গাবতলীতে ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা

আগের সংবাদ

রাজপথে ফের শক্তির মহড়া

পরের সংবাদ

সরকারবিরোধীরা আন্দোলন ও মিডিয়ার আলোচনায় ফিরে আসছে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলগুলো এক দফার আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার পর নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করাতেও ব্যর্থ হয়েছে। ৭ জানুয়ারি যথারীতি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছে। ১১ জানুয়ারি সরকার গঠিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশ এবং সরকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত টানা চতুর্থ মেয়াদের সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে। নতুন সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার প্রতিশ্রæতিও জানিয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকারে কয়েকজন নতুন মুখ এসেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করাকে প্রাধান্য দিয়ে সরকার কাজ শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কোনোভাবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব মহলকে নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সবাই আশা করছে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া সম্ভব হলে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যেতে পারে।
অন্যদিকে আন্দোলনরত বিরোধী দলগুলো নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে যাত্রীবাহী বাস ট্রেনে অগ্নিসংযোগ, কয়েকজন মানুষের অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু ছাড়া তেমন কিছু দেখাতে পারেনি, নির্বাচনও পণ্ড করতে পারেনি। তবে আন্দোলনরত দলগুলো একসময় বলেছিল সরকারকে বিদায় নিতেই হবে, জনগণ সরকারকে ক্ষমতা থেকে টেনে হিঁচড়ে নামাবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়াও হবে না, নির্বাচন কমিশনও সরকারের সঙ্গে বিদায় নেবে- এমন ভাষাতেই কথা বলেছিল। কিন্তু একে একে তাদের সব হুঙ্কারই অসাড় প্রমাণিত হলো। তফসিল ঘোষণার আগে দলগুলো দাবি করেছিল তফসিল ঘোষণা করতে নির্বাচন কমিশনকে সুযোগ দেয়া হবে না। কিন্তু ১৫ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল ঘোষণার পর দলগুলোর নেতারা দাবি করেছিল ৭ তারিখ নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। সরকারের পতন ঘটবেই। যুগপৎ আন্দোলনকারীদের এসব হুঙ্কার গণমাধ্যমগুলোতে দিনব্যাপী আলোচনার প্রধান উপজীব্য হিসেবে স্থান পেয়েছিল। হরতাল-অবরোধ ডেকে যুগপৎ আন্দোলনকারীরা মিছিল সমাবেশ আর হুঙ্কার ছড়াত। গণমাধ্যমগুলোতে তার কিছু অংশ প্রচারিত হতো। নামসর্বস্ব বেশ কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় প্রেস ক্লাব, বিজয়নগর সড়ক, তোপখানা রোড এলাকার মধ্যেই তাদের মিছিল এবং সমাবেশ অনুষ্ঠিত করত। তাদের নেতাদের মুখ থেকে নির্বাচন হবে না, করতে দেয়া হবে না এসব কথাই উচ্চারিত হতো। প্রধান দল বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গুপ্ত স্থান থেকে অনলাইনে নানা ধরনের শব্দ জুড়িয়ে তাদের আন্দোলনের বিজয় সুনিশ্চিত হওয়ার দাবি করতেন। