আদালতে হাজির হতে হবে নুসরাতকে

আগের সংবাদ

কঠোর হচ্ছে বাজার তদারকি

পরের সংবাদ

ওয়ান এক্স বেটের কবলে যুবসমাজ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাজির খেলায় ঝুঁকে যাচ্ছে যুবসমাজ। দেখা দিচ্ছে তাদের আর্থিক সংকট। এবং এই বাজি খেলার অন্যতম মাধ্যম ওয়ান এক্স বেট, যা আজ তরুণ সমাজে অতি পরিচিত একটি অ্যাপ্লিকেশন। সোজাসাপ্টা বাংলায় বলা যায় ‘অনলাইন জুয়া’।
এই অনলাইন জুয়া আমাদের তরুণ সমাজকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাচ্ছে? সম্প্রতি আমার দেখা কিছু তরুণ পরিবার থেকে টাকা নিচ্ছে, না দিলে চুরি করে নিচ্ছে শুধু এই অ্যাপে খরচ করতে। বাজি ধরবে, জিতলে টাকা পাবে, না জিতলে টাকা গচ্ছা দেবে।
আজকাল আর গলির মোড়ে তরুণ কিংবা যুবকরা আড্ডা দিচ্ছে না, লাইব্রেরিগুলোতে দিন দিন পাঠকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, গ্রুপ স্টাডি হচ্ছে না, নতুন কিছু করার চিন্তার হার কমে যাচ্ছে। তারা দলবদ্ধভাবে ওয়ান এক্স বেটে টাকা বাজি ধরছে। তিক্ত সত্য, টাকা ব্যতীত মূল্যহীন। অথচ এই টাকাই সব অনর্থের মূল। যার জীবন্ত প্রমাণ ওয়ান এক্স বেট এবং এর প্রভাব গোটা জেনারেশনের জন্য হুমকিস্বরূপ। ধারণা নেয়া যাক এই ওয়ান এক্স বেট কী, কীভাবে কাজ করে, টাকা প্রদানের মাধ্যম।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে ওয়ান এক্স বেট সম্প্রতিই কাজ করা শুরু করেছে। তবে ওয়ান এক্স বেট প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৭ সালের দিকে। ওয়ান এক্স বেট নিয়ে সামান্য রিসার্চে উঠে এসেছে তারা বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের কাছে খালি হাতে আসেনি। বিশাল আকারের প্রমাণ নিয়ে এসেছে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে। প্রলোভন দেখানোর সব বিষয় তারা ইতোমধ্যেই ব্যবস্থা করে ফেলেছে। যেমন বিভিন্ন ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, ফুটবল টুর্নামেন্ট মোট কথা স্পোর্টস ইত্যাদির ইভেন্টের প্রি-ম্যাচ বেটিং এবং রিয়েল-টাইম উভয় ক্ষেত্রেই ক্রিকেট অনুরাগীদের অ্যাক্সেস রয়েছে। এবং একই সঙ্গে রয়েছে পেমেন্টের ভিন্নতা। দেখা যায় প্রি-ম্যাচ বেটিং এবং রিয়েল-টাইম উভয়ের পেমেন্ট অ্যামাউন্ট আলাদা এবং এই ভিন্ন দুই ক্ষেত্রে টাকা ইনভেস্ট করার পরিমাণও আলাদা। এখানে একশ টাকা বাজি ধরেও খেলা যায় আবার হাজার হাজার টাকা বাজি ধরেও খেলা যায়।
