ভালা জার্নালিস্টস ফোরাম : সভাপতি রুমেন পরশ সাধারণ সম্পাদক

আগের সংবাদ

নাশকতার টার্গেট এখন রেল

পরের সংবাদ

নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা ও উচ্চাশা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমার মনে হয় বাংলাদেশে মোটামুটি একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়ে যাবে। যারা অশান্তির নায়ক ও চালক, তাদের ছেলে সন্তানসহ নিকটতম আত্মীয়রা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায় তাদের বাড়ি-গাড়ি আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা একই কথা। পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ আছে, যাদের সংখ্যা খুব কম না, তারা ধমক, চোখরাঙানি বা মৌনতা থেকে আসল অর্থটা খুঁজে নিতে পারে। তবে আমাদের দেশে এমন অনেক বেকুব আছে, যারা নেতা হতেও সংঘাতে লিপ্ত হতে দ্বিধান্বিত নন; নিজের জীবনটাও দিয়ে দিতে পারেন। একসময় ছিল, এটা একটা মহৎ কাজ ছিল যখন দেশটা স্বাধীন ছিল না। স্বাধীন দেশে তারাও প্রতিশ্রæতি দিয়ে প্রতিশ্রæতি রাখেনি। আমাদের মহান নেতা, মহান স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অনুসারীরা কথা দিয়ে কথা রাখেনি, যদিও নেতার জন্য জীবন দেবে বলে প্রতিশ্রæত ছিল। তবে তাদের মধ্যে এখনো কিছু প্রকৃত বেকুব আছে, যারা নেতার হয়ে লড়বে। জেলে যাবে বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বা তার মিত্রদের জন্য নিজেদের পথটা রুদ্ধ করবে। তাদের নিয়ে কিছু আশঙ্কা আছে।
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে অনেকের মতে নির্বাচন কমিশন দালালের ভূমিকা নিয়েছে এবং তাদের নিরপেক্ষতা বহু আগেই বিসর্জিত হয়েছে। আমার মতে এটা দালালি বা নিরপেক্ষতা ভঙ্গ নয়, সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন। সাম্প্রতিককালে প্রার্থীর যোগ্যতা গ্রহণ বা বর্জন নিয়ে নির্বাচন কমিশনে কিছুটা হইছই শুনলেও তার বড় রকমের কোনো পক্ষ-পাতিত্যের প্রমাণ নেই। ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ সালের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন তাদের করতেই হবে।
তবে নি¤œলিখিত বিষয়গুলোতে নির্মোহ দৃষ্টি দিলে তারা তাদের লক্ষ্যে উপনীত হবেন :
১। নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই শেষতক নিরপেক্ষ থাকতে হবে এবং তাদের প্রদত্ত ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার করতে হবে।
২। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সার্বিকভাবে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের আবহ তৈরি করে দিতে হবে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৩। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সক্রিয় থাকতে হবে। অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য তা করতেই হবে। পক্ষপাতদুষ্টতা তাদের কর্তব্যস্পৃহা ও নিরপেক্ষতায় বিঘœ ঘটাবে এবং তাদের ধিকৃত করবে।
৪। পুলিশ, বিজিবি এবং ক্ষেত্রভেদে নিরপেক্ষ সশস্ত্র বাহিনীকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকতে হবে। ব্যত্যয়ের পরিণাম কী হতে পারে, তার কিছু নমুনা নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের দিনক্ষণের আগেই দেখাতে হবে।
৫। হুন্ডা, গুণ্ডা ও টাকার খেলার কার্যকর নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পুলিশ ব্যবস্থা নিলে হুন্ডা ও গুণ্ডার আধিক্য কমাতে পারবে, তবে কালো টাকার প্রবাহ কমাতে দুদককে সক্রিয় হতে হবে।
৬। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সার্বিকভাবে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।
