সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে শরীফার গল্প বাদ দিতে নোটিস

আগের সংবাদ

লাল-সবুজ পতাকা হাতে সমাবেশ করবে আ.লীগ

পরের সংবাদ

প্রথম বাঙালি নারী চিকিৎসক কাদম্বিনী গাঙ্গুলী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

একটি গ্রন্থ যখন ভারতবর্ষের প্রথম নারী চিকিৎসক আনন্দীবাই গোপালরাও যোশী এবং প্রথম মুসলমান নারী চিকিৎসক জোহরা বেগম কাজীর নামে উৎসর্গীকৃত হয়, অনুমান করা যায় পুরুষশাসিত শিক্ষাঙ্গনে বিশেষ করে নারীর জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানের পাঠশালার বন্ধ দুয়ার কেমন করে খুলল সে কাহিনি এতে লিপিবদ্ধ। গ্রন্থকার আরো সুনির্দিষ্টভাবে এই দুজনের অন্তর্বর্তীকালে আনুষ্ঠানিকভাবে লড়াই করে চিকিৎসাশাস্ত্রে আবির্ভূত প্রথম বাঙালি নারী চিকিৎসক কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর সংগ্রামী জীবন রচনা ও প্রকাশ করেছেন মৃত্যুশতবর্ষে তাকে বিশেষ শ্রদ্ধা জানাতে। ড. মোহাম্মদ আলী খানের শ্রমলব্ধ গবেষণা গ্রন্থটির নাম প্রথম বাঙালি মহিলা চিকিৎসক ডা. কাদম্বিনী গাঙ্গুলী। এই তিনজনের মধ্যে জোহরা বেগম কাজীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ও কিছুটা সময় কথা বলার সুযোগ হয় ২০০২ সালে। অপর দুজন আমার জন্মেরও বহু বছর আগে প্রয়াত।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চিকিৎসাশাস্ত্র পাঠ ও চিকিৎসা চর্চা শুরুর বহু বছর আগেই কেবল পুরুষ নয়, নারীও চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে শুরু করে। প্রাচীন মিসরীয় দলিলে প্রমাণ রয়েছে খ্রিস্টজন্মের ২১৮১ বছর আগে পেসেশেট নারী চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। কিন্তু এই নারী নিজে চিকিৎসক ছিলেন কিনা এ নিয়ে গবেষকরা সন্দিহান, তবে অনেকের অভিমত তিনি ধাত্রীবিদ্যায় আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়েছেন। খ্রিস্টজন্মের ২০৭৫ বছর আগে মেসোপটমিয়ার প্রথম নারী চিকিৎসক উবারটাম, তিনি প্রায় ২৫ বছর চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছেন। হোমারের রচনায় রয়েছে ট্রোজান যুদ্ধের আগে গ্রিক নারী এগামেড রোগবালাই সারাতে পারতেন। এথেন্সের এগনোডাইসকে খ্রিস্টজন্মের চার শতক আগের নিবন্ধনকৃত একজন চিকিৎসক ও ধাত্রী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রোমান লেখক গাইয়াস জুলিয়াস হাইজিনাস (জন্ম খ্রিস্টজন্মের ৬৪ বছর আগে মৃত্যু ১৭ বছর পরে) তার ফ্যাবুলাই গ্রন্থে এগনোডাইসের উল্লেখ করেছেন। তিনি বাস্তবের চিকিৎসক না কল্পলোকের চিকিৎসক- এ নিয়ে বিরোধ রয়েছে। হাইজিনাস মনে করেন নারীর বেলায় চিকিৎসাবিজ্ঞান পাঠ এবং চর্চা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু এগনোডাইস পুরুষের বেশ ধরে এথেন্সের মানুষের জন্য চিকিৎসাসেবা প্রদান করে বেড়াতেন। তিনি আলেকজান্দ্রিয়ার হেরোফিলাসের