গাজীপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে নারীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

সরকারের তিন অগ্রাধিকার

পরের সংবাদ

খুঁড়িয়ে চলছে সৈয়দপুর বিসিকের কারখানাগুলো

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জিকরুল হক, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে : রংপুর বিভাগের ৮ জেলার সফল শিল্পনগরী বলতে সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরীকেই বোঝাতো। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এসব শিল্প কারখানা বর্তমানে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। এ অভিযোগ সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরীর শিল্পমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামের।
সৈয়দপুর বিসিক শিল্পমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের মতে, চার কারণে উত্তরাঞ্চলের ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প কারখানাগুলো রুগ্ন হতে চলেছে। এর মধ্যে রয়েছে পণ্য উৎপাদনে খরচ বেশি, বিদ্যুৎ সংকট, পণ্য বেচার মার্কেট সংকুচিত ও দক্ষ জনশক্তির অভাব।
তিনি বলেন, ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের শিল্প মালিকরা কাঁচামাল আনেন। এতে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়। এমনকি শিল্পের কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেলে তাও ঢাকা থেকে সারিয়ে আনতে হয়। অথচ ঢাকার শিল্প কারখানাগুলোতে উৎপাদিত পণ্যে খরচ কম হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের পুরো বাজার ঢাকার শিল্প মালিকরা দখল করে নিয়েছে। দামের হেরফেরের কারণে সৈয়দপুর তথা উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য উত্তরাঞ্চলের বাজারে টিকে থাকতে পারছে না। কম মজুরীতে শ্রমিক মিললেও রয়েছে দক্ষ জনশক্তির অভাব। ফলে ঢাকার শিল্প কারখানার মালিকরা এক ঘন্টায় যত পণ্য উৎপাদন করতে পারে সেই পরিমাণ পণ্য উত্তরাঞ্চলে তৈরী করতে দ্বিগুণ সময় লাগে। পরিবহন ব্যয়ের কারণে পণ্যের কাঁচামালের ব্যয়ও বেশি হয়। এদিকে ভ্যাট, ট্যাক্সও সারাদেশে একই। আছে বিদ্যুতের ভেলকিবাজি খেলা। সব মিলে ঢাকায় তৈরী পণ্যের চেয়ে উত্তরাঞ্চলে পণ্য উৎপাদনে খরচ বেশি। সে হিসাবে ঢাকার তৈরী পণ্য আমাদের পণ্যের তুলনায় সস্তা হওয়ায় বাজার তাদের দখলে যায়। এতে পণ্যের বেচাকেনায় মার খেলে স্বাভাবিকভাবেই সৈয়দপুর তথা উত্তরাঞ্চলের শিল্প কারখানাগুলোতে উৎপাদনে ধস নামে। ধীরে ধীরে সম্ভাবনাময়ী এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান রুগ্ন হতে শুরু করেছে। শিল্প মালিক সমিতির এই সাধারণ সম্পাদকের দাবি- ভ্যাট, ট্যাক্স ও ব্যাংক ঋণে উত্তরাঞ্চলের শিল্প মালিকদের বিশেষ প্রণোদনা দিলে শিল্পের প্রসার ঘটানো সম্ভব। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিক শিল্পনগরীর এক কর্মকর্তা জানান, কিছু কিছু পণ্য উৎপাদনে ঢাকার চেয়ে সামান্য খরচ বাড়তি হলেও সৈয়দপুরের শিল্প মালিকরা অন্য ধরনের যেমন, প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য উৎপাদনে বেশ ভালো মুনাফা করে। ওই কর্মকর্তার মতে বস্তা জাতীয় পণ্য উৎপাদন করে স্থানীয় শিল্প মালিকরা শতকরা ৩০ টাকা পর্যন্ত আয় করে। কিন্তু এই আয়ের কথা শিল্প মালিকরা স্বীকার করতে একেবারেই নারাজ। এ কর্মকর্তার দেয়া তথ্য মতে, চরম উর্ধ্বগতির বাজারেও নারী শ্রমিকদের ১২ ঘন্টা কাজের বিনিময়ে মজুরী দেয়া হয় মাত্র ২০০ টাকা। নারী শ্রমিকদের এই মজুরির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিল্প মালিক আমিনুল ইসলাম। বিসিক শিল্প নগরী কার্যালয়ের দেয়া তথ্য মতে, সৈয়দপুরের শিল্প নগরীটি প্রায় ১১ একর জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে। এই শিল্প নগরীতে ৯২টি শিল্প প্লট রয়েছে। সবকটি প্লট বরাদ্দ দেয়া আছে। এ প্লটগুলোকে ঘিরে ৪৯টি শিল্প ইউনিট গড়ে ওঠার কথা। বর্তমানে ৪৬টি শিল্প ইউনিট পুরোদমে উৎপাদনে গেলেও দুটি ইউনিট বর্তমানে নির্মাণাধীন আছে। আবার ইতোমধ্যে একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। শিল্পের এ ইউনিটটির নাম হলো মদিনা ফ্লাওয়ার মিল। বর্তমানে এ শিল্প নগরীতে ২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গমের মূল্য ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মালিক পক্ষ ওই ময়দা মিলটি বন্ধ করে দেয়।
কথা হয় সৈয়দপুর বিসিক শিল্প নগরীর কর্মকর্তা মশিউর রহমানের সঙ্গে। তিনি মোবাইলফোনে বলেন, ব্যবসায়িক সমস্যা শিল্প মালিকদের নিজেদেরকেই সমাধান করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়