রোটারী ঢাকা নর্থ ওয়েস্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলেন ৫ গুণী

আগের সংবাদ

‘স্বতন্ত্র’ নিয়ে কী ভাবছে দল

পরের সংবাদ

বিএনপির চোখ কম্বোডিয়ায় : সরকারের ওয়াদায়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নির্বাচনী খেলায় জিতে সরকারের দ্রুত তালে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বিপরীতে বিএনপি আন্দোলনে ইস্তফা দেয়নি। কোনো কর্মসূচি স্থগিতও করেনি। কিছুটা দম নিচ্ছে মাত্র। সরকার হটানোর আন্দোলনে অটল তারা। নতুন কর্মকৌশল নিয়ে দেনদরবার-আলোচনাও চলছে। বিদেশি যোগাযোগেও কমতি দেয়নি। বরং ভরসা আরো বাড়ছে বা বাড়াচ্ছে। উচ্চাশাও করছে। চোখ ঘুরছে কম্বোডিয়ার দিকে। বাংলাদেশেও কম্বোডিয়ার মতো কিছু ঘটবে বলে কর্মী বাহিনীকে সাহস জোগাচ্ছে।
কম্বোডিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও বৈদেশিক সহায়তা স্থগিত হয়েছে একতরফা নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের ভূমিধস বিজয়ের পর। এখানেও নির্বাচনের পর এখন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকশন শুরুর স্বপ্ন বিএনপিসহ সমমনাদের। গেল নির্বাচনের আগে কম্বোডিয়ান কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে যে ধরনের হুমকি-হয়রানিমূলক প্রবণতা দেখিয়েছে তা দেশটির সংবিধানের চেতনা এবং কম্বোডিয়ার আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতাকে ক্ষুণ্ন করেছে। কম্বোডিয়ার ইতিহাসে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক বলা হচ্ছে। এই সমালোচনার অন্যতম কারণ দেশটির প্রধান বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে করা হয় এ নির্বাচন। নিবন্ধন-সংক্রান্ত ত্রæটির অজুহাত দেখিয়ে গত বছরের মে মাসে সিপিপির প্রধান প্রতিপক্ষ ক্যান্ডেললাইট পার্টিকে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এর আগে ২০১৮ সালে হুন সেন যখন প্রধানমন্ত্রী হন, তখনো সুকৌশলে বিরোধী দলকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখা হয়েছিল। ওই সময়ের জনপ্রিয় প্রধান বিরোধী দল কম্বোডিয়া ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টিকেও তখন আদালতের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এসবের জেরে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ।
বিএনপি দুর্গতির প্রায় ১৮ বছর চলছে। তা দিনে দিনে আরো বাড়ছে। ওয়ান-ইলেভেনে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর থেকে আজতক ঘুরে দাঁড়ানোর মতো শক্ত মাটি পায়নি দলটি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে চরম ভরাডুবির পর ২০১৪ সালে নির্বাচনে যায়নি। না যাওয়ার জের ভুগেছে। ২০১৮ সালে ভোটে গেছে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ড. কামাল হোসেনের ইমামতিতে। ২০২৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের ওপর ভর করে। সেই ভর-ভরসা এখনো ছাড়েনি। তাদের বাংলাদেশে কম্বোডিয়া কল্পনার রহস্যটা সেখানেই। এখানে রাজনৈতিক বিভেদ-বিভাজনে নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে সত্য। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার নিজস্ব আরোপিত পদ্ধতি বা মডেলে বারবার ক্ষমতায় আসছে, তাও সত্য। কিন্তু এর জেরে কম্বোডিয়ার ভাগ্যবরণের বাস্তবতা কি আছে? নানা ঘটনা ও বাস্তবতায় ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন হয়েছিল কম্বোডিয়ায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন ব্যক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেন। এরপর হুন সেন (সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী) ক্রমাগতভাবে ক্ষমতাকে তার একক কর্তৃত্বে নিয়ে আসেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি পিপিপি ১২৩টি আসনের মধ্যে ৯০টি আসন পেয়ে বিজয়ী হয়। দুটি প্রধান বিরোধী দলকে সামান্য কিছু আসন দেয়া হয়। চার বছর পর অর্থাৎ ২০১৩ সালের নির্বাচনের আগে ওই দুটি দল একত্রিত হয়ে একটি বড় রকমের প্ল্যাটফর্মে আসে। সেটাই ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টি। তার আগেই দেখা গেছে, এই দলটিকে যিনি নেতৃত্ব দিতে পারেন তাকে দণ্ড দেয়া হয়। তিনি শেষ পর্যন্ত দেশ থেকে বেরিয়ে গেছেন।
হুন সেনের দলের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিরোধীরা খুব ভালো ফল করল। আর তারপরই শুরু হলো নিপীড়ন। দলের নেতাদের ব্যাপকভাবে আটক করা হলো, দণ্ড দেয়া হলো। চার বছর পর দলটিকে নিষিদ্ধ করে দেয়া হলো। সেটাও ঠিক ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে। এর ফলে কেবল ছোট ছোট অনেকগুলো দল থাকল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সব আসন হুন সেনের দলই পায়। এ নিয়ে দেশে ব্যাপক সমালোচনার সমান্তরালে বাইরের চাপ আরো বাড়তে থাকে। বিরোধী দলগুলো দমন-পীড়নে কাহিল হলেও মাঠ ছাড়েনি। জনগণকে সংগঠিত করতে থাকে। এরপর ২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে সংগঠিত হয় ক্যান্ডেললাইট পার্টি নামে। গত বছরের জুলাইতে নির্বাচনের আগে কম্বোডিয়ার নির্বাচন কমিশন ক্যান্ডেললাইট পার্টির নিবন্ধন বাতিল করে দেয়। বিরোধীরা গেল সাংবিধানিক আদালতে। ওই আদালত বলে দেয়, নির্বাচন কমিশন যা করেছে ঠিকই করেছে। মার্কিনি পদক্ষেপে এসবের করুণ পরিণতিতে পড়তে হয় হুন সেনের সরকার, মন্ত্রী, পরিজনসহ গোটা দেশকে। বাংলাদেশের অবস্থা কি সেই দশায় গেছে বা আছে? প্রশ্নটির জবাব না খুঁজে কম্বোডিয়ার সিনড্রম দেখতে পছন্দ বিএনপি-জামায়াতসহ কয়েকটি বিরোধী দলের।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিভেদ অমীমাংসিত রেখে আওয়ামী লীগের নতুন সরকারের যাত্রা মসৃণ-অবিরাম হবে না বলে কয়েকটি মহলের জোর অভিমত। সরকার রাজনৈতিক সংকটকে স্বীকার না করে এ গতিতে এগোতে থাকলে এক সময় একটা পরিণতিতে পড়তে পারে, সেই বিশ্লেষণ বা মতামত আছে। তাদের যুক্তি হচ্ছে- সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশ্ন রয়েছে। সরকারের দিক থেকে প্রকাশ্যে স্বীকার করা না হলেও আদতে তা অগ্রাহ্য করা হচ্ছে না। প্রকাশ্যেই তারা এবারের অভিযাত্রাকে নিয়েছে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তথা সরকারের হেভিওয়েট নীতিনির্ধারক ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রীরা প্রকাশ্যেই বলছেন চ্যালেঞ্জের কথা। অর্থনীতি-কূটনীতির পাশাপাশি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের কথা নিয়মিত বলছেন তারা। নির্বাচনের আগ থেকে মন্ত্রের মতো বলেছেন, খেলা হবে- খেলা হবে। ওই খেলা শেষ হয়েছে কিনা, প্রশ্ন করার আগেই বলেছেন- নির্বাচনী খেলা শেষ হয়েছে, এখন হবে রাজনীতির খেলা। রকমফের খোলাসা না করলেও সেই খেলাটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জের। তা নির্বাচনী ইশতেহারে যত না দফা তার চেয়ে বেশি অঙ্গীকারের।
নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি মনে করছে, সরকার একদলীয় বৃত্ত তৈরি করে এগোচ্ছে। এর জেরে বাংলাদেশও কম্বোডিয়া হয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র তখন স্যাংশন-রেস্ট্রিকশন নিয়ে ধেয়ে আসবে। ক্ষমতাসীন দল থেকে বলা হচ্ছে, বিএনপির কম্বোডিয়ার খোয়াবও মাঠে মারা যাবে। বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন প্রতিহত করতে ব্যর্থরা এখনো পিছু হটেনি। তাদের আগামী দিনে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবেই মোকাবিলা করবে তার দল। পরের বাক্যে বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নিষেধাজ্ঞার জন্য বিদেশি বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে থাকলেও সরকারের লক্ষ্য নির্বাচনী ওয়াদা বাস্তবায়ন করা। ওয়াদা রক্ষা তথা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার সক্ষমতা দেখাতে কতটা সক্ষম হবে, তা আলোচনা ও অপেক্ষার বিষয়। সেই ক্ষেত্রে নিত্যপণ্যের বাজারসহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামলানো এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন কেবল বিষয় নয়, ফ্যাক্টরও। লক্ষ্য পূরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কিছু নমুনা মন্ত্রিসভা গঠনেও স্পষ্ট। অঙ্গীকার বাস্তবায়ন ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়টি নির্ভর করে সরকারপ্রধান ও সরকারের কৌশলের ওপর। এর আগে চারবার সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে শেখ হাসিনার। তার আন্তরিকতাও প্রশ্নমুক্ত।
দ্রব্যমূল্য সব মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, কর্মসংস্থান বাড়ানোসহ ১১টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে এবারের ওয়াদা সাজানো হয়েছে। এসব ওয়াদা বাস্তবায়নে বেশি সম্পৃক্ত অর্থ, পরিকল্পনা, বাণিজ্য, পররাষ্ট্র, কৃষিসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি বন্ধ করা, বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় এসব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর একনিষ্ঠ সহকর্মী হবেন বলে ধারণার সঙ্গে বিশ্বাসও অনেকের। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিধর দেশগুলো এ নির্বাচনকে ভালোভাবে নেয়নি, তা লুকানোর বিষয় নয়। আবার কূটনৈতিক চাপ কিংবা পরিস্থিতি শামাল দিতে সরকারের সক্ষমতাও বেড়েছে। এই রসায়নে ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান, এবার হবে কর্মসংস্থান’ সেøাগানে ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহারেও আছে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক চর্চার প্রসার, আর্থিক খাতে দক্ষতা বৃদ্ধির মতো বিষয়। সময়টা অর্থনৈতিকভাবে বেশ অস্থির। ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে নাকানি-চুবানি খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও নাজুক। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি বন্ধ করা, বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা না করার বিকল্প নেই সরকারের। লক্ষণীয় বিষয়, নতুন সরকারের শপথের পরদিনই চালসহ কিছু নিত্যপণ্যের দাম হঠাৎ চড়েছে। এ নিয়ে দোকানদার, পাইকার, আড়তদারদের পাল্টাপাল্টি দোষারোপ ভিন্ন কিছুর বার্তা দেয়। চাল-তেল বাংলাদেশের রাজনীতি-অর্থনীতিতে বড় রকমের ঐতিহাসিক আইটেম। এসবের দাম চড়াতে একটি দিনও পার হতে না দেয়ার মাঝে একটি উৎকট গন্ধ অনুমেয়। সরকারকে পেয়ে বসা বা কাবু করার একটি আলামত। এমনিতেই যুদ্ধসহ বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে নতুন করে পণ্য মূল্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা ঘুরছে। তার ওপর বাজার সিন্ডিকেট নতুন কোনো উদ্যম পেয়ে থাকলে তা সরকারের ওয়াদা বরবাদের দাওয়াই হয়ে উঠতে পারে। তা শক্ত হাতে দমন করতে হবে, করতেই হবে। চোখ-কান, মন-মনন রাখতে হবে ওয়াদার দিকে।

মোস্তফা কামাল : সাংবাদিক ও কলাম লেখক; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়