অধীনে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পাঠ গ্রহণ করেন। প্রসবকালীন চিকিৎসা গ্রহণে গ্রিক নারীরা তখন নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছিলেন, তারা পুরুষ ডাক্তারের সেবা নিতে চান না। এগনোডাইস নিজের প্রকৃত পরিচয় নারীদের কাছে জানানোর পর তারা চিকিৎসা নিতে সম্মত হন। সে সময়ও চিকিৎসা প্রদানের জন্য কোনো লাইসেন্স প্রাপ্তির বাধ্যবাধকতার সিদ্ধান্ত হয়নি। দ্বাদশ শতকের দুই নারী চিকিৎসক সলিসিটা ও মাতিলদা ফোর্ড ইংল্যান্ডের প্রথম দিককার ‘মেডিকা’দের অন্যতম। মেডিকা বলা হতো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের।
১৩৯০ সাল থেকে একটানা ৫০ বছর ইতালির বলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন একজন নারী চিকিৎসক ডরটিয়া বুক্কা। সে সময় চিকিৎসক হিসেবে যে ক’জন নারী খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন আবেলা, জ্যাকুলিন ফেলিস দ্য আলমানিয়া, আলেসান্দ্রা গিলিয়ানি, মার্গারিটা, মার্কিউরিয়াদ, কন্সট্যান্স ক্যালেডা, কনস্ট্যাঞ্জা, মারিয়া ইনকার্নাটা প্রমুখ।
একাদশ ও দ্বাদশ শতকে মুসলমান নারী চিকিৎসকের অভ্যুদয় ঘটলেও তাদের সম্পর্কে পৃথক কোনো গ্রন্থাবলি পাওয়া যায়নি। নারীর সংবেদনশীল অঙ্গ পরীক্ষার জন্য পুরুষ ডাক্তার তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কোনো নারীকে প্রশিক্ষিত করে তুলতেন। ইবনে খালদুন নারীর এই চিকিৎসা-সম্পৃক্ততাকে মহান কাজ ও সভ্যতার জন্য আবশ্যকীয় বৃত্তি বলে উল্লেখ করেন।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি- এমডি লাভ করা প্রথম নারী জার্মান ডরোথিয়া ক্রিস্টিয়ান এরক্সলেবেন (১৭৫৪)। অবশ্য তার ১২ বছর আগে ফরাসি নারী ফ্রাঁসোয়া ম্যাডেলিন ক্যালাইস ডেন্টিস্ট হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। তিনি ইউরোপের এবং পৃথিবীর প্রথম স্বীকৃত নারী ডেন্টিস্ট। ডিগ্রিপ্রাপ্ত প্রথম নারী চিকিৎসক ডরোথিয়া ক্রিস্টিয়ান এরক্সলেবেনের জন্ম ১৩ নভেম্বর ১৭১৫ জার্মানির ছোট শহর কুইডলিনবার্গে; তার বাবা ক্রিস্টিয়ান পলিকার্প ল্যাপোরিন ছিলেন একজন প্রগতিমনা চিকিৎসক। তার ছেলে টোরিয়াসের সঙ্গে মেয়ে ডরোথিয়াও ল্যাটিন, গণিত এবং বিজ্ঞান পড়তে শুরু করেন। ক্রিস্টিয়ান মনে করতেন মেধাবী নারীর মেধার অপচয় ঘটছে রান্না ঘরে। ভাই টোরিয়াস যখন হ্যালে বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাশাস্ত্র পড়ার আবেদন করলেন, ডরোথিয়াও তাকে অনুসরণ করে। ছেলের জন্য অনুমোদন গ্রহণের প্রয়োজন নেই কিন্তু বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিরোধ ঠেকাতে ডরোথিয়ার বাবাকে বিশাল প্রæশিয়ান সাম্রাজ্যের প্রধান সম্রাট ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেটের কাছে আবেদন করে মেয়েকে মেডিকেল পড়ানোর অনুমোদন গ্রহণ করতে হলো। বিরুদ্ধাচারীরা বললেন, যেহেতু