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও মিছিলের ফটোসেশন করে তিনি অন্তর্ধান হতেন। বিএনপির অধিকাংশ মিছিল টেলিভিশনের পর্দাতেই খবর হয়ে দেখা দিত। ছাত্রদল, যুবদলের কিছু নেতা গাড়ি ভাঙচুর পোড়াপুড়ি, রেলে অগ্নিসংযোগের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিল। ফলে মাঠে বিএনপির উপস্থিতি তেমন জোরালো ছিল না। গণতন্ত্র মঞ্চের কয়েকজন নেতা এবং কিছু কর্মী অবরোধ ও হরতালের দিনগুলোতে মিছিল ও বক্তৃতা করতেন, নির্বাচন প্রতিহত করার হাঁকডাক দিতেন। গণতন্ত্র মঞ্চে ৬-৭টি রাজনৈতিক দল থাকলেও তাদের জনসমর্থন প্রায় শূন্যের কোটায় হলেও নেতারা নির্বাচন যেভাবে প্রতিহত করার ডাক দিতেন তা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দেখা যেত, শোনা যেত। কিন্তু তাদের ডাকে সাড়া দেয়ার মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
নির্বাচনের কদিন আগ থেকে বিএনপির কিছু সিনিয়র নেতা জনগণকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিতরণ করতে গণমাধ্যমে দেখা গেছে। ৭ তারিখ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনকারীদের ভাষার পরিবর্তন ঘটে। তারা তখন দাবি করেন যে, বিদেশিরা এই নির্বাচন এবং সরকারকে স্বীকৃতি দেবে না। কিন্তু নির্বাচনের পরপরই ঢাকাস্থ বিদেশি দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতগণ সরকারকে অভিনন্দন জানাতে গণভবন এবং মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। বিরোধীরা বিদেশিদের এসব তৎপরতা সম্পর্কে কিছু বলতে চায়নি। তারা দাবি করেছিলেন যে নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করেনি। জনগণকে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার যে দাবি জানিয়েছিলেন সেটি সফল হয়েছে। নির্বাচনের পর কয়েক দিন নির্বাচন সম্পর্কে যুগপৎ আন্দোলনকারী সব দলের নেতা একই ভাষায় কথা বলেছেন। ইতোমধ্যে সরকার গঠিত হয়েছে। বিদেশিরা সরকারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রæতি জানাচ্ছে। কিন্তু বিরোধীদের নির্বাচন এবং সরকার গঠন সম্পর্কে বক্তব্য একই এলাকায় এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোতে নিয়মিত শোনা যাচ্ছে। তবে বিএনপির কয়েকজন নেতা এই সরকারকে পশ্চিমারা স্বীকৃতি দেবে না মর্মেও দাবি করতে থাকে। জাতিসংঘের মহাসচিব শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নতুন মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার জন্য অভিনন্দন জানিয়ে যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন- সেটি নিয়ে বিএনপির নেতারা জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ডেকে সন্দেহ প্রকাশ করলেন। এমনকি সেই চিঠির ভাষা নিয়েও নানারকম কথা বলে মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে জাতিসংঘের মহাসচিবের অভিনন্দন পত্রটি যে ভুয়া নয় কিংবা তাতে যেসব বক্তব্য রয়েছে এর কোনোটি বানোয়াটও নয়- এমনটি গণমাধ্যম থেকে যখন জানা গেল, তখন সংবাদ সম্মেলনে যেসব নেতা ঠাট্টা, মশকরা, তিরস্কার এবং হুমকি-ধমকি দিয়ে যেসব কথা বলেছিলেন তাতে তাদের লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়েছে। বিএনপির প্রবীণ নেতা ড. মঈন খান নির্বাচনের কিছু আগে থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই নানা কথা বলে থাকেন। তিনি দাবি করেন দেশে কথা বলার স্বাধীনতা নেই, ভোট দেয়ার স্বাধীনতা নেই, গণতন্ত্র নেই।
