রোটারী ঢাকা নর্থ ওয়েস্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলেন ৫ গুণী

আগের সংবাদ

‘স্বতন্ত্র’ নিয়ে কী ভাবছে দল

পরের সংবাদ

কিছু মৃত্যুকে অপমৃত্যু বলার অবকাশ নেই

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

টেলিভিশনে চোখ রাখা যাচ্ছে না। শিশু আয়ানের মায়ের কান্না দেখে ঠিক থাকা কঠিন। আয়ান খুব সুস্থ একজন শিশু ছিল। সারা ঘর দৌড়ে বেড়াত, খেলা করত আবার পড়াশোনার জন্যও ওর আবেগ ছিল অন্যরকম।
ওর মাকে বলতে শুনলাম ও কখনো বাইরের খাবারও খেত না। এ কারণে ওর মা ওকে রান্না করে সবসময় খাবার দিতেন। স্কুল ড্রেস, কিছু ভিডিও আর প্রতিদিনকার ছবি আয়ানের স্মৃতিগুলোকে আরো বেশি স্পর্শকাতর করে তুলছে আমাদের। ইউনাইটেড হাসপাতালে অনেকটা আনন্দ নিয়েই সুন্নতে খতনা করতে গিয়েছিল আয়ান। মৃত্যুর পর ডাক্তারের ভুল, অমনোযোগিতা কত কিছু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
একজন অ্যাডভোকেট রিটও করেছেন হাইকোর্টে আয়ানের ব্যাপারে। কিন্তু দোষী খুঁজতে এ যেন এক মহাকাণ্ড। ডাক্তারদের ভুল হবে, এটা আমরাও মানতে চাই না। কিন্তু সব কিছুর পরও আয়ানের মৃত্যু চিকিৎসার ত্রæটিপূর্ণ আচরণকেই নির্দেশ করে। যখন একটি সংসারের গল্প পুরো ভেঙে যায় তখন শুধু সে সংসারই জানে কী ব্যত্যয় হয়ে গেল সব কিছুতে। আমার স্পষ্ট কথা হলো, এ ধরনের সব বিষয় অপমৃত্যু হিসেবে নিলে কাজের ক্ষেত্রে কোয়ালিটির কোনো প্রয়োজনীয়তাও থাকবে না এবং কাজের কোনো দায়বদ্ধতাও থাকবে না। ভুল হলে তার শাস্তি পাওয়া একান্তভাবে জরুরি। ব্যাংকে চাকরিরত একজন নারী কয়েকদিন আগে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় ইট পড়ে মারা গেলেন।
নারীর হাজবেন্ডের কান্নাজড়িত কথা শুনলাম। অসহায়ত্ব! যেন কোনো দায়বদ্ধতা নেই। ওপর থেকে ইট পড়তেই পারে, মানুষ মরতেই পারে! ইট পড়ে মৃত্যুর ঘটনা কি এটিই প্রথম?
আরো অনেকবার এমন হয়েছে। হচ্ছেই। নির্বিকার অপমৃত্যুর দায়ে ঢেকে যায় সব। কিছুদিন আগে গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় একটি হাসপাতালে টনসিলের অপারেশনে শিশু মৃত্যুর একটি অভিযোগ এসেছিল। তারপর আর কোনো কথা হয়নি। গত বছরের প্রথম দিকে কয়েকটি অভিযোগ দেখেছিলাম ভুল গ্রুপের রক্ত দেয়ায় প্রসূতির মৃত্যু! ভুল গ্রুপের রক্ত দেয়ার মতো ঘটনা আধুনিক সময়ে খুব সাধারণ বলে মনে করেন? না করেও কি উপায় আছে?
আপনাদের মনে আছে কিনা গত বছর রাস্তা দিয়ে বাবার সঙ্গে হেঁটে যাওয়ার সময় দেয়াল ধসে একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। এটি ছিল কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের দেয়াল। তাই বলে একটি দেয়াল এ রকম ড্যামেজ হয়ে রইল, কেউ জানলই না আর শিশুটির ওপর পুরো দেয়াল পড়ে সে নিহত হলো। এগুলো আসলে কতটুকু মেনে নেয়া যায়? এখানে কেউ বিচারের আওতায় আসা তো দূরে থাক আর কোনো কথাই নেই এ বিষয়ে সে ঘটনার পর। আমরা কি তবে এগুলো সব অপমৃত্যু হিসেবেই নিচ্ছি? আইন কী বলে? এ প্রশ্নগুলো সামনে আনতেই হচ্ছে। না হলে একটি বড় অংশ পুরো অধিকারহীনভাবেই তাদের মৃত্যুগুলোকে মেনে নিয়ে শুধু কষ্টের দিন যাপন করবে। জবাবদিহিতার জায়গা নিশ্চিত করার আগেও সৎ ও সঠিক কথা বলতে পারে এমন মানুষদের ডাক্তারি পেশা বা জনসম্পৃক্ত কাজগুলোতে আনতে হবে। যে বাড়ির ইট নারীর মাথায় পড়ে মৃত্যুবরণ করেছে সে বাড়ির ডিজাইনার, ইঞ্জিনিয়ার, মালিক ও যারা কাজ করছিল তাদের সবার বিচারিক আওতায় আনা প্রয়োজন। এই বিষয়গুলো নাগরিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। চিকিৎসা, সেবা, নিরাপত্তার জায়গাটি সমুন্নত করতে কাজ করবে তো সবাই?
নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী যুক্ত হলেন। তিনি কাজের মানুষ। আমি আশা করব ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর বিষয়টি সবার আগে বিবেচনায় আনবেন। পরিকল্পনামন্ত্রীও যুক্ত হলেন। তিনি নগর পরিকল্পনায় এমন ছোট ছোট কাজগুলো করবেন আর আমরা বৃহৎ পরিসরে তার ফল পাব, এটা প্রত্যাশা। শিশু আয়ানের এমন মৃত্যুর জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঠিক তদন্তের আওতায় এনে দোষীদের শাস্তি কামনা করছি।

সাঈদ চৌধুরী : শ্রীপুর, গাজীপুর।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়