টিআইবি : গণতন্ত্রের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য

আগের সংবাদ

জাদুর কাঠির ছোঁয়ায়! হলফনামায় দেয়া তথ্য > মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদ বেড়েছে ২ থেকে ২০০ গুণ পর্যন্ত

পরের সংবাদ

ঝুঁকিতে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

‘রাজশাহী কলেজে দুই সাংবাদিককে ছাত্রলীগের মারধরের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত চায় সিপিজে’ কিংবা ‘ঢাকা ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ’ দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমের শিরোনাম। শুধু দুই-তিনটি নয়; সাম্প্রতিক সময়ে কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম সার্চ ইঞ্জিন গুগলে লিখলেই ‘নেতিবাচক ও বিব্রতকর’ সংবাদ চলে আসে প্রথম পাতায়। এ ছাড়া শিক্ষকের চৌর্যবৃত্তি, শিক্ষার্থীদের মারধর, ভাঙচুর, হামলা, ধর্ষণ ইত্যাদি শব্দযুগলকে গুগল ওই প্রতিষ্ঠানের সুনামের জায়গায় প্রতিস্থাপন করেছে। এর ফলে তথ্যপ্রযুক্তির গেøাবাল ভিলেজে নিজেদের ভালো ও খারাপ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরার সুযোগ যেমনি আছে তেমনি শোধরানোর জন্য যথেষ্ট কৌশলও আছে। সব মিলিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চেয়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা প্রতিষ্ঠানের খুঁটিনাটি গুগলের হাতে তুলে দিচ্ছে। আর সেটি করছে নির্দিষ্ট এক ধারা এবং কাঠামোর মধ্যে। প্রতিষ্ঠানের ভালো-মন্দ প্রচারের একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রেখেছেন ক্যাম্পাসের গণমাধ্যমকর্মীরা।
ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় যেমনি আনন্দ আছে, ঠিক তেমনি আছে কষ্ট, হতাশা আর শঙ্কা। নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে যেমন ক্যাম্পাসের নানা সংকট সমাধানে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করেন, তেমনি ইতিবাচকভাবেও প্রতিষ্ঠানকে উপস্থাপন করেন দেশ ও জাতির দরবারে। এসব সাংবাদিক যেমন ক্যাম্পাসের উন্নতি-অগ্রগতি তুলে ধরেন, ঠিক তেমনি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিকেও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। এতেই আপত্তি-বিপত্তি বাধে প্রশাসনের। এসব খবর প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গলকর হলেও নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির জন্য অমঙ্গলজনক। বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের পরও তারা একদিকে দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের নজরে চক্ষুশূল হয়ে উঠছেন। ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের ওপর আঘাত হানা হচ্ছে। আবার সংবাদ প্রকাশের জেরে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনদের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছেন অনেক সাংবাদিক। শুধু তাই নয়, পড়তে হয় প্রতিষ্ঠান প্রশাসনের রোষানলে। এভাবে ব্যক্তি স্বার্থে বলি হন অনেক ক্যাম্পাস সাংবাদিক। পড়ুয়া জীবনে নেমে আসে নানা জটিলতা। এসব মাড়িয়ে কলমযুদ্ধে সম্মুখ পানে এগিয়ে যাচ্ছে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত কতজন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তার কোনো হিসাব নেই। বিভিন্ন মেয়াদের বিচ্ছিন্ন কিছু হিসাব পাওয়া যায়। ২০০১ থেকে ২০১৬ সাল- এই ১৬ বছরে দেশে ২৩ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। বিএনপির ২০০১-২০০৬ শাসনামলে নিহত হন ১৪ জন সাংবাদিক, আর আহত হন ৫৬১ জন। আর ২০০৭ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ৯ বছরে খুন হন ৯ জন সাংবাদিক। আরেক পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৯৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২৪ বছরে বাংলাদেশে ৩৮ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। (ডয়েচে ভেলে)
নির্যাতন বা হত্যাকাণ্ডের এই খতিয়ান পূর্ণাঙ্গ নয়। অনেক ঘটনাই রয়ে গেছে আড়ালে। কোন হামলার ঘটনা প্রশাসনের নথিতেই উঠে না। শুধু হামলা নয়, প্রচুর মামলারও শিকার হন সাংবাদিকরা। ২০২১ সালে শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কমপক্ষে ১ হাজার ১৩৪টি মামলা হয়েছে। এই মামলাগুলোর বড় একটা অংশ হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে।
দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতিতে অস্থিরতা চলছে। সংকুচিত গণতন্ত্র আর প্রশ্নবিদ্ধ জনপ্রতিনিধিত্বের কারণে রাজনীতিতে এখন দুর্বৃত্তায়ন হচ্ছে। আর তাদের নেতিবাচক এই দিকটির প্রতিবেদন প্রকাশ করলেই সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক হত্যা ও নির্যাতন হলেও সহজে বিচার মেলে না। সব মিলিয়ে পরিসংখ্যান যা বলছে এটা তারই প্রতিফলন এবং দীর্ঘদিন ধরে এটি চলে আসছে। কঠিন হয়ে পড়ছে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, দেশে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি ও বিচারহীনতার রাজনীতির চর্চা হওয়ায় ক্যাম্পাস ও মাঠের সাংবাদিক কেউই নিরাপদ নয়। মহল্লায় আগুন লাগলে দেবালয়ও যে রক্ষা পায় না সেই উপলব্ধি করানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

মো. আব্দুল হাকিম : সাধারণ সম্পাদক, রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়