৫ মাস পর ডেঙ্গুতে মৃত্যুশূন্য, নতুন রোগী ১৭৯

আগের সংবাদ

প্রতীক পেয়েই প্রচারযুদ্ধ

পরের সংবাদ

স্বতন্ত্রের ডামি পুতিন : ফাঁদে বাইডেন

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ব প্রকৃতিতে উদামকাণ্ড। ব্যাপক হেরফের। গরমে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন জায়গা পুড়ছে দাবানলে। দক্ষিণ গোলার্ধের গ্রীষ্মকালের টানা তাপদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা দেশটিতে। বেশি আক্রান্ত সাউথ ওয়েলস। উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে যে সময় শীতকাল শুরু হয়, দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে সে সময় গ্রীষ্মকাল শুরু। এদিকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কবলে চীন। দেশটির বেশির ভাগ অঞ্চলের রাস্তাঘাট এখন বরফে ঢাকা। এর জেরে বিভিন্ন জায়গায় ঘটছে দুর্ঘটনা। চীনে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে গেছে।
তুষারপাতের কারণে বেইজিংয়ের রেললাইনে পিছলে দুটি সাবওয়ে ট্রেনের সংঘর্ষে বিপুল হতাহতের ঘটনায় অনেকেই হতবাক। কারণ চীনের পরিবহনে সচরাচর এমনটি ঘটে না। শৈত্যপ্রবাহের তীব্রতা বাড়তে থাকায় কর্তৃপক্ষ কয়েকটি প্রদেশের যান চলাচল সীমিত করেছে। হেনান প্রদেশে তুষারপাতের কারণে নিংসিয়াতে মহাসড়কে যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। গানসু প্রদেশেও কিছু সড়ক ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ট্রেন চলাচলও বন্ধ। সাংহাইয়ে বেশ কয়েকটি ফেরি ও বাস সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
দেশে দেশে রাজনীতি-কূটনীতিতেও চণ্ডালতা। বাইডেন, পুতিন, শি জিং সিন্ড্রম। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান। গাজা-ইসরায়েলসহ মধ্যপ্রাচ্য উতলা। বাংলাদেশে নির্বাচনী উত্তাপ। দেশি-বিদেশি নানা সমীকরণ। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, রাশিয়ার কাছে বড় সাবজেক্ট এবারের নির্বাচনটি। বিরোধী শিবিরের বড় দল বিএনপি নেই এ নির্বাচনে। এর ফাঁকে স্বতন্ত্র-ডামির কিলবিল। এর মাঝে সুদূর রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন কোনো দল থেকে আগামী নির্বাচন করবেন না বলে ঘোষণা। আবারো প্রেসিডেন্ট পদে স্বতন্ত্র প্রতিদ্ব›িদ্বতার ঘোষণা দিয়ে বিশ্বরাজনীতিতে নতুন আলোচনায় পুতিন। দুই দশকের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় থাকা পুতিন ঘোষণা করেছেন, তিনি আগামী মার্চের নির্বাচনে ছয় বছরের জন্য আরেক মেয়াদে জয়ী হওয়ার আশা করেন। এর বিপরীতে বিশ্বের মহাশক্তিধর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দিনকাল ক্রমেই খারাপ যাচ্ছে। নিজ দেশেই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক এই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দেশে দেশে যুদ্ধবাজি ও অস্ত্র জোগানদারীসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর যত অভিযোগ। কথা বলার সময় তোতলানো, ভুলে যাওয়া এবং জনসমক্ষে হোঁচট খাওয়ার মতো ঘটনায় ব্যাপক সমালোচিত-সমালোচিত বাইডেন আগামীতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙবেন। কিন্তু বয়সসহ নানা কারণে তার লক্ষণ খারাপ।
