সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে শরীফার গল্প বাদ দিতে নোটিস

আগের সংবাদ

লাল-সবুজ পতাকা হাতে সমাবেশ করবে আ.লীগ

পরের সংবাদ

‘জীবনে যেটা পাওয়ার সেটা ঠিক পাব’

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

খুব বেছে ছবি করেন মমতা শঙ্কর। কিন্তু নিত্যনতুন চরিত্রের চ্যালেঞ্জ এখনো তাকে টানে। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত ‘বিজয়ার পরে’। ছবিটি নিয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও ঘুরে গেলেন তিনি। সিনেমা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারের চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো মেলার পাঠকদের জন্য

ঢাকায় চলচ্চিত্র উৎসবে এসে কেমন লাগছে?
দেখুন না, সন্ধ্যায় হোটেলে না থেকে চলে এলাম, আপনাদের সঙ্গে থাকবো বলে। আর বাংলাদেশ এত ভালো ফিল্ম তৈরি করে! আপনারা যেভাবে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল আয়োজন করেছেন তা ভীষণ ভালো। আপনাদের প্রধানমন্ত্রী এরকমভাবে ডেকেছেন। এতক্ষণ কথা বললেন, আমি মুগ্ধ। আমাদের সিনেমাটাও দেখানো হলো। এখানে যেরকম সাড়া পেলাম, ভাবা যায় না। অসাধারণ। বাংলাদেশের এই জিনিসটাই আমার ভালো লাগে, লোকের মনের ছোঁয়াটা পাওয়া যায়। বৃষ্টিতে লাইন ধরে সবাই দাঁড়িয়েছিল। কী করে যে এত ধৈর্য্য! অনেক মানুষ ফিরেও গেছেন, ছবি দেখতে না পেরে। এত মানুষ হয়েছিল।

ছবির প্রচারের জন্য এত সাক্ষাৎকার দিতে
আপনার ভালো লাগে?
যখন বুঝতে পারি নিজের ভালোর জন্য কাজটা করছি, ছবির ভালোর জন্য করছি, তখন অসুবিধা হয় না। আমি যেমন গতকাল শান্তিনিকেতনে ছিলাম ছেলে-বৌমা-নাতিদের সঙ্গে। কিন্তু আজ আমায় প্রচারের জন্য চলে আসতে হলো। আমাদের কাজের তো এটা অঙ্গ। পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে কখনো কখনো অংশ না নিতে পারলে খুব কষ্ট হয়। কিন্তু কিছু পেতে গেলে কিছু ছাড়তে হবে। এগুলো ছাড়ার পরিবর্তে আমি যতটা ভালোবাসা পাই, সেটা সব পুষিয়ে দেয়।

গত বছরের শেষে ‘প্রধান’ মুক্তি পেয়েছিল।
সেই ছবিও তো বেশ ভালোবাসা পেয়েছে।
‘প্রধান’-এ আমি খুব খারাপ। আমি একদম ভালো করিনি। আমার তেমন কিছু করার ছিলও না অবশ্য। আমার নিজেকে ভীষণ খারাপ লেগেছে।

নিজের অভিনয় নিয়ে আপনি কি খুব খুঁতখুঁতে?
ভীষণ! আমার নিজের খুব কম কাজ আমার ভালো লেগেছে।

কোনগুলোকে তালিকার শীর্ষে রাখবেন?
ও বাবা! (একটু ভেবে) মৃণালদার (সেন) ছবির মধ্যে ‘খারিজ’ ভালো লাগে। একটু ভালো করেছি মনে হয়। মানিক কাকার (সত্যজিৎ রায়) কাজগুলোর মধ্য ‘আগন্তুক’-এ আমি সামান্য ভালো। তবে আমার এত দিনের অভিনয়জীবনে কখনো এতটা কঠিন চরিত্র করিনি, যতটা ‘বিজয়ার পরে’তে করেছি। সেটা যদি দর্শকের ভালো লাগে, তাহলে এই ছবির নামও আমার তালিকায় থাকবে।

অভিনয়ের মতো ছবি বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও তো
আপনি বেশ খুঁতখুঁতে?
হ্যাঁ। আমি ছবি ভীষণ বাছাই করে করি। সব ছবিতে রাজি হই না। কিন্তু কখনো কখনো হয়তো বন্ধুত্বের খাতিরে বা খুব আবদার করে কেউ কেউ আমায় বলে, ‘মমদি, একটু ছবিটা করে দাও।’ তখন না করতে পারি না। এমন কিছু ছবি হয়ে গিয়েছে যেগুলোয় মন থেকে সায় ছিল না। কিন্তু না হলে আমি চিত্রনাট্য বা আমার চরিত্রটা অপছন্দ হলে একেবারেই করি না।

