সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার

আগের সংবাদ

নেতৃত্বে শীর্ষে সংখ্যায় কম

পরের সংবাদ

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ২০২৪ প্রধানমন্ত্রীর আশাবাদ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গত ২১ জানুয়ারি রাজধানীর পূর্বাচলে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের কাঞ্চন সেতু থেকে উত্তরে কিছু দূর গেলেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মাসব্যাপী ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে শুরু হলো দেশে পণ্য প্রদর্শনীর সবচেয়ে বড় আয়োজন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ)। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করেছে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান। অনুষ্ঠানে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ এবং স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে গত ১৫ বছরে গৃহীত সরকারি পদক্ষেপের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। মেলায় স্থানীয় টেক্সটাইল, মেশিনারিজ, কার্পেট, প্রসাধনী, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, গৃহস্থালির পণ্য, চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, খেলাধুলার সামগ্রী, স্যানিটারি সামগ্রী, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, ভেষজ সামগ্রী, টয়লেট্রিস, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড, হস্তশিল্প, গৃহসজ্জা, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য পণ্য প্রদর্শিত এবং বিক্রি হচ্ছে। তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং ইরানের কোম্পানিগুলো এ বছর তাদের পণ্য প্রদর্শন করছে। এবারের বাণিজ্যমেলার লেআউট প্যান অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁ ও স্টলের সংখ্যা ৩৫১টি এবং দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দকৃত প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁ ও স্টলের সংখ্যা ৩০০টি।
মেলা উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে একটা ভারসাম্য বজায় রাখা একান্তভাবে দরকার। আপনারা রপ্তানি করেন, রপ্তানি করার সময় যে অর্থ ব্যবহার হয়, তার যে রিটার্ন আসবে ঠিক চাহিদামতো তা আসে না। এদিকে সবাইকে আরো একটু যতœবান হওয়ার জন্য আহ্বান জানাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমার কাছে ক্ষমতা কোনো ভোগের বস্তু নয়, আমার কাছে ক্ষমতা হলো দেশে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের একটা সুযোগ। মানুষের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ, মানুষকে সেবা দেয়ার একটা সুযোগ আবার পেয়েছি। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পেরেছি। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটের মাধ্যমে আমাদের আবার ক্ষমতায় এনে সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের যদি প্রসার না ঘটে, কোনো দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়ে ছিলাম, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমরা উৎক্ষেপণ করেছি। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা। আমরা প্রমাণ করেছি, বাংলাদেশের জনগণকে কেউ চ্যালেঞ্জ দিয়ে দাবায়ে রাখতে পারবে না।’ ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে একটা ভারসাম্য বজায় রাখা একান্তভাবে দরকার।’ এ সময় তার সরকারের মেয়াদে উৎপাদন বৃদ্ধিতে বহুমুখী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দেশটা আরো এগিয়ে যাক, আরো উন্নত হোক, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হোক। আমরা খুব ভালো ভালোই যাচ্ছিলাম, আমাদের প্রবৃদ্ধিও ৮-এর কাছাকাছি নিয়ে এসেছিলাম।’ এ সময় তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন, কাউন্টার স্যাংশন ও কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে নানামুখী সংকটের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের মতো যারা কেবল উঠতি অবস্থায় আছি, সেই সময় এটা একটা বিরাট ধাক্কা আমাদের অর্থনীতির ওপর এসে পড়েছে। তারপরও ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে সচল থাকে সে লক্ষ্যে তার সরকার ব্যবসায়ীদের বিশেষ প্রণোদনা, স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা, ভতুর্কিসহ নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখার চেষ্টা করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা রপ্তানিতে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু একটি-দুটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকলে আমাদের চলবে না। আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আরো সুযোগ বাড়াতে হবে। যে পণ্যকে আমরা বেশি সুযোগ দিচ্ছি, তারাই ভালো করছে। তাহলে আমার অন্য পণ্যগুলো কেন বাদ যাবে? তাদেরও আমাদের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। যাতে তারাও সেভাবে সুযোগ পায়।’ এ ছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া শিল্পজাত পণ্য, আইসিটি, খাদ্য পণ্যসহ বিভিন্ন রকম পণ্যের দিকেও ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের রপ্তানি জোরদারকরণে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
অর্থনীতির উন্নয়নে এ মেলার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় পণ্য রপ্তানিতে বহুমুখীকরণ করাই বাণিজ্যমেলার মূল উদ্দেশ্য। বাংলাদেশ যদি তার পণ্য বহুমুখীকরণ করতে পারে, তাহলে রপ্তানি ১০০ বিলিয়নের বেশি হতে পারে। বাংলাদেশ মেলা স্থিতিস্থাপকতার সঙ্গে দ্রুত প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে পারে, যা উচ্চমানের উন্মুক্তকরণ প্রচেষ্টার একটি হাইলাইট হিসেবে আবির্ভূত হয়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে এবারের বাণিজ্যমেলায় দেশীয় পণ্য ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, নেপালসহ বিভিন্ন দেশ অংশ নিচ্ছে। পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি দেশীয় পণ্য রপ্তানির জন্য বড় বাজার খুঁজে বের করাই লক্ষ্য। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবির যৌথ উদ্যোগে দেশীয় পণ্যের প্রচার, বিস্তার, বাজারজাতকরণ ও সহায়তার লক্ষ্যে ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত শেরেবাংলা নগরে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কোভিড মহামারির কারণে ২০২১ সালে মেলা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। মহামারির বিধিনিষেধের মধ্যে ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো পূর্বাচলে বিবিসিএফইসিতে মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। স্থায়ী ভেন্যু বাংলাদেশ-চীন এক্সিবিশন সেন্টারে তৃতীয়বারের মতো বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চীনের অর্থায়নে পূর্বাচলে একটি স্থায়ী বাণিজ্যমেলা কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এখন থেকে প্রতি বছর এখানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হবে। কম্পিউটার মেলা, বিজ্ঞানমেলা, কৃষিমেলা ও বইমেলার মতো মেলা আমাদের সংস্কৃতির সবচেয়ে আধুনিক সংস্করণ ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা।
মেলার আন্তর্জাতিকীকরণের কারণে অনেক বিদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিচ্ছে। বিদেশি ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছে। দেশের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প বিদেশিদের কাছে খুবই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। মেলায় বিদেশি দর্শনার্থীদের কাছে এসব পণ্য বিক্রি করলে বিশ্বে দেশীয় শিল্পের বিক্রি ও সুনাম বাড়াচ্ছে। ফলে দেশের ক্ষুদ্র শিল্পগুলো লাভবান হতে পারছে, আর বড় দেশীয় কোম্পানির মুনাফা অর্জনের পথও সুগম হচ্ছে এই মেলার মাধ্যমে। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলো থেকে বাংলাদেশ সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছে এবং প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছে, মেলার টিকেট বিক্রি থেকেও প্রচুর টাকা আয় হচ্ছে। মেলায় খণ্ডকালীন চাকরির মাধ্যমে বেকারদের সাময়িক বেকারত্ব দূর করা হয়। অনেকে মেলায় খণ্ডকালীন চাকরিতে ভালো দক্ষতা দেখিয়ে স্থায়ী চাকরিও পাচ্ছে।
বাণিজ্যমেলা একটি দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর সঙ্গে সম্পর্কিত। বাণিজ্যের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী মেলায় পরিণত হওয়ায় বাণিজ্যমেলার কার্যকারিতা উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করবে বলে বিশ্বাস। বাণিজ্যমেলা ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার, ব্যবসা খাতের জন্য নিজস্ব শক্তি ও উচ্চাকাক্সক্ষা প্রদর্শন এবং আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে চুক্তি ঘোষণার একটি মূল্যবান সুযোগ। দেশীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোগের জন্য, মেলায় অংশগ্রহণ ব্র্যান্ড সচেতনতা তৈরি, তাদের গ্রাহক বেস প্রসারিত এবং নতুন ব্যবসায়িক নেতৃত্ব তৈরি করার একটি দুর্দান্ত সুযোগ হতে পারে। তারা সম্ভাব্য অংশীদার এবং গ্রাহকদের সঙ্গে দেখা করতে পারে, নতুন বাজারগুলো অন্বেষণ করতে পারে এবং সর্বশেষ শিল্প প্রবণতা এবং উন্নয়ন সম্পর্কে শিখতে পারে। বাণিজ্যমেলা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। তাই দেশের প্রধান জ্বালানি অর্থনীতির সমৃদ্ধ অবকাঠামো গড়তে বাণিজ্যমেলার আয়োজন করা প্রয়োজন। এ মেলা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক আয়োজন। উৎপাদক-রপ্তানিকারক, আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা এবং পণ্যের প্রচার ও বাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নে এ মেলার অপরিহার্যতার বিকল্প নেই।

ড. মিহির কুমার রায় : কৃষি অর্থনীতিবিদ ও গবেষক; ডিন, সিটি ইউনিভার্সিটি।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়