নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সিএনজি চালক নিহত

আগের সংবাদ

এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে অগ্রগতি

পরের সংবাদ

মাতৃভাষার প্রচলন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অনুষঙ্গ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রশ্নটা প্রতি বছরেই নতুন করে ওঠে, এবারের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বরং আগের চেয়ে বেশি করেই উঠবে- সেটা হলো এতসব সংগ্রাম ও অগ্রগতির পরও জীবনের সর্বস্তরে ও পর্যায়ে বাংলা ভাষার প্রচলনটা কেন ঘটছে না। প্রশ্নটি এবারে আরো বেশি করে শোনা যাওয়ার কারণ হতে পারে দুটি। এক. স্বাধীনতার পর বায়ান্ন বছর চলে যাচ্ছে, তবুও বাংলাভাষার প্রচলন নেই- উচ্চ আদালতে তার ব্যবহার নিষিদ্ধ, উচ্চশিক্ষায় সে অব্যবহৃত, উচ্চ প্রশাসনে উপেক্ষিত, উচ্চ শ্রেণিতে অসম্মানিত। দ্বিতীয় ব্যাপারটা হচ্ছে এই যে, সংবাদপত্র ও আকাশমাধ্যমের সংখ্যা বেড়েছে, তাদের ভেতর প্রতিদ্ব›িদ্বতা বৃদ্ধি পেয়েছে, তারা জনগ্রাহ্য প্রসঙ্গগুলোকে সামনে আনার ব্যাপারে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে ভাষার প্রশ্নের চেয়ে অধিকতর জনগ্রাহ্য প্রসঙ্গ আর কী-ই বা হতে পারে?
কিন্তু প্রচলনটা ঘটছে না কেন? ঘটাই তো স্বাভাবিক। বাংলা এখন আমাদের রাষ্ট্রভাষা, বাংলা যাদের মাতৃভাষা পৃথিবীতে আজ তাদের সংখ্যা ২৫-২৮ কোটি, সেই হিসাবে বাংলা এখন চতুর্থ স্থানে। বাংলায় রয়েছে উৎকৃষ্ট সাহিত্য। অন্তরায়টা কোথায়? বলা হবে অভাব আছে সদিচ্ছার। কিন্তু কার ইচ্ছার কথা বলা হচ্ছে? ব্যক্তির, নাকি প্রতিষ্ঠানের? ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের সদিচ্ছা কিন্তু অনেক আগেও দেখা গেছে, এখনো যে দেখা যায় না তা নয়, তবে তাতে কাজ হয়নি, বাংলা চলেনি। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে বাংলা প্রচলনের আগ্রহের ব্যাপারে খবর পাওয়া যায়; রাজনারায়ণ বসু জাতীয় গৌরব সম্পাদনী সভা নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন, যেখানে নিয়ম চালু করা হয়েছিল যে, কথাবার্তা সব বাংলায় হবে; কেবল তাই নয়, অভ্যাসবশত কেউ যদি ইংরেজি ব্যবহার করেন তবে প্রতি বাক্যের জন্য তাকে এক পয়সা হারে জরিমানা দিতে হবে। বলাবাহুল্য এক পয়সা তখন অনেক পয়সা বৈকি। কিন্তু ওই প্রচেষ্টায় তেমন জোর ছিল না, কেননা এটা সীমাবদ্ধ ছিল গুটিকয়েক ভদ্রলোকের ভেতর, যারা নিজেদের কেবল বাঙালি নয়, একই সঙ্গে বাঙালি ও হিন্দু মনে করতেন, কখনো কখনো হিন্দু পরিচয়টিই বরং বড় হয়ে উঠত। ঠিক উল্টো কাজ অবশ্য করতে আগ্রহী ছিলেন নবাব আবদুল লতিফের অনুসারীরা; তারা বাংলা নয়, উর্দু চালু করতে উৎসাহী ছিলেন; তবে পরস্পরবিরোধী দুই দলের মধ্যে মানসিকতার দিক থেকে এক জায়গায় ঐক্য ছিল। সেটা হলো ‘ছোটলোকদে’র কাছ থেকে দূরে থাকা এবং নিজেদের সাম্প্রদায়িক পরিচয়কে উচ্চে তুলে ধরা।