অন্যদিকে রাশিয়ায় পুতিনের জন্য নির্বাচন একটি ডামি মাত্র। রাষ্ট্রের সমর্থনে, রাষ্ট্রচালিত মিডিয়া এবং মূলধারার জনগণের ভিন্নমত না থাকায় তার জয় নিশ্চিত। পুতিনের সমর্থকরা বলছেন, তিনি শৃঙ্খলা, জাতীয় গৌরব ও সোভিয়েত পতনের বিশৃঙ্খলার সময় রাশিয়ার কিছু প্রভাব পুনরুদ্ধার করেছেন। তাদের অনেকের মধ্যে ধারণা জন্মেছে বা তিনি বোঝাতে পেরেছেন, পুতিন না থাকলে রাশিয়াও থাকবে না। ১৯৯৯ সাল থেকে তিনিই রাশিয়ার সর্বময় ক্ষমতাধর নেতা। তা কখনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে, কখনো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। ২০০০-২০০৮ পর্বে তিনি ছিলেন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। এরপর ২০০৮-২০১২ সালে চলে গেলেন প্রধানমন্ত্রীর পদে। তারপর ২০১২ সালে আবার ফিরে এলেন প্রেসিডেন্ট পদে। তার সমালোচকরা বলছেন, তিনি আসলে আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকার ছক আঁটছেন। অথবা কমছে কম অন্তত ২০৩৬ সাল পর্যন্ত। তার সবচেয়ে সোচ্চার সমর্থকদের একজন সাবেক নভোচারী এবং এমপি ভ্যালেন্টিনা তেরেশকোভা কবেই প্রস্তাব দিয়েছেন কেউ কতবার প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়াতে পারবেন, সেই সীমা তুলে দিতে। এ ছাড়া বহু মানুষ তাকে পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ নেতা হিসেবে দেখেন। তারা নিয়মিতই শোনান, পুতিনের কোনো বিকল্প নেই।
বিগত শতাব্দীতে বিশ্বে স্নায়ুযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে ভøাদিমির পুতিনের উত্থানের শুরু। ১৯৮৯ সালে যখন বার্লিন প্রাচীরের পতন ঘটছে তখন তিনি তৎকালীন পূর্ব জার্মানির ড্রেসডেনে কেজিবির একজন এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। পূর্ব ইউরোপজুড়ে কমিউনিস্টবিরোধী গণবিপ্লবের মুখে যখন বার্লিন প্রাচীর এবং কথিত ‘লৌহ যবনিকা’ ধসে পড়ল, তখন তিনি বেশ বেকায়দায় পড়েছিলেন। এ ঘটনা তার মনে দুটি গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। প্রথমত গণঅভ্যুত্থানের প্রতি তার বিতৃষ্ণা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর মস্কোতে ক্ষমতার শীর্ষে দেখা দেয়া শূন্যতা। পুতিনের জীবনী লেখক বরিস রেইটশুস্টার জার্মান নাগরিক। তার মতে, ‘পূর্ব জার্মানির সেই অভিজ্ঞতা যদি পুতিনের না থাকত, তাহলে হয়তো আমরা ভিন্ন এক পুতিনকে দেখতাম।’ পূর্ব জার্মানি থেকে পুতিন ফিরে এলেন তার নিজ শহর লেনিনগ্রাডে। পরে এই শহরটি আবার তার পুরনো নাম সেন্ট পিটার্সবার্গে ফিরে যায়। পুতিন সেখানে রাতারাতি শহরের মেয়র আনাতোলি সোবচাকের দক্ষিণ হস্তে পরিণত হন।
পূর্ব জার্মানিতে কমিউনিজমের পতনের পর পুতিন এবং তার সহকর্মীরা তাদের পুরনো ভূমিকা হারালেন। কিন্তু নতুন রাশিয়ায় ব্যক্তিগতভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তারা বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন। পুতিনের উন্নতি হচ্ছিল বেশ দ্রুতগতিতে। লেনিনগ্রাডের যে মেয়রের সঙ্গে তিনি কাজ করতেন, সেই আনাতোলি সোবচাকেরও পতন ঘটল। কিন্তু পুতিন টিকে গেলেন। রাশিয়ার নতুন এলিটদের সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুললেন তিনি। লেনিনগ্রাড থেকে পুতিন গেলেন মস্কোতে। সেখানে রাশিয়ার নতুন সিক্রেট সার্ভিস এফএসবিতে তার উন্নতি ঘটতে থাকল তর তর করে। তখন রুশ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন বরিস ইয়েলতসিন। তিনি তখন ক্রমেই অদ্ভূত আচরণ করছিলেন। ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি হঠাৎ পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন। বেরেযোভস্কি এবং অন্যান্য অলিগার্ক বা গোষ্ঠীপতিদের সমর্থনে ভøাদিমির পুতিন তখন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার জন্য বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে। দায়িত্বটা তিনিই পেলেন। ২০০০ সালের মার্চে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে জিতে পাকাপাকিভাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বনে গেলেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি পুতিনকে।
