ভরা মৌসুমেও চড়া সবজির বাজার

আগের সংবাদ

ভোটের কৌশলে সফল শেখ হাসিনা : জাতীয় সংসদ নির্বাচন

পরের সংবাদ

নির্বাচনের পর নিত্যপণ্যের দিকে মনোযোগ দিন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নিত্যপণ্যের দাম দিন দিন আকাশচুম্বী হয়ে উঠছে। নিত্যপণ্যের দাম আগেও বেড়েছে, কিন্তু সপ্তাহে সপ্তাহে নয়। রাতারাতি চোখে ওঠার মতো দাম হয়নি। একটা নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত পরিমাণে বেড়েছে। ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের নতুন বছরেও যে চড়া দাম তা নিতান্তই দুঃখজনক। কেউ নেই দেখভালের জন্য। ব্যবসায়ীরাও ঝোপ বুঝে কোপ মারছে। তারা সুযোগসন্ধানী। সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। ফলে সাধারণ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ বাজার দর দেখে অবাক হয়ে যায়। রাতারাতি একটা পণ্যের দাম এত বাড়তে পারে তা নিজ চোখে না দেখলে কেউ হয়তোবা বিশ্বাস করবে না। ব্যবসায়ীরা পারে জোট বেঁধে দাম বাড়াতে। কিন্তু জোট বাঁধতে পারে না সাধারণ মানুষ। পারে না নিত্যপণ্যকে বয়কট করতে। কারণ এগুলো আমাদের জীবনের সঙ্গে মিশে গেছে। ফলে দাম বাড়লেও চোখ বন্ধ করে বেশির জায়গায় অল্প করে হলেও আনতে হয়।
নির্বাচন এলে সরকারকে এক বেকায়দায় পড়তে হয়। সবার কথা রাখতে হয়, শুনতে হয়। এই সময় যে কাউকে কটু কথা বলা বা কারো বিরুদ্ধে সত্যটাও বলা যায় না। যাদের কথা সরকারকে শুনতে হয়, তাদের একটা শ্রেণি হলো ব্যবসায়ী। নির্বাচনের সময় তারা সরকারের কাঁধে চড়ে বসে। দেশে বিশৃঙ্খলা হওয়ার ভয়ে কিছুটা হলেও তাদের কথা রাখতে হয়। সরকারও নিজের পক্ষে ভোট থাকার জন্য কিছু সুবিধা দেয় ব্যবসায়ীদের। যে সুবিধা সরকার দেয় এবং নেয় ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে ভোগান্তি হয় সাধারণ মানুষের। তারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে নেয়। সাধারণ মানুষ হয় বলির পাঁঠা। তারা অসহায়ের মতো চেয়ে থাকে। বোবা হাসি হাসে। প্রহসন দেখে। মুখে হাসি থাকলেও ভেতরে ভেতরে আর্তচিৎকার তাকে তিলে তিলে মারে। সংসারের খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়। ফলে তাকে বাড়তি আয়ের জন্য ভিন্ন কাজ করতে হয়। শুধু বাড়তি কাজই নয়, কিছু টাকা আয়ের জন্য খাবারের তালিকা এবং খাবারের পরিমাণও কমিয়ে দেয়।
বাজার মূল্য এক দিন আগেও যে দাম ছিল একই বাজার মূল পর দিন দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হয় কীভাবে? দেশ কি কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত নাকি কোনো দুর্যোগ চলছে। দুর্যোগ বা যুদ্ধবিধ্বস্ত হলেও মানবতায় এত চড়া মূল্য হয় না। ভারত রপ্তানি না করলেই কি দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে? মানুষ না খেয়ে থাকবে? আমাদের দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে। কিন্তু আজো নিত্যপণ্য ও মসলা জাতীয় পণ্যগুলোর উৎপাদন দেশে তেমন দেখা যায় না। ফলে আমদানির ওপর ভরসা রাখতে হয়। তাই বলে এত চড়া দামে বিক্রি করা কতটা যুক্তিযুক্ত। নির্বাচন এলে সরকার একটু সুযোগ নেয়ার জন্য এত বড় বড় অন্যায় আশ্রয় না দিলেও পারে। এতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ সরকারের ওপরও পড়ে।
ছোট্ট দেশ। জনসংখ্যাও বেশি। মানুষ বাড়ছে। চাহিদাও বাড়ছে। ফলে আমদানি বেশি করতে হচ্ছে। ডলার সংকটে আমদানির ওপর প্রভাব ফেলছে। ফলে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছেন। অথচ এসব পণ্য আমাদের দেশে উৎপাদন করা যায়। প্রাচীন পদ্ধতিতে এখনো মানুষ গ্রামাঞ্চলে চাষাবাদ করে। ফলে না পারে তাদের চাহিদা মেটাতে, না পারে দেশের চাহিদায় অবদান রাখতে। তাদের একটা বড় অংশ কৃষক। তাদের সচেতন করতে পারলে আমাদের আমদানির ওপর নির্ভর থাকতে হবে না। যথাসময়ে যথানিয়মে তাদের ট্রেনিং দেয়াতে পারলে আমাদের আমদানির নির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানিমুখী হওয়া সম্ভব। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে চাওয়া থাকবে, নির্বাচনের পরপরই সরকার নিত্যপণ্যের দিকে মনোযোগ দেবে, সাধারণ মানুষের স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে। সাধারণ কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদের ট্রেনিং এবং সরঞ্জাম দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলবে।

শহীদুল ইসলাম শুভ : সাংবাদিক ও লেখক, চট্টগ্রাম ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়