কিন্তু রাজনারায়ণদের বাংলা ভাষা এবং আবদুল লতিফদের উর্দু ভাষা চালু করার সদিচ্ছা- এ দুয়ের কোনোটাই যে সফল হয়নি তার মূল কারণ ছিল একটাই। রাষ্ট্রক্ষমতার বিরূপতা। রাষ্ট্র চায়নি স্থানীয় ভাষা চলুক, তাই প্রচলনের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র তো চায় বাংলা চলুক, তাহলে চলছে না কেন? জবাবটা সোজা, রাষ্ট্র বলে বটে যে সে চায়, কিন্তু আসলে চায় না, চাইলে বাংলা চলত। কেন চায় না? এ রাষ্ট্র তো বাঙালির রাষ্ট্র। তাহলে? জবাব হলো এই যে, এই রাষ্ট্র বাঙালিরা প্রতিষ্ঠা করেছে ঠিকই, কিন্তু এটি এখনো জনগণের রাষ্ট্রে পরিণত হয়নি। রাষ্ট্র রয়ে গেছে সেই আগের মতোই। এবং এই রাষ্ট্রের কর্তা যারা তারা চায় না বাংলা চলুক, যে জন্য বাংলার এমন কোণঠাসা দশা। এখানে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ব্যাপারটা অপ্রাসঙ্গিক।
রাজার ভাষা আর প্রজার ভাষা যে এক হয় না তার প্রমাণ তো আমাদের ইতিহাসেই রয়ে গেছে। বাংলা চিরকালই ছিল প্রজার ভাষা, রাজার ভাষা ছিল ভিন্ন- সংস্কৃত, ফার্সি ও ইংরেজি। এখন অবশ্য রাজা নেই, কিন্তু শাসকশ্রেণি তো আছে; তারা জনগণ থেকে নিজেদের আলাদা মনে করে, সেই যে তাদের দূরত্ব তার প্রকাশ নানাভাবে ঘটে। ধনসম্পদ, ক্ষমতা, শিক্ষা, পাহারাদার, পোশাক-পরিচ্ছদ আহারবিহারসহ বহু ক্ষেত্রে শাসকরা জনগণ থেকে আলাদা, আলাদা তারা ভাষাতেও। তারা ইংরেজিই পছন্দ করে, কেননা ওই ভাষা ব্যবহার করলে তারা যে বাংলাদেশের মানুষ হয়েও সাধারণ মানুষ নয় সেটা প্রকাশ পায়। তাছাড়া বাংলাদেশের শাসকশ্রেণি হচ্ছে বিশ্ব পুঁজিবাদের আজ্ঞাবহ, ওই পুঁজিবাদের রাষ্ট্রভাষা হচ্ছে ইংরেজি; সেটা একটা বড় কারণ যে জন্য শাসকশ্রেণি ইংরেজি ভক্ত।
ব্যাপারটা তাই স্পষ্ট। বাংলাভাষার শত্রæ অন্য কেউ নয়- শত্রæ হচ্ছে দেশের শাসকশ্রেণি এবং তাদের সাম্রাজ্যবাদী প্রভু। জনগণের ভাষা এখানে ততটাই অসহায় জনগণ নিজেরা যতটা দুর্দশার ভেতর পতিত। ভাষার লড়াইটা আসলেই একটা রাজনৈতিক লড়াই, আগেও ছিল, এখনো রয়েছে। এ দেশে বাংলা তখনই সর্বস্তরে ও সর্বপর্যায়ে চালু হবে যখন এ রাষ্ট্র জনগণের রাষ্ট্রে পরিণত হবে, তার আগে নয়। ভাষা প্রচলনের চেষ্টাকে তাই প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে, এর বাইরের কাজগুলো হবে সংস্কারমূলক, তাতে অর্জন কিছু ঘটলেও তা বিস্তৃত হবে না, তাদের ধরে রাখাও সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশে যে ইসলামি জঙ্গি তৎপরতা চলেছিল তার সঙ্গেও বাংলার অপ্রচলন সরাসরি জড়িত। জঙ্গিদের প্রায় সবাই মাদ্রাসায় শিক্ষিত, অর্থাৎ বাংলাভাষার শিক্ষা ও ঐতিহ্য থেকে বঞ্চিত। অপরদিকে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার যে বিস্তার সেটাও কিন্তু খড়ে-ঠাসা কৃত্রিম মানুষ তৈরি করছে। সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ সৃষ্টির জন্য মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা দেয়া ছাড়া কোনো উপায়ই নেই।
মোটকথা, আমরা কিছুতেই সুস্থ ও স্বাভাবিক হতে পারব না, এগোতেও পারব না সামনের দিকে, যদি না বাংলার প্রচলন ঘটাতে পারি। বিশ্বায়নের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের দাঁড়াবার জায়গাটাও কিন্তু ওই মাতৃভাষার চর্চাই। ওইখানে দাঁড়িয়েই আমাদের পক্ষে আন্তর্জাতিক হওয়া সম্ভব। যে-বৃক্ষের শিকড় দুর্বল সে কী করে আকাশের দিকে বেড়ে উঠবে, তার পক্ষে তো টিকে থাকাটাই অসম্ভব।

