গাবতলীতে ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা

আগের সংবাদ

রাজপথে ফের শক্তির মহড়া

পরের সংবাদ

সচেতনতায় নিউমোনিয়া প্রতিরোধযোগ্য

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শ্বাসনালী ও ফুসফুসের সংক্রমণই হচ্ছে নিউমোনিয়া। সাধারণত নিউমোনিয়ার সংক্রমণ হয় ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে। বিশ্বের লাখ লাখ নবজাতক ও শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায় প্রতি বছর। বাংলাদেশেও শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এই প্রতিরোধযোগ্য রোগ। বলা হয়ে থাকে, দেশে ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের এখনো মৃত্যুর ‘মেজর কিলার’ হচ্ছে নিউমোনিয়া। এই রোগে আক্রান্ত হলে শিশুদের ফুসফুস পুঁজ ও তরলে ভরে যায়, যার কারণে তাদের নিঃশ্বাস নিতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়।
ইউনিসেফ বলছে, এই রোগটি বাংলাদেশে শিশুদের অন্যতম বড় ঘাতক, যার কারণে ৫ বছরের কম বয়সি ১৩ শতাংশ শিশুর মৃত্যু হয়। বিশ্বব্যাপী ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃত্যুর প্রধান সংক্রামক কারণ নিউমোনিয়া। প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ শিশু নিউমোনিয়ায় মৃত্যুবরণ করে। তবে বাংলাদেশে এ অবস্থা আরো খারাপ। দেশে প্রতি বছর ২৪ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। প্রতি ঘণ্টায় এ সংখ্যাটি আনুমানিক ২-৩ জন। ১০ বছর আগের তুলনায় সম্প্রতি নিউমোনিয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনো প্রতি ঘণ্টায় এই রোগে একজন করে শিশুর মৃত্যু হচ্ছে, অথচ নিউমোনিয়া প্রতিরোধযোগ্য।
‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে থেকে জানা যায়, নিউমোনিয়া এবং সংক্রমণকে ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের জন্য ‘মেজর কিলার’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এই জরিপকে দেশের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সবচেয়ে বড় জরিপ বলে বিবেচনা করা হয়। নবজাতক মৃত্যুর ঘটনাগুলো থেকে জানা যায়- অপরিণত এবং কম ওজনের কারণে ১৯ শতাংশ, জন্মকালীন শ্বাসরোধ এবং জন্মকালীন ইনজুরি রয়েছে ২৯ এবং নিউমোনিয়া ও সংক্রমণ রয়েছে ২৫ শতাংশ। এছাড়াও ১-১১ মাস বয়সি শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় ৪৮ শতাংশ, ডায়রিয়ায় ১৪ এবং জন্মগত ত্রæটিতে ছয় শতাংশ। একই সঙ্গে ১২-৫৯ মাস অর্থাৎ ১-৫ বছর বয়সি শিশুদের মৃত্যুর কারণ নিউমোনিয়া এবং অন্যান্য সংক্রমণ ১৩ শতাংশ, ডায়রিয়াতে ৬ এবং পানিতে ডুবে মারা যায় ৫৯ শতাংশ।
সাধারণত যেসব নবজাতককে জন্মের পরপর শালদুধ খাওয়ানো হয় না এবং বুকের দুধের পরিবর্তে যে শিশুকে কৌটার দুধ খাওয়ানো হয়, সেসব শিশুই নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকে। সেই সঙ্গে পুষ্টিহীনতায় ভোগা শিশু এবং যাদের ভিটামিন এ-র অভাব আছে সেসব শিশুর নিউমোনিয়া ঝুঁকি বেশি। নিউমোনিয়ার প্রতিষেধক টিকার আওতার বাইরে থাকা শিশুরাও এর অন্তর্ভুক্ত। এখানে উল্লেখ্য, দেশে অত্যন্ত সফলভাবে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বিসিজি, ডিপিটি, নিউমোনিয়া ও হামের টিকা। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার যে, নিউমোনিয়া সব বয়সি শিশুর মধ্যে দেখা যায়।
সব সর্দি-কাশিই নিউমোনিয়া নয়। সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য কোনো অ্যান্টিবায়োটিক লাগে না। কিন্তু অনেক সময় মা-বাবা নিকটস্থ ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে শিশুকে খাওয়ান বা আগে কখনো দেয়া হয়েছিল, সেটা আবার কিনে খাওয়ান। এই প্রবণতা শিশুর জন্য ক্ষতিকর। পরবর্তী সময় অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করে না। মনে রাখতে হবে, সামান্য কাশির জন্য কোনো ওষুধের প্রয়োজন নেই। শিশুর বয়স ৬ মাসের বেশি হলে গরম পানি, মধু ও লেবু অথবা তুলসীপাতার রসে মধু মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। যদি কাশির সঙ্গে শব্দ হয় বা রাতের বেলা কাশি বাড়ে, তাহলে সালবিউটামল-জাতীয় সিরাপ দেয়া যেতে পারে। সঙ্গে বুকের দুধের পাশাপাশি বাসার সব ধরনের খাবার খেতে দিতে হবে। সেই সঙ্গে সন্তানকে প্রায় প্রতিদিন কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করানো জরুরি। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। সচেতনতা শিশুর রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই বাবা-মাকেই শিশুর স্বাস্থ্যের প্রতি যতœবান হতে হবে। পরিবারের সচেতনতার মধ্যেই নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর মৃত্যুরোধ করা সম্ভব।

:: পিআইডি ফিচার

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়