‘আমরা একাত্তর’ : একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি দাবি

আগের সংবাদ

ভোটের মাঠে ফিরলেন যারা : আপিল শুনানির প্রথম দিন > প্রার্থিতা ফিরল ৫৬ জনের > বাতিল-৩২ > পেন্ডিং-৬

পরের সংবাদ

মানবাধিকার দিবস ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের প্রায় সব রাষ্ট্র প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘের নির্দেশনা অনুসারে মানবাধিকার দিবস পালন করে থাকে, যা ১৯৪৮ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা ছিল রাষ্ট্রসংঘের অন্যতম অঙ্গীকার। এই দিনটি ‘বিশ্ব মানবাধিকার দিবস বা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে ১৯২টি রাষ্ট্র পালন করে। এ সংক্রান্ত জাতিসংঘের সনদের ব্যাপারে উল্লেখিত রাষ্ট্রগুলো একাত্মতা ঘোষণা করেছে। নানা আয়োজন ও কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিত হলেও এবার এই দিনটি যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হচ্ছে। এমন একটি প্রেক্ষাপটে এই দিবসটি পালিত হতে যাচ্ছে, যখন সমগ্র বিশ্ব একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।
কালপরিক্রমায় আজ সমগ্র বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার চরম হুমকির সম্মুখীন। বিভিন্ন রাষ্ট্রে ক্ষমতালিপ্সু হিংস্র দানবগোষ্ঠীর আধিপত্য বিশ্বের বহু রাষ্ট্রে পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা ও জাতিগত নিধন অব্যাহত রেখেছে। গণতন্ত্রের লেবাসে পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ অনেক দেশে প্রতিনিয়ত হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রেখেছে। মানবাধিকারের তথাকথিত ফেরিওয়ালারাই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসহনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। ইসরায়েল অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে আজ নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে মানবাধিকার চরম বিপর্যয়ের মধ্যে নিপতিত, যার গডফাদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার। সম্প্রতি বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা করে যুদ্ধ বিরতির ঘোষণা সত্ত্বেও সহস্রাধিক নিরীহ মানুষের সঙ্গে অন্তঃসত্ত্বা নারী-শিশুদের ইসরায়েলিদের জিঘাংসার শিকার হতে হয়েছে এবং আজও হচ্ছে। ইসরায়েল অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে অব্যাহত বর্বরোচিত বোমা হামলা এবং শিশু-নারী হত্যা মানবতার চরম লঙ্ঘন।
মিয়ানমারেও সামরিক জান্তা মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে, যা ক্রমেই আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সেখানকার সামরিক জান্তা তাদের নাগরিকতা বাতিল ঘোষণা করে জাতিগতভাবে তাদের নির্মূলের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, যা বিশ্ববাসীর অজানা নয়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের মাতৃভূমিতে অমানবিক বৈষম্য ও সংখ্যাগুরু উগ্র বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সহিংসতার ভয়াবহ চিত্র বিশ্ব বিবেকের দাবিদার রাষ্ট্রগুলোর দৃষ্টিগোচরে আসছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না।
মানবাধিকারের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে। ২০২১ সালে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারজনিত কারণে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যথাক্রমে- ব্রাজিলে ৪৯ হাজার ৪২৬, যুক্তরাষ্ট্রে ৩৭ হাজার ৩৮, মেক্সিকোতে ২২ হাজার ১১৬ জনের। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী নারীর প্রতি সহিংসতার ক্ষেত্রে প্রথম ৩টি দেশ হচ্ছে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা। উল্লেখিত দুটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত রাষ্ট্রগুলোর চেয়ে যথেষ্ট উন্নত।
বাংলাদেশের ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও তাদের মতাদর্শের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ জামায়াত এবং অতি বামপন্থি কতিপয় রাজনৈতিক দলের ডাকা হরতাল-অবরোধের নামে সহিংসতায় সাধারণ মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সংবিধানকে উপেক্ষা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন তথা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে যানবাহন-মালবাহী ট্রাকে অগ্নিসংযোগ, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ফলে মধ্যবিত্তরা সহায় সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে, সাধারণ মানুষ মৃত্যুবরণ করছে, অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। নিম্ন আয়ের খেটে-খাওয়া মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। সর্বোপরি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে হিংসাত্মক আন্দোলনে মানবাধিকার চরম বিপর্যস্ত ