টিআইবি : ড. ইউনূসের মামলা বিচারিক শুদ্ধাচার ও স্বাধীনতার অগ্নিপরীক্ষা

আগের সংবাদ

নাশকতা উপেক্ষা করেই ভোট উৎসব : স্বচ্ছ ভোটগ্রহণে প্রস্তুত ইসি, দেড়শ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা

পরের সংবাদ

সুষ্ঠু নির্বাচনে তিন চ্যালেঞ্জ : ভোটার উপস্থিতি, বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা, প্রার্থীদের বিশৃঙ্খলা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামীকাল রবিবার। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সারাদেশে ভোটগ্রহণ চলবে। এবার ভোটে অংশ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ২৮টি রাজনৈতিক দল। ভোটে লড়ছেন ১ হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা ৪৩৬ জন। এরই মধ্যে প্রচার-প্রচারণা শেষ করেছেন প্রার্থীরা। ভোটগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে এবার ভোটে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দল। ভোট বর্জনের ডাক দিয়েছে তারা। আজ থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে দলটি। ফলে ভোটকে ঘিরে দেখা দিয়েছে তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ হলো- ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করা, হরতালে সম্ভাব্য নাশকতা প্রতিরোধ এবং প্রতিদ্ব›দ্বী দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যকার দ্ব›দ্ব-সংঘাত। আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপি-জামায়াতের হরতাল ভোটে প্রভাব ফেলবে না, ভোটার উপস্থিতি হবে সন্তোষজনক। বিশ্লেষকদের মতে, ভোটার উপস্থিতি নির্ভর করবে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা ভোটারদের কতটা প্রভাবিত করতে পারছেন। বড় ধরনের সহিংসতার কোনো আশঙ্কা নেই; তবে স্থানীয় পর্যায়ে কিছুটা সংঘাত হতে পারে, সেটি অবশ্য জাতীয়ভাবে কোনো প্রভাব ফেলবে না। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
জানা গেছে, দলগতভাবে আওয়ামী লীগ ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসার বিষয়ে কোনো ব্যাবস্থা নেয়নি। তবে ভোটাররা যেন ভোটকেন্দ্রে এসে নির্বিঘেœ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন- সেজন্য স্থানীয়ভাবে তাদের দলের নেতাকর্মীরা ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবে। দলটির আশা ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে আসবেন। সেক্ষেত্রে ভোটার উপস্থিতিও হবে সন্তোষজনক। এ বিষয়ে গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা ও ভোটারদের কেন্দ্রে আনার কাজগুলো স্থানীয়ভাবে করবে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা। এজন্য আমাদের টিম রয়েছে। তবে বেশির ভাগ ভোটারই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসবেন। আমরা আশা করি ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হবে।
বিএনপি ও জামায়াতের হরতাল ভোটে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা- জবাবে কাদের বলেন, বিএনপির হরতাল-অবরোধ আমরা দেখেছি। হরতালের দিন আরো বেশি যানজট হয়। হরতাল-অবরোধ শুধু তাদের কর্মসূচিতে আছে, বাস্তবে নেই। হরতাল এখন মরিচাধরা হাতিয়ার। এটা বিএনপি আগেও প্রয়োগ করেছে, কোনো লাভ হয়নি। সামনে