আইন নারীকে চিকিৎসক হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি নয়, ডরোথিয়ার এই মেডিকেল পাঠ সম্পূর্ণ অপচয় মাত্র। চিকিৎসাবিজ্ঞানসহ সব ক্ষেত্রে নারীর পড়াশোনার আবশ্যকতার ওপর একটি গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশ করলেন। কিন্তু তাকে মেডিকেল পড়া থেকে প্রতিহত করার চেষ্টা অব্যাহত থাকল। ২৬ বছর বয়সে ডরোথিয়া ৫ সন্তানের জনক ইউহান এরক্সলেবেনকে বিয়ে করে মেডিকেল পড়া সাময়িকভাবে স্থগিত রাখেন। এর মধ্যে তিনিও চার সন্তানের জননী হন। স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন। পিতা ও স্বামী উভয়ের মৃত্যুর পর তিনি সন্তান লালনের পাশাপাশি অসমাপ্ত চিকিৎসা শাস্ত্র পাঠে ফিরে যেতে চান। কিন্তু সন্তানদের নিয়ে টিকে থাকার জন্য তিনি বিনা ডিগ্রিতেই চিকিৎসাসেবা দিতে শুরু করলেন। দ্রুত তার পসার জমল। যাদের রোগী নারী চিকিৎসকের কাছে চলে এসেছে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে চিকিৎসা পেশা থেকে তাকে উচ্ছেদ করার মামলা করলেন। আদালতের মাধ্যমে মামলাটি সম্রাট ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেটের কাছে এলো। তিনিই এ নারীর জন্য বিশেষ অনুমতি দিয়েছিলেন, ফলে তিনি সহানুভূতিপ্রবণ ছিলেন। এবার আদেশ দিলেন তাকে অবশ্যই পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিতে হবে। পাস করে এমডি ডিগ্রি লাভ করলেই কেবল চিকিৎসা করা অব্যাহত রাখতে পারবেন। কিছুদিন পড়াশোনা করে পরীক্ষায় বসলেন এবং ভালোভাবেই উত্তীর্ণ হলেন। ১২ জুন ১৭৫৪ ডরোথিয়া এমডি ডিগ্রি লাভ করে পুরুষ ডাক্তারদের ভ্রæকুটি উপেক্ষা করে আবার চিকিৎসা করতে শুরু করলেন। এমনিতেই তিনি সফল ও জনপ্রিয় চিকিৎসক ছিলেন, ডিগ্রি লাভ তার প্রসার আরো বাড়িয়ে দিল। ১৩ জুন ১৭৬২ ডরোথিয়া মৃত্যুবরণ করেন।
ভারতবর্ষের প্রথম নারী চিকিৎসক আনন্দীবাই গোপালরাও যোশী (জন্ম ৩১ মার্চ ১৮৬৫, মৃত্যু ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৮৮৭) প্রথম ভারতীয় আধুনিক চিকিৎসক। মারাঠি চিৎপবন ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম নেয়া আনন্দীবাইর পিতৃপদত্ত নাম যমুনা, ৯ বছর বয়সে স্ত্রীহারা গোপালরাও যোশীর সঙ্গে বিয়ে হয়। স্বামী ডাক অফিসের কেরানি, নাম দেন আনন্দী। ১৪ বছর বয়সে তিনি পুত্র সন্তানের জননী হলেন। মাত্র ১০ দিন বয়স না হতেই বিনা চিকিৎসায় এই সন্তানের মৃত্যু তাকে নাড়া দেয়।
স্বামীর সঙ্গে কলকাতা এলেন, সংস্কৃত ও ইংরেজি শিখলেন, স্বামীই তাকে চিকিৎসক হতে অনুপ্রাণিত করেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির থিওডেসিয়া কার্পেন্টার তার স্বামীর লেখা প্রিন্সটন মিশনারি রিভিওতে প্রকাশিত একটি চিঠি পড়ে আনন্দীকে পেনসিলভানিয়া ওমেনস মেডিকেল কলেজে আবেদনের পরামর্শ দেন। বিদেশে গিয়ে একজন নারীর ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছাকে নিন্দা করার মতো লোকের অভাব ছিল না। তিনি দমে যাননি, ভারতে নারী চিকিৎসকের প্রয়োজনীয়তার ওপর বক্তৃতা দিয়েছেন। তার চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়াশোনার খরচ জোগাতে কেউ কেউ এগিয়েও এসেছেন। ১৮৮৬ সালে তিনি এমডি ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফেরেন এবং আলবার্ট এডওয়ার্ড হসপিটাল কোলাপুরের ফিমেল ওয়ার্ডের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দুর্ভাগ্য য²ায় আক্রান্ত হয়ে পরের বছরই আনন্দীবাই যোশী প্রয়াত হন।
মোহাম্মদ আলী খান বেশ খেটেখুটে কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর একটি জীবনচরিত রচনা করেছেন। অসনাতন কাজ করার আগ্রহ তার নতুন নয়। কর্মজীবনে আমলা এই মানুষটি তার পূর্বসূরি আইসিএস আমলাদের ডকুমেন্টেশনের অভ্যাসটি পেয়েছেন এবং এই ধারায় জেলা-উপজেলার স্থানীয় ইতিহাস রচনায় শ্রমের স্বাক্ষর রেখেছেন। কাদম্বিনী গাঙ্গুলীকে স্মরণ করেন বলে যারা দাবি করেন, তাদের বড় অংশ আসলে তার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না এবং তারা জানতে আগ্রহী সেটাও জোর দিয়ে বলার সুযোগ কম।
কাদম্বিনীর বাবার বাড়ি বরিশালের চাঁদশী গ্রামে। অন্তত এ কারণেও তো আমরা দাবি করতে পারতাম, ‘আরে ও তো আমাদেরই মেয়ে; আমাদের ব্রজকিশোর বসু। ওই যে মাস্টারমশাই ব্রজবাবু, বরিশাল থেকে সেই ভাগলপুর গিয়ে খুব নামধাম করেছেন।’
কেউ যদি বলতেন, ‘তাই নাকি?’ আমরা জোর গলায় আরো বলতে পারতাম- ‘ব্রজকিশোরের বড়দিওতো অবশ্যই আমাদের, তার ছেলেই না ব্যারিস্টার মনমোহন ঘোষ’।
খুব করে যদি আমরা কাদম্বিনীকে মনে করতাম তাকে নিয়ে বাংলাদেশে একটা বই লিখতে তার মৃত্যুর পর আমাদের কি একশ বছর অপেক্ষা করতে হয়! তবুও মোহাম্মদ আলী খানকে ধন্যবাদ, অন্তত তিনি যে স্মরণ করেই থেমে থাকেননি, যথেষ্ট শ্রম দিয়ে প্রায় ২শ পৃষ্ঠার বইটি বাজারে এনেছেন। প্রথম সংস্করণ শেষ হতে সময় লাগেনি, মৃত্যুশতবর্ষেই বইটির দ্বিতীয় সংস্করণও প্রকাশিত হয়েছে।
আমরা বেশ করে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলি, সমতার কথা বলি, আমাদের চোখে নারী-পুরুষ ভেদাভেদ নেই সে কথাও বলি। কিন্তু নির্মম সত্যটি হচ্ছে, কাচের দেয়ালে চারদিক থেকে ঘিরে নারীর এগোবার পথটি আটকে রাখি। খুব সহজ নয় এই দেয়াল ভাঙা। ভেতর থেকে যারা ভাঙার চেষ্টা করেছেন যাতনাও তেমন পেয়েছেন।
দিন অবশ্যই বদলেছে, অনেকটাই, বাংলাদেশে তো বটেই। পাবলিক পরীক্ষায় গড়পড়তা মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে ভালো রেজাল্ট করছে, মেডিকেল কলেজে মেয়েরা আগের চেয়ে অনেক বেশি চাঞ্চ পাচ্ছে, ফলাফলে ছেলেদের টপকে যাচ্ছে। কারচুপি করে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া, ভুয়া এমবিবিএস ও অন্যান্য ডিগ্রি জোগাড় করা- এ ধরনের অপকর্মেও তারা এখন পিছিয়ে নেই।
***
শুরুটা কোথায়- বিশেষ করে বাঙালির জন্য?