অথচ তার সব কথাই গণমাধ্যমে হুবহু প্রচারিত হচ্ছে। যুগপৎ আন্দোলনকারী গণতন্ত্র মঞ্চের তিন-চারজন নেতা আছেন যাদের সম্পর্কে আগে খুব বেশি মানুষ জানত না। তাদের এখন প্রতিদিনই বিভিন্ন টেলিভিশনে টকশোতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তারা তো তাদের কথা বলেই যাচ্ছেন। তারা গণতন্ত্র, নির্বাচন, বাকস্বাধীনতা, বাংলাদেশের অর্থনীতি, পশ্চিমা দেশের সমর্থন না পাওয়া ইত্যাদি নিয়ে তাদের মতো করে কথা বলছেন। অন্য দলগুলোর তেমন কার্যক্রম দেখা যায় না। তবে মাঝেমধ্যে দুয়েকজন নেতা কথার বোমা ফাটানোর চেষ্টা করেন। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রতিদিনই সাংবাদিকদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার মতো করে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন। বিএনপি ২৬ জানুয়ারি সারাদেশের জেলা সদর ও ২৭ জানুয়ারি সব মহানগরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ ও কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে কালো পতাকা মিছিল করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। বিএনপি এখন একা একাই এসব কর্মসূচি দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। অন্যদিকে গণতন্ত্র মঞ্চ ৩০ জানুয়ারি সংসদ অধিবেশন শুরুর দিন প্রতিবাদ সমাবেশ করার কর্মসূচি দিয়েছে। নাগরিক ঐক্যের প্রধান মাহমুদুর রহমান মান্না স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন। গণঅধিকারের নেতাকর্মীদের বিজয়নগর এলাকায় মিছিল এবং সমাবেশ করতে দেখা যায়। অন্যদের এখন আর ততটা সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে না। বোঝাই যাচ্ছে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনকারী অন্য দলগুলো এখন হয় কিছুটা বিরতি, নতুবা মতানৈক্য ভেতরে ভেতরে চলছে। কালো পতাকার মিছিল নিয়ে বিএনপির ডাকা কর্মসূচি সম্পর্কে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা কিছু জানেন না বলে টিভি টকশোতে বলছেন। তারা অবশ্য এ কথাও বলছেন যে, গোটা আন্দোলন নিয়ে তারা এখন আলোচনা-পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে কর্মসূচি দেবেন। তবে তাদের আন্দোলনের ধরন কী হবে, কখন থেকে হবে সেটিও তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ এখনো জেল থেকে বের হতে পারেননি।
আবার কেউ কেউ জাতীয় প্রেস ক্লাব সড়কে সমাবেশ করছেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন, সরকারের পদত্যাগও দাবি করছেন। পশ্চিমা বিশ্ব এই সরকারকে দেখতে চায় না, বাংলাদেশ বন্ধুহীন হয়ে পড়ছে- সে কথাও কেউ কেউ উচ্চারণ করছেন। বোঝাই যাচ্ছে বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনকারীদের আন্দোলন এখন খুব একটা জমানো যাচ্ছে না। তারপরও বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে প্রেস ক্লাব এলাকায় কিংবা ভেতরে তাদের ছোটখাটো সমাবেশ করতে দেখা যায়। বিভিন্ন টেলিভিশন সেসব সমাবেশে দেয়া বক্তৃতার অংশবিশেষ প্রচারও করে থাকে। টেলিভিশনগুলো সরকার এবং বিরোধী যে পক্ষেরই সমাবেশ কিংবা সংবাদ সম্মেলনের কথাবার্তা থাকে তা প্রচার করে থাকে। তবে সরকারবিরোধীদের সময়টি এখন আন্দোলন জমিয়ে তোলার না হলেও গণমাধ্যমের খবরাখবর, টকশোর মাধ্যমে তারা আছেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তাদের লড়াইয়ের কথা দেশবাসীকে জানানোর চেষ্টা করে থাকেন। গণমাধ্যমে সক্রিয় থাকাটাও এখনকার দিনে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। নতুবা তারা জনমানস থেকে হারিয়ে যেতে পারে। সে কারণেই কিছু না কিছু বলা বা করার থাকতে হয়, যা গণমাধ্যমে প্রচার পায়। কোনো কোনো দলের নেতারা এখন সেভাবেই সক্রিয় আছেন। সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম ভবিষ্যতে কে কার সঙ্গে জোট বেঁধে করবেন তখনই কেবল দেখা যাবে। আপাতত মিডিয়ায় থাকাটাও অনেক দলের ও নেতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়