ভোটকেন্দ্রে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করা শামীম গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভার শপথ আজ : পূর্ণ মন্ত্রী ২৫, প্রতিমন্ত্রী ১১ > বাদ পড়েছেন ১৪ জন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী > নতুন মুখ ১৯

পরের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে বিজয় পূর্ণতা পায়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী পার করে আবার এসেছে ১০ জানুয়ারির মহিমান্বিত দিন। নির্বাচনে শেখ হাসিনার বিজয় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উদযাপনের গুরুত্বকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা জানি, ৮ জানুয়ারি ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পৃথিবীর মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর ফিরে আসার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ী বাঙালি জাতির বিজয় পূর্ণতা পেল। বঙ্গবন্ধুকে সাড়ে ৯ মাস পাকিস্তানের কারাগারের অন্ধকার ঘরে বন্দি রাখা হয়েছিল। লায়ালপুর (বর্তমানে ফয়সালাবাদ) জেলের অপরিসর একটি কুঠুরি ছিল সেই বন্দির বাসস্থান। তাঁর জগৎ বলতে সেখানে ছিল চার দেয়াল, একটি জানালা ও একটি উঁচু বিছানা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর তাঁকে সরিয়ে নেয়া হয় কারাগার থেকে দূরে আরো দুর্গম জায়গায়। ২৪ ডিসেম্বর একটি হেলিকপ্টারে বঙ্গবন্ধুকে রাওয়ালপিন্ডির অদূরে শিহালা পুলিশ একাডেমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি শাসক।
একাত্তরে পাকিস্তানের কারাভ্যন্তরে বন্দি ছিলেন ঠিকই; কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তখন জানতেন না তিনি কোন শহরে আছেন। কেবল জানতেন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী তাঁকে বন্দি করে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের জেলে রেখেছে। কারাজগৎ সম্পর্কে তাঁর ভালোভাবেই ধারণা ছিল, কেননা আগেও তিনি কারাবন্দি ছিলেন। তিনি কারাবাস সম্পর্কে প্রায় বলতেন, প্রথম দফার স্বল্পকালের কারাবাস ছাড়া তাঁকে কারাগারে বরাবর নিঃসঙ্গ কুঠুরিতে আটক রাখা হয়েছিল। দৈহিকভাবে নির্যাতন করা না হলেও নানাভাবে মানসিকভাবে হয়রানি করা হয় তাঁকে। কারা কর্তৃপক্ষ প্রতি সপ্তাহে বন্দির আচার-আচরণ সম্পর্কে ইসলামাবাদে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠাত। এই রিপোর্টে উল্লেখ থাকত, তিনি কী খাবার খেয়েছেন, তিনি কেমন ঘুমিয়েছেন, সেলের মধ্যে এক দেয়াল থেকে অন্য দেয়াল পর্যন্ত পায়চারি করেছেন, কী করেননি। বন্দির কথাবার্তা সম্পর্কে জানতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খুব উৎসুক ছিলেন। অবশ্য বঙ্গবন্ধু সেলে প্রবেশকারী গার্ডদের সালামের প্রতি-উত্তর দেয়া ছাড়া সব সময় নীরবই থাকতেন।
পাকিস্তানের কারাগারে দীর্ঘকাল নিঃসঙ্গ এবং বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কোনো যোগাযোগ না থাকলেও বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে তাঁর আত্মিক যোগাযোগ ছিল- ‘জনগণের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক কখনো ছিন্ন হয়নি, এক মুহূর্তের জন্যও নয়।… যখন বিপদ আমাকে আচ্ছন্ন করত, আমি বুঝতে পারতাম আমার জনগণ তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করছে। যখন আমার মনের দিগন্তে দেখা দিত চকিত আশার ঝলকানি, আমি জানতাম তারা সেই দুর্ভোগ অতিক্রম করছে। … একে বলতে পারেন প্রজ্ঞা, টেলিপ্যাথি, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কিংবা অন্য যা খুশি তাই। কিংবা সম্ভবত এটা এক ধরনের ঐশী প্রেরণা; আমি যেটা জানি তা হলো আমার মন বলছিল বিজয় আমাদের হবেই। এত বিপুল রক্তদান বৃথা যেতে পারে না। রক্ত সেই অতীব জরুরি তরল, বাঁচিয়ে রাখে জীবনকে এবং এমনি রক্তদান যে আদর্শের জন্য, সেই আদর্শকেও তা বাঁচিয়ে রাখবে।’