প্রথম যিনি পাথর ছুড়ে কাচের দেয়ালে একটুখানি ফাটল ধরিয়েছিলেন তিনিই পরিবর্তনের জননী, তার নামই ডাক্তার কাদম্বিনী গাঙ্গুলী, আমাদের চাঁদশীর ব্রজকিশোর মাস্টার মশাইয়ের মেয়ে। তার সংগ্রামী যে জীবনের ছোঁয়াটুকু লেখক লাগিয়ে গেলেন সংবেদনশীল কোনো কথা কারুকার এটাকে পুঁজি করেই একটি আস্ত জীবনোপন্যাস নামিয়ে দিতে পারেন। নারী তীর্থ ‘রান্নাঘর’ তত্ত্ব পাশ কাটিয়ে ১৯৭৮ সালে কাদম্বিনী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনট্র্যান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। কিন্তু পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি পাওয়াটাও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার চেয়ে ঢের বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়। নারীকে কেন এনট্র্যান্স পাস হতে হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজ ভাইস চ্যান্সেলর না হলে সেকালে মেয়েদের পরীক্ষায় বসার অনুমোদন আদৌ দেয়া হতো কিনা সে সন্দেহে তো থাকলই। অনুমোদনের সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর ১৮৭৭-এর ২২ নভেম্বর সমাচার চন্দ্রিকা যা লিখেছে তার উদ্বৃতি আবশ্যক- ‘…আমরা স্ত্রী শিক্ষার বিরোধী নহি। কিন্তু তাহাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধি লইয়া যে কি ফল হইরে, বালিতে পারি না। বাঙ্গালী মেয়েরা কি বিএল পরীক্ষা দিয়া আদালতে ওকালতি করিবেন? আমরা দেখিতেছি ইংরাজি সভ্যতা প্রবেশ করাতে এদেশের সর্বনাশ হইল।’ (প্রথম বাঙালি মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী বসু থেকে উদ্ধৃত)
অতঃপর কী হতে পারে? কাদম্বিনীরা পরীক্ষায় আরো পাস দেবেন, বিলেত যাবেন, জাত-ধর্ম সব খোয়াবেন!
হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মরণ করতে হয়। ১৪০ বছর আগে বঙ্গদর্শনের কার্তিক সংখ্যায় প্রকাশিত তার ‘হায় কি হলো’ নামের দীর্ঘ কবিতার একটি চার পঙ্ক্তির অনুচ্ছেদ :
হায় কি হলো দেশের দশা বিলেত গেল রমা
তিন দিন না যেতে যেতে খ্রীস্ট ভজে, ওমা।
পুরুষ পাছে মেয়ে আগে সুফল তাতে ফলবে না
চাই এদেশে আর কিছুদিন এ দিশী ‘জানানা’।
হারানচন্দ্র রাহার কবিতায় বিলেত ফেরত যুবকের স্ত্রী বলছেন :
আমি ত হব না বিবি যাবৎ জীবন
কেমন ঘোমটা খুলে
লাজ লজ্জা সব ভুলে
করিব পরের সনে বাক্য আলাপন?
শরমে যে মরে যাই ভাবিতে এমন!
দ্বিতীয় শ্রেণিতে এনট্র্যান্স পাস করে কাদম্বিনী ‘বঙ্গীয় রমণীকুলের মুখোজ্জ্বল করেছেন বটে, কিন্তু তারপর হবে কী? এ প্রশ্ন সংবাদ প্রভাকরের, ‘…আমরা জিজ্ঞাসা করি যে শ্রীমতি কাদম্বিনী এক্ষণে কোন বিদ্যালয়ে পড়িবেন? যুবকদের সহিত কোন কলেজে পাঠ করা সম্পূর্ণ অসম্ভব এবং অন্য বিদ্যালয়ই-বা কোথায়?’ (আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়