ভারতীয় হানি ট্র্যাপ চক্রের ২ এজেন্ট গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

রংপুরে তিনটি নির্বাচনী জনসভায় নৌকায় পক্ষে গণজোয়ার তুললেন শেখ হাসিনা : বাহে, হামাক একখান ভোট দিবা

পরের সংবাদ

ভোট ও জোট প্রসঙ্গে

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চলছে দ্বাদশ সংসদের নির্বাচনী প্রচারণা। এই প্রচারণাটা হলো এক ধরনের প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতাটাও ক্রিকেট বা ফুটবল খেলার মতোই। ফুটবল বা ক্রিকেট দলের সমর্থকরা গ্যালারি মাতিয়ে রাখে, নিজেদের পছন্দের দলকে সমর্থন দিয়ে। গোল বা রান হলে সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। ঠিক নির্বাচনের বেলায়ও অনুরূপ ঘটনা ঘটে। একসময় ইউপি নির্বাচনের আমেজ ছড়িয়ে পড়ত গ্রামের চারদিকে। ঠিক সেই রকমই জাতীয় নির্বাচনের আমেজটা ছড়িয়ে পড়ত দেশজুড়ে। নির্বাচনী প্রচারণাটা শহর থেকে ছুটে চলত গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায়। বর্তমান নির্বাচনে তা কতটা হচ্ছে? কেন তা হচ্ছে না, এই বিষয়টি দেখা জরুরি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন বয়কট করেছে, এই জোটের সঙ্গে যোগ দিয়েছে কিছু বাম রাজনৈতিক গোষ্ঠী ও কিছু দক্ষিণপন্থি স্বাধীনতার সপক্ষের রাজনৈতিক শক্তি। এই বয়কটের ফলে নির্বাচনটা অর্থবহ হবে না বলে অনেকেরই ধারণা। নির্বাচন বর্জনকারীরা অর্থবহ নির্বাচন বলতে যা বুঝাতে চাচ্ছে তার কি আদৌ অর্থবহ তথা নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা। ’৭৫-এর পরবর্তী সময়গুলোতে দেখা গেছে অর্থ দিয়ে ’৭১-এর পরাজিতরা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা মাঠে নিজেদের দখলদারিত্ব কায়েম করেছেন। আর এদের সহায়তা করেছে নিরপেক্ষতার নামে স্বাধীনতার সপক্ষের কতিপয় মানুষ। অনেকেরই মনে প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক, এখন তো আর রাজাকার, আলবদররা জীবিত নেই। রাজাকার আর আলবদর জীবিত না থাকলেও তাদের আদর্শটা প্রোথিত হয়ে আছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। আর এই আদর্শটা লালন করছে বিএনপি-জামায়াত জোট। যারা স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি তারা কি বিএনপি-জামায়াতকে জনবিচ্ছিন্ন করার কৌশল কখনো নিয়েছে? না বারবার এদের বগলদাবা করে জোটবদ্ধ আন্দোলন করে গেছেন। এই বিষয়টি দেখা জরুরি। কারণ ’৭১-এর পরাজিত আদর্শিক শক্তি যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে দেশে যে ভয়াবহতা সৃষ্টি হবে তা একবার ভাবা দরকার। দ্বাদশ নির্বাচনটা আসলেই অর্থবহপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক হচ্ছে না। এর জন্য দায়ী কারা? সবাই দায়ী করে বলবেন, এই অর্থবহ না হওয়ার মূল কারণ আওয়ামী লীগের ক্ষমতার লোভ। আওয়ামী লীগ যদি বিএনপি-জামায়াত ’৭১-এর পরাজিত শক্তিকে ক্ষমতা ছেড়ে দেয় তাহলে কি নির্বাচনটা অর্থবহ হয়ে যাবে? নির্বাচনকে পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য বিএনপি-জামায়াত তথা ’৭১-এর পরাজিত রাজনৈতিক আদর্শিক শক্তির অংশগ্রহণটা কি খুবই জরুরি? আশা করি, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের কর্ণদাররা উত্তরটা খুঁজবেন। দ্বাদশ নির্বাচনে প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল, সাত শতাধিক নির্দল প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন। বিএনপি-জামায়াতকে মাঠের বাইরে রেখে কেন বাকিরা মাঠে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়তে পারছেন না? বিএনপি-জামায়াত ছাড়া আওয়ামী লীগকে হারানোর কেন সাহস নেই বাকি দলগুলোর? অপরদিকে ’৭১-এর পরাজিত রাজনৈতিক শক্তির কি খুবই প্রয়োজন রাজনৈতিক মাঠে? অথচ বামসহ কিছু রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বক্তব্য দিতে দিতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। আবার এরাই বিএনপি-জামায়াত ছাড়া আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়ার সাহস পায় না। কী বিচিত্র সেলুকাস বাংলাদেশের রাজনীতি। ’৭১-এর পরাজিত শক্তিকে রাজনৈতিক মাঠ থেকে চিরতরে বিতাড়িত করতে চাইলে এদের নির্বাচনী মাঠে অংশগ্রহণ করতে না দেয়াটাই হবে সর্বোত্তম কাজ। এদের ছাড়া আসলেই নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হয় না, তা