সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার

আগের সংবাদ

নেতৃত্বে শীর্ষে সংখ্যায় কম

পরের সংবাদ

সিন্ডিকেট ভাঙার শপথে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গত এক দশকের মধ্যে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বের জন্য ২০২৪ সালটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারসাম্য ও টেকসই স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বছরটি হতে চলেছে ঘটনাবহুল ও চমকপ্রদ। দেশে দেশে নির্বাচন তন্মধ্যে একটি। সেসবের মধ্যে আবার বাংলাদেশ, তাইওয়ান, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও রাশিয়ার জাতীয় নির্বাচন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বহুমেরুভিত্তিক রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নতুন মোড় নেবে এসব নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। ব্রিটিশ সাংবাদিক গরপযধবষ ঔড়যহ ঊষষরড়ঃঃ ২০০৭ সালে টাইম ম্যাগাজিনে একটি কাভার স্টোরি লিখেছিলেন। ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত ঞযব ঈযরহবংব ঈবহঃৎঁৎু শীর্ষক সেই কলামে তার ভাষ্য, ঞযব হববফ নব হড় ধিৎং নবঃবিবহ ঈযরহধ ধহফ ঃযব টঝ, হড় পধঃধংঃৎড়ঢ়যবং, হড় বপড়হড়সরপ পড়সঢ়বঃরঃরড়হ ঃযধঃ মবঃং ড়ঁঃ ড়ভ যধহফ. ইঁঃ রহ ঃযরং পবহঃঁৎু ঃযব ৎবষধঃরাব ঢ়ড়বিৎ ড়ভ ঃযব টঝ রং মড়রহম ঃড় ফবপষরহব, ধহফ ঃযধঃ ড়ভ ঈযরহধ রং মড়রহম ঃড় ৎরংব. ঞযধঃ পধশব ধিং নধপশবফ ষড়হম ধমড়. বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও কথাটি বেশ প্রযোজ্য এ বিবেচনায় যে, বাংলাদেশ হয়তো বড় দেশের সঙ্গে ক্ষমতার দৌড়ে নেই, তবে কৌশল ও লক্ষ্যের দৌড়ে আছে নিশ্চয়। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিদেশি ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং তৎপরতা এ দেশের ভূ-রাজনৈতিক সেই গুরুত্বের প্রমাণ দেয়।
কিন্তু বাংলাদেশ আজ আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সফল হয়েছে। নির্বাচন হয়েছে বাংলাদেশের স্বসিদ্ধান্তে ও স্বসংবিধান মোতাবেক। তাই গরপযধবষ ঊষষরড়ঃঃ-এর কথাটাকে কিঞ্চিৎ পরিবর্তন করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বলা চলে, ঞযধঃ পধশব ধিং নধশবফ ধ ফবপধফব ধমড়. নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ, এডিবিসহ চীন, রাশিয়া, ভারত, কাতার ও অন্য দেশ এবং সংস্থা। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান সম্পকর্কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরই মধ্য দিয়ে দেশের অগ্রগতিমূলক অভিযাত্রার নানা পরিকল্পনার পাশাপাশি বাজারব্যবস্থায় সিন্ডিকেট ভাঙার শপথে নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। আসলে যে কোনো ক্ষেত্রে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট মূলত একটি ঠরপরড়ঁং ঈরৎপষব, যার থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই শ্রম, শক্তি এবং বুদ্ধিসাধ্য বিষয়। এ কথা স্বীকার্য যে, নিত্যপণ্যের বাজার অসহিষ্ণু হয়ে ওঠলে তার সরাসরি প্রভাব পড়ে জনজীবনে। মানুষ তখন কষ্ট পায়। আর আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে চাল সিন্ডিকেটের চালবাজি, ডিম সিন্ডিকেটের অশ্বডিম্ব মার্কা অজুহাত যেমন দেখা যায়, ঠিক তেমনই দেখা যায় পেঁয়াজ, তেল, লবণসহ নানা ভোগ্যপণ্যের মজুতদার, আড়তদারদের খবরদারি। এটি খুবই দুঃখজনক যে, আমাদের দেশ মুসলিম প্রধান হওয়া সত্ত্বেও রমজান মাস এলে রোজাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীদের মুনাফাখেকো উন্মত্ততা শুরু হয়ে যায়। যা বিশ্বের অন্য কোথাও সেভাবে দেখা যায় না।