যন্ত্রণাদায়ক বন্দিজীবন থেকে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু লন্ডনে পৌঁছান। লন্ডন থেকে ৯ জানুয়ারি রাতে রওনা হয়ে ১০ জানুয়ারি দুপুরে দিল্লিতে উপস্থিত হন বিকাল ৪টায় দেশে ফেরার ঠিক আগে। দিল্লি বিমানবন্দরে স্বাধীন বাংলাদেশের এই মহানায়ককে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। বিমানবন্দরে এ উপলক্ষে আয়োজিত অভ্যর্থনা সভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধী। তিনি সেদিন বাংলায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং ইন্দিরা গান্ধী ও ভারতের জনগণের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। অন্যদিকে ইন্দিরা গান্ধী হিন্দিতে দেয়া তার ভাষণে বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তাঁর শরীরকে জেলখানায় বন্দি করে রাখা হলেও তাঁর আত্মাকে কেউ বন্দি করে রাখতে পারেনি। তাঁর প্রেরণায় বাংলাদেশের মানুষ সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। তিনি প্রেরণা দিতে এখন ভারতে আমাদের কাছে এসেছেন। এই যুদ্ধের সময় আমরা ভারতের পক্ষ থেকে তাদের জন্য তিনটি কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এক. যে শরণার্থীরা ভারতে আছে তারা সময় হলে ফিরে যাবে। দুই. আমরা মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করব ও বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়াব। তিন. শেখ সাহেবকে (শেখ মুজিবুর রহমান) আমরা দ্রুত জেল থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করব। আমরা আমাদের প্রতিশ্রæতি রেখেছি।’
এরপর বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণ ইংরেজিতে শুরু করলে উপস্থিত হাজার হাজার ভারতীয় দর্শক একসঙ্গে সমস্বরে চিৎকার করে তাঁকে বাংলায় ভাষণ দেয়ার অনুরোধ করতে থাকেন। তাদের দাবির মুখে খানিকটা বিব্রত হয়ে পাশে দাঁড়ানো ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দিকে তাকালে তিনিও স্মিত হেসে বলেন, ‘দে নিড বেঙ্গলি’। তিনি বঙ্গবন্ধুকে বাংলায় বক্তৃতা করার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু তাঁর দরাজ কণ্ঠে বাংলায় বক্তৃতা শুরু করেন। ‘ভাই ও বোনেরা’ বলতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে ভারতের অভ্যর্থনা সভার জনস্রোত। এই ভাষণে তিনি কৃতজ্ঞতা জানান ভারতের সব সহায়তার জন্য। একই দিন ঢাকার ভাষণেও তা পুনরায় উচ্চারিত হয়। দিল্লিতে তিনি বলেন, ‘আপনাদের প্রধানমন্ত্রী, আপনাদের সরকার, আপনাদের সৈন্যবাহিনী, আপনাদের জনসাধারণ যে সাহায্য ও সহানুভূতি আমার দুঃখী মানুষকে দেখিয়েছে চিরদিন বাংলার মানুষ তা ভুলতে পারবে না। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী আমার জন্য দুনিয়ার এমন জায়গা নেই যেখানে তিনি চেষ্টা করেননি আমাকে রক্ষা করার জন্য। আমি ব্যক্তিগতভাবে তার কাছে কৃতজ্ঞ। আমার সাড়ে সাত কোটি মানুষ তার কাছে এবং তার সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। আমার জনসাধারণ ভারতবর্ষের জনসাধারণের কাছে কৃতজ্ঞ। আর যেভাবে ১ কোটি লোকের খাওয়ার বন্দোবস্ত এবং থাকার বন্দোবস্ত আপনারা করেছেন… আমি জানি ভারতবর্ষের মানুষ খুব দুঃখী আছে সেখানে, তারাও কষ্ট পাচ্ছে, তাদেরও অভাব-অভিযোগ আছে তা থাকতেও তারা সর্বস্ব দিয়েছে আমার লোকরে সাহায্য করার জন্য, চিরদিন আমরা তা ভুলতে পারব না।… আপনারা জানেন বাংলাদেশ শেষ হয়ে গেছে, আমি সব প্রকার সাহায্য-সহানুভূতি আশা করি এবং এও আশা করি দুনিয়ার শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক যে মানুষ আছে তারা এগিয়ে আসবে আমার মানুষকে সাহায্য করার জন্য।… আমি বিশ্বাস করি সেক্যুলারিজমে, আমি বিশ্বাস করি গণতন্ত্রে, আমি বিশ্বাস করি সোশ্যালিজমে।… আমাকে প্রশ্ন করা হয়, শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আপনার আদর্শে এত মিল কেন? আমি বলি, এটা আদর্শের মিল, এটা নীতির মিল, এটা মনুষ্যত্বের মিল, এটা বিশ্ব শান্তির মিল।…’