দুই.
কথা ছিল দিনবদলের, সেটা ঘটছে কি? না, ঘটছে না। এমনকি আওয়াজটা পর্যন্ত ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। তা লোকে কি সত্যি সত্যি আশা করেছিল যে দিনবদল ঘটবে? না, করেনি। অতীতের অভিজ্ঞতা তাদের আশাবাদী হতে শিক্ষা দেয়নি। এখন যতই সময় যাচ্ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে যে দিনবদল ঘটবে না। যে হাওয়া ইতোমধ্যেই বইতে শুরু করেছে তা নরম নয়, গরম বটে, আরো যদি গরম হয় তাহলে মানুষ গভীর হতাশা ও ক্ষোভের ভেতর নিপতিত হবে, এমনটাই আশঙ্কা। লোকে গণতন্ত্র চায় এবং স্বৈরাচার পছন্দ করে না- তা সেই স্বৈরাচার সামরিক, তত্ত্বাবধায়ক কিংবা নির্বাচিত যে ধরনেরই হোক না কেন। মহাজোট দেশে যথার্থ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিল। গণতন্ত্র জিনিসটা আসলে কি তা বোঝা মুশকিল এবং সাধারণভাবে এটা বলা অসঙ্গত নয় যে, গণতন্ত্র কি নয় তা বলা যতটা সহজ, গণতন্ত্র কি তা বলা ততটা সহজ নয়। তার একটা কারণ গণতন্ত্রের ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে, আমরা শাসিত হয়েছি নানাবিধ স্বৈরাচারের দ্বারা, যা কখনো এসেছে প্রকাশ্যে অন্য সময়ে ছদ্মবেশে। তাছাড়া ওটাও সত্য যে আমাদের বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যবস্থায় যথার্থ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তবে গণতন্ত্র বলতে কি বোঝায় না তা আমরা বিলক্ষণ জানি। সেটাও জেনেছি অভিজ্ঞতা থেকেই। যেমন আমরা জানি গণতন্ত্র মানে সংখ্যাগরিষ্ঠের একচ্ছত্র আধিপত্য নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতার দম্ভে ও দাপটে জনগণের দুর্দশা যে কোনো স্তরে গিয়ে পৌঁছতে পারে সে ব্যাপারে ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে।
গণতন্ত্রের জন্য একটি অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে স্থানীয় শাসন। স্থানীয় শাসনের অর্থ হলো ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। তার এই বিকেন্দ্রীকরণের মূল কথাটা হলো তৃণমূলে স্থানীয় মানুষেই নিজেদের দেখভাল করবেন, কর্তৃত্ব থাকবে তাদের হাতেই; কেন্দ্রীয় শাসন অবশ্য থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে, তবে সে শাসনের পরিধি যতটা খাটো হবে সমাজের ততটাই উপকার ঘটবে। স্থানীয়ভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে উঠবে, স্থানীয় লোকেরা যতটা সম্ভব নিজেদের দায়িত্ব নিজেরাই নেবেন। কিন্তু শাসনক্ষমতা এই বিকেন্দ্রীকরণে এ পর্যন্ত কোনো সরকারই উৎসাহ দেখায়নি। অথচ আমাদের সংবিধানের ৪৯, ৫৯ ও ৬০ ধারায় পরিষ্কারভাবে বলা আছে যে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারি কর্মচারীরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অধীনেই থাকবে। বলা আছে, স্থানীয় শাসন স্থানীয় মানুষদের স্বার্থের তদারকি করবে; আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব হবে তাদেরই। স্থানীয় সরকার কর আরোপ করা এবং নিজস্ব তহবিল রক্ষণাবেক্ষণের অধিকারও পাবে।
সংবিধানের অনেক কিছুই কাটাছেঁড়া করা হয়েছে, তবে স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত বিধানগুলো কিন্তু এখনো অক্ষতই রয়ে গেছে। তদুপরি সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রæতিতেই স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার রয়েছে। তাই আশা করা গিয়েছিল যে দিন বদলের হাওয়া ওইখান থেকেই বইতে শুরু করবে। চেয়ারম্যান উপ-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন; এবার নতুন বিধি তৈরি করে স্থানীয় সরকারকে সুযোগ দেয়া হবে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার। কিন্তু জাতীয় পরিষদে আইন পাস করে উপজেলায় সংসদ সদস্যদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সংসদ সদস্যরা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করবেন, তাদের পাশ কাটিয়ে উপজেলা পরিষদ সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবে না। এ ঘটনা কেবল যে অপ্রত্যাশিত তা নয়, অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জকও বটে। এমনিতেই রাজধানী অতিকায় হয়ে উঠেছে, গ্রামে কর্মের সংস্থান নেই, সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক; গ্রাম শুকিয়ে যাচ্ছে, পানির অভাবে তো বটেই, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের অভাবেও।
আমরা মনে করি যে, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে এভাবে পর্যুদস্ত করা কোনো শুভ লক্ষণ নয় এবং দাবি করি যে আইন সংশোধন করে ক্ষমতা উপজেলা পরিষদের হাতে অর্পণ করা হোক। সেটা না করলে দিনবদল তো হবেই না, বরং উল্টোটাই ঘটবে। সমাজে ভালো দৃষ্টান্তের বড়ই অভাব। সে দৃষ্টান্ত সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না, পাওয়া যাচ্ছে না শাসক শ্রেণির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছাত্রসংগঠনের কাছ থেকেও। দিনবদলের দায়িত্ব তাই তাদেরই নিতে হবে যারা দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক। মুশকিল হলো তারা সংগঠিত নন। জাতীয় নির্বাচনে দাঁড়ালে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়াটা অবধারিত। এতে বোঝা যায় যে তাদের পথটা টাকা খরচ করে এবং মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রæতি দিয়ে নির্বাচিত হওয়ার নয়, তাদের পথটা হলো আন্দোলন।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়