আদালতে হাজির হতে হবে নুসরাতকে

আগের সংবাদ

কঠোর হচ্ছে বাজার তদারকি

পরের সংবাদ

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এই দেশে প্রতি বছর কত শিক্ষার্থী স্নাতক পাস করে বের হচ্ছে? মোট চাকরির বাজার কত? বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, দেশের ৫৮ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ১০৭টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৮৫৭টি মহাবিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে সরকারি, আধাসরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাচ্ছে অর্ধেকের কম। অর্থাৎ ২ লাখের ও বেশি স্নাতক পাস শিক্ষার্থী প্রতি বছর বেকার হয়ে পড়ছেন। এক পর্যায়ে তাদের অনেকে হয়তো কর্মসংস্থানের খোঁজে সহায় সম্পদ বিক্রি করে পাড়ি জমাচ্ছেন বিদেশে। কেউ কেউ লেখাপড়ার অতীত ভুলে গিয়ে কৃষি কাজ কিংবা ছোটখাটো ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোনিবেশ করছেন। তাহলে এই উচ্চশিক্ষার মানে কী? বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সম্প্রতি একটি জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ৪৫-৫৫ শতাংশ বেকার। ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরি পান। ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অন্য কোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তর বা কারিগরি শিক্ষাগ্রহণ করছেন কিংবা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ৯ শতাংশ স্ব-উদ্যোগে কিছু করছেন। বেকারদের মধ্যে অনন্যোপায় হয়ে কেউ কেউ বিদেশে চলে যাচ্ছেন, কেউবা ইচ্ছের বিরুদ্ধে ছোটখাটো কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই পরিসংখ্যান থেকে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ভয়াবহ পরিণতিই ফুটে ওঠে। এক হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়ে। তারা স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পাস করে কর্মসংস্থানের চেষ্টা শুরু করে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশে স্নাতক ডিগ্রিধারী শিক্ষিত বেকারের পরিমাণ ৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ মোট স্নাতক ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অর্ধেকই বেকার থেকে যাচ্ছে।
ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের দেয়া তথ্যমতে, প্রতিবেশী দেশ ভারতে স্নাতক পাস শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকার ৩০ শতাংশ, পাকিস্তানে ২৮ শতাংশ, নেপালে ২০ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৮ শতাংশ। ইউরোপের প্রায় সব রাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপানের মতো উন্নত বিশ্বে স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকার নেই বললেই চলে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় শিক্ষার্থীরা দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া শেষ করে ৫০ ভাগের কম শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার দিকে যায়। বাকি ৫০ ভাগ স্বল্পমেয়াদে কারিগরি শিক্ষাগ্রহণ করে কাজ খুঁজে নেয়। বর্তমানে এর পরিমাণ আরো বাড়ছে। কারিগরি শিক্ষায় মেধার প্রমাণ দিতে পারলে ওখান থেকেও উচ্চশিক্ষার সুযোগ থাকে। সরকারের পক্ষ থেকেও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেয়া হয়। যেসব শিক্ষার্থী দ্বাদশ শ্রেণিতে ভালো রেজাল্ট করছেন, তারা উচ্চশিক্ষার জন্য মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, আইটি কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য পড়ার সুযোগ। অপেক্ষাকৃত কম ভালো রেজাল্ট করলে তাদের পরামর্শ দেয়া হয় কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য। আমাদের দেশেও সময় এসেছে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষায় নিরুৎসাহিত করে কারিগরি শিক্ষার পরামর্শ দেয়ার জন্য।
সমগ্র পৃথিবীতে যে দেশ যত বেশি দক্ষ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে সে দেশ তত বেশি শিল্পোন্নত। কারিগরি শিক্ষা না থাকলে জনশক্তিকে পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়, কারণ বর্তমান ৪র্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে জনশক্তিকে শিল্পবান্ধব জনশক্তিতে রূপান্তরের বিকল্প নেই। নয়ন আলীর মতো এই বিপুলসংখ্যক জনশক্তিকে উপযুক্ত কর্মমুখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মধ্যমে উৎপাদনমুখী কাজে ব্যবহার করে বাংলাদেশ পা রাখবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে। এবং তারা অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখার মাধ্যমে রাষ্ট্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

মো. হাসনাইন রিজেন : শিক্ষার্থী, হাটহাজারী সরকারি কলেজ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়