আদালতে হাজির হতে হবে নুসরাতকে

আগের সংবাদ

কঠোর হচ্ছে বাজার তদারকি

পরের সংবাদ

বই পড়ুন বই উপহার দিন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রোজ সকালে এক কাপ চা হাতে বই পড়া কিংবা অবসর সময়ে বইয়ের মাঝে ডুবে যাওয়াটা একসময় অনেকেরই অভ্যাস ছিল। বইপ্রেমী মানুষদের ওঠাবসা সর্বত্রই কাটে বইয়ের সঙ্গে। ছাত্রজীবনে বই পড়ার সময়টা অনেকেরই সুখকর কেটেছে। সময়ের পরিবর্তনে কর্মজীবনে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ এখন খুবই কম সময় পায় বই পড়ার। আগের মতো আর বই পড়া হয় না। প্রযুক্তির যুগে সবার হাতেই এখন স্মার্টফোন। অবসর, বিনোদন সবই যেন ওই এক মোবাইল ফোনকে ঘিরেই। সময়ে, অসময়ে মোবাইল নিয়েই সবার ব্যস্ত সময় কাটে। তাই একটু মোবাইল থেকে দূরে থেকে বইয়ের সঙ্গে সেই আগের মতো আর সখ্য গড়ে ওঠে না অনেকের।
তবে এভাবে চলতে থাকলে একসময় আর বই পড়া হবে না আমাদের। জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি আমাদের জীবনের সুন্দর কিছু মুহূর্তও জীবন থেকে চলে যাবে এই বই না পড়ার ফলে। কেননা যারা বই পড়ে তারাই জানে বই আমাদের জীবনে সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধুর ন্যায় আচরণ করে। পৃথিবীর সব বন্ধুই কোনো না কোনোভাবে কষ্ট দিলেও বই কখনো আমাদের কষ্ট দেয় না। বরং নীরবে নিভৃতে পাশে থেকে আত্মিক উন্নতি ঘটায়। মন মানসিকতা উন্নত ও সজীব রাখতে সহায়তা করে।
তাই চলুন জেনে নেই কীভাবে আমরা বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি-
১) সময় নির্ধারণ : বই পড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন। যেমন- দিনের শুরু/পড়ন্ত বিকাল/সন্ধ্যার পর/রাতে ঘুমানোর পূর্বে।
২) পৃষ্ঠা/অধ্যায় নির্বাচন : যে বইটি পড়বেন সেই বইটির পৃষ্ঠা বা অধ্যায় নির্বাচন। যেমন- প্রতিদিন বইটির ১০/২০ পৃষ্ঠা পড়া কিংবা ১/২টি অধ্যায় শেষ করা।
৩) পূর্ণ মনোযোগ : যখন বই পড়বেন তখন অন্য কিছু চিন্তা না করা। বইয়ের প্রতিটি লাইনের মাঝে ডুবে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন হাতের কাছে না রাখাই উত্তম। রাখলেও যতক্ষণ পড়বেন ততক্ষণ ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখবেন।
৪) চা/কফি খাওয়া : ক্যাফেইন জাতীয় খাদ্য মানুষের শরীর ও মন চাঙ্গা করে তুলে। ফলে পূর্ণ মনোযোগ পাওয়া যায় বই পড়ার ক্ষেত্রে। তাই বই পড়ার আগে একটু চা/কফি খেয়ে নিতে পারেন।
৫) বই কেনার অভ্যাস : বই পড়ার আগে বই কেনার অভ্যাস গড়ে তোলা। কেননা নতুন বই জানান দেবে আপনার পূর্ববর্তী বই পড়ার বর্তমান অবস্থা। তাই বই কেনা অব্যাহত রাখতে হবে। মাসে ১টি হলেও।
৬) ধারাবাহিকতা : প্রতিদিন সম্ভব না হলেও যেন সপ্তাহে একদিন বই পড়া হয়। সপ্তাহে না হলেও যেন এক পক্ষে (১৫ দিন) হয়। এক পক্ষে না হলেও যেন এক মাসে হয়। মাসে ন্যূনতম একটি বই পড়ার ধারাবাহিকতা থাকা উচিত।
৭) চর্চা : জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি তার চর্চা করা। কেননা চর্চাবিহীন জ্ঞান দ্রুত মস্তিষ্ক থেকে পলায়ন করে।
এভাবে বই পড়ার প্রতি মনোযোগী হতে পারবেন বলে আশা করা যায়।
এবার আসি বই সম্পর্কিত আরো কিছু মজার তথ্য বিশেষ করে ছাত্রজীবনে বই কেনা, বই পড়া ও বই উপহার দেয়ার সহজ পরামর্শ ও অনুপ্রেরণামূলক বার্তা নিয়ে। ছাত্রজীবনে অর্থ সংকট প্রায় সবার মাঝেই বিদ্যমান থাকে। তাই পছন্দের বা শখের অনেক জিনিসই অর্থের অভাবে কেনা বা শখ পূরণ হয় না। বইপ্রেমীরাও তাদের পছন্দের বই সবসময় কিনতে পারে না অর্থ সংকটের ফলে। তাই অনেকেই হতাশ হন। তবে একটু চিন্তাশীল মন দিয়ে আর কৌশল অবলম্বন করে এর থেকে সহজ সমাধান বের করা সম্ভব। যেমন- প্রতিদিনের হাত খরচের কিছু টাকা একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখুন। হতে পারে সেটা ছোট বাক্স বা ব্যাগ। মাস শেষে দেখবেন ন্যূনতম একটি বই কেনার টাকা হয়েছে। প্রতিদিন ১০ টাকা জমালে মাসে ৩০০ টাকা হয়। ৩০০ টাকায় ভালো মানের বই পাওয়া যায়। তাই এভাবে টাকা জমালে আপনি মাসে কমপক্ষে একটি হলেও বই কিনতে পারবেন। এরপর বইটি পড়ুন। এভাবে বই পড়তে থাকলে প্রতি মাসে একটি করে বই কেনা ও বই পড়া হবে। আপনি বছরে ১২টি বই কিনতে ও পড়তে পারবেন। বইগুলো পড়া হলে আপনি আপনার প্রিয়জনদের উপহার দিতে পারেন। আপনার মা, বাবা, ভাই, বোন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের উপহার দিতে পারেন। তারা আপনার উপহার পেয়ে খুশি হবেন এবং আপনার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে। বই কেনা, বই পড়া ও বই উপহার দেয়ার ব্যাপারটি নিয়মিত করতে থাকলে আপনি মানসিক অনেক প্রশান্তি লাভ করবেন। আপনি যেই মনমানসিকতা নিয়ে চলেন, সেই মন মানসিকতার উপকরণ হিসেবে আপনার পছন্দের বই পড়ুন। সমাজের মানুষদের মধ্যে যত ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনার উদয় ঘটবে ও মানুষ ইতিবাচক কাজগুলো করবে ততই এই সমাজটা সুন্দর হবে। একটি ইতিবাচক চিন্তাভাবনা ও তার সুপরিকল্পিত বাস্তবায়ন আপনাকে হাজার গুণ মানসিকভাবে এগিয়ে দেবে জীবনযুদ্ধে। তাই বই পড়ুন, জ্ঞান অর্জন করুন। জ্ঞান দ্বারা নিজ, পরিবার, দেশ ও সমাজের কল্যাণে কাজ করুন।

তাহমিনা আক্তার : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়