৭। নিরপেক্ষ সরকার : সরকারের নিরপেক্ষতার নমুনা এখনো বিদ্যমান, তবে প্রার্থী ও দলানুসারী নিরপেক্ষ প্রার্থীদের কড়াভাবে হুঁশিয়ার করে দিতে হবে, যাতে তার নির্বাচনী কানুন মেনে চলে।
৮। সচেতন রাজনীতিবিদ ও ভোটার : রাজনীতিবিদদের দায়িত্বশীল হয়ে কেন্দ্রে ভোটার নিয়ে আসতে হবে। ভোটারদের মন থেকে ভয়-ভীতি তাড়াতে হবে।
উপরিউক্ত পদক্ষেপগুলো নির্মোহভাবে নেয়া না হলে কমিশনের বর্তমান গৃহীত পদক্ষেপগুলো বজ্য-আঁটুনি ফসকা গেরো বলে প্রতিভাত হবে।
তবে নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ বা সংশয় থেকেই যাবে। হয়তো গ্রহণযোগ্যতা ছাড়া অন্য সব কিছুতে নির্বাচন কমিশন লাগাম টানতে পারবে। এই গ্রহণযোগ্যতা কথাটা সংজ্ঞায়িত করতে গেলে নির্বাচনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুবিধাভোগীদের প্রসঙ্গ টানতেই হবে। একটি দেশের নির্বাচনে সুবিধাভোগী হচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকার, বিভিন্ন নাম ও আদর্শধারী রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনের কাজে সংশ্লিষ্ট বা ভোট গ্রহণে নিয়োজিত বিভিন্ন কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ভোটাররা এবং সর্বশেষ বহির্দেশীয় শত্রæ-মিত্ররা। নির্বাচন কমিশন হয়তো বলবে এমন নির্বাচন এ দেশে আগে কখনো হয়নি এবং কেউ তাকে অভিনন্দন না জানালেও তারা নিজেরা নিজেদেরই অভিনন্দিত করবে। গণমাধ্যমগুলো স্বপক্ষে যেতে পারে আবার বিপক্ষেও যেতে পারে। নিরপেক্ষ থাকবে বলে মনে হয় না। নিরপেক্ষ থাকলে বেশি পাঠক টানতে পারবে না। আর এ দেশে বিপক্ষদের সংখ্যা সব সময় বেশি থাকে, এমনকি সরকারি দলের অনেকেই ¯্রফে ব্যক্তি বা সমষ্টির স্বার্থের কারণে বিরোধী অবস্থান নিতে পারে। নির্বাচনে যারা ফেল করবে, তাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বড় প্রশ্নবোধক হয়ে দাঁড়াবে। পরাজিত প্রার্থীর মধ্যে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না যে কিনা তার জয়ী প্রতিপক্ষকে অভিনন্দন জানাবে। আর যারা বাকি রইল তারা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা মানে প্রতিক্রিয়া জানাবে। এমনকি সমঝোতার মাধ্যমে যারা নির্বাচনে দাঁড়াবে, তারাও সরকার বা নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানাবেন না। যারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি তারা ৭ তারিখের নির্বাচনটা পাতানো খেলার ফলাফল ঘোষণার দিন বলেই অভিহিত করে বসে আছেন। আর রইল নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী, জাতিসংঘের প্রতিনিধি, ইউরোপীয় পর্যবেক্ষক, এনজিওগুলো। তাদের সবার কাছে নির্বাচনটাকে গ্রহণযোগ্য করা আর হনুমানকে দিয়ে গন্ধমাদন বয়ে আনার শামিল। তাই গ্রহণযোগ্যতার কথাটি প্রশ্নবোধক রয়েই গেল।
গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টিতে আবার আসছি। নির্বাচনে ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নেয়ায় গ্রহণযোগ্যতার একটি শর্ত পালিত হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীরা যদি হানাহানি না ঘটায়, টাকার খেলায় না নামে এবং জনগণ যদি ভয়-ভীতিহীন নিজেদের ইচ্ছার প্রকাশ ঘটাতে পারে, তাহলে গ্রহণযোগ্যতার আর একটি শর্ত পালিত হবে। তবে ভোটারের উপস্থিতি কমপক্ষে ৬০ ভাগ না হলে বিদেশি কিংবা স্বদেশি পর্যবেক্ষকদের কাছেও তা গ্রহণযোগ্য হবে কিনা তা ভবিতব্য বলতে পারে।

অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী : বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়