লাভ হবে এমন আশা করাটাও ভুল। সহিংসতা ও সংঘাতের আশঙ্কা নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি এমন কোনো নির্বাচন নেই। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও বিধানসভা নির্বাচনে অনেক সহিংসতা হয়। বিএনপি শুধু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না তারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। হরতাল নয়, চলমান প্রতিকূল আবহাওয়া অর্থাৎ প্রচণ্ড শীতের কারণে কিছু কিছু এলাকায় ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে নিরুৎসাহিতবোধ করতে পারেন। তবে ভোটার উপস্থিতির বিষয়টি নির্ভর করবে মূলত প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের ওপর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, ভোটার উপস্থিতি নির্ভর করবে প্রার্থীরা তাদের কতটুকু প্রভাবিত করতে পারছে, তার ওপর। প্রার্থীরা নিশ্চিত করবেন কারা কত ভোটার ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারবেন। তবে আমাদের দেশের ভোটাররা নির্বাচনমুখী, তারা ভোট দিতে চান। ভোটারদের প্রত্যাশার সঙ্গে যদি প্রার্থীরা সঠিকভাবে সংযোগ স্থাপন করতে পারেন, তাহলে তারা ভোটকেন্দ্রে আসবেন, ভোট দেবেন। বিএনপির হরতালে নাশকতা হলে, তা ভোটের জন্য চ্যালেঞ্জ কিনা- জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার হরতালের মূল কারণই হচ্ছে ভোট বাধাগ্রস্ত করা। ভোট সুষ্ঠু ও সুন্দর হোক, সেটি তারা চায় না। ভোটে বাধা সৃষ্টি করতেই এরা হরতাল দিয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে বিএনপি আগেও হরতাল, অবরোধ ও অসযোগ আন্দোলন ডেকেছিল দেশের জনগণ তাতে কোনো সাড়া দেয়নি। এই হরতাল নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। তবে হরতালকে তথাকথিত সফল করার জন্য যে নাশকতামূলক কার্যক্রম চালায়, সেটিই শঙ্কার বিষয়। আশা করব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ভূমিকা নেবে। নির্বাচন কমিশনও সেই বিষয়গুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে। কারণ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে নানা ধরনের অপতৎপরতা চালিয়েছে। আবারো চালাতে পারে, সেই আশঙ্কা থেকেই যায়।
প্রার্থীদের মধ্যে দ্ব›দ্ব-সংঘাত প্রসঙ্গে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, স্থানীয়ভাবে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা থাকে। সে কারণেই কিছু কিছু জায়গায় বিচ্ছিন্ন সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যেহেতু নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা উভয়ই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সমর্থক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। তবে দীর্ঘস্থায়ী কোনো সংঘাত কিংবা তাদের মধ্যে কোনো বোঝাপড়ার অমিল হবে না। নির্বাচনে জেতার জন্য কিছু ক্ষেত্রে উত্তেজনা থাকলেও ভোটের দিন পর্যন্ত থাকতে পারে, পরে তা স্থায়ী হবে না।
আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, বিএনপির ডাকা হরতাল ভোটে খুব বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না। তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে প্রতিকূল আবহাওয়া বা প্রচণ্ড শীতের প্রকোপ থাকায় কিছু এলাকায় ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব পড়তে পারে অর্থাৎ ভোটাররা নিরুৎসাহিত হতে পারেন। এই জায়গায় নিষ্পৃহ ভোটারদের উৎসাহিত করে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া একটা চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না আসায় তাদের কিছু কট্টর সমর্থক ও চিহ্নিত কিছু নেতাকর্মী ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। তবে বিএনপির সাধারণ সমর্থকদের একটি অংশ ভোটে যেতে পারার একটা প্রবণতা আমি দেখছি। এর কারণ হচ্ছে- স্থানীয় পর্যায়ে প্রার্থী, প্রার্থীদের সমর্থক- অনেকের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তার সম্পর্কসহ আরো নানা ইকুয়েশন থাকে। সেজন্য তারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন। সহিংসতার বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের দ্বারা বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা দেখছি না। তবে যেহেতু তারা হরতাল ডেকেছে, সেক্ষেত্রে নাশকতার একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। কারণ দেশে স্বাধীনতাবিরোধী বা নানা রকম বিষয় আছে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারে। তবে সেটা জাতীয় পর্যায়ে হবে বলে মনে হয় না। দলের প্রতিদ্ব›দ্বী বনাম স্বতন্ত্র প্রতিদ্ব›দ্বী বা দুই দলের মধ্যকার প্রতিদ্ব›দ্বীদের মধ্যে কোথাও কোথাও সংঘাতের ঘটনা ঘটে গেলে, সেটার একটা প্রভাব কোনো কোনো আসনে পড়তে পারে। তবে জাতীয়ভাবে বিঘিœত হবে, এরকম কোনো আশঙ্কা আমি দেখছি না।
এদিকে ভোটকে ঘিরে সারাদেশে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হরতাল ঘিরে যে কোনো ধরনের নাশকতা প্রতিরোধেও নেয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ডিআইজি (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ হচ্ছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিএনপি-জামায়াত হরতাল ডেকেছে, কিন্তু তারা যেন ভোটকেন্দ্রে ভোটার আসতে কোনোপ্রকার বাধা কিংবা নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা প্রস্তুত আছি। ৫ স্তরে আমরা আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা সাজাচ্ছি। ভোটকেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা সদর পর্যন্ত আমাদের টিম মোতায়েন থাকবে। পুলিশ থাকবে। আপনারা জানেন স্বমন্বিতভাবে এই নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখানে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবি, আনসার ও উপকূলীয় এলাকায় কোস্ট গার্ড থাকবে। কাজেই আমরা কোনো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না। যদি হয়েও থাকে, তাৎক্ষণিকভাবে আমরা সেই পদক্ষেপ নেব। প্রার্থী ও তাদের অনুসারীদের মধ্যে দ্ব›দ্ব-সংঘাত হলে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে- জবাবে তিনি বলেন, প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে যে উত্তেজনাগুলো বিরাজ করে, কোথাও যদি সে ধরনের কিছু সৃষ্টি হয়ে থাকে; তাৎক্ষণিকভাবে আশপাশে থাকা আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পদক্ষেপ নেবেন। কোথাও যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে সে বিষয়ে তারা পদক্ষেপ নেবেন। এছাড়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও থাকবেন। মোটকথা সারাদেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তাব্যবস্থা মাঠপর্যায়ে থাকবে, যা ইতোমধ্যেই চলমান আছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়