সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে শরীফার গল্প বাদ দিতে নোটিস

আগের সংবাদ

লাল-সবুজ পতাকা হাতে সমাবেশ করবে আ.লীগ

পরের সংবাদ

যা চায় জনগণ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নানান রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ক, আন্দোলনমুখী কর্মসূচির পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। সরকার নতুন হলেও যারা সরকার পরিচালনার ক্ষমতায় বসেছেন, সেই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ কিন্তু আর নতুন নয়। তারা টানা ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে চতুর্থবারের মতো দেশ শাসন করার জনসমর্থন পেয়েছে। এই নির্বাচনকে ঘিরে আন্তর্জাতিক চাপ ছিল এবং এখনো আছে। যে আমেরিকায় পাড়ি দিতে মানুষ মুখিয়ে থাকে এই নির্বাচনকে ঘিরে সেই আমেরিকার ভিসানীতি জনমনে সংশয় জাগিয়েছিল। নির্বাচন আদতে হবে কিনা, হলে কেমন হবে, ফলাফলইবা কী হতে পারে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ছিল নানান জল্পনা-কল্পনা। ছিল সংশয় ও আতঙ্ক, যার নেপথ্যে ছিল রাজনৈতিক সহিংসতা, বর্বরতা। মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, বেনাপোল এক্সপ্রেসের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পৈশাচিকতার সীমা লঙ্ঘন করে। ভোটাররা ভোট দেবে কিনা- ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এমন সংশয়ও ছিল।
যা হোক- সব সংশয়, জল্পনা-কল্পনার শেকড় উৎপাটন করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। যদিও কারোর কারোর মতে, দলটির এমন বিজয় আগেই নির্ধারণ করা ছিল। সহজেই অনুমান করা যায় যে, এমন বক্তব্য প্রদানকারীরা বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক চেতনার লোকজন, যারা চেয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। দীর্ঘদিন উপযুক্ত ও জনকল্যাণমুখী ইস্যু ছাড়া রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়া বিএনপির সঙ্গে দেশের জনগণের জনসংযোগ ঘটেনি বলে অনেকেরই অভিমত। কিংবা ঘটলেও সেটা তারা ভালো জানে, ভালো বলতে পারে। প্রাকৃতিক ও সামাজিক দুর্যোগের মাঝেও তাদের রাজনৈতিক আন্দোলনের একটাই ইস্যু ছিল, সেটা হলো, খালেদা জিয়ার মুক্তি। জনগণের ইস্যু নিয়ে তেমন আন্দোলন ছিল না। এটা না বললেই নয় যে, জনবিচ্ছিন্ন এসব ইস্যুর কারণে সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি তেমনভাবে ওঠেনি। যেটা বিএনপির জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে।
অনেকেই বলেন, ক্ষমতায় বসার চেয়ে ক্ষমতায় বসে দেশ শাসন করা কঠিন, যদি না সত্যিকারভাবে তিনি বা তারা চান যে, দেশ ও দশের কল্যাণ হোক। জনগণ আর্থসামাজিকভাবে নিরাপদ হোক, নিরাপদবোধ করুক। সরকার কোনো একক ব্যক্তি নয় বরং একটি প্রক্রিয়া, যেখানে অনেক স্তরের অনেক ব্যক্তি দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকেন এবং যাদের কেউ কেউ রাজনৈতিক, আবার কেউ কেউ অরাজনৈতিক ভাবধারায় চলেন। সবার যে দেশপ্রেম থাকে কিংবা দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে চলেন, তা কিন্তু নয়। এদের মধ্যে কেউবা ভালো, কেউবা মন্দ। মন্দের মাত্রা বেশি হলে ভালোর আলো দেখা দায়। ভালো অন্ধকারে চাপা পড়ে, ভালোকে অন্ধকার গ্রাস করে। গতবার জাতীয় নির্বাচনের পর সরকার গঠিত হওয়ার প্রাক্কালে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করেছিলেন দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিয়ে। তিনি প্রকৃতার্থে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার অবস্থান পরিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু দুর্নীতিবাজরা সরকারের মধ্যে থেকে তার হুঁশিয়ারে বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়েছে, সতর্ক হয়েছে বলে মনে হয়নি। বরং বলা যায়, প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারকে তোয়াক্কা না করেই দুর্নীতিবাজরা তাদের মতো করে বহাল তবিয়তে দুর্নীতি করেছে। মূলত এরাই হলো সরকার প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা মন্দ ও অশুভ লোক। সরকারের ভালো অর্জনকে এরা দৃশ্যমান হতে বাধা দেয়। এই শ্রেণির লোক যুগ যুগ ধরে থাকে বিভিন্ন কৌশলে ও পোশাকে। এদের চিহ্নিত করতে না পারলে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে সরকার ব্যবস্থাপনায়, যার প্রভাব পড়বে রাষ্ট্রে। অতীত পর্যালোচনা জরুরি, যা থেকে শিক্ষা নেয়া সম্ভব।
