প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
গাজায় গণহত্যা ও গণহত্যার উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। গত শুক্রবার নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)-তে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সাউথ আফ্রিকার করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই রায় দিয়েছে। আদালত গাজায় মানবিক সংকট নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আইসিজের আদেশে বলা হয়, গাজায় গণহত্যা ঠেকাতে ইসরায়েলকে তার ক্ষমতার আওতার মধ্যে থাকা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ইসরায়েলের সেনারা যাতে গাজায় গণহত্যার মতো কোনো কিছু না করে, সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। এ নির্দেশ ইসরায়েল মানছে কিনা, সেটা দেখার বিষয়। গাজায় ভয়াবহ এক সংকট তৈরি হয়েছে, যা নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের উত্তাপ ছড়িয়েছে গোটা বিশ্বে। বদলে গেছে রাজনীতি-কূটনীতির নানা হিসাব-নিকাশ। কী হবে এই সংঘাতের ভবিষ্যৎ, তা নিয়ে বাড়ছে শঙ্কা। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধের দামামা বাজছে। ইসরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দাদের হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে আসছে জাপান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, ইতালি, গ্রিস এবং ব্রিটেন থেকে শুরু করে আমেরিকার নাগরিকরা। ৩ মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধ থামাতে আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ আর পদযাত্রায় পা মিলিয়েছেন হাজার হাজার শান্তিকামী মানুষ। ইতোমধ্যে ওয়াশিংটনে ফিলিস্তিনের পতাকা আর যুদ্ধবিরোধী ব্যানার, ফেস্টুন হাতে ভিড় করেছিলেন কাতারে কাতারে মানুষ। আমেরিকার মুসলিম টাস্কফোর্সের ডাকে আয়োজিত সেই মিছিলে গাজায় ইসরায়েলি হানা বন্ধের ডাক দিয়েছেন প্রতিবাদীরা। যুদ্ধ বন্ধের পাশাপাশি ইসরায়েল সরকারকে আমেরিকার অন্ধ সমর্থনের বিরোধিতা করেছেন তারা। উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের মাটিতে হামাসের হামলার পরে গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার। প্রথম থেকে এ যুদ্ধে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে অস্ত্র, অর্থের জোগান দিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা। এখনকার মিছিলে অবিলম্বে ওই সাহায্য বন্ধের দাবি ওঠে। আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ওয়াশিংটনে সরকারের কাছে চিঠি দিয়ে এ যুদ্ধ বন্ধ করতে সক্রিয় ভূমিকা নেয়ার আবেদন জানিয়েছেন। এ মিছিলে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের কথা তুলে ধরেছিলেন গাজার যুদ্ধবিধ্বস্তরা। এদের মধ্যে ছিলেন গাজার সাংবাদিক ওয়ায়েল অল-দাহদো। ইসরায়েলের হানায় স্ত্রী, মেয়ে, দুই ছেলে ও এক নাতিকে তিনি হারিয়েছেন। নিজেও জখম হয়েছেন। তিনি জানান, গাজার মানুষের কাছে খাবার, পানীয়জল, শৌচাগার, মাথার ওপরে ছাদ, ওষুধ, পোশাক কিছুই নেই। ভদ্রভাবে জীবন কাটানোর জন্য যা যা দরকার সেসব তো দূরের কথা, বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম যা প্রয়োজন সেটুকুও নেই। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে লন্ডনের রাস্তায়ও মিছিল বেরিয়েছে। এখন প্রতিবাদ হচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব জায়গায়; কিন্তু এই যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। এবারের যুদ্ধে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২৬ হাজারের বেশি এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৬৫ হাজারে মানুষ। তারা সবাই সাধারণ মানুষ। অথচ তাদের কোনো অপরাধ ছাড়াই প্রতিনিয়ত মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে। এদের