বঙ্গবন্ধু এই ভাষণে তাঁর ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন। পরে যা বাংলাদেশের সংবিধানেও সংযুক্ত করা হয়। তার মধ্যে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা অন্যতম। অন্যদিকে পররাষ্ট্রনীতিতেও যুক্ত হয় সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের নীতি। উপরন্তু ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা চুক্তিও করেন তিনি।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারিতে ঢাকার মাটি স্পর্শ করার পর উপস্থিত জনতার ঢল দেখে নিজের অশ্রæ সংবরণ করতে পারেননি বঙ্গবন্ধু। বিশাল জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে জাতিকে দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দেন, ক্লান্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি আজ বক্তৃতা করতে পারব না।’ কিন্তু জানিয়েছেন- ‘আজ আমি যখন এখানে নামছি আমি আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। যে মাটিকে আমি এত ভালোবাসি, যে মানুষ কে আমি এত ভালোবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালোবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারব কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’
তিনি এই ঐতিহাসিক ভাষণে যারা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। স্বাধীন দেশে দাঁড়িয়ে মুক্ত মানুষের দিকে চেয়ে বলেন, “আমি আজ বাংলার মানুষকে দেখলাম, বাংলার মাটিকে দেখলাম, বাংলার আকাশকে দেখলাম, বাংলার আবহাওয়াকে অনুভব করলাম। বাংলাকে আমি সালাম জানাই, আমার সোনার বাংলা তোমায় আমি বড় ভালোবাসি বোধহয় তার জন্যই আমায় ডেকে নিয়ে এসেছে। আমি আশা করি দুনিয়ার সব রাষ্ট্রের কাছে আমার আবেদন আমার রাস্তা নেই, আমার ঘাট নেই, আমার খাবার নেই, আমার জনগণ গৃহহারা সর্বহারা, আমার মানুষ পথের ভিখারী। তোমরা আমার মানুষকে সাহায্য করো, মানবতার খাতিরে তোমাদের কাছে আমি সাহায্য চাই। দুনিয়ার সব রাষ্ট্রের কাছে আমি সাহায্য চাই। আমার বাংলাদেশকে তোমরা রিকোগনাইজ করো। জাতিসংঘের ত্রাণ দাও দিতে হবে, উপায় নেই দিতে হবে। আমি আমরা হার মানব না, আমরা হার মানতে জানি না। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন- ‘সাত কোটি বাঙালিরে হে মুগ্ধ জননী রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি।’ কবিগুরু কথা আজ মিথ্যা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। আমার বাঙালি আজ মানুষ। আমার বাঙালি আজ দেখিয়ে দিয়েছে দুনিয়ার ইতিহাসে এত লোক আত্মাহুতি, এত লোক জান দেয়নি। তাই আমি বলি আমায় দাবায় রাখতে পারবা না। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এ দেশের যুবক যারা আছে তারা চাকরি না পায়।…’
ভাষণে মুক্ত স্বদেশে মানুষের অধিকারের কথা তিনি শুনিয়ে দিলেন, তিনি জানিয়ে দিলেন দালালদের বিচার করার কথা, তিনি সরকারি কর্মচারীদের সাবধান করে দিলেন, ঘুষ গ্রহণের বিরুদ্ধে বললেন, তিনি আমেরিকার জনসাধারণকে ধন্যবাদ জানালেন এবং বারবার স্মরণ করলেন ১ কোটি উদ্বাস্তু মানুষকে ভারতের আশ্রয় দেয়ার কথা। রক্ত আর যন্ত্রণার সিঁড়ি বেয়ে যে স্বাধীনতা এসেছে তা যে ষড়যন্ত্র মুক্ত নয় তাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন সেদিন। অন্যদিকে নিজের আত্মপরিচয়, দেশপ্রেম আর নিজের বাঙালিত্বকে দেশবাসীর কাছে পুনরায় স্পষ্ট করলেন পাকিস্তানের কারাগারের স্মৃতিচারণ করার সময়- ‘আমায় আপনারা পেয়েছেন আমি আসছি। জানতাম না আমার ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোঁড়া হয়েছিল। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম, বলেছিলাম আমি বাঙালি আমি মানুষ, আমি মুসলমান একবার মরে ২ বার মরে না। আমি বলেছিলাম আমার মৃত্যু আসে যদি আমি হাসতে হাসতে যাব, আমার বাঙালি জাতকে অপমান করে যাব না, তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইব না। এবং যাবার সময় বলে যাবো জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান। আমি কারাগারে ছিলাম ৯ মাস, আমাকে কাগজ দেয়া হয়নি। এ কথা সত্য, আসার সময় ভুট্টো আমায় বললেন- শেখ সাব দেখেন দুই অংশের কোনো একটা বাঁধন রাখা যায় নাকি। আমি বললাম- আমি বলতে পারি না, আমি বলতে পারব না, আমি কোথায় আছি বলতে পারি না, আমি বাংলায় গিয়ে বলব। আজ বলছি, ভুট্টো সাহেব সুখে থাকো, বাঁধন ছিঁড়ে গেছে আর না। তুমি যদি কোনো বিশেষ শক্তির সঙ্গে গোপন করে আমার বাংলার স্বাধীনতা হরণ করতে চাও, মনে রেখ, দলের নেতৃত্ব দিবে শেখ মুজিবুর রহমান, মরে যাব স্বাধীনতা হারাতে দেব না।’
১০ জানুয়ারির ভাষণেই তিনি দেশ গঠনের আহ্বান জানান জনগণকে। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদাররা যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল তাতে পুরো দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য সবাইকে নিয়ে দেশ গঠনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। একতাবদ্ধ থাকতে বলেন সবাইকে। ‘স্বাধীন যখন হয়েছি স্বাধীন থাকব আজীবন’- এই প্রত্যয়ও ঘোষণা করেন তিনি। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসা যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ণতাপ্রাপ্তি তেমনি দেশের মুক্ত মানুষকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বুননেরও দিন। এজন্যই তিনি বলেছেন- ‘নতুন করে গড়ে উঠবে এই বাংলা, বাংলার মানুষ হাসবে, বাংলার মানুষ খেলবে, বাংলার মানুষ মুক্ত হয়ে বাস করবে, বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাবে, এই আমার সাধনা, এই আমার জীবনের কাম্য আমি যেন এই কথা চিন্তা করেই মরতে পারি, এই আশীর্বাদ, এই দোয়া আপনার আমাকে করবেন।’
বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে জনগণকে উদ্দেশ করে ১০ জানুয়ারি যে বক্তব্য দিয়ে গেছেন তাতে পরিষ্কারভাবে দেশ পরিচালনার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু তিনি যে ষড়যন্ত্রের কথা সেদিন বলেছিলেন তাও সত্য হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেই ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয় এবং দেশের স্বাধীনতা অপহৃত হয়ে চলে যায় পাকিস্তানবাদী রাজনীতির কাছে। এভাবেই বঙ্গবন্ধু দূরদর্শী ও নির্ভীক নেতার আসনে থেকেও নির্মমতার শিকার হয়েছেন। কিন্তু তিনি ইতিহাসে অমর এক দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক। তিনি বিজয়ী বীরের মতো ভালোবাসা নিয়ে স্বদেশে ফিরে এসেছিলেন। তার চলার পথ ছিল জনগণের আশীর্বাদে স্নিগ্ধ। কিন্তু তিনি তার স্বপ্ন সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই হাঁটছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন ছেড়ে তিনিও ১৯৮১ সালের ১৭ মে ভারত থেকে দেশে ফিরে হাল ধরেন গণতন্ত্রের। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জন আর শেখ হাসিনার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্বজুড়ে অভিনন্দিত রাষ্ট্র।

ড. মিল্টন বিশ্বাস : অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়