রাজধানীতে ৬ বছরের শিশুকে গণধর্ষণের অভিযোগ

আগের সংবাদ

সম্ভাবনার নবদিগন্তে বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রতি আর কত অবহেলা?

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অণুপুষ্টির ঘাটতি দূরীকরণে খাদ্যপণ্যে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ একটি কার্যকরী এবং ব্যয়-সাশ্রয়ী পদক্ষেপ হিসেবে বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। সরকার ইতোমধ্যে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করেছে, যেখানে সয়াবিন তেল, পাম তেল, পাম অলীন এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যে কোনো উদ্ভিজ্য ভোজ্যতেলে নির্ধারিত মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, প্রতি গ্রাম ভোজ্যতেলে অন্যূন ০.০১৫ মিলিগ্রাম থেকে অনধিক ০.০৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘এ’ থাকতে হবে। সমৃদ্ধকরণ প্রতীক ব্যতীত এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো উপকরণ দিয়ে তৈরি প্যাকেট বা পাত্রে ভোজ্যতেল বাজারজাত করা যাবে না। কিন্তু বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের প্রায় ৬৫ শতাংশই ড্রামে খোলা অবস্থায় বাজারজাত করা হয়। আইসিডিডিআর,বি কর্তৃক ২০১৭ সালে পরিচালিত গবেষণায় বাজারে প্রাপ্ত ড্রামের খোলা ভোজ্যতেলের ৫৯ শতাংশ নমুনায় ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়নি, ৩৩ শতাংশে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কম পাওয়া গেছে। মাত্র ৭ শতাংশে সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ড্রামে বাজারজাতকৃত অধিকাংশ খোলা ভোজ্যতেলই ভিটামিন ‘এ’ শূন্য অথবা পরিমিত মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ নেই। ফলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইনের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ জনগণ।
অস্বাস্থ্যকর ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ বন্ধে শিল্প মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে কয়েক দফায় নির্বাহী আদেশ জারি করেছে। প্রথম দফায় ১৬ মার্চ ২০২২ তারিখের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর নন-ফুড গ্রেড ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাত ও পরিবহন বন্ধ করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। তবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতির ঘাটতি বিবেচনায় শিল্প মন্ত্রণালয় এই সময়সীমা বৃদ্ধি করে। সর্বশেষ ২ জুন ২০২২-এ জারিকৃত নির্দেশনায় খোলা সয়াবিন তেল বাজারজাতকরণের সময়সীমা ৩১ জুলাই ২০২২ এবং খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণের সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত নির্ধারণ করে দেয়া হয়। তবে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এই নির্দেশনার বাস্তবায়ন মাঠ পর্যায়ে দেখা যায়নি। ভোজ্যতেল একটি অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য বিধায় এটি বাজারজাতকরণে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন আইন, ২০১৮, ওজন ও পরিমাপ মানদণ্ড আইন, ২০১৮-সহ প্যাকেজিং, মোড়কাবদ্ধ ও লেবেলিং এবং খাদ্য স্পর্শক সংক্রান্ত বিধি ও প্রবিধানমালা অনুসরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এসব বিধিবিধান অনুযায়ী অস্বাস্থ্যকর, নোংরা এবং নন-ফুড গ্রেড পাত্রে ভোজ্যতেল বাজারজাত, সরবরাহ ও বিক্রয় করার কোনো সুযোগ নেই।
অস্বাস্থ্যকর নন-ফুড গ্রেড ড্রামে খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণের চলমান প্রবণতা “ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩” বাস্তবায়নসহ সরকারের অন্যান্য স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে। ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ লক্ষ্যে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে কতিপয় প্রস্তাব বিবেচ্য। যথা- প্রথমত, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমানে ব্যবহৃত ড্রামের পরিবর্তে ফুড গ্রেড বোতল বা পাউচ প্যাকে ভোজ্যতেল বাজারজাত করা। দ্বিতীয়ত, নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী ভোজ্যতেল ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ হচ্ছে কিনা, তা নিয়মিত যৌথভাবে পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করা। তৃতীয়ত, ড্রামের অনিরাপদ তেলের স্বাস্থ্য ক্ষতি সম্পর্কে নীতিনির্ধারক, উৎপাদক, সরবরাহকারী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা। চতুর্থত, অনিরাপদ ড্রামের অস্বাস্থ্যকর খোলা তেল পরিহার এবং প্যাকেটজাত ভোজ্যতেল গ্রহণে ভোক্তাদের উৎসাহিত করা। পঞ্চমত, দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে ভোজ্যতেল সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীগণকে আগ্রহী করে তোলার জন্য প্রযুক্তিগত জ্ঞান প্রদান এবং কোনো প্রকার আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে তাদের উপযুক্ত প্রণোদনা প্রদান। ষষ্ঠত, টেকসই ও নিরাপদ ড্রাম ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম নিশ্চিত করতে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন ও বিধিমালার প্রয়োজনীয় সংশোধন ও কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব।
[email protected]
নাফিউর আহমেদ, বেসরকারি সংস্থা ‘প্রজ্ঞা’র সমন্বয়ক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়