৫ মাস পর ডেঙ্গুতে মৃত্যুশূন্য, নতুন রোগী ১৭৯

আগের সংবাদ

প্রতীক পেয়েই প্রচারযুদ্ধ

পরের সংবাদ

তরুণদের যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মহান বিজয়ের ৫৩ বছরে বাংলাদেশ পদার্পণ করেছে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর বুকে স্বাধীন অস্তিত্বের জানান দেয়া বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, সংগ্রাম, মৃত্যু, লাঞ্ছনা ও চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে হাজার বছরের কাক্সিক্ষত বিজয় ছিনিয়ে আনে। শূন্য থেকে শুরু করা বাঙালির পরের গল্পটা শুধুই এগিয়ে যাওয়ার। নানা পিছুটান, ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে বিজয় পরবর্তী ৫২ বছরে বাঙালির অর্জন সমগ্র বিশ্বে আজ বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। বিগত ১৫ বছরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অর্থনৈতিক অগ্রগতিসহ সামগ্রিক অগ্রযাত্রায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তবে উন্নয়নের মহাসড়কে গতিশীল যানের মতো ছুটতে থাকা বাংলাদেশের সামনে সামাজিক বৈষম্যকে অনেকটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি ও অগ্রগতিতে কোনো হতাশা না থাকলেও স্বাধীন বাংলাদেশের বুকে আজো স্বাধীনতাবিরোধীদের অশুভ তৎপরতা রয়ে গেছে। তাছাড়া রয়েছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির মাথাচাড়া। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু গড়ে যেতে পারেননি। তবে তিনি ভিত্তিটা গড়ে দিয়েছিলেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছেন, সেটি আমাদের ভাবনার মধ্যে ছিল না। প্রাপ্তির জায়গায় দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন থেকে শুরু করে দেশ আজ মধ্যম আয়ের একটি দেশে উপনীত হয়েছে।
১৯৭১ সালে সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বার্ষিক বাজেট আজ পরিণত হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেটে। সেদিনের ১২৯ ডলার মাথাপিছু আয়ের দেশটিতে বর্তমান মাথাপিছু আয় প্রায় ৩ হাজার মার্কিন ডলার। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, যার হার প্রায় শতভাগ। ১২১টি মেগাপ্রকল্প এখন চলমান। জিডিপির আকার ৪৬০ বিলিয়ন ডলার। আগামী ২০২৫ সালে তার আকার হবে ৫০০ বিলিয়ন ডলার। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। সংবিধান থেকে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর খুনি ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারকার্য শুরু করে নির্বাসিত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন। উগ্রবাদ ও ধর্মের অপব্যবহার রোধ করে জাতিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হয়। সামরিক বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে ক্যু-হত্যার অবসান ঘটায়। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণকে সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের আওতায় এনে দুর্ভিক্ষ, মন্দা প্রভৃতি দূর এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বিদ্যুৎ, কর্মসংস্থান ব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেতে দেশকে মুক্ত করে সোনার বাংলা গঠনে উদ্যোগী হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।
প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী ‘ফোর্বস’ প্রকাশিত বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৩তম অবস্থানে রয়েছেন। লিঙ্গ সমতা, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্প, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু, কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন, কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন, চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল, মেট্রোরেল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসসহ দেশের মেগা প্রকল্পগুলো সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও সাহসী পদক্ষেপের কারণে। ইন্টারনেট ব্যবহার সহজলভ্য হওয়ায় দেশে মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং, ই-কমার্স খাতেও দ্রুত জনপ্রিয়তা বেড়েছে এবং দ্রুতগতিতে এ খাতের প্রসার ঘটেছে। ই-পর্চা, ই-মিউটেশন, ই-পাসপোর্ট, ই-চালান, ই-টেন্ডার, ই-নথি, অনলাইনে পেনশনভাতাসহ বিভিন্ন সেবার কারণে মানুষের জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এতে কাজের গতি ও স্বচ্ছতা বেড়েছে।
জাতির পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, অবকাঠামোগত খাতে উন্নয়নসহ নানাদিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন অর্জনে নবতর মাত্রা যোগ হয়েছে। মাথাপিছু আয়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি, বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং সম্পদ উৎপাদন ও আহরণ দৃশ্যমানভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থ-সামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে। শত প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশে আজ ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়িত হয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে রূপকল্প ২০২১-এর সাফল্যের ধারাবাহিকতায় প্রণীত হয়েছে ‘রূপকল্প ২০৪১’। এর প্রধান অভীষ্ট হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশ হবে; যেখানে মাথাপিছু আয় হবে ১২,৫০০ মার্কিন ডলারেরও বেশি। ২০৩০ সালে মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশের তালিকায় পৌঁছে যাবে। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ হবে আধুনিক, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অবকাঠামোগত অগ্রগতি সাধনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ; যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন করেছে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসারে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্ভুল তথ্যের পাশাপাশি মানুষের আদলে বুদ্ধিমত্তা থাকায় সাইবার নিরাপত্তা, ভিডিও গেমস, নকশা, স্মার্ট গাড়ি, ডেটা সেন্টার ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ হাইটেক, আইটি, আইটিইএস শিল্পের বিকাশ ও বিস্তার, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে আকর্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করছে। তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের এ সাফল্যকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সম্ভাবনাময় নব অধ্যায়ের শুভ সূচনা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে একটি উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতিবিদ ও নীতি-নির্ধারক। তিনি আজ সমগ্র বিশ্বব্যাপী নন্দিত। তাই বাংলাদেশের নির্বাচনবিরোধী আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার জনসম্পৃক্ততা ও জনপ্রিয়তা দিয়ে সেটা প্রতিরোধ করেছেন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে জয়যুক্ত করতে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। এবারের বিজয়ের মাসে অপশক্তির সব ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবিলা করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির জয়রথ অব্যাহত রাখতে তরুণ ভোটারদের শপথ নিতে হবে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর এটি আর একটি যুদ্ধ, তবে যুদ্ধটি হচ্ছে ভোটযুদ্ধ। এ যুদ্ধ শুধু বাংলাদেশের সংবিধানবিরোধী শক্তির সঙ্গে নয়, এটা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ববিরোধী আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধেও বিজয় অর্জন করতে হবে। এই নির্বাচন হচ্ছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই, আর এ লড়াইয়ে বাংলাদেশের জনগণকে বিজয় অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সবাইকে সততা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধশালী-অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব বয়োজ্যেষ্ঠরা তরুণ প্রজন্মের হাতেই দিতে চান। তরুণদের যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

ড. মো. মোরশেদুল আলম : শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়