সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম : স্রাইন কমিটির নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা

আগের সংবাদ

গৃহযুদ্ধে অগ্নিগর্ভ মিয়ানমার

পরের সংবাদ

প্রয়োজন সঠিক জীবনযাত্রা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ডা. আশরাফুন্নাহার চৈতী

মাস্টার্স অব পাবলিক হেলথ,
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

অলস জীবনযাপন, জাংক ফুডের ব্যবহার, ভেজাল খাবার, দূষণ এবং তামাক ও অ্যালকোহল ব্যবহার বাংলাদেশে ক্যানসারের রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ। হাইপার অ্যাসিডিটি পুরুষ এবং নারী উভয়ের মধ্যেই সাধারণ। এ কারণেই খাদ্যনালীর ক্যানসারের ঘটনাও আশংকাজনক ভাবে বাড়ছে। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বাংলাদেশে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছেই এবং ২০৫০ সালে দেশে ২০২২ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি নতুন ক্যানসার রোগী শনাক্ত হতে পারে। এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, ১৮৫টি দেশ এবং ৩৬ ধরনের ক্যানসারের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিষয়ে বলা হয়েছে, খাদ্যনালী, ঠোঁট, ওরাল ক্যাভিটি এবং ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি।

বিশ্বব্যাপী মরণব্যাধিগুলোর মধ্যে ক্যানসার অন্যতম। বাংলাদেশেও এটি মৃত্যুহারের জন্য দায়ী রোগগুলোর তালিকায় রয়েছে। তাই ক্যানসার যাতে প্রাথমিক পর্যায়েই প্রতিরোধ করা যায়, সে জন্য এর উপসর্গ সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রাখতে হবে। ক্যান্সার প্রতিরোধ ও সচেতনতা তৈরিতে সারা বিশ্বের মত দেশেও আজ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। এ বছর ক্যান্সার দিবসের প্রতিপাদ্য “ক্যান্সার পরিচর্যায় বৈষম্য দূর করি”।ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর ফর ক্যান্সার কন্ট্রোল (ইউআইসিসি) তিন বছরের জন্য এ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে। এ কারণে ক্যান্সার সেবায় বিরাজমান এই বৈষম্য কমাতে সমাজ, রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি আমরাও পারি ব্যক্তি পর্যায়ে অবদান রাখাতে।
ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, রোগীদের করোনা হওয়ায় ক্যান্সার চিকিৎসা শেষ না করেই ৩০ শতাংশ রোগী বাড়ি ফিরছেন।
চিকিৎসা শেষ না করা রোগীদের ৭৫ শতাংশই গত এক বছরের মধ্যে মারা গেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেরিতে ক্যানসার শনাক্ত মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। ডব্লিউএইচও আরও ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে ২০৫০ সালে সারা বিশ্বে ক্যানসারে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ মিলিয়নে পৌঁছাবে, যা ২০২২ সালের সংখ্যার তুলনায় প্রায় ৭৭ শতাংশ বেশি। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের (আইএআরসি) একটি সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে সংস্থাটি বলছে, প্রায় পাঁচজনের মধ্যে একজন তাদের জীবদ্দশায় ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। তাছাড়া প্রতি নয়জন পুরুষের মধ্যে একজন এবং ১২ জন নারীর মধ্যে একজন ক্যানসারে মারা যায়।
গবেষণায় তামাক, অ্যালকোহল, স্থূলতা এবং বায়ু দূষণকে বিশ্বব্যাপী ক্যানসার রোগীর বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
দেশের চিকিৎসকরা বলছেন, পুরুষদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের প্রকোপ বেশি এবং নারীদের মধ্যে স্তন ও জরায়ুর ক্যানসার সবচেয়ে বেশি। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আগামীকাল বিশ্ব ক্যানসার দিবস পালন করা হবে। তবে বাংলাদেশে এই রোগের কোনো জাতীয় তথ্য নেই। বাংলাদেশে বর্তমানে ১২ লাখ ক্যান্সারের রোগী রয়েছে। প্রতিবছর আনুমানিক দুই লাখ মানুষ এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় এবং দেড় লাখ রোগী প্রাণ হারায়। সচেতনতা ও শিক্ষার অভাব এবং অর্থনৈতিক অবস্থা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ক্যান্সার রোগে মৃত্যুর হার বৃদ্ধির মূল কারণ।

ক্যান্সার ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের কোন বিকল্প নেই। কিছু ছোটখাটো ব্যক্তিগত অভ্যাস গড়ে তুলে ও নিয়ম কানুন মেনে আমরাই পারি আমাদের সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে।

১. ছাড়তে হবে তামাকঃ বিড়ি-সিগারেট হোক কিংবা জর্দা-সাদা পাতা, ক্যান্সার থেকে দূরে থাকতে হলে ত্যাগ করতে হবে সকিল ধরনের তামাক ব্যবহারের অভ্যাস। এমনকি শুধু তামাকই সারা পৃথিবীতে ২২ শতাংশ মানুষের মৃত্যুর কারণ। এ ছাড়া আমাদের দেশের প্রায় ২৬ শতাংশ মানুষ চিকিৎসার সুব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত। তাই সচেতনার বিকল্প নেই।

২.ওজন রাখুন নিয়ন্ত্রণেঃ তামাকের পরে ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিপূর্ণ কারণ এই স্থুলতা। ওজন রাখুন নিয়ন্ত্রণে, ক্যান্সার সহ অনেক জটিল রোগ থেকে পাবেন পরিত্রাণ।

৩. শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস করুনঃ দিনে ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে অন্তত ০৫ দিন নির্মল বাতাসে হাঁটুন। এই অভ্যাস ধরে রাখুন, অল্প সময়ের মাঝে নিজেই টের পাবেন পরিবর্তন।

৪. খাবারে থাকুক সবুজ শাক-সবজি আর রঙিন ফলমূলঃ প্রবাদে বলে, “আপনি তাই, যা আপনি খান”। নিজেকে ফিট রাখতে ভাজাপোড়া আর তেল চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে খাদ্যতালিকায় যুক্ত করুন সবুজ শাক-সবজি, রঙিন ফলমূল, আশঁযুক্ত শর্করা সহ সুষম খাবার।

৫ মাদককে না বলুনঃ মাদকদ্রব্য গ্রহণ ও মদ্যপান অনেক ক্যান্সারেরই কারণ। তাই ক্যান্সার প্রতিরোধে এ সকল বদ অভ্যাস ত্যাগের কোন বিকল্প নেই।

৬. ভ্যাক্সিনে ক্যান্সার প্রতিরোধঃ জরায়ু মুখের ক্যান্সার ও লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধে ভ্যাক্সিন পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই ভ্যাক্সিন গ্রহণ করুন।
৭. নিয়মিত ক্যান্সার স্ক্রিনিং করুনঃ প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলে তা নিরাময়ের সম্ভাবনা বেশি। তাই সময় থাকতে সতর্ক হোন, নিয়মিত ক্যান্সার স্ক্রিনিং এর অভ্যাস করুন।

ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্পর্কে নিজে জানুন, মেনে চলুন, অন্যকে জানান ও মেনে চলতে উৎসাহ দিন। এছাড়া সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। তবে আশার কথা হলো, প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করলে জটিলতা এড়ানো যায়। অর্থাৎ ক্যানসার পুরোপুরিভাবে প্রতিরোধ করা না গেলেও এর ঝুঁকির কারণগুলো জানা থাকলে আমরা সচেতন হতে সক্ষম হব। ফলে এর ঝুঁকি থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পেতে পারব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়