রোটারী ঢাকা নর্থ ওয়েস্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলেন ৫ গুণী

আগের সংবাদ

‘স্বতন্ত্র’ নিয়ে কী ভাবছে দল

পরের সংবাদ

দারিদ্র্য বিমোচনের সহজ উপায়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে এবং মোট অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ১০০ কোটির বেশি। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ওই প্রতিবেদন বলছে, করোনা মহামারি, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে ২০২০-২২ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বের প্রায় সাড়ে ৭ কোটি মানুষ অতিদরিদ্র হয়েছে। তাদের প্রতিদিন ২ ডলার ১৫ সেন্ট বা তার কম আয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। একই সময়ে ৯ কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমেছে। তাদের দৈনিক ৩ ডলার ৬৫ সেন্টের কম আয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে। এ বিষয়ে ইউএনডিপির প্রধান আচেম স্টেইনার এক বিবৃতিতে বলেন, গত তিন বছরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ দরিদ্র হয়েছে। তবে যেসব দেশ সামাজিক নিরাপত্তায় আগাম বিনিয়োগ করতে পেরেছে, সেসব দেশে এই সমস্যা কম দেখা গেছে। তবে উচ্চ ঋণগ্রস্ত দেশ, সামাজিক নিরাপত্তায় অপর্যাপ্ত বরাদ্দের দেশ এবং দারিদ্র্য বৃদ্ধির উচ্চ হারের মধ্যে একটা সম্পর্ক দেখা গেছে। জাতিসংঘের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রায় ৩৩০ কোটি মানুষ এমন দেশে বসবাস করে, সেসব দেশ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের চেয়ে ঋণের সুদ পরিশোধে বেশি অর্থ ব্যয় করে। এমনকি উন্নয়নশীল কয়েকটি দেশ তুলনামূলক কম ঋণ নিলেও উচ্চ সুদহারের কারণে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্ত্রার দুফলো বলেন, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ হচ্ছে বিদ্যমান সম্পদ দিয়ে জীবনমানের উন্নয়ন করা; অর্থাৎ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ করা এবং একই সঙ্গে আদালত ও ব্যাংকের মানোন্নয়ন, উন্নত সড়ক ও বসবাসের উপযোগী শহর নির্মাণ করা। ধনী দেশগুলোর জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। এদের আবার দরিদ্র দেশের জীবনমান উন্নয়নে সরাসরি বিনিয়োগ করা উচিত। উন্নয়নের জাদুমন্ত্র নেই। তাই শুধু প্রবৃদ্ধিতে জোর দেয়া বৃথা। এর চেয়ে বরং প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে যা অর্জিত হয়, জোর সেখানেই দেয়া উচিত গরিব মানুষের কল্যাণে।

ইসলামে সম্পদ বণ্টনের নীতিমালা
ইসলামে সম্পদ বণ্টনের নীতিমালা মহাগ্রন্থ আল কুরআনেই দেয়া আছে। আল কুরআনের সুরা হাশরে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ জনপদবাসীদের নিকট থেকে তার রাসুলকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা আল্লাহর, তার রাসুলের, রাসুলের স্বজনগণের, ইয়াতিমদের, অভাবগ্রস্ত ও পথচারীদের; যাতে তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান কেবল তাদের মধ্যেই সম্পদ আবর্তিত না করে। রাসুল তোমাদের যা দেয়, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হইতে তোমাদের নিষেধ করে তা হইতে বিরত থাক এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; আল্লাহ তো শাস্তিদানে কঠোর।’ জাকাত নিশ্চিত করে সম্পদের গুরুত্বপূর্ণ বণ্টন বা অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়ন। জাকাত নিয়ে আল কুরআনের কয়েকটি আয়াতে এ বিষয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সালাত কায়েম কর ও জাকাত দাও এবং রুকু তাহাদের সঙ্গে রুকু কর’ (সুরা-২, বাকারা, আয়াত ৪৩)। ‘স্মরণ কর, যখন বনি ইসরায়েলের অঙ্গীকার নিয়েছিলাম, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করিবে না, মাতাপিতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন ও দরিদ্রদের প্রতি সদয় ব্যবহার করবে এবং মানুষের সঙ্গে সদালাপ করবে, সালাত কায়েম করবে ও জাকাত দেবে। কিন্তু স্বল্পসংখ্যক লোক ব্যতীত তোমরা বিরুদ্ধভাবাপন্ন হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে। ‘(সুরা-২, বাকারা, আয়াত-৮৩)। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজিদে জাকাত প্রদানের ৮টি খাত উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘জাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাহাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্তদের, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য। ইহা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সুরা-৯, তাওবা, আয়াত-৬০)। এভাবে জাকাতের কারণে ধনীর সম্পদ দরিদ্র মানুষের মাঝে যায় অর্থাৎ জাকাত দরিদ্রের সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। অন্যদিকে দরিদ্র মানুষেরা ধনীর অধীনে কাজ করে এবং ধনীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য ও সেবা ক্রয় করে, যা ধনীর সম্পদ বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। এভাবে ধনী ও দরিদ্র উভয়ই লাভবান হয় এবং সামাজিক সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই জাকাতের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হয়।