তবে নবগঠিত সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের কিছু বক্তব্য বেশ আশার সঞ্চার করছে। কারণ তারা শুধু কথা বলার জন্য বলেননি বলেই মনে হচ্ছে। তাদের বক্তব্যের মধ্যে প্রত্যয় যেমন আছে, কর্মকৌশলও তেমন দেখা যাচ্ছে। যেমন, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু) বলেছেন, আমরা স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্মার্ট বাজার সিস্টেম করতে চাই। সরবরাহের সময়টা কমিয়ে আনতে চাই। বাণিজ্য, অর্থ, কৃষি, খাদ্য ও শিল্প মন্ত্রণায়ের সমন্বয়ে একটি টিম থাকবে। এটা কোনো চিঠির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমরা সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করব, এটাই আমাদের মিরাকল। আজকের দরদামকে বেইজ ধরে আমরা কাজ করতে চাই। মজুতদারদের শক্ত হাতে দমন করব। কৃত্রিম সংকট যারাই করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। সিন্ডিকেট থাকতে পারবে না। এটি করতে পারলে বেশ কার্যকর একটি পরিবর্তন দেখা যাবে। আসলেই সিন্ডিকেট নির্মূলে সব মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। যেমন, আমাদের দেশে বাজারব্যবস্থা অস্থিতিশীল করতে দুর্বৃত্তদের একটি বড় কৌশল হচ্ছে গুজব সৃষ্টি। যে কোনো পণ্যের মজুত বা জোগান সম্পর্কে গুজব রটিয়ে তারা দাম বাড়িয়ে ফেলে। এখানে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বাণিজ্য, কৃষি, খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে যূথবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে উপজেলা পরিষদের কর্মক্ষেত্র সীমা বাড়িয়ে স্থানীয় বাজার মনিটরিংয়ে যুক্ত করা যেতে পারে।
সিন্ডিকেটের যে অর্থনৈতিক ধারণা পাওয়া যায়, তা বদলে দিয়েছে আমাদের দেশের মৌসুমি সিন্ডিকেট। এরা যেভাবে চোখের পলকে এবং কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ ছাড়াই বাজারব্যবস্থাকে টালমাটাল করে ফেলে তা নিরূপণ করতে গিয়ে বড় বড় অর্থনীতিবিদ বা বাজার বিশ্লেষকদেরও গলদঘর্ম হয়। ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, পেঁয়াজে যেমন একটি দুষ্টু সিন্ডিকেট কাজ করে ঠিক তেমনই ডেঙ্গুর সময়ে দেখেছি ডাব, স্যালাইন, কোভিডের সময়ে মাস্ক, পিপিপি ইত্যাদিকে কেন্দ্রকে করে মৌসুমি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠতে। আবার ঈদের সময় গড়ে ওঠে টিকেট সিন্ডিকেট। আর মাংস নিয়ে দাম বাড়ানোর মচ্ছব তো আছেই। তবে নতুন সরকারের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ‘রেফারেন্স প্রাইস’-এর কথা বলেছেন। উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা গেলে ফলপ্রদ হবে। তিনি বছরজুড়ে বাজার মনিটরিংয়ের মধ্য দিয়ে বাজারে পণ্যের সরবরাহটা নিশ্চিত করতে চান। এটি করতে পারলে জোগানের অপ্রতুলতার দোহাই দিয়ে অসাধু মুনাফাখোর সিন্ডিকেট আর জনগণের পকেট কাটতে পারবে না।
বাংলাদেশের খাদ্য পণ্যের বাজারব্যবস্থায় স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি বড় ভূমিকা থাকে। নব দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদ তাইতো সিন্ডিকেট ভাঙার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, সিন্ডিকেট সব জায়গায় থাকে। তাদের কীভাবে ক্র্যাশ করতে হবে, সেটার পদ্ধতি বের করতে হবে। কর্মের মাধ্যমে এগুলোকে কন্ট্রোল করতে হবে। কৃষিকাজে প্রয়োজনীয় পণ্য এবং কৃষিজাত পণ্যের ক্ষেত্রে মূল্য ভারসাম্য নিশ্চিতকল্পে এটি খুবই প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা। অন্যদিকে ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়েছেন, আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে দেশে একটি নতুন সেবা চালু হতে যাচ্ছে। কোনো পণ্যের দাম বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি নেয়া হলে ৩৩৩ নম্বরে কল করে সরাসরি ও তাৎক্ষণিক অভিযোগ জানাতে পারবেন ভোক্তারা। এটি একটি সময়োপযোগী ও স্মার্ট উদ্যোগ বলে মনে হচ্ছে।
পাশাপাশি কিছু বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারলে জনবান্ধব বাজারব্যবস্থা নিশ্চিতের সরকারি অভিলক্ষ্য সহজতর হবে বলে আশা করা যায়। এক্ষেত্রে কয়েকটি প্রস্তাবনা হচ্ছে— এক. জেল-জরিমানাসহ নানা রকম শাস্তিমূলক প্রচলিত পদক্ষেপের বাইরে গিয়ে প্রয়োজন একটি সিস্টেম দাঁড় করানো। ডিজিটাল মনিটরিং ও মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে বিপণন ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে সরকারের কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। দুই. সিন্ডিকেটের সামাজিক অবস্থান, অর্থনৈতিক শক্তি শনাক্ত করতে হবে। সেটি করতে পারলেই তাদের কৌশল ও কর্ম অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভবপর হবে। তিন. ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে আরো শক্তিশালী এবং পর্যাপ্ত জনবলপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে হবে। চার. বাজারে পণ্যের সুষ্ঠু ও স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা নিশ্চিতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে আরো কর্মতৎপর হতে হবে। শক্তি ও সক্ষমতার জায়গায় প্রতিষ্ঠানটিকে আপস করা চলবে না। পাঁচ. প্রচলিত বাজার কাঠামোকে ঢেলে সাজাতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ থাকতে হবে। বাজারব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে যুক্ত ব্যবসায়ীদের বিজনেস আইন্ডেন্টিফিকেশন থাকতে হবে। উৎপাদিত ও আমদানিকৃত পণ্য পরিবহন, মজুত ও সরবরাহের ক্ষেত্রে ডিজিটাল ট্র্যাকিং সিস্টেম থাকতে হবে। ছয়. জনগণকে সচেতন করতে হবে। আমরা যেন গুজবে কান দিয়ে নিজের বাসাবাড়িকে কোনো পণ্যের মিনি গুদামঘর না বানিয়ে ফেলি। যেমনটি দেখেছি অতীতে— লবণের দাম বাড়বে শুনে অনেকেই ১০-২০ কেজি লবণ কিনে রেখেছে। অথচ সারা বছরে হয়তো তার পরিবারের জন্য ১০ কেজি লবণ প্রয়োজন হয়। ঠিক তেমন করেই পেঁয়াজ, তেলসহ নানা নিত্যপণ্য মজুত হয় ব্যক্তি আতঙ্কে ও উদ্যোগে। সবশেষে প্রত্যাশা করি, নতুন সরকারের নবপ্রত্যয়গুলো সফল ও কার্যকর হোক। ভেঙে যাক জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সব সিন্ডিকেট। গড়ে উঠুক অতিমুনাফাখোর মধ্যস্বত্বভোগীমুক্ত নিত্যপণ্যের বাজার।

শেখ ফয়সল আমীন : কলাম লেখক ও বিশ্লেষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়