গাবতলীতে ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা

আগের সংবাদ

রাজপথে ফের শক্তির মহড়া

পরের সংবাদ

বায়ুদূষণ মোকাবিলায় আমাদের করণীয়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গতকাল ভোরের কাগজের প্রধান শিরোনামে বায়ুদূষণের খবরটি উঠে আসছে। বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহের মধ্যেও বায়ুদূষণের শীর্ষে ঢাকার মাত্রার যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা উদ্বেগজনক। গতকাল বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ঢাকার অবস্থান প্রথম। এ শহরের বাতাস বাসিন্দাদের জন্য ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে দিন দিন। গতকাল যার স্কোর ৩৯১। দেশজুড়ে মৃদু ও বেশকিছু এলাকাতে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলেছে। এরই মধ্যে ঢাকাতেও কমেছে তাপমাত্রা। সকালে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই অবস্থাতেই ঢাকার বায়ুদূষণের অবস্থান নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ঋতু ভেদে দেশের নানা প্রান্তে বায়ুদূষণ নানা রকম হয়ে থাকে। তবে বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে বায়ুমান ভালো থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে আবার তা খারাপ হতে থাকে। তার ওপর নির্মাণকাজ, রাস্তার ধুলা ও অন্যান্য উৎস থেকে দূষিত কণার ব্যাপক নিঃসরণের কারণে ঢাকা শহরের বাতাসের গুণমান দ্রুত খারাপ হচ্ছে। এখনই বায়ুদূষণ কমাতে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য দূষিত বায়ু ভয়ংকর হয়ে উঠছে দিন দিন। বিশেষ করে শহরে নির্মাণকাজের কারণে বাতাসে প্রচুর ধুলা যুক্ত হয়। যানবাহনে ব্যবহƒত জ্বালানি থেকে নির্গত কার্বন দূষণের অন্যতম কারণ। এছাড়া বর্জ্য পোড়ানোর কারণে দূষিত হচ্ছে বাতাস। শিল্প কারখানার ধোঁয়া এবং রাজধানীতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম নতুন কিছু নয়। শহর ও আশপাশের এলাকায় যেখানে-সেখানে ময়লার স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে বাতাস। কিছুদিন আগে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণের কারণে দেশে বছরে মারা যাচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। ২০১৯ সালে দেশে বায়ুদূষণে সর্বোচ্চ ৮৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। গবেষকদের মতে, দূষণের মাত্রা কমানো গেলে বাংলাদেশের মানুষ আরো ৫ দশমিক ৪ বছর বেশি বাঁচতেন। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার কারণে শুধু ঢাকায় বসবাসকারীদের গড় আয়ু কমেছে ৭ দশমিক ৭ বছর। দূষিত বায়ুর কারণে এখানকার জনগোষ্ঠী মারাত্মক সব রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কেবল স্বাস্থ্য নয়, জিডিপির ক্ষতিও হচ্ছে ৩ দশমিক ৯ থেকে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। শ্বাসকষ্ট, কাশি, নিম্ন শ্বাসনালির সংক্রমণ ও বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়ছে মানুষের। এ অবস্থায় একিউআই ইনডেক্সের ভয়াবহ মাত্রা ও গবেষকদের পর্যবেক্ষণ অবিলম্বে আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। জনস্বার্থে দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে মনে করি। ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণ সমস্যায় জর্জরিত। বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে শুষ্কতার কারণে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে উন্নত হয়। ঢাকা সিটিতে বায়ুদূষণের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি কারণ প্রধান। যাতে ঢাকাসহ সারাদেশে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ছে। সেগুলো হলো- ইটভাটা, মোটরযানের কালো ধোঁয়া ও যথেচ্ছ নির্মাণকাজ। বায়ুদূষণের উপাদানগুলো মূলত ধূলিকণা, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, হাইড্রো কার্বন, কার্বন মনোক্সাইড, সিসা ও অ্যামোনিয়া। অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা স্থাপনে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে বায়ুদূষণ বাড়ছেই। ক্ষতিকর উপাদানগুলোর ব্যাপকহারে নিঃসরণ ঘটছে। এ কারণে বিশেষ করে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে বিঘœ ঘটা ও মারাত্মক স্নায়ুবিক ক্ষতি হতে পারে এবং গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশ সংরক্ষণ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। সুস্থ থাকতে ও বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করতে হলে বায়ুদূষণ কমানোর বিকল্প নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়