দারিদ্র্য বিমোচনে মহানবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) শিক্ষা
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, একজন সাহাবি মহানবীর (সা.) কাছে এসে কিছু চাইলেন। রাসুল (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার কি কিছুই নেই’। সাহাবি বললেন, হ্যাঁ, একটি বড় চাদর আছে, যার এক অংশ আমি পরিধান করি, আরেক অংশ বিছিয়ে নিদ্রা যাই। আর পান করার একটি পাত্র আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, উভয়টি নিয়ে আস। অতঃপর সাহাবি উভয়টি নিয়ে এলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) উভয়টি হাতে নিয়ে বললেন, ‘এ দুটি জিনিস কে ক্রয় করবে’। একজন সাহাবি বললেন, আমি এক দিরহাম দিয়ে ক্রয় করব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এক দিরহামের বেশি দিয়ে কে ক্রয় করবে?’ এ কথা তিনি দুবার অথবা তিনবার বললেন। তখন অপর এক সাহাবি বললেন, আমি উভয়টি দুই দিরহামে ক্রয় করব। অতঃপর বস্ত্রদ্বয়ের মালিককে দিরহাম দুটি দিয়ে বললেন- ‘যাও, এক দিরহাম দিয়ে পরিবারের জন্য খাদ্য কিনবে, আর অপর দিরহাম দিয়ে একটি কুঠার কিনে আমার কাছে নিয়ে আসবে।’ অতঃপর সে কুঠার নিয়ে এলে রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজ হাতে তার হাতল লাগান। অতঃপর বললেন, ‘জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কাটবে এবং বাজারে গিয়ে বিক্রি করবে। ১৫ দিন আমি যেন তোমাকে না দেখি। অর্থাৎ ১৫ দিন আমার কাছে আসবে না। অতঃপর সে চলে গেল এবং কাঠ কেটে বিক্রি করতে লাগল। ১৫ দিনে তার কাছে ১০ দিরহাম জমা হলো। সে কিছু দিরহাম দিয়ে জামা এবং কিছু দিরহাম দিয়ে খাদ্য ক্রয় করল। কিছু দিনের মধ্যে তার অভাব দূরীভূত হয়ে গেল। মহানবী (সা.) অন্যের কাছে না চেয়ে কর্ম করে খাওয়া যে উত্তম, তাকে তা বুঝিয়ে দিলেন। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)। সুতরাং মহানবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) শিক্ষা হলো ভিক্ষা করো না; মেহনত করো।
পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষিত বেকারেরা যদি ভালো গণিত বোঝে, দেশের ইতিহাস জানে, সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা থাকে, যোগাযোগ করার মতো বাংলা ও ইংরেজি ভাষা জানা থাকে এবং ডিজিটাল মাধ্যম সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকে, তখন শিক্ষিত বেকার অনেক বেশি কমে যাবে। অন্যদিকে সম্পদ বণ্টনে আল্লাহ প্রদত্ত নীতিমালা মেনে চললে দেশের অধিকাংশ মামলা কমে যাবে এবং আত্মীয়তা ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হবে। উল্লেখ্য, হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন মক্কা থেকে মদিনায় সাহাবিদের নিয়ে হিজরত করেন, তখন তারা মদিনায় ব্যবসায় মনোযোগ দেন এবং এ ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেন কথা ও কাজের মিল রেখে বিশ্বাস অর্জনের। এভাবেই তারা অর্থনৈতিক কারণে অন্যের দ্বারস্থ না হয়ে কাজের মাধ্যমে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছিলেন এবং সচ্ছল জীবনযাপন করেন। তারা তাদের আয়ের মধ্য থেকে জাকাত দিতেন এবং দরিদ্রকে দান করতেন। উল্লেখ্য, দানে সম্পদ বাড়ে। আল্লাহ্ বলেন, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর তবে তা ভালো, আর যদি তা গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তকে দান কর তা তোমাদের জন্য আরো ভালো এবং তিনি তোমাদের কিছু পাপ মোচন করিবেন; তোমরা যা কর আল্লাহ্ তা সম্যক অবহিত’। (সুরা-২, বাকারা, আয়াত ২৭১) আল্লাহ আরো বলেন, ‘যাহারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা একটি শস্যবীজ, যা সাতটি শিষ উৎপাদন করে, প্রতিটি শিষে একশত শস্যদানা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ’। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত ২৬১)। ভালো কাজের প্রতিযোগিতা, নিজেকে কর্মক্ষম হিসেবে গড়ে তোলা, আয় থেকে জাকাত ও দানের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব। মনে রাখবেন, কোনো ব্যবসায় বা অফিসে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সততা ও যোগ্যতা যেন গুরুত্ব পায় এবং দানের ক্ষেত্রে দরিদ্র আত্মীয় ও প্রতিবেশী যেন গুরুত্ব পায়।

মো. মশিউর রহমান : ব্যাংকার ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়