আইজিপি : নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন

আগের সংবাদ

সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের বিজয় > সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য বিনিময় : ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলাই এখন লক্ষ্য

পরের সংবাদ

সমীক্ষা, তথ্য-উপাত্ত, পরিসংখ্যান ও দুর্ভিক্ষ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় নির্বাচন শেষ হলো গতকাল। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি যে ক্রমাগত একটি মহাসংকটের দিকে ধাবমান, সেটা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী গত নভেম্বরেই টের পেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, অচিরেই আসছে একটি দুর্ভিক্ষ। তার সেই কথার জবাবে কেউ কেউ বলেছিলেন, আমরা নীরব দুর্ভিক্ষেই আছি। এত উন্নয়ন, এত স্থাপনার ঐশ্বর্য, এত রাজনৈতিক উন্নয়ন গীত রচিত ও গাওয়া হচ্ছে, তারই মাঝখানে প্রধানমন্ত্রীর হঠাৎ ঘোষণা ধেয়ে আসছে একটি দুর্ভিক্ষ, জনগণকে চমকে দেয়। আমরা যারা দিন এনে দিন খাই, তারা বুঝতেই পারলাম না। কেবল বুঝেছি রাতদিনের ফারাক নেই, হু হু করে বেড়ে চলেছে দ্রব্যমূল্য। আমাদের নাভিশ্বাসের মধ্যে আবারো একটি দুর্ভিক্ষ ধেয়ে আসছে সুনামির মতো, ১৯৭৪ সালে যার রূপ আমরা দেখেছি। আমরা তাই বিস্মিত। কিন্তু যারা সার্ভে করেন বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে, তারা কিন্তু চমকান না। দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়েও রয়েছে তাদের নিরবচ্ছিন্ন গবেষণা। তারা নীরবে কাজ করে যান। তারা আমাদের চেয়েও বেশি কিছু আঁচ করতে পারেন। নমুনা যাচাই করে বুঝতে পারেন দেশ আবারো আরেক গাড়ায় পড়তে যাচ্ছে।
আলামত দেখে যারা অভ্যস্ত, তাদের দেয়া কিছু উপাত্ত দেখে নেয়া যাক।
যে অদৃশ্য শক্তি বাংলাদেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, যাকে সাধারণভাবে সিন্ডিকেট বলে অভিহিত করা হয়, তারা একটা খেল দেখিয়ে দিয়েছে গত সপ্তাহে। গত ৮ ডিসেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যা আগামী মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে কাজটি করে তারা। আর কে না জানে যে পেঁয়াজের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধিতে ভারত সরকারের পতন ঘটিয়ে দেয়ারও নজির আছে।
যা হোক, সিন্ডিকেট সঙ্গে সঙ্গে এ সুযোগ গ্রহণ করে এবং এক রাতের মধ্যে প্রতি কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায় ১০০ টাকা। বাড়তি দামে যে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, তা আগেই আমদানি করা এবং ১০০ টাকা কম মূল্যে যখন বিকাচ্ছিল, তখনো তারা তা লাভেই বিক্রি করছিলেন। যদিও কয়েক দিনের ব্যবধানের পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে আসে।
বাংলাদেশে কমবেশি আড়াই লাখ টন পেঁয়াজ ব্যবহৃত হয় প্রতি মাসে। বর্ধিত দামে যদি তারা ১ লাখ টন পেঁয়াজও বেচতে পারেন, তাহলে ভোক্তাদের ট্যাঁক থেকে অতিরিক্ত ১ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন বলে ধারণা করা যায়। তাদের জন্য এমন সুযোগ অবশ্য অহরহই আসে। কখনো চাল, কখনো আলু, কখনো ডিম, সৃজনশীলতার কোনো ঘাটতি নেই তাদের জাদুর বাক্সে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল ২৫ লাখ ১৭ হাজার টন। পক্ষান্তরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সারণি থেকে দেখা যায়, এর পরের বছর, অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ৩৪ লাখ ১৭ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। বাংলাদেশে মাথাপিছু পেঁয়াজের ব্যবহার ১৫ কিলোগ্রাম (ভারতে ১৬ কিলোগ্রাম)। সেই হিসাবে ১৭ কোটি মানুষের জন্য ২৫ লাখ টন পেঁয়াজই যথেষ্ট হওয়ার কথা। অথচ এরপরও ৭ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেছে বাংলাদেশ। আমদানির তথ্যে তো কোনো ভুল নেই, তাহলে বাকি অঙ্কগুলোর কোনটাকে বিশ্বাস করব আমরা? নাকি সবটাই সেই ‘কাজির গরু’? (তৌহিদ/প্রথম আলো/১৭ ডিসেম্বর, ২৩)। এই লেখায় কয়েকটি পরিসংখ্যান আছে যা সরকারের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের।
