ডিএমপির আদাবর থানা : ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার আসামি পালিয়েছে হাজতখানা থেকে

আগের সংবাদ

নাশকতার জবাব ভোটে দিন : ঢাকায় নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

শীতার্তদের প্রতি নজর দিন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শীতের পরশ লেগেছে গ্রামগঞ্জে। শহরগুলোও সিক্ত হতে শুরু করেছে শীতের কমল পরশে। এ বছর গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহে পুড়েছে মানুষ। ফলে শীতের আগমনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে অনেকে। ইতোমধ্যেই গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে পড়েছে পিঠাপুলির ধুম। শহরের মোড়ে মোড়ে অনেকে সাজিয়ে বসেছে পিঠাপুলির পসরা। পোশাকের দোকানগুলোও সেজেছে নানা রংবেরঙের শীত পোশাকে।
শীতকালকে কেন্দ্র করে এতসব আয়োজনের মধ্যেও বাংলাদেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ অকস্মাৎ আতঙ্কে কেঁপে উঠছে শীতকালীন পূর্ব অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে। নাতিশীতোষ্ণ এ দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া এখন চরমভাবাপন্ন। ফলে গ্রীষ্মে মানুষকে পড়তে হচ্ছে অসহনীয় তাপে এবং শীতে জমতে হচ্ছে হিমশীতল হয়ে। প্রতি বছর তীব্র শীত মোকাবিলা করতে দেশের বড় একটি অংশের জীবনী শক্তি প্রায় ফুরিয়ে আসার উপক্রম হয়।
২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহ গণনা অনুযায়ী গৃহহীন মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ২১৯ জন এবং প্রায় ১৮ লাখ মানুষ বসবাস করে বস্তিতে। জনশুমারির প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, খোদ রাজধানী ঢাকাতেই গৃহহীন ও বস্তিবাসীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যদিও ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত এক গবেষণা পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে শুধু ঢাকা শহরে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ৫০ হাজার এবং বিভিন্ন সংস্থার মতে দেশব্যাপী পথশিশুর সংখ্যাই ১০ থেকে ১৫ লাখ। এই ছিন্নমূল মানুষগুলোর নেই কোনো ঘরবাড়ি, নেই কোনো স্থায়ী ঠিকানা। রেল স্টেশন, ফুটপাত, দোকানপাট এমনকি খোলা আকাশের নিচে মাথা গুঁজেই রাত পার করে তারা। তা ছাড়া আরো বড় একটি অংশ রয়েছে যাদের ঘরবাড়ি থাকলেও সেগুলো তীব্র শীত মোকাবিলার উপযোগী নয়। উপরন্তু তাদের কাছে নেই পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র। প্রতি বছর দেশব্যাপী তীব্র শীতের কবলে পড়ে কত-শত অসহায় মানুষ বেঘোরে প্রাণ দেয় তার কোনো পরিসংখ্যান নেই।
মূলত এসব মানুষকে সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপরই বর্তায়। প্রথমত সরকারকে আসন্ন শীতে কতসংখ্যক মানুষের শীত মোকাবিলা করার সামর্থ্য আছে- সেই সমীক্ষা চালাতে হবে এবং সে অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে নতুন আশ্রয়ণ প্রকল্প। ১৯৯৭ সাল থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ৪১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ জন মানুষের (আনুমানিক একটি পরিবারে পাঁচজন ব্যক্তি হিসেবে) আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়। এই আবাসন প্রকল্প অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এখনো দেশব্যাপী অনেক ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এসব মানুষকে আসন্ন শীতে সুরক্ষিত রাখতে নেয়া প্রয়োজন একটি জোরালো পদক্ষেপ।
আমরা প্রতি বছর দেখি শীতকালের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই অনেক রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন শীতার্ত মানুষদের করুণাবশত পাতলা কম্বল দান করে থাকেন। যদিও এবার সেটিও কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন হওয়ায় যেখানে বদ্ধঘরে কম্বল গায়ে চাপিয়েও শীত নিবারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে, সেখানে খোলা আকাশের নিচে বা ঝুপড়ি ঘরে বসবাসরত মানুষকে একটি পাতলা কম্বল দান করা রীতিমতো লোক দেখানো ও অযৌক্তিক।
আসন্ন তীব্র শীত থেকে আশ্রয়হীন, অসহায়, দুস্থ মানুষদের রক্ষা করতে সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও দেশের উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষদেরও। তাদের প্রতি আমাদের আকুল চিত্তে নিবেদন, তারা যেন আসন্ন শীতে শীতার্ত মানুষদের জন্য যথাযথ আশ্রয়স্থল ও গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করেন। যাতে আর একটি মানুষও তীব্র শীতে কষ্ট না পায় বা হিমশীতল ঠাণ্ডায় জমে অমানবিকভাবে মৃত্যুবরণ না করে।

রবিউল আওয়াল পারভেজ : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়