বিশ্বরাজনীতি-কূটনীতিতে তার প্রতিপক্ষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জীবনও গতিময়-ছন্দময়। তবে পুতিনের মতো আনকোরা, একরোখা, সমান্তরালে নয়। তা অনেকটা নিয়মতান্ত্রিকতায়। ক্ষেপাটে ট্রাম্পকে হারিয়ে ক্ষমতায় বসার পর থেকে তিনি মূলত শান্তি-স্বস্তিতে নেই। একের পর এক দেশি-বিদেশি যন্ত্রণা সইছেন। আবার বিশ্বায়নের এজেন্ডা থেকে সরার অবস্থাও নেই। তাহলে আর যুক্তরাষ্ট্রই থাকে না। দেশে দেশে গণতন্ত্রায়ণের পথে হোঁচট খাচ্ছেন। যেখানে হাত দিচ্ছেন সেখানেই রাশিয়া বা অন্য কেউ থাবা দিচ্ছে। সুযোগ পেলে চীনও চিকন পথে ফুঁ দিচ্ছে। তাদের মদদে ছোটখাটো দেশও এখন আগের মতো যুক্তরাষ্ট্রের কথা শুনছে না। এর মধ্যে নিজ দেশে তিনি কিছুটা কাহিল হয়ে পড়েছেন, তার ছেলের ব্যবসায় অবৈধ এবং বিতর্কিতভাবে যুক্ত থাকার অভিযোগে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাইডেনের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসন তদন্তের প্রস্তাব পর্যন্ত আনা হয়েছে মার্কিন হাউস অব রিপ্রেসেন্টেটিভে। ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবের বদলা নিতেই বাইডেনের বিরুদ্ধে এই প্রস্তাব আনা হয়েছে।
তার ওপর ইউক্রেনে জেলেনস্কিকে সহায়তা দিয়েও কিছুটা ফাঁদে আটকা পড়েছেন বাইডেন। তা অনেকটা আপদ ডেকে আনার মতো। বাইডেন প্রশাসনের ইউক্রেন সমস্যাটি এখন অর্থায়ন জোগানোর চেয়েও গভীর সমস্যা। এই যুদ্ধে জেতা যাবে কিনা- এ নিয়ে সন্ধিহান তার সহকর্মীরা। মার্কিন আইনসভার দুই কক্ষেই ইউক্রেনের জন্য বাইডেনের পদক্ষেপগুলো বেশ অচলাবস্থায় পড়েছে। চলমান যুদ্ধে যেভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে, তা থেকে উত্তরণের জন্য তারা ইউক্রেনীয় বাহিনী পুনর্গঠন করার ধারণাটি সামনে নিয়ে এসেছে। নির্মাণের অর্থ হলো, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর জন্য একদিকে নতুন জনবল নিয়োগ দেয়া, অন্যদিকে তাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করা। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীতে এখন ব্যাপক জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। শূন্যস্থান পূরণে তারা নানা কদাকার ও কালো কৌশল নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন অবশ্য এখনো ইউক্রেনের প্রতি তার সমর্থন অব্যাহত রেখেছেন। এর বিরুদ্ধে রিপাবলিকানরাও তাদের জোর অসম্মতিতে অটল।
অন্যদিকে ইউরোপীয় কাউন্সিলে এখন উদারবাদ ও জনতুষ্টিবাদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। সামনের বছরগুলো কেমন যাবে, তা নির্ভর করছে যুদ্ধের জয়-পরাজয়ের ওপর। ইউরোপীয় অনেক দেশের সরকার আছে যেগুলো কেন্দ্র-বাম বা কেন্দ্র-ডানপন্থি। কখনো কখনো সরকারগুলো আবার বিপরীত ধ্যান-ধারণার দলের সঙ্গে জোট বেঁধেছে। ১৯৪৫ সালের পর ইউরোপীয় ব্যবস্থার ব্যাপকতা, যা ১৯৮৯ সালের পর আরো ব্যাপক ও গভীর হয়। ন্যাটো ও ইইউভুক্ত দেশগুলো এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে যুদ্ধ তাদের সদর দরজায় এসে পৌঁছতে পারে। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ ইস্যুতেও ইইউ দ্বিধাবিভক্ত। ইউরোপীয় এবং মার্কিন রাজনীতির হাওয়া বুঝে চলা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের জন্য তা সামনে আরো কোনো অবাধ সুদিন আনছে কিনা অপেক্ষা করে দেখার বিষয়।

মোস্তফা কামাল : সাংবাদিক ও কলাম লেখক; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়