‘আমরা একাত্তর’ : একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি দাবি

আগের সংবাদ

ভোটের মাঠে ফিরলেন যারা : আপিল শুনানির প্রথম দিন > প্রার্থিতা ফিরল ৫৬ জনের > বাতিল-৩২ > পেন্ডিং-৬

পরের সংবাদ

শেখ হাসিনা : এশিয়া ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সমগ্র বাংলাদেশ যখন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের কর্মযজ্ঞে মুখরিত, ঠিক সেই সময় জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে সুযোগ্য নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘এশিয়া ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। International Organisation of Migration (আইওএম) ও জাতিসংঘ সিস্টেম দ্বারা সমর্থিত ‘গেøাবাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট মোবিলিটি’। জাতিসংঘ সিস্টেম হলো জাতিসংঘ এবং জাতিসংঘের অনেক তহবিল, কর্মসূচি এবং বিশেষায়িত সংস্থা, যার প্রতিটির নিজস্ব কাজের ক্ষেত্র, নেতৃত্ব এবং বাজেট রয়েছে। জাতিসংঘ নিজে এই পৃথক ‘জাতিসংঘ সিস্টেম’ সত্তার সঙ্গে এর কাজ সমন্বয় করে থাকে।
১ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত COP28-এর সাইডলাইনে একটি উচ্চ-স্তরের প্যানেলের সময় এই পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি রাষ্ট্রদূত ডেনিস ফ্রান্সিস এবং আইওএমের মহাপরিচালক অ্যামি পোপ উচ্চ পর্যায়ের প্যানেলের সহ-আয়োজক ছিলেন। (COP-এর পূর্ণরূপ Conference of Parties। এটি আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন, যা প্রতি বছর জাতিসংঘ কক আয়োজিত হয়। যে দেশগুলো COP-এ যোগ দিয়েছে, তারা পালাক্রমে একটি বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করে থাকে।)
এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বরে COP26 সম্মেলনের সময় ব্রিটিশ British Broadcasting Corporation (বিবিসি) শেখ হাসিনাকে ‘The voice of the Vulnerable’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। জাতিসংঘ এবং কমনওয়েলথে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে কমনওয়েলথ ও এসডিজির ভবিষ্যৎ অংশীদারত্বের মূলধারায় নিয়ে আসতে তিনি শক্তিশালী নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
এবারের অর্থাৎ ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর ‘এশিয়া ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ডটি’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং জলবায়ু গতিশীলতা এবং এর থেকে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের অব্যাহত সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে জলবায়ু প্রভাবের কারণে বাস্তুচ্যুত ৪ হাজার ৪০০ পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম বহুতল সামাজিক আবাসন প্রকল্প নির্মাণ অন্যতম।
বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারে এখন মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আগত ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার অবিচ্ছিন্ন জলবায়ু চুক্তি এবং উদ্যোগের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ প্রভাবগুলো নিয়ন্ত্রণ এবং সীমিত করার ক্ষেত্রে বিশ্ব নেতৃত্বের মর্যাদায় আসীন হয়েছে।
অষ্টম সর্বাধিক জনবহুল দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ বিশ্ব উষ্ণায়ন-প্ররোচিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের শীর্ষস্থানে রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত ১৪ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব এবং ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত, জলোচ্ছ¡াস, অতিবৃষ্টি, খরাসহ অন্যান্য চরম আবহাওয়ায় আগাম সতর্কতা এবং আগাম পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আজ বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল। বিজ্ঞানভিত্তিক আবহাওয়া ও জলবায়ুর উন্নততর পূর্বাভাস প্রদানের মাধ্যমে ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নে ‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক আবহাওয়া ও জলবায়ু সেবা প্রকল্প (কম্পোনেন্ট-এ)’ চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আবহাওয়া পরিষেবার মান বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনকে প্রাধান্য দিয়ে ১০০ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির কারণে বিশ্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট দুর্যোগও বাড়ছে। দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা ও দৈনন্দিন আবহাওয়া বার্তা জানতে মোবাইলে ‘১০৯০’ নম্বরে টোল