আইজিপি : নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন

আগের সংবাদ

সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের বিজয় > সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য বিনিময় : ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলাই এখন লক্ষ্য

পরের সংবাদ

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন : নির্বাচনোত্তর সহিংসতা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বড় কোনো অঘটন ছাড়া গতকাল সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের আগে ও পরে ভয়-আতঙ্কে ভুগতে থাকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এ ভয়ভীতি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা মোটেই ভিত্তিহীন নয়। বরং সময়োচিত বাস্তব ঘটনা। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মন্দির, গির্জা ও উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। কিছু এলাকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে দেয়া হচ্ছে হুমকি-ধমকি। এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা। ভোটের আগের দিন শনিবার বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন নেতারা। বিবৃতিতে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অব্যাহত চাপ, নির্বাচন প্রচারণায় ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্য এখন মন্দির পোড়ানো ও ফসলি জমির ধান নষ্ট করা পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত ৫ জানুয়ারি রাত ২টার দিকে কক্সবাজার রামুতে চেরাংঘাটা রাখাইন সম্প্রদায়ের উসাইসেন (বড় ক্যাং) বৌদ্ধ বিহারে আগুন দেয়া হলে বিহারের বেশ কিছু অংশ পুড়ে যায়। এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিসের জরুরি হস্তক্ষেপে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা পায় প্রায় দেড়শ বছরের প্রাচীন এ বৌদ্ধ বিহারটি। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনী কিছুতেই রুখতে পারছে না এদের। আসলে রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না হলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে না। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও আক্রমণের চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নির্যাতনের অধিকাংশ ঘটনাই সংঘটিত হয়েছে নির্বাচনকালীন, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে। এ পরিস্থিতির প্রভাব দেখা গেছে নব্বইয়ের দশক থেকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে; এর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী পর্যায়ে। ১৯৯০-এর অক্টোবরে সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়, উদ্দেশ্য দেশের গণআন্দোলন স্থবির করা; ২০০১-এর নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার শিকার হয় এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তখন পূর্ণিমা-সীমাদের আহাজারি কেউ শোনার বাকি ছিল না। অতঃপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন-পরবর্তী হামলার ঘটনাও সুবিদিত। যশোরের অভয়নগরের মালোপাড়ার সে ঘৃণ্য ঘটনাই কালের সাক্ষী! এছাড়া বিভিন্ন সময়ে নানা ইস্যুতে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ নির্যাতন যেন নিত্য ঘটনা। শাসকশ্রেণি কী জবাব দেবেন এ সহিংসতার? যেমন প্রশাসন, তেমন সমাজ- কারো জবাবদিহির মতো মুখ নেই। সাম্প্রতিক সংঘটিত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় সহিংসতা। এমনকি জবাব মিলবে না রামু, উখিয়া, কক্সবাজারে বৌদ্ধ ও হিন্দুপল্লীতে হামলার ঘটনারও। এগুলোর শাস্তি বিধান কি হয়েছে? ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন হয়তো কোথাও কোথাও হয়েছে; কিন্তু অপরাধীর বিচার ও শাস্তি কতটা হয়েছে? এই অনাচারের যথোচিত শাস্তি না হওয়ার কারণে এ প্রবণতা সমাজে বেড়ে চলেছে। নির্বাচনের আগে-পরে যেন দানবীয় কায়দায় রূপ নেয় নির্যাতন। এমতাবস্থায় নিরাপত্তার অভাবে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী এই দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। এই দেশের কোনো সংখ্যালঘুই স্বেচ্ছায় তাদের মাতৃভূমি ছাড়তে চায় না। তারপরও কেন তারা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে? পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর গড়ে ০.৫ শতাংশ হারে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের আর কোনো লোক থাকবে না। দেড় কোটি সংখ্যালঘু বিপন্ন মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা সরকারের দায়িত্ব। এই বিষয়টি সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়