মতবিনিময় সভায় বক্তারা : পলিসি তৈরিতে যুবদের সম্পৃক্ত করতে হবে

আগের সংবাদ

তিন কারণে দলীয় প্রতীক রাখছে না আওয়ামী লীগ

পরের সংবাদ

মোবাইল আসক্তি ও আমাদের যুবসমাজ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

স্মার্টফোনের মাধ্যমে পুরো বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয় আসার কারণে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার, অনলাইন ক্লাস এবং মিটিংয়ে মোবাইল ফোনের সঙ্গে কাটে মানুষের দিনের সিংহভাগ সময়। তবে আমরা মোবাইল ফোনে কোনো ছোটখাটো কাজ সম্পন্ন করতে গেলেই অন্য কাজ শুরু করে দেই। ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটঅ্যাপস, টেলিগ্রাম এবং ই-মেইল চেক করি কিংবা সামাজিক মাধ্যমের অতল নিউজফিডের স্ক্রলিংয়ের মধ্যে হারিয়ে যাই। অর্থাৎ ফোন আমাদের নিয়ন্ত্রণে না থেকে বরং আমরা ফোনের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হই তখন।
বর্তমানে প্রযুক্তির সঙ্গে আমরা এত বেশি সম্পর্কিত যে, কিছুক্ষণ এ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলে আমরা চিন্তায় পড়ে যাই। বারবার মোবাইল ফোন হাতে নেয়ার জন্য আমাদের হাত নিশপিশ করতে থাকে। বিল পরিশোধ, কোনো বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ, ছবি বা ভিডিও করা, গান শোনা, ক্যালকুলেটর ব্যবহার, এমনকি টর্চ জ¦ালানোর মতো কাজ করতেও আমরা ফোন ব্যবহার করি।
মোবাইলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক প্রতি বছরই ক্রমাগত হারে বাড়ছে। সম্প্রতি একটি সমীক্ষা বলছে, মানুষ দৈনিক গড়ে ৫ ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় করেন মোবাইল ফোনের নানা অ্যাপের পেছনে। অর্থাৎ একজন মানুষ দিনে যতক্ষণ জেগে থাকেন তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ খরচ করছেন মোবাইলের নানা অ্যাপস ব্যবহারে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক ১২ কোটি ৬১ লাখের বেশি। অ্যাপ অ্যানির সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে তাদের মোবাইল ব্যবহার করার সময় ছিল প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা। ২০২০ সালে তা প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা থেকে বেড়ে বর্তমান ৫ ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে। আর মোবাইল ফোনের পেছনে অধিকাংশ সময় খরচ হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমসহ ফটো এবং ভিডিও অ্যাপে। আর এই খাতেও শীর্ষস্থান টিকটকের দখলে। জনপ্রিয়তা বেড়েছে মোবাইল গেমেরও। কেউ কোনো সমস্যায় পড়লে তাকে সাহায্য না করে বরং লাইভ করাটা যেন সম্প্রতি কালচারে পরিণত হয়েছে।
মোবাইল ফোন আমাদের জীবনে গতি আনলেও এর অপব্যবহারের কারণে প্রতিনিয়তই মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের ভীতি। আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মোবাইল আসক্তির কটুচক্রে আবদ্ধ হয়ে বেমালুম ভুলে যায় নিজের ভবিষ্যৎ জীবনের সোনালি স্বপ্নের কথা। বিভিন্ন মোবাইল ফোন কোম্পানি লাভবান হওয়ার জন্য লোভনীয় সব অফার দেয়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যুবক শ্রেণি নানাবিধ অশ্লীল ভিডিও দেখে। ফলে ধীরে ধীরে তাদের মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে এবং সমাজে নানা ধরনের অনৈতিক ও গর্হিত কর্মকাণ্ড বাড়ছে, যা মোটেও কাম্য নয়। এ বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতনতাটা অতীব জরুরি। মোদ্দা কথা হলো, নির্ধারিত কাজের জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ে। নোটিফিকেশন বন্ধ রাখা, ফোন সম্পূর্ণ ভিন্ন রুমে রাখা, অ্যালার্ম ঘড়ির ব্যবহার, সময় ব্যবহারের অ্যাপ ব্যবহার, গ্রুপ চ্যাট বন্ধ রাখা, কাজের সময় ডু নট ডিস্টার্ব মুড চালু রাখা এবং যতটা সম্ভব কম অ্যাপস রাখা; ফোনে আসক্তি কমাতে এসব ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। আর আনন্দের পরিকল্পনা করতে হবে অফ লাইনে। মোবাইল সরিয়ে বই পড়া কিংবা নিজের কিছু বন্ধু বা প্রতিবেশীকে সরাসরি দেখতে গেলে প্রকৃত আনন্দ পাওয়া যায়।
জীবন সময়ের গণনা মাত্র। সময়ের অপচয় করার অর্থ হলো জীবন অপচয় করা। নিজেকে প্রযুক্তির খাঁচায় আবদ্ধ না রেখে চারপাশ উপভোগ করা উচিত। আমরা যদি আমাদের ইচ্ছাশক্তিকে অবচেতনভাবে ফোন চেক করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা না করি, তাহলে শক্তির সামগ্রিক রিজার্ভ ‘ক্ষয়’ হয়ে যাবে এবং অন্য কাজে মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই গা ভাসিয়ে ভিন্ন জগতের স্বপ্ন না দেখে আমাদের জীবন ও জগৎ বর্ণিল করতে বর্তমান সময় ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইল ফোনের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

মো. আনোয়ার হোসেন : শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়