ফ্রি সার্ভিস চালু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কৃষি-আবহাওয়া পূর্বাভাস ও পরামর্শ সেবার মান উন্নয়নে সাতটি নতুন কৃষি- আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপনসহ কৃষি- আবহাওয়া বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করেছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে পাঁচটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার, ৯টি ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র এবং ১৪টি নদীবন্দরে নৌ-দুর্ঘটনা প্রশমনের লক্ষ্যে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে তিনটি স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন। দুটি আধুনিক ডপলার রাডার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। দেশের ১৩টি উপকূলীয় জেলায় স্যাটেলাইট টেলিফোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গৃহীত এসব পদক্ষেপ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখছে।
এভাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কর্মকাণ্ডের আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড ও স্বীকৃতি বয়ে আনছে। জলবায়ু-সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের অ্যাওয়ার্ড ছাড়াও শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে সম্মানিত করেছে এবং ফ্রান্সের একটি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিপ্লোমা প্রদান করেছে।
এসবের বাইরেও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড, শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা সম্মানিত করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন একটি খুবই কঠিন সমস্যা, যা সমগ্র বিশ্বকে প্রভাবিত করছে। বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, যানবাহন, শিল্প এবং মানব ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে এটি আরও খারাপ হয়ে চলেছে। জলবায়ু-প্ররোচিত ঘটনাগুলোর ক্রমবর্ধমান সমস্যাগুলো মোকাবিলা করা প্রয়োজন, অন্যথায় বিশ্বকে মারাত্মক পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক তাপমাত্রা, হিমবাহ গলনের ফলে সৃষ্ট দূষণ, বায়ুদূষণ এবং সম্পদের সংকটের ক্ষেত্রে বিশ্ব অনেক সমস্যা দেখেছে।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সঠিক পদক্ষেপ না নিলে ৮০ বছরে জলবায়ু পরিবর্তন প্রায় ৮ কোটি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেবে। অপরদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২১ কোটি ৬০ লোককে বাস্তুচ্যুত করতে পারে, এর মধ্যে ৪ কোটি এককভাবে দক্ষিণ এশিয়ার। বাংলাদেশে আমাদের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ উপকূলীয় অঞ্চলে বাস করে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার কারণে এই বিশাল জনগোষ্ঠী ঝুঁকিতে রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যারা বাস্তুচ্যুত বা আটকে পড়েছেন, তাদের মৌলিক পরিষেবা, সামাজিক সুরক্ষা ও জীবিকার বিকল্পগুলোয় প্রবেশাধিকার থাকা দরকার। তাদের আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের ওপর বিরূপ প্রভাবগুলোও একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতিতে মোকাবিলা করা দরকার।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ, ঘন ঘন বন্যা ও প্রবল ঘূর্ণিঝড় তাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি (ফোর্সড ডিসপ্লেসমেন্ট) এর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। এ ধরনের স্থানচ্যুতি আমরা যা ভাবি, তার পচয়ে দ্রুতগতিতে ঘটছে। অতএব, আগামী দিনে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের এই পর্যায় চলতে থাকলে, বিশ্ব মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং অষ্টম বৃহত্তম জনবহুল দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ বিপজ্জনক প্রভাবের সম্মুখীন হবে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, মানবগতিশীলতার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আন্তর্জাতিক আলোচ্যসূচিতে উচ্চস্থান দেয়া উচিত।
বাংলাদেশ বিষয়টির কার্যকর সমাধানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে আইওএম এবং অন্য অংশীদারদের সঙ্গে একত্রে কাজ করছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জনগণের আশা ‘আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা মোকাবিলার বিভিন্ন কর্মসূচি এবং সার্বিকভাবে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে।’

ড. অরুণ কুমার গোস্বামী : সাবেক চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়