আমরা তো সরকারি পরিসংখ্যান অস্বীকার করতে পারি না। তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবের মধ্যে গোল মাল আছে কি নেই, তা বিবিএস খতিয়ে দেখতে পারে। কারণ হিসাবের গোলমাল নাকি ফাঁপিয়ে তোলা হয়েছে পেঁয়াজ উৎপাদনের সারণি হিসেবে? আমরা পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ এটা দেখাতে গিয়ে মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে ১০ লাখ টন বেড়ে গেল কীভাবে? আবার বাড়তি উৎপাদনের পরও কেন পেঁয়াজ সংকট কেন? ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি সাময়িক বন্ধ করলেও তো আমাদের পর্যাপ্ত পেঁয়াজ দেশেই আছে। তারপরও পেঁয়াজ আমদানির জন্য সরকার কেন এত উতলা হলো? কারণ কি আমদানিকারকদের প্ররোচনায়, যারা মূলত সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের ঘাটতির কথা বলছে, যা মূলত মিথ্যা ও বানোয়াট, তাদের পকেটভর্তি করতেই সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। আমদানির পরও দেখা যাচ্ছে ৫ জানুয়ারি পেঁয়াজের বাজারে আগুন জ্বলছে। আজকে দেশি নতুন পেঁয়াজ ৮০/৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, আর বিদেশি (মূলত ভারতীয়) পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। আবার মধ্যবিত্তদের বাজারে ১২০ টাকা হলেও ধনবানদের বাজারে তার দাম আরো বেশি। সিন্ডিকেটের এই লুটেরা দুর্বৃত্তায়ন সরকারের আশকারায় অব্যাহত আছে। সরকার যেন নিত্যদিনের পণ্যের দাম বাড়া নিয়ে মোটেই ভাবিত নয়। সরকারের লক্ষ্য নির্বাচনে জয়ী হয়ে আবারো সরকার গঠনের রাজনৈতিক পাঁয়তারায় নিবদ্ধ। বিরোধী দল বিএনপি চেয়েছিল নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, যাতে জনগণ ভোট দিতে পারে। কিন্তু জনগণের ভোট নিয়ে সরকার ভাবিত নয়। কারণ বিগত দুটি নির্বাচনে ভোট না নিয়েও সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির দাবির ন্যায্যতা থাকলেও সরকার তাদের আন্দোলন দমন করছে পুলিশ দিয়ে। পুলিশের ভূমিকা এখন আওয়ামী সরকারের একটি অঙ্গ-সংগঠনের মতো। পুলিশও প্রকাশ্যে, টিভি নিউজে বলেছে, যে কোনো মূল্যে বিএনপির আন্দোলনকে ঠেকানো হবে। সরকারের কণ্ঠস্বর আর পুলিশের কণ্ঠস্বর একই সঙ্গমে এসে মিশেছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাই তাদের প্রধান দায়িত্ব। অথচ বিএনপি অসহযোগ আন্দোলন করছে। তারা বলছে এই নির্বাচনে ভোটাররা যেন ভোট না দেন সেই আহ্বান জানাচ্ছেন। এই অহিংস আন্দোলনকে সহিংস করতে যেসব মিস্ক্রিয়েন্ট অব্যাহতভাবে চালু রেখেছে, তারা যে বিএনপির কর্মী নয়, তা বোঝা যায় দুই কারণে। প্রথমবার যখন ট্রেনে আগুন দেয়া হয়, সেই সময়ই পুলিশ বিএনপিকে দোষারোপ করে বিবৃতি দেয়। ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় গোপীবাগে ট্রেনে আগুন দিয়েছে মিস্ক্রিয়েন্টরা। এই সন্ত্রাসীরা যে বিএনপির সেই ঘোষণা আসতে দেরি হবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন বিএনপির ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে সরকার আটক করেছে। দলীয় মহাসচিব থেকে শুরু করে জেলা/উপজেলার নেতাকর্মীরাও বাদ যায়নি। এর মধ্যে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে নিম্ন আদালতের বিচারকরা। লাখ লাখ বিচার ফাইলবন্দি আছে বছরের পর বছর, সেগুলোর কোনো খবরও রাখেন না তারা। রাজনৈতিক বিবেচনায় যাদের জেলে দেয়া হলো তারা নির্দোষ নিঃসন্দেহে।
এই যখন অবস্থা তখন বিএনপির সক্রিয় কর্মী কি জেলের বাইরে আছে? পেঁয়াজ নিয়ে যে লুটপাট, কাঁচামরিচ নিয়ে যে লুটপাট চলছে প্রকাশ্যে- সরকার সে সব ঠেকানোর তালে নেই। কারণ ওরা হচ্ছে সরকারি দলের লোক। মানে সরকারও ওই লুটের সঙ্গে পরোক্ষে জড়িত।

