যাত্রী কল্যাণ সমিতি : লক্করঝক্কর বাস উচ্ছেদ করে ৫ হাজার উন্নত বাস নামান

আগের সংবাদ

সমন্বয়হীনতার খেসারত : দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ভিন্ন অবস্থানে আটকে আছে তিন শ্রেণির পাঠ্যবই লেখার কাজ > নতুন শিক্ষাক্রম

পরের সংবাদ

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের প্রত্যয়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে, দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরবে, বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। শিক্ষাব্যবস্থায় দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করবে এবং তা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের চেহারা বদলে দিয়েছেন, তা একসময় ছিল অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয়। সেই তুলনায় এই এবারের ১১টি খাতকে চিহ্নিত করে পরিবর্তন আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সেটি দেশবাসীকে নতুনভাবে আশান্বিত করেছে।
ইশতেহারে ১১টি জনগুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে- দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন, লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষিব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো, ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা, সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ, সাম্প্রদায়িকতা ও সব ধরনের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ রোধ করা এবং সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।
দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় তার মেধা ও অভিজ্ঞতাকে নির্ভরযোগ্য বিবেচনা করে নতুন সরকার গঠন করা হয়েছে। অর্থনীতিকে অনেক সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে- লাগামহীন মূল্যস্ফীতির প্রকোপ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বিপজ্জনক পতনের ধারা, টাকার হিসাবে ডলারের অব্যাহত দাম বৃদ্ধি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স পাঠানোয় হুন্ডি ব্যবসার ক্রমবর্ধমান প্রভাবে সাধারণ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহে স্থবিরতা, মারাত্মক ডলার সংকটের কারণে আমদানি এলসি খুলতে অপারগতা, কার্ব মার্কেটে হু হু করে ডলারের দাম বেড়ে ২০২১ সালের ৮৭ থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ১২৫ টাকায় উল্লম্ফন।
বাংলাদেশি টাকার বৈদেশিক মানের প্রায় ২৮ শতাংশ অবচয়ন, আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং ও রপ্তানিতে আন্ডার ইনভয়েসিং পদ্ধতিতে দেশ থেকে বিদেশে ব্যাপক পুঁজি পাচারের অভিযোগ, রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না এনে সেগুলো দিয়ে বিদেশে ঘরবাড়ি-ব্যবসাপাতি ক্রয়, দুর্নীতি ও পুঁজি লুণ্ঠন সম্পর্কে সরকারের অব্যাহত নিষ্ক্রিয়তা, দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টসের কারেন্ট অ্যাকাউন্টে চার বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে মারাত্মক ঘাটতি পরিস্থিতি, ব্যালান্স অব পেমেন্টসের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে বহুদিন পর সৃষ্ট বিপজ্জনক ঘাটতি পরিস্থিতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং পুরো মন্ত্রিসভার টিমওয়ার্কের মাধ্যমে নতুন অর্থমন্ত্রীকে ওপরে উল্লিখিত সমস্যাগুলো অবিলম্বে মোকাবিলায় সর্বশক্তি নিয়োগ করা হয়েছে। সবার আগে নজর দিচ্ছে ডলারের দাম বৃদ্ধি থামিয়ে দিয়ে টাকার ২৮ শতাংশ অবচয়নের ফলে উদ্ভূত মারাত্মক মূল্যস্ফীতি সমস্যার লাগাম টেনে ধরার জন্য। দেশের আমদানি নিয়ন্ত্রণের নানা ব্যবস্থা গৃহীত হওয়ায় ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ১৬ মাসে এলসি খোলা ১৬ শতাংশ কমে এসেছে। কিন্তু হুন্ডি ব্যবস্থায় রেমিট্যান্স প্রেরণকে কোনোমতেই নিরুৎসাহিত করা যাচ্ছে না। হুন্ডি ব্যবসার রমরমা অবস্থা দিন দিন বাড়তে থাকাই এর প্রধান কারণ।
দুর্নীতি এখনো বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ দুর্নীতির ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের অঙ্গীকার করেছিল, কিন্তু গত পাঁচ বছরে সরকার এ অঙ্গীকার পূরণে খুব একটা সফলতার মুখ দেখেনি। বিশ্বব্যাপী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় ঊর্ধ্বগতি ও ডলার-জ্বালানি সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত। রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধসহ নানামুখী সমস্যায় বৈশ্বিক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা পর্যুদস্ত। এ সংকট শিগগিরই দূরীভূত হওয়ার নয়।
দেশের অর্থনীতিকে মোটামুটি সচল রাখা পোশাকশিল্পেও নৈরাজ্য সৃষ্টি হতে দেখা যায়। কতিপয় সুযোগসন্ধানী অনাকাক্সিক্ষত কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করেছে। একের পর এক হরতাল-অবরোধে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় একসঙ্গে যতগুলো সংকট এসেছে, তা অতীতে কখনো মোকাবিলা করতে হয়নি। সেটারই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের ওপর। আমরা কোনোরকম রাজনৈতিক অস্থিরতা চাই না, হরতাল-অবরোধ চাই না। এসব করে অর্থনৈতিক সংকটকে আরো গভীর করা হয়েছে। কাজেই দেশের স্বার্থে, শিল্পের স্বার্থে সংকটগুলো সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
নির্বাচনের পর নতুন সরকারকে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, তা না হলে রিজার্ভ-রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় ছাড়াও রাজস্ব ও ব্যাংক খাত নিয়ে যে ভয়াবহ উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কঠিন হবে। অর্থনীতিকে স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসাই হবে নতুন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।
দ্রব্যমূল্য, মুদ্রার বিনিময় হার এবং ব্যাংক ঋণের সুদের হার নিয়ে কাজ করতে হবে। কিছু স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের ব্যাংক বা অন্য কোনো খাতে যেন কাঠামোগত সংকট দেখা না দেয় এবং বৈদেশিক দায়দেনা পরিশোধের ক্ষেত্রেও যেন কোনো সমস্যা তৈরি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সরকার আইএমএফ ও অন্য দাতাদের কাছ থেকে যেসব সংস্কারের শর্তে ঋণ পাচ্ছে, নির্বাচনের পর সেগুলো বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে না পারলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে শঙ্কা তৈরি হতে পারে বলে প্রতীয়মান হয়। বড় ধরনের কোনো সংস্কার ছাড়া অর্থনীতির সংকট মোকাবিলা করা কঠিন হবে। কাজেই অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে হলে বেশকিছু নতুন পদক্ষেপ প্রয়োজন, তার ওপরই অর্থনীতির সংকট উত্তরণ নির্ভর করবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন।
আমাদের মানসম্মত ও কারিগরি শিক্ষার ওপর নজর দিতে হবে। শিক্ষা শেষ করে লাখ লাখ তরুণ দক্ষতার অভাবে চাকরি খুঁজে পায় না। দেশের অভ্যন্তরে যেমন শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, প্রবাসেও বাংলাদেশ থেকে দক্ষ প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন জনসম্পদের চাহিদা রয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে শৃঙ্খলা, ব্যবস্থাপনা, দক্ষ ও মেধাবী প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই।
আমাদের কৃষিব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে বহুমুখী ফসল উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণনব্যবস্থা, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং আধুনিক যান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রয়োগ করেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। কৃষিব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে বাজারব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে।
সংকট দূর করে উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিতে অনুকূল পরিবেশের কোনো বিকল্প নেই। রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ও সহিষ্ণুতা না থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কখনো টেকসই হয় না। নানা ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সচল রাখতে হলে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সুশাসন দরকার। যে কোনো সমস্যা সমাধানে যৌক্তিক আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতায় দল-মত নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিককে নিজের অবস্থান থেকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতার পাশাপাশি জনমত গঠন জরুরি। সব অপতৎপরতা প্রতিরোধ করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দেশ গঠনে মনোযোগ দিতে হবে।
দুর্নীতি মারাত্মক ব্যাধির মতো সমাজ, প্রশাসনসহ সর্বত্র বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতির কথা ঘোষণা করেছেন। তার এই ঘোষণার যথাযথ বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। দ্রব্যমূল্য গত দুই বছর লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভ ছিল। সরকার স্বল্প আয়ের মানুষদের কষ্ট লাঘবের জন্য টিসিবিকে সক্রিয় করে এক বছর ন্যায্যমূল্যে কিছু পণ্য ক্রয় করার সুযোগ করে দিয়েছিল। ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছে। তবে সবাইকে এর আওতায় আনা সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল না। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, ডলার-সংকট এবং একচেটিয়া কারবারিদের কারসাজিতে আমদানি করা পণ্যসামগ্রীর দাম বাজারে নিয়ন্ত্রণহীন ছিল। তবে আমার কথা হলো, নির্বাচনের পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রব্যমূল্য নিয়ে কথা বলেছেন।
মন্ত্রিপরিষদের প্রথম বৈঠকেও তিনি দ্রব্যমূল্য সম্পর্কে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করে বাজারে সিন্ডিকেট থাকবে না বলে শক্ত কথা বলেছেন। বাজারে চালের দাম ভরা মৌসুম থাকা সত্ত্বেও কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী দুভাবে বাজারে আসে- প্রথমটি বিদেশ থেকে আমদানি করা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে নীতি-নৈতিকতা, আইন ও বিধিবিধান মেনে চলার সংস্কৃতিতে আনতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক জোন তৈরি করেছেন। সেগুলোকে কীভাবে কাজে লাগানো, বিদেশি উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করা ও বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা যায়, সে বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করতে পারে।
দুর্নীতি মারাত্মক ব্যাধির মতো সমাজ, প্রশাসনসহ সর্বত্র বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতির কথা ঘোষণা করেছেন। তার এই ঘোষণার যথাযথ বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। আমাদের সমাজে দুর্নীতি নানাভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সমাজে যোগ্য, মেধাবী, দক্ষ ও অভিজ্ঞদের ভূমিকা রাখার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

হীরেন পণ্ডিত : কলাম লেখক ও রিসার্চ ফেলো।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়