যাত্রী কল্যাণ সমিতি : লক্করঝক্কর বাস উচ্ছেদ করে ৫ হাজার উন্নত বাস নামান

আগের সংবাদ

সমন্বয়হীনতার খেসারত : দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ভিন্ন অবস্থানে আটকে আছে তিন শ্রেণির পাঠ্যবই লেখার কাজ > নতুন শিক্ষাক্রম

পরের সংবাদ

সামাজিক মূল্যবোধ ও আমাদের করণীয়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সামাজিকতা মানুষের বৈশিষ্ট্য। তবে এসবের ঊর্ধ্বে গিয়ে আমরা হয়ে উঠছি সামাজিক মূল্যবোধহীন। নিজস্ব সভ্যতা, সংস্কৃতিধারার নিয়ম-নীতির খুব কম তোয়াক্কা করছি আমরা। সুস্থ সমাজব্যবস্থা ও সুন্দর সামাজিক মনোভাব হলো আমাদের মস্তিষ্কের ন্যায়। তাই এটিকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্বও আমাদের। সমাজে বসবাসরত প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ সামাজিকতা, সভ্যতা ও সভ্যরূপনীতি মানতে বাধ্য থাকবে- এমনটিই স্বাভাবিক। সমাজ সংস্করণের উন্নতি সাধন করার আগে দেশের সভ্যতার ভার বহন করে দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও গুণাবলি। আমাদের রয়েছে নিজস্ব কিছু সংস্কৃতি। আমাদের সংস্কৃতিগুলো সমাজব্যবস্থা পরিবর্তন করতে এক সময় রাখবে ধারণাতীত ভূমিকা। কেবল সবার সমান অংশগ্রহণের মাধ্যমেই কাজটি সহজে ও সুসংগঠিত উপায়ে সম্পাদন করা সম্ভব হবে। প্রধানত আমাদের দেশে রয়েছে দুই প্রকারের সংস্কৃতি। যার একটি হলো গ্রামীণ সংস্কৃতি এবং অপরটি নগর বা শহুরে সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতিও আবার দুই প্রকার। প্রথমটি, বস্তুগত এবং দ্বিতীয়টি অবস্তুগত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বস্তুগত সংস্কৃতি হলো- যে সংস্কৃতি ধরা যায়, ছোঁয়া যায় এবং আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করা যায়, সেটিই বস্তুগত সংস্কৃতি। যেমন- চলাফেরা, কথাবার্তা, পোশাক-পরিচ্ছদ, শখের আসবাবপত্র, উৎপাদন কৌশল হলো বস্তুগত সংস্কৃতির উপাদান। তবে বস্তুগত সংস্কৃতি ও আমরা একই সূত্রে গাঁথা হলেও বস্তুগত সংস্কৃতির বিপরীতে অবস্তুগত সংস্কৃতির স্থান হওয়া দরকার কিছুটা ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের। বস্তুগত সংস্কৃতিকে আমরা ধরাছোঁয়ার মাঝে সীমাবদ্ধ রাখতে পারলেও অবস্তুগত সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সেটি অনেকাংশে অসম্ভব। অবশ্য ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা এই অবস্তুগত সংস্কৃতিই আমাদের সংস্কৃতির প্রাণ ভোমরা হিসেবে পরিচিত। এখন নিশ্চয়ই আমরা বুঝতে পারছি যে, অবস্তুগত সংস্কৃতিই আমাদের মূল। অবস্তুগত সংস্কৃতি হলো- ধর্ম, দর্শন, সংগীত, সাহিত্য, আইন, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, জ্ঞান ও শিল্পকলার সমষ্টি। মূলত অবস্তুগত সংস্কৃতির উপকরণ আমাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতির ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।
গ্রামীণ ও শহুরে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আমরা বেশ কয়েকটি ভিন্নতা ও ভিন্ন ধরনের পরিবর্তন মাঝে মধ্যেই দেখতে পাই। আমাদের গ্রামের সংস্কৃতি কিছুটা সেকেলে হলেও এটিই আমার আদর্শ সংস্কৃতি। গ্রামীণ সংস্কৃতি মূলত কৃষিনির্ভর। কৃষিকে কেন্দ্র করেই আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতি রয়েছে যুগের পর যুগ টিকে। এই সংস্কৃতির ধারাপাত কোমল ও সর্বজনবিদিত। গ্রামীণ সংস্কৃতির কিছু উদাহরণ না দিলেই নয়- পিঠা, পুলি, লুঙ্গি, গামছা, ধুতি, কোদাল, কাস্তে, লাঙল, মই, মাটির তৈজসপত্র ইত্যাদি আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির অংশ। গ্রামীণ সংস্কৃতি হলো আমাদের শেকড়। তবে পোশাক, পরিচ্ছদ, স্মার্টনেস, প্রযুক্তি সচেতনতা ও রাজনীতি চর্চা থেকে নগর সংস্কৃতির তুলনায় পিছিয়ে আছে গ্রামীণ সংস্কৃতি। অবশ্য গ্রামীণ সংস্কৃতির মতো কর্মনিষ্ঠা শহুরে সংস্কৃতিতে বিন্দুমাত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না।
অনেক সময় দেখা যায় অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার দরুন আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতি শহুরে সংস্কৃতির তুলনায় যথেষ্ট সুবিধাপ্রাপ্ত হয় না। আবার গ্রামীণ সংস্কৃতিতে কুসংস্কার, বাল্যবিয়ে, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, কুকথা ইত্যাদির মেলে দেখা। এসবের পরিবর্তনে সামাজিকতা ও সমাজ সচেতনতার বড় বেশি প্রয়োজন বলে মনে করছি। গ্রামীণ মানুষদের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতি নিয়ে সচেতন করে তোলা প্রয়োজন। আমরা চাই আলোকিত সমাজ। ফুরসত পেলেই যেন নগর সংস্কৃতি শেকড় ভুলে না যায় সেদিকেও নজরদারির প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে- যা আমাদের সংস্কৃতি কেবল তা-ই গ্রহণযোগ্য। সেটি হোক ধর্মীয় সংস্কৃতি কিংবা আলোচ্য সংস্কৃতি।

জিহাদ হোসেন রাহাত : শিক্ষার্থী, ল²ীপুর সরকারি কলেজ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়