দুই.
রুমিন ফারহানার কিছু উপাত্ত যাচাই করে দেখা যাক।
সরকারি কোনো পরিসংখ্যান না হলেও গবেষণা সংস্থা সানেম সেই ২০২০ সালেই বলেছিল, ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। ব্র্যাক-পিপিআরসিও একই ধরনের হিসাব দিয়েছিল। কিন্তু সরকার ছিল অনড়।
সানেমের এই তথ্য সরকার নিশ্চয় যাচাই করে দেখে থাকবে। ৪২ শতাংশ মানুষ যদি দারিদ্যসীমার নিচে বাস করে, তাহলে সে দেশের উন্নয়নের হাইরাইজ কি উন্নতির নিশান তুলতে পারে? আকাশে স্যাটেলাইট পাঠালেই কি তা উন্নতির নিশান হয়? ৪২ শতাংশ মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে দিন যাপন করছে, আর আমরা উন্নয়নের মহাসড়কের গীত গাইছি। লজ্জা এটাই যে সাধারণ মানুষের দুর্গতিতেও সরকারের কোনো বোধ জাগ্রত হয় না। ওইসব গরিব মানুষ কি ঢাকার ফ্লাইওভারগুলো পরখ করে দেখতে আসতে পারবে? তারা কি বঙ্গবন্ধু টানেলের ভেতর দিয়ে কক্সবাজারে যেতে পারবে? ট্রেনের ভাড়া তো তেমন বেশি না যে তারা পারবে না। কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি, তারা কস্মিনকালেও পৃথিবীর দীর্ঘতম সি-বিচে যাবে না, যেতে পারবে না। তাদের কাছে সেই টাকা নেই। তাদের পেটেই যেখানে খাদ্য পরিমাণ মতো যায় না, সেখানে ওই বেড়ানোর আশা বা ইচ্ছা গরিবের ঘোড়া রোগ বলেই চিত্রিত হবে। এ সরকারের অসংখ্য অসত্য প্রচারণার মধ্যে অন্যতম একটি হলো বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ প্রচার সরকার দীর্ঘদিন ধরে করে এসেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো বাংলাদেশকে গত অর্থবছরে ১ কোটি টনের বেশি খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়েছে। এই তথ্য জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার। কৃষিমন্ত্রী স্বয়ং বলছেন, দেশে প্রতি বছর শুধু ভোজ্যতেল আমদানিতে ২০-২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। এমনকি দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য হয়ে ওঠা গমও আমদানি করতে হয় ৭০-৭৫ লাখ টন। বলে রাখি, গত ১২ বছরে দেশে খাদ্য আমদানি কমা দূরেই থাকুক, বেড়েই চলেছে ক্রমাগত। উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ যদি নেয়া হতো তাহলে এ পরিস্থিতি হয় না। সরকার মাথাপিছু আয় কিংবা রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ার স্বপ্নে এতটাই বিভোর ছিল যে খাদ্যশস্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের দিকে মনোযোগ দিতে পারেনি। এর মাশুল হিসেবে অতিরিক্ত আমদানিনির্ভরতার ফলাফল এখন দেখতে পাচ্ছি আমরা। (রুমিন ফারহানা/প্র/আলো)
পরিসংখ্যানগুলোকে ফেলে দিতে পারছে না সরকার। তবে তা নিয়ে কাজ করে গরিবি হটানোর কোনো পদক্ষেপই তার নেই। বরং সরকার সংবাদপত্রে এই তথ্য সরবরাহ করছে যে বঙ্গবন্ধু টানেল থেকে কত টাকা আয় হয়েছে ১ মাসে তা ফলাও করা। পদ্মা সেতু থেকে কত শত বা হাজার কোটি টাকা আয় থেকে ঋণের টাকা ফেরৎ দিয়েছে, সেটা ফলাও করে দেখানো হচ্ছে। বিআরটির এক্সপ্রেসওয়ে থেকে কত টাকা রোজগার হলো সেই উপাত্তও আমরা পাচ্ছি, কিন্তু কত মানুষ গরিব থেকে আরো গরিব বা মানবেতর স্তরে নেমে গেছে গত ১৫ বছরে, সেটা একবারও বলে না। দেশের ব্যাংকগুলো যে তারল্য সংকটে ধুঁকছে, গ্রাহককে টাকা দিতে পারছে না, সেসব ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ দিয়ে সাহায্য করছে, তা নিরসনের কোনো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্যোগ নেই। কেন ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট হলো, কীভাবে হলো, কেন হলো, কারা করল এ নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই। বিশেষ বিবেচনায় ২২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে সরকার সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোর শিল্পকারখানার জন্য। কেন ওই প্রতিষ্ঠান বিশেষ বিবেচিত হলো?