মধ্যে শিশুদের হত্যার চিত্র বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দিয়েছে। এর সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে গোটা পৃথিবীর মধ্যে গাজাই একমাত্র জনপদ যেখানে মাতৃগর্ভেই হত্যার শিকার হচ্ছে শিশুরা। অথবা জন্মের পর পর মরছে গুলি-বোমার আঘাতে। যারা এখনি মরেনি তাদেরও মারতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ইসরায়েল। যুদ্ধ চলাকালে হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবিরকে নিরাপদ জায়গা মনে করলেও সেখানেও নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। অকার্যকর করে দেয়া হয়েছে অনেক জায়গাতে হাসপাতালের বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা। বন্ধ করে রাখা হয়েছে অবরুদ্ধ উপত্যকায় খাদ্য-পানীয় প্রবেশের সব উপায়। গাজায় চলমান এ যুদ্ধে যে গণহত্যা চলছে এর কারণে বিগত বড়দিন উৎসবে এর বিশেষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ও গণহত্যার প্রতিবাদে আগেই বড়দিনের উৎসব বাতিল করেছে যিশুর জন্মস্থান অধিকৃত পশ্চিম তীরের বেথেলহামের গির্জাগুলো। পশ্চিমা গণমাধ্যমের বর্ণবাদী পক্ষপাত ও সামাজিক মাধ্যমের নিয়ন্ত্রকদের অহেতুক নজরদারির কারণে আড়াল হওয়া বা লোপাট হওয়া বাস্তবতার চিত্র এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাসীনদের চোখ রাঙানি এড়িয়ে ইসরায়েলবিরোধী প্রতিরোধে নিজেদের পারফরম্যান্স দেখাচ্ছেন অনেক শুভবোধসম্পন্ন ইহুদি। খণ্ড খণ্ডভাবে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারাও প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আর এ কাতারে এখন শামিল হচ্ছেন গণহত্যায় সমর্থন করা যুক্তরাষ্ট্রের অনেক নাগরিক ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। গত ২২ ডিসেম্বর মানবাধিকার সংগঠন আমেরিকান হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের (এএইচআরসি) এক বিবৃতিতে অবিলম্বে এ গণহত্যা বন্ধ ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে গাজায় ২২ লাখ মানুষ যখন ইসরায়েলি গণহত্যার মুখোমুখি হচ্ছে, তখন বড়দিন উদযাপনের বিষয়টি অসংবেদনশীল।’ গাজাকে এই মুহূর্তে পৃথিবীর ‘সবচেয়ে বিধ্বস্ত’ এলাকা হিসেবে অভিহিত করে বিবৃতিতে সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক ইমাদ হামাদ বলেন, ‘আমরা আশা হারাতে পারি না। গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং যিশু খ্রিস্টের জন্মভূমিতে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য চাপ অব্যাহত রাখতে সব শুভবোধসম্পন্ন মানুষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। এখন দিন দিন সারাবিশ্বের মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠনগুলোর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার জায়গা হলো ফিলিস্তিন। এ অঞ্চলে নতুন করে আর রক্তপাত দেখতে কেউ চায় না এখন। কিন্তু কবে শেষ হবে এ রক্তপাত কেউ জানে না। তাই বলব এ বিষয়ে এখন ভাবার সময় হয়েছে জাতিসংঘের। আমেরিকা এ ব্যাপারে কথা বলা শুরু করেছে, কিন্তু ইসরায়েলের অস্বীকৃতি বিষয়টি আলোর মুখ দেখছে না। তাই বলতে হয় ইসরায়েলের বেপরোয়া পররাষ্ট্রনীতির কারণে অনেক প্রাণের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এখন এ ব্যাপারে জাতিসংঘ কোনো নতুন উদ্যোগ নেবে- এটাই বিশ্বের মানুষ প্রত্যাশা করে। কারণ বিশ্বের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার শেষ ভরসা জাতিসংঘ। যদি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারে বিশ্বের সেরা এ প্রতিষ্ঠান তবে হয়তো সারাবিশ্বের মানুষকে এর জন্য অনেক মূল্য দিতে হবে কোনো একদিন। আর তখন হয়তো আমরা একটি সুন্দর দিন ফিরে পেলেও, আজকের এ মহাক্ষয়ক্ষতি পূরণ করতে অনেক সময় লেগে যাবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।