প্রমাণ করছে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোও। এবারের নির্বাচনে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল দুটি জাপা ও আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে কথিত তেরো দল, যা মিলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে ১৪। জাপা ও তেরোটি রাজনৈতিক দল দেউলিয়াত্বে ভোগছে? জাপা মহাজোট করে নির্বাচনে আসতে চায়। নিজেরা স্বাধীনভাবে মেরুদণ্ড সোজা করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জন প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার সাহস তাদের নেই। তারা আওয়ামী লীগের কাছে আসন ভিক্ষা চাচ্ছে, নির্দিষ্ট আসন থেকে তারা নৌকা প্রতীক তুলে নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের কাছে আকুতি-মিনতি করেছে। আওয়ামী লীগও তাদের মিনতি শুনেছে। আওয়ামী লীগও বেশ কিছু আসন থেকে নৌকা প্রতীক উঠিয়ে নিয়েছে। অপরদিকে এই তেরো দল যে কি পরিমাণ জনবিচ্ছিন্ন তা পরিমাপ করাটা দুরূহ কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই তেরোটি দল আওয়ামী লীগ ছাড়া রাজনৈতিক মাঠে টিকে থাকতে পারবে না। এরা জাপার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক দেউলিয়া। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, দ্বাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়। এই প্রস্তাবে তারা অসম্মতি জানায়। তারপর তাদের জাপার মতো মানে নিজ নিজ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা বললেও তারা অসম্মতি জানায়, এমনকি তারা প্রস্তাব করে, আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীও যেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে না পারে এই সিদ্ধান্ত নিতে আওয়ামী লীগকে অনুরোধ করেছে। সত্যি এটা আশ্চর্য হওয়ার মতো বিষয়, কারণ যেখানে জামায়াত-বিএনপি নেই, সবাই স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি দাবিদার তাহলে কেন এত ভয়। এই ভয়টা আসলে কিসের জন্য এটা ভাবা জরুরি, কারণ এরা ক্ষমতা হারাতে চায় না। এরা আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায়। আর এদের এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে পরোক্ষভাবে বেঁচে থাকে ’৭১-এর পরাজিত শক্তি। রাজশাহী-২ আসনের ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থীর পোস্টার-ব্যানার দেখলে বিস্মিত হয়ে যেতে হয়, কারণ তিনি তার পোস্টার-ব্যানারে দলীয় প্রতীক তো দূরের কথা নিজের দলের নামটিও ব্যবহার করছেন না। চলমান নির্বাচনে রাজশাহীর অন্য আসনের প্রার্থীরাও তো ১৪ দলভুক্ত, যারা নৌকা প্রার্থীকে নির্বাচন করছেন। এই প্রার্থীরা তো নিজের দলের নাম ও দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহার করছেন। তাহলে কেন সদর আসনের ১৪ দলীয় প্রার্থী দলীয় প্রধানের ছবি এবং দলের নাম ব্যবহার করতে ভয় পাচ্ছেন। এই বিষয়টি একটি দুগ্ধপোষ্য শিশুও বুঝতে পারবে। কারণ তার নিজস্ব দলের ভোট নেই এই আসনে। তাই তাকে পুরোপুরি নির্ভর করতে হচ্ছে জেতার জন্য আওয়ামী লীগের ওপর। সুতরাং এই কারণেই তিনি নির্বাচনী ফেস্টুন-ব্যানারে আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করছেন। যদি তিনি নিজ দলের নাম, প্রতীক ও দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহার করেন, তাহলে হয়তো আওয়ামী সমর্থক ভোটাররা তাকে ভোট দেবে না। এই ভয় থেকে তিনি এই কাজটি করছেন। এই রাজনৈতিক কার্যক্রমে কী প্রমাণ করে? তিনি কি তার দলের আদর্শ চর্চা করছেন, না নির্বাচনের মাধ্যমে তৈরি করছেন ক্ষমতায় যাওয়ার পথ। এককভাবে জামায়াত-বিএনপি বা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতালোভী বলাটা কি ঠিক? দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচনটা অর্থবহ হতো যদি অংশগ্রহণকারী দলগুলো নিজ নিজ আদর্শিক প্ল্যাটফর্ম থেকে নির্বাচনে অংশ নিত। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়াটা কষ্টসাধ্য হয়ে যেত। অপরদিকে ’৭১-এর পরাজিত রাজনৈতিক আদর্শ রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিতাড়িত হয়ে যেত। আর আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র আধিপত্যবাদটা টিকে থাকতে পারত না।

শাহ মো. জিয়াউদ্দিন : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়