তিন.
দেশের প্রায় প্রতি পাঁচজন মানুষের মধ্যে একজন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। মোট জনসংখ্যার ২১ দশমিক ৯১ শতাংশ মানুষ মাঝারি ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এর মধ্যে শহরে ২০ দশমিক ৭৭ শতাংশ, গ্রামে ২৪ দশমিক ১২ শতাংশ এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর অতি নিরাপত্তাহীনতায় আছেন শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে শহরে শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ, গ্রামে শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘ফুড সিকিউরিটি স্টাটিসটিকস প্রজেক্ট-২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সংস্থাটির সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রংপুর বিভাগের মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় বেশি ভুগছেন। এই বিভাগে প্রতি ১০০ জনে ২৯ দশমিক ৯৮ জন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। আর সিলেটে ১০০ জনে ১ দশমিক ৪২ জন তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। বরিশালে ২২ দশমিক ৮৩ শতাংশ পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। এছাড়া চট্টগ্রামে ১৯ দশমিক ৬৬, ঢাকায় ১৬ দশমিক ৪০, ময়মনসিংহে ২৬, রাজশাহীতে ২৫ দশমিক ০১ ও সিলেটে ২৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। দেশে গড় অতি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার হার শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর মধ্যে বরিশালে শূন্য দশমিক ৬৭ পরিবার, চট্টগ্রামে ১ দশমিক ১৬, ঢাকায় শূন্য দশমিক ৬৪, খুলনায় ১ দশমিক ০৯, ময়মনসিংহে শূন্য দশমিক ৫৩, রাজশাহীতে শূন্য দশমিক ৫১ ও সিলেটে ১ দশমিক ৪২ শতাংশ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ফুড প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিট) শাহিদুল আলম এবং সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) প্রধান খান মো. নুরুল আলম।
এই রিপোর্ট থেকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার একটি সত্য তথ্য জনতে পারলাম। বিবিএসের এই তথ্য-উপাত্ত আমরা বিশ্বাস করব এজন্য যে প্রতিষ্ঠানটি সরকারের নিজস্ব। তারা ক্ষমতাসীন সরকারের বাগাড়াম্বরে কান দেননি। এবং সরকারও ওই প্রজেক্টের প্রধানদের ম্যানেজ করতে পারেননি। ফলে সত্য বেরিয়ে এসেছে। এই তথ্যই বলে দিচ্ছে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ নই। আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য দৌড়াচ্ছি। কিন্তু জনগণ বা কৃষক সমাজ দৌড়ালেও সরকার কিন্তু সেই উদ্যোগে নেই। সরকারের লক্ষ্য আমদানিতে। ঘাটতি হলেই খসখস করে সাইন করে দেন আমদানি করো। টাকা লাগলে গৌরি সেন দেবে। কিন্তু এটা ভাবছে না যে গৌরি সেনের ট্যাঁকেও (রিজার্ভ) ঘাটতি লেগেছে। ঋণের বৈদেশিক মুদ্রা বা আর এমজি রপ্তানির ডলার এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স মিলিয়েও ঘাটতিকে স্বাস্থ্যবান করা যায়নি। কিন্তু সরকারপ্রধান ও সরকারি আমলা পুলিশসহ সব সংস্থার লোকেরা ঈদের আনন্দে ভারতীয় ফিল্মি ড্যান্সের কায়দায় মাতোয়ারা।
হায় খোদা, যে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার সূত্রে নির্বাচনের ঢাক বাজানো হয়েছে, ঠিক একই রকম সাংবিধানিক অধিকার পূরণের বিষয়টি সরকার কখনোই মুখে আনছেন না। কারণ তাতে তাদের প্রদত্ত ওয়াদার শপথ ভেঙে যাবে। কিন্তু সরকার বুঝতেও পারছেন না যে তিনি এবং তারা প্রতিনিয়তই সেই শপথ গুঁড়িয়ে দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক কাজ করে চলেছেন। দেশের শাসন ব্যবস্থায়, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোতে গণতন্ত্র নেই বলেই এটা সম্ভব হচ্ছে।
আজ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করাই জরুরি কাজ।

ড. মাহবুব হাসান : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়