কারণে আমার জন্য পথটা অনেক সহজ হয়েছে।
ভোরের কাগজ : ব্রিটিশ দাবায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্পর্কে কিছু বলুন।
রানী হামিদ : ব্রিটিশ দাবায় প্রথম আমরা খেলতে গেলাম ৮২ তে, আমি আর নিয়াজ গিয়েছিলাম। বাংলাদেশ তো প্রথম মেম্বারই হলো ৭৯ তে। আমি সেখানে খেলতে পারব কিনা, এটা নিয়ে চিঠি লিখলাম। এরপর সেখানকার সেক্রেটারি আমাকে স্বাগত জানালেন। তখন আমি আর নিয়াজ গেলাম, সে সময় বাংলাদেশ বিমান আমাকে হেল্প করেছিল, তারা টিকিট কেটে দিয়েছিল। সেই ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ দশ বছর সেই টুর্নামেন্ট খেলেছি। চ্যাম্পিয়নও হলাম। কিন্তু তারপর সেখানে বাইরের দেশের খেলোয়াড়দের খেলার সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হলো।
ভোরের কাগজ : এতবার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকডে নাম উঠানোর জন্য কী কিছু করেছেন?
রানী হামিদ : আমিতো চেষ্টা করেছিলাম, হয়তো এখনও সংখ্যাটা পূরণ করতে পারিনি। আর না হওয়ার পেছনে আসল কারণটাও কখনো খুঁজে দেখার চেষ্টা করিনি। তাই সেটা অসমাপ্ত রয়ে গেছে।
ভোরের কাগজ : বর্তমানে মেয়েদের মধ্যে কারা ভালো করছেন আপনার দৃষ্টিতে?
রানী হামিদ : যারা আসছে তাদের নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী ছিলাম। তবে তাদের উন্নতিটা যেমন হবে বলে মনে করেছিলাম তেমনটা হয়নি। আমরাও বুঝতে পারছি না, কী কারণে আসলে এমনটা হচ্ছে। তারা কিন্তু যথেষ্ট সাপোর্ট পাচ্ছে। নেভি থেকে প্রতি মাসে তারা একটা স্যালারি পাচ্ছে, রেশন পাচ্ছে। এগুলো অনেক বড় ব্যাপার। কিন্তু কেন তারা আশানুরূপ সাফল্য পাচ্ছে না, সেটা বুঝতে পারছি না। যেভাবে তারা এগিয়ে যাচ্ছিল তাতে আরো এগিয়ে যাওয়ার কথা। আরো হয়তো দুই-তিন বছর সময় লাগবে।
নেভিতে যারা খেলছে; যেমন নওশিন, ওয়ালিজা, ওয়াদিফা এরা বেশ প্রতিভাবান।
ভোরের কাগজ : আপনি এবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেবেন?
রানী হামিদ : ইনশাল্লাহ, অংশ নেব।
ভোরের কাগজ : দাবায় আমাদের মাত্র ৫ জন গ্র্যান্ডমাস্টার। এই সংখ্যাটা বাড়ছে না কেন?
রানী হামিদ : একই কথা বলতে হয়, হয়তো প্রতিভার অভাব থাকতে পারে। বড় পর্যায়ে যাওয়ার জন্য যেমন প্রতিভা আমাদের দরকার, হয়তো সেটা নেই।
ভোরের কাগজ : জীবনকে কেমন দেখছেন? এত বছর পরে এসে জীবনকে কেমন উপলব্ধি করছেন?
রানী হামিদ : আমি বুঝতে পারছি সময় শেষ হয়ে আসছে। আল্লাহ সুস্থ রেখেছেন, সুস্থভাবে দিন কাটাচ্ছি। মানুষের কষ্ট দেখে খারাপও লাগে। আমার নিজেরও কষ্ট আছে, আমার ছোট ছেলে ক্যান্সারে মারা গেছে। আর আশপাশে মানুষদের রোগ, অসুখ-বিসুখ দেখলেও কষ্ট লাগে। মানুষে মানুষে যুদ্ধ, হানাহানি এসব ভালো লাগে না।
:: সাক্ষাৎকার : আবু রুহাব তাহবিব

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়