দ্বাদশ নির্বাচনে গত মন্ত্রিসভার কয়েকজন হেভিওয়েট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যকে পরাজিত হতে দেখা গেছে। এভাবে বলা যায়, স্থানীয় জনগণ তাদের আর চায়নি। গত নির্বাচনে চেয়েছিল, জয়ী করেছে অথচ জনগণের সন্তুষ্টির জায়গায় নিজেদের অবস্থানকে আর সমুন্নত রাখতে পারেনি। সোজা কথায়, স্থানীয় জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি, পূরণ করতে পারেনি। এসব জায়গায় এক ধরনের বিপ্লব ঘটে গেছে এবং তা নীরবে। ভোটে কারচুপির অভিযোগ এখানে টেকে না, টেকার সুযোগ নেই। কারণ ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জনগণ যে তাদের পছন্দ, সমর্থন বদলে ফেলতে পারে, তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উল্লিখিত হেভিওয়েটদের এই শোচনীয় পরাজয়। জনপ্রতিনিধিদের জন্য এটা একটা শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে থাকতে পারে। পাশাপাশি দেখা গেল, গতবারের মতো কোনো কোনো সংসদ সদস্য বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। তার মানে হলো, জনগণ গতবারের মতো এবারো তাদের চাইছেন। এই চাওয়ার পেছনে জনগণের স্বস্তি ও সন্তুষ্টি রয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। আবার একেবারেই নতুন প্রার্থীদের মধ্যেও জয় ও পরাজয় রয়েছে। জয়ী তারাই হয়েছেন জনগণ যাদের ভালোবাসতে পেরেছে, যাদের ওপর আস্থা রাখা যায় বলে মনে করেছেন। নির্বাচন পর্যালোচনা করলে জনগণের মনোভাব স্পষ্টত হয়। রাজনীতিবিদদের সেটা বুঝতে হবে। বাংলাদেশের খেটে খাওয়া একেবারেই সাধারণ জনগণের কাছে যদি জানতে চাওয়া হয় যে, তিনি কী প্রত্যাশা করেন বা চাইছেন এই নবগঠিত সরকারের কাছে। উত্তরটা দিতে বিলম্ব হবে না। কারণ উত্তরটা তার ঠোঁটের অগ্রভাগেই। বলবেন, জিনিসপত্রের দাম কমাও। আর দুর্নীতি ধ্বংস কর। এই দুই অনিয়ম, অব্যবস্থা যে সাধারণ জনগণের জীবনকে প্রতিনিয়ত বিপন্ন করছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও বিক্ষুব্ধ এই বিষয়ে বলে শোনা যায়। গতবারে নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্য প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রীর অর্থহীন যুক্তি, ব্যর্থতা জনগণকে স্বস্তি, শান্তি, নিরাপত্তা কিছুই দিতে পারেনি। জনগণ হতাশ হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিসিবির লাইনে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সদস্যদের দাঁড়ানো প্রসঙ্গে যে মন্তব্য করেছিলেন, সেটা ছিল অত্যন্ত অমর্যাদার। এমনকি ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে তার অক্ষমতার বিষয়টি প্রকাশও ছিল চরম ব্যর্থতার।
আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের চাওয়া অতি সাধারণ। তিন বেলা খেয়ে-পরে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা, কাজ করে আয় করার ইচ্ছার মানুষের সংখ্যাই বেশি। কারোর দয়া কিংবা করুণায় জীবনযাপন করতে চায় না তারা। চায় না স্বাধীন দেশে তার কোনো ধরনের অনিরাপত্তা। মর্যাদাকর জীবনযাপনের প্রতি তীব্র আকাক্সক্ষা প্রায় প্রতিটি মানুষের। আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তির ভেতর মর্যাদাবোধ বেড়েছে। নানান প্রতিকূলতার মাঝেও জনগণ যাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছেন, তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা পূরণই হোক অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনা জরুরি। মোবাইল কোর্ট কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করার আগে কেন নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্য, কারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত, তা জানতে হবে। কারণ রোগের কারণ না জেনে চিকিৎসাসেবা প্রদান রোগ সারায় না, বরং বাড়ায়।
বর্তমান সরকারকে অতি সতর্কতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে হবে, এটা বলা অপরিহার্য। দুর্নীতি কোনো বায়বীয় বা অদৃশ্য কাজ নয়। দুই হাত, দুই পায়ের অসৎ মানুষই দুর্নীতি করে। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি সব সরকার আমলেই থাকে। তবে বর্তমান সরকারপ্রধান দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। তার এই কঠোরতার নমুনা তার সরকারই দেবে, সেটাই সবার কাম্য। বলাবাহুল্য, নিয়ম ও বিধিবদ্ধভাবে কাজ হলে দুর্নীতি হওয়ার সুযোগ থাকে না। দায়িত্বপ্রাপ্তদের স্বচ্ছতা, সততা ও জবাবদিহিতা একটা কৌশল দুর্নীতি রোধ করার ক্ষেত্রে। এ বিষয়কে সুনিশ্চিত করবে কে, প্রশ্ন এখানেই। একজন সরকারপ্রধান চাইছেন, দুর্নীতিমুক্ত দেশ হোক। তার এই চাওয়াকে বাস্তবায়ন করবে তারই সরকারে নিয়োগপ্রাপ্ত ও দায়িত্বপ্রাপ্তরা। যদি তারা যথাযথ ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন না করেন, তাহলে দুর্নীতি দূর হবে না। বরং বাড়বে।
দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিশ্চিত করাই বর্তমান সরকারের প্রধান ও অন্যতম কাজ। কোনোরকম উদাসীনতা, দায়িত্বে অবহেলা প্রশ্রয় দেয়া উচিত হবে না। আমরা আশা করব, যারা ক্ষমতায় আসীন হয়ে এই বিষয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন, তারা যেমন তাদের দায়িত্ব, কর্তব্য ও নৈতিকতা দিয়ে দেশপ্রেমের বিষয়টি দৃশ্যমান করতে পারবেন, তেমনই পারবেন নিজ রাজনৈতিক দলের অস্তিত্বকে ঝুঁকিমুক্ত করতে ও ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে। জনগণ চায়, সুস্থ রাজনৈতিক চর্চা ও তার সংস্কৃতি, যা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকেই সুরক্ষিত করবে এবং সেই আলোকে চেতনা জাগ্রত হবে।

স্বপ্না রেজা : কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়