মানুষের বেশির ভাগ ঝোঁক রয়েছে অনলাইন ক্যাসিনোর প্রতি। আর এখানেই মূলত চাল খাটানো হয়েছে। সাধারণ মানুষ এক টাকা দিয়ে চার টাকা পাবে এমন আশা ওয়ান এক্স বেট প্রতিষ্ঠা করেছে। আর এক্ষেত্রে ক্যাসিনো হলো ওয়ান এক্স বেট ওয়েবসাইটের সবচেয়ে পুরনো বিভাগ। যেখানে সব আকর্ষণীয় গেম রয়েছে। একজন ওয়ান এক্স গেমার সম্ভাব্য যা ভাবতে পারে তার সবকিছুই এতে রয়েছে। যেমন ক্লাসিক সøট মেশিন, থ্রিডি সøট, ব্যাকার্যাট, রুলেট, ব্ল্যাকজ্যাক, পোকার, হুইল অব ফরচুন, জ্যাকপট, কেনো, বিঙ্গো, ড্রপস অ্যান্ড উইনস, একচেটিয়া গেম। ওয়ান এক্স বেটের কবলে পড়ে অনেক অনেক যুবক নিজেদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিচ্ছে। যা একবিংশ শতাব্দীর জন্য বিরাট একটি দুঃসংবাদ।
যে বয়সে তারা বইয়ে মুখ গুঁজে থাকবে কিংবা খেলার মাঠে খেলবে সে বয়সে তারা জুয়ায় আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। সাধারণত আমরা দেখতাম গ্রামের দিকের ছেলেরা ছুটির দিনগুলোতে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করছে কিংবা ফুটবল। আবার দেখা যেত ছোটখাটো বনভোজন, গানের আড্ডা, দলবদ্ধ হয়ে বড়শি দিয়ে মাছ ধরায় মত্ত। ছুটি-পরবর্তী সময়ের পরিকল্পনা করছে। অথচ আজ তারা আলোচনা করছে কীভাবে কী করলে অনলাইন জুয়া থেকে বেশি আয় করা যাবে। এর ভয়াবহতা নিশ্চয়ই আমরা আঁচ করতে পারছি। কতটা বিপর্যয়ের মুখে আমাদের তরুণ সমাজ, আমরা কী ভেবে দেখেছি কিংবা এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি?
শুধু যে যুবসমাজে এর প্রকোপ তাও নয়। প্রায় সব বয়সের সিংহভাগ লোকই এখন এই অনলাইন জুয়াতে আসক্ত। লাভের আশায় কেউ গবাদি পশু বিক্রি করছেন, কেউ বা নিজের সম্বল দোকান বিক্রি করছেন কেউবা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছে এই অ্যাপ নিয়ে। এর প্রভাব পড়ছে সমগ্র পরিবারের ওপর এবং আমাদের সমাজের ওপর। আমাদের সোনালি সময়টা আজ বদ্ধ হচ্ছে ওয়ান এক্স বেটের কবলে। ওয়ান এক্স বেটের জন্য তারা যে মূল্যবান সময় অপচয় করে যাচ্ছে সেই সময়টা স্কিল ডেভেলপমেন্ট বা জ্ঞানার্জনের কাজে ব্যয় করার কথা। কিন্তু হচ্ছে কী? নেশাদ্রব্যে আসক্ত মানুষ চাইলে খুনের মতোও অপরাধ করতে পারে। ওয়ান এক্স বেটের প্রভাবেও ঠিক একই ঘটনা ঘটতে পারে। সম্ভাব্য অনেক ক্ষতিই হতে পারে এবং হচ্ছে। আমরা আমাদের পরিবারকে পর্যাপ্ত সময় দিই। আমাদের খোঁজ রাখা উচিত ছোট ভাই-বোন কী করছে, অনলাইনে সে কতটা সময় ব্যয় করছে এবং কোন ক্ষেত্রে সে সময় ব্যয় হচ্ছে। কেননা ওয়ান এক্স বেট কমিউনিটি ছোট নয়। আমাদেরই উচিত পরিবারের সদস্যের খোঁজ নেয়া, সাবধান করা। একটা কথা মনে পড়ে, একটা ভুল সারা জীবনের কান্না। ওয়ান এক্স বেটের কবল থেকে কাছের জনদের মুক্ত রাখতে ও তাদের ভুল শুধরে দিতে আমরাই পারি সার্বিক সাহায্য করতে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমাদের এগিয়ে আসা উচিত।

মিথিলা ফারজানা : শিক্ষার্থী, জম জম ইনস্টিটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যাটস, বরিশাল।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়