শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘ মহাসচিবের অভিনন্দন

আগের সংবাদ

সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা

পরের সংবাদ

বায়ুদূষণ মোকাবিলায় জনজীবনে করণীয়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বায়ুদূষণের প্রকট সমস্যা এখন সমগ্র বাংলাদেশে। তবে বিশেষত ঢাকায় বেশি। আইকিউয়ের বাতাসের মান সূচকে ঢাকার স্কোর ছিল ২৮০। যা খুব অস্বাস্থ্যকর হিসেবে ধরা হয়। ঢাকার বাতাসে বিদ্যমান থাকা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই বায়ুদূষণের উৎস। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ডের চেয়ে এই অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ৪৬ গুণেরও বেশি বিরাজমান রয়েছে। যেসব এলাকায় বিভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানার উপস্থিতি রয়েছে, রাস্তা নির্মাণ ও মেরামতের কাজ চলমান, মেট্রোরেলের কাজ চলমান, ফ্লাইওভারের কাজ চলছে এবং কয়েকটি রাস্তার সংযোগ যেখানে ঘটেছে সেসব জায়গায় মাত্রাতিরিক্ত হারে বায়ুদূষণ হচ্ছে। তবে অতিরিক্ত বায়ুদূষণের হার বাড়াচ্ছে ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও বিভিন্ন নির্মাণের ধুলোগুলো। এমনকি লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, বাস টার্মিনালেও প্রচুর বায়ুদূষণ লক্ষ করা যায়। ট্রাফিক জ্যামের কারণে অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ করে গাড়িগুলো বায়ুদূষণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচতে মানুষ অতিরিক্ত এসি ব্যবহার করছে, তাতেও বায়ুদূষণ বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন শ্বাসের মাধ্যমে দূষিত বায়ু গ্রহণ করছে। বায়ুদূষণের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগে বছরে ৭০ লাখ মানুষ মারা যায় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
বায়ুদূষণে ঢাকা বারবার শীর্ষ অবস্থানে থাকার পেছনে যে কারণগুলো রয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। যেগুলো মোকাবিলায় সবার সহযোগিতা ও যথাযোগ্য ব্যবস্থা কার্যকর করা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকায় ফিটনেসবিহীন গাড়ির ‘অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল’ না থাকায় অর্থাৎ যেসব যানবাহনকে ভারি মেরামত না করার কারণে সড়কে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়া সেসব যানবাহন দ্রুত সরিয়ে ফেলা উচিত। কারণ একটা বাসের ‘ইকোনমিক লাইফ’ সাধারণত ১০-১৫ বছর থাকে। ঢাকায় ৬০-৭০ শতাংশ যানবাহনই পরিবহনের জন্য অনুপযোগী; বিশেষত লক্কড়ঝক্কড় কিছু বাস ও ট্রাক। এগুলোর অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার ফলে ঠিকভাবে জ্বালানি পোড়াতে পারে না এবং ধোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়, ফলে চারপাশ কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। তাই অনতিবিলম্বে মোবাইল কোর্টের ব্যবস্থা মোতায়েন করা জরুরি।
ঢাকার আশপাশ অনেক বাসা-বাড়ি, এলাকা কিংবা দোকানপাটগুলোর বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং সেখানেই বায়ুদূষণের মাত্রা থাকে অন্তত বেশি। শুষ্ক মৌসুমে অন্তত ৫০টি স্থানে বর্জ্য পোড়ানো হয়। এছাড়াও ময়লার স্তূপ থেকে তৈরি হওয়া মিথেন গ্যাসের উৎকট গন্ধ থেকে বাঁচতে আগুন জ্বালায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। পরিণামে যে বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা রুখতে এটা মাথায় রাখা জরুরি যে, বর্জ্য পদার্থ পোড়ানো একটি ‘ভুল ধারণা’।
তাছাড়া গাছপালা বিপুল পরিমাণ নিধন ঠেকাতে সমাজের ও রাষ্ট্রের মানুষের সচেতনতার প্রসার ঘটানো অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গাছপালা রোপণের পরিমাণ বৃদ্ধি করলে বায়ুর গুণগত মান উন্নত করার পাশাপাশি গেøাবাল ওয়ার্মিং হারে তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধি হ্রাস করে। মৃত জীবদেহের পচনের ফলে অনেক ধরনের দুর্গন্ধ যুক্ত গ্যাস যেমন মিথেন, হাইড্রোজেন সালফাইড ইত্যাদি বাতাসের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে বায়ুদূষণ ঘটায়। এজন্য আশপাশে জীবজন্তু মারা গেলে তা মাটিচাপা দিয়ে রাখতে হবে। এছাড়া বায়ুদূষণে বৃদ্ধি পাওয়া ফুসফুসজনিত রোগ থেকে বাঁচতে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে। বায়ুদূষণের সঙ্গে জলবায়ুর পরিবর্তন সম্পর্কযুক্ত। তাই জলবায়ু পরিবর্তনে যখন পরিবেশ প্রতিকূল অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে গতিশীল থাকে তা পরিবেশ ও বৈশ্বিক তাপমাত্রাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে। বায়ুদূষণের সঙ্গে যেহেতু পরিবেশের আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে তাই সে অনুযায়ী সমাজ ও রাষ্ট্রের সমস্বরে সহাবস্থান থেকে বায়ুদূষণ মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে।

সুমাইয়া আকতার : শিক্ষার্থী, বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়