খুঁতখুঁতে মমতা শঙ্করের মন জয় করতে একজন
পরিচালককে কী কী মাথায় রাখতে হবে?
আমি প্রথমেই দেখি পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে কেমন লাগছে। যদি কথা বলে বুঝতে পারি, যে ভাবে তিনি কোনো গল্প ভেবেছেন, সেটা করার মতো যোগ্যতা বা আত্মবিশ্বাস তার রয়েছে, তখন আমি বাকি সব দেখি। আমার চরিত্রটা কেমন, সেটা দেখি। তবে সব সময় যে ঠিক বুঝি, তা-ও বলতে পারব না। অনেক সময় খুব বেশি জটিল, ইন্টেলেকচুয়াল চিত্রনাট্য হলেও আমার ভালো লাগে না।

আপনি সাধারণত যেমন ছবি করতে পছন্দ করেন, গত বছরের ‘শিবপুর’ তার চেয়ে অনেকটা আলাদা ছিল।
ঠিকই। ‘শাহজাহান রিজেন্সি’ও একদম অন্য রকম ছবি ছিল। জানি না কেন, এই বয়সে এসে লোকে আমায় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চাইছে। সেটা অবশ্য আমার ভালোই লাগছে। আগে আমায় নিয়ে একটা ধরাবাঁধা ধারণা ছিল। ‘মমদি এটা করতে পারবে, ওটা পারবে না’। এখন সেটা ভাঙছে। অভিনেত্রী হিসেবে আমি নিজেকে অনেক বেশি ঋদ্ধ করতে পারছি। তবে সব চরিত্র আমি করি না।

কেন, কিসে বাধে?
আমায় মাথায় রাখতে হয় যে, আমি একটা নাচের স্কুলও চালাই। আমার নৃত্যশিল্পী হিসেবে একটা পরিচয় রয়েছে। এমন কিছু করব না যেটা অন্য কেউ করলে আমি নাক সিঁটকে বলতাম, ‘উনি কেন এমন করলেন!’ এটা নিজের ক্ষেত্রেও কাজে লাগাই। আমি জানি, আমার ছাত্রছাত্রী রয়েছে। তারা যেন আমায় দেখে না ভাবে, ‘মম মাসি এটা কী করে করলেন’! একটা ছবি করেছিলাম, যেখানে একটি দৃশ্যে আমায় সিগারেট হাতে বসতে হয়েছিল। আমি বলেছিলাম, আমি খাব না। বোঝাবার জন্য হাতে নিয়ে বসতে পারি। সেই দৃশ্যটা দেখে একটা বাচ্চা ঘুরে বসেছে পুরো। বলে, ‘ওটা মম মাসি না।’ আমার সব সময়ই মনে হয়, ছাত্রছাত্রীদের মনে আমি দুঃখ দিতে পারব না।

ক্যামেরায় নিজেকে কেমন লাগছে, সেটা নিয়ে ভাবেন?
বয়স অনুযায়ী সুন্দর দেখালেই হলো। আমি তো স্নান করে অর্ধেক সময় ক্রিম পর্যন্ত লাগাই না। কী হবে! ভগবান যা দিয়েছেন তাতেই আমি খুশি। এখন অনেকে ছুরি-কাঁচি চালিয়ে খোদার ওপর খোদকারি করে। কিন্তু আমার ভীষণ ভয় লাগে। ও সব করতে গিয়ে আমার মুখ যদি বিগড়ে যায়।
নাচ কি আপনার জীবনে বেশি প্রাধান্য পায়?
না, এখন দুটি সমান। নাচ আর সিনেমার আমার কাছে ?একে অপরের পরিপূরক। দুটি আমার কাছে আমার দুই ছেলে রাতুল আর রজিতের মতো। বা আমার দুই বৌমার মতো। দুজনেই খুব ভালো। আসলে দুজনেই তো ছোটবেলা থেকে আমার কাছে নাচ শিখেছে। সুতরাং তাদের কাছে আমি মম মাসি থেকে মা হয়ে গিয়েছি।

ছেলে-বৌমাদের সঙ্গে যতটা ভালো সম্পর্ক, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে বা নতুন প্রজন্মের সঙ্গে তত সহজে
নিজেকে মেলাতে পারেন?
আমার হয়তো খুব বয়স হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমার ভেতরটা এখনো শিশুর মতো। আমায় যখন কখনো কোনো বড় কমিটির সদস্য হতে বলা হয় বা কোনো প্যানেলে ডাকা হয়, প্রথমেই ভাবি, ‘এ মা! আমি এত ছোট। আমায় ডাকছে কেন’! তার পর মনে পড়ে, বাস্তবে তো আমার বয়স অনেকটাই হলো। তবে আমার নাতির বয়স এখন পাঁচ হলো। সত্যি বলছি, আমার মনে হয়, বাড়িতে বোধ হয় আমি ওর চেয়েও ছোট!

আর বাড়ির বাইরে? নতুন প্রজন্মের সঙ্গে
কাজ করতে কেমন লাগে?
খুব সহজে ওদের সঙ্গে মিশে যেতে পারি। একটা সময় মনে হয়েছিল, আমি অনেকটা সিনিয়র হয়ে গিয়েছি। এবার একটু প্রাইভেসির প্রয়োজন। তখন আলাদা মেকআপ রুম চাই। তার পর এখন দেখি, আমার ঘরেই সবাই সারা ক্ষণ এসে আড্ডা দিচ্ছে। আমি সেটা খুব উপভোগ করি। ছোটদের সঙ্গে কাজ করার একটা মজা আছে। ওদের কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখতে পারি। শেখার তো কোনো শেষ নেই। যদি এমন কাউকে পেয়ে যাই, যার নিজেরও খুব শেখার ইচ্ছা, তা হলে তো খুব সুন্দর আদান-প্রদানের একটা জায়গা তৈরি হয়।

‘বিজয়ার পরে’ ছবিতে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের আপনার মেয়ের চরিত্রে। তার সঙ্গে এমন কোনো জায়গা তৈরি হলো?
স্বস্তিকা এখন নিজের মেয়ের মতো হয়ে গিয়েছে। ওর বাবা, মানে সন্তুদার (মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে কত ছবি করেছিলাম। ওর সঙ্গেও তো কতগুলো ছবি হয়ে গেল! ‘জাতিস্মর’, ‘শাহজাহান রিজেন্সি’, ‘শিবপুর’ আর এখন এটা। তাই স্বস্তিকাকে আমার নিজের ছানাপোনার মতো মনে হয়।

এই সন্তানসম পরিচালকরা কখনো আপনার কাছে যদি এমন কোনো চরিত্রের প্রস্তাব দেন, যার সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারেন না, তা হলে করবেন?
আমি তো ‘শাহজাহান রিজেন্সি’র সময়ই নিজেকে মেলাতে পারছিলাম না। ছবিটার সব কিছুই ঠিক ছিল। কিন্তু হোটেলের সিনটা আমার একটু … আমার মনে হয়েছে ওটার দরকার ছিল না। সাজেস্টিভ হলেও হতো। আমার ভালো লাগেনি।

নাচ আর সিনেমা আপনার কাছে পরিপূরক।
কখনো কোরিওগ্রাফি করার কথা ভাবেননি?
‘বিজয়ার পর’ ছবিতে একটি নাচের দৃশ্যে করেছি। আমার ছাত্রীরাও আমায় সাহায্য করেছে। তার আগে ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘আবহমান’-এ করেছিলাম। সঞ্জয় লীলা বানসালির ছবিতে চারটি গান করার কথা ছিল। কিন্তু কিছুতেই করে উঠতে পারলাম না। একবার ঐশ্বরিয়ার (রায় বচ্চন) পা মচকে গেল। একবার আমি ব্যস্ত হয়ে গেলাম। সে সময় আবার বাবার শতবর্ষ ছিল। আর একবার আমায় সঞ্জয় বলল, ‘দিস টাইম ইউ হ্যাভ টু ডু।’ কিন্তু সেবারও কোনো কারণে হলো না। তবে মনে হয়, জীবনে যেটা আমার পাওয়ার সেটা ঠিক পাব। যেটা পাওয়ার নয়, সেটা পাব না। যেমন বলিউড থেকে এখন অনেক প্রস্তাব পাচ্ছি। ওটিটির কাজ অনেক আসছে। কিন্তু ওটিটিতে আমি ঠিক স্বচ্ছন্দ নই। আসলে নাচের স্কুল রয়েছে। এমনিতেই সাই বাবার আশীর্বাদে সিনেমার কাজ বাড়ায় সেখানে একটু কম সময় দিতে পারি। তার ওপর যদি মুম্বাইয়ে গিয়ে বেশি কাজ করতে হয়, তাহলে আরো অবহেলা হবে। আমায় তো দুই দিকই সামলে চলতে হবে।

:: মেলা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়