নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সিএনজি চালক নিহত

আগের সংবাদ

এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে অগ্রগতি

পরের সংবাদ

মজুতদাররাই পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য দায়ী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সামনে আসছে পবিত্র রমজান মাস। এ মাস মুসলিম জাহানের সিয়াম সাধনার মাস। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভ করার জন্য ইসলামের ইতিহাসে এ মাসের গুরুত্ব সর্বাধিক। আরব বিশ্বের দেশগুলোতে এ মাসটিতে সাধারণত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কম রাখতে দেখা যায়। পবিত্র রমজান মাসে যে কোনো পণ্য থেকে অধিক মুনাফা করার চিন্তা-চেতনা তাদের মাথায়ও আসে না। পারলৌকিক মুক্তির কথা চিন্তা করে বরং তারা তাদের কিছু পণ্য কম মূল্যে মানুষের কাছে বিক্রি করে। অনেক সময় ক্ষণিক সময়ের জন্য বিনামূল্যেও জিনিসপত্র তাদের দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। এ কথা ঠিক, মধ্যপ্রাচ্যের ওইসব দেশ বেশ ধনী। জ¦ালানি তেলের মতো পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্যটি তাদের দেশের মাটির নিচে খনিতে মজুত রয়েছে। তাই তাদের কোনো অভাব নেই। তবে তারা কখনো অসাধুভাবে মানুষকে ঠকিয়ে ব্যবসা করে না কিংবা করতে অভ্যস্ত নয়।
আমাদের দেশে এ চিত্র ঠিক উল্টো। এখানে দ্রব্যের মূল্য কমতে তো দেখাই যায় না, বরং যথাযথ মূল্য না রেখে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে দিয়ে জনগণকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলে দেয় কিছু অসাধু মজুতদার ব্যবসায়ী। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পদক্ষেপও কোনো কাজে আসে না। মাঝখান থেকে পবিত্র রমজান মাসেই দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী শতকোটি টাকা কামিয়ে নেয়। এ মূল্যবৃদ্ধি দেশের সবখানেই দেখা যায়। আমাদের দেশ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মতো ধনী না হলেও আমাদের বাজারের পণ্য সরবরাহের কখনো অভাব ছিল না। তা হলে কেন পবিত্র রমজানের সময় ব্যবসায়ী এবং অসাধু মজুতদাররা পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল না রেখে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলানোর জন্য মূল্য বাড়াবে? এ কথা ঠিক, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মতো আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা পণ্যের মূল্য কম রাখতে পারবে না।
অসাধু মজুতদার অত্যন্ত সুকৌশলে এবং গোপনে বাজারে যেসব জিনিস মানুষ নিত্যদিন ব্যবহার করে সেগুলোই মজুত করতে থাকে। যার ফলে রমজান আসতেই ওইসব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বাজারে সরবরাহ কমে যায় আর কিছুদিন পর মজুতদাররা তাদের পণ্যগুলো বেশি দামে বাজারে ছাড়ে বিধায় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। রমজানের সময় এমন মূল্যবৃদ্ধির আরো একটি কারণ হচ্ছে- অনেকেই রমজানের সময় অতিরিক্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাজার থেকে কিনে বাড়িতে অযথাই স্টক করে রেখে দেয়। যার ফলে ব্যবসায়ীরা এ সুযোগে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। প্রকৃতপক্ষে রমজান মাসে বাজারে বেশকিছু জিনিসের চাহিদা বাড়ে। তার মধ্যে অন্যতম খেজুর, ছোলা, ডাল, পেঁয়াজ, চিনি, আটা, ময়দা, মসলা, শসা, মরিচ, মাংস, মাছ ইত্যাদি। আর বেশির ভাগ অসাধু মজুতদার এসব ভোগ্য পণ্যকেই টার্গেট করে মাঠে নামে। এদের মধ্যে কেউ মজুত করে ছোলা, কেউ মসলা, কেউ পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। শুধু পবিত্র রমজানের সময়ই নয়, এসব অসাধু মজুতদার দেশে সময়ে সময়ে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুত করে রেখে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলে। এ সময় তাদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযান চললেও কোনো অদৃশ্য কারণে আসল বাজার কারসাজিরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। কেউ কেউ ধরা পড়লেও স্বল্প সময়ের মধ্যে তারা আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে গিয়ে আবারো একই কারবারে নেমে পড়ে। আসছে রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে এসব অসাধু ব্যবসায়ী এবং মজুতদারের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। তা ছাড়া রমজানের সময় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজন বোধে বিদেশ থেকে বেশকিছু দ্রব্য বেশি করে আমদানি করতে হবে। এ মজুতদারদের মধ্যে যদি কোনো রাজনীতিবিদও থাকে কিংবা কোনো রাজনৈতিক নেতার হাত থাকে তাদেরও যেন ছাড় দেয়া না হয়।
আমরা একটি টেকসই এবং স্থিতিশীল বাজার ব্যবস্থার প্রত্যাশা করছি। যে বাজার ব্যবস্থায় হুট করে জিনিসপত্রের দাম কেউ বাড়াতে পারবে না। এবং যে বাজার ব্যবস্থা হবে কঠোর নিয়ন্ত্রণকারীর সংস্থার অধীনে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের আওতায়।

রতন কুমার তুরী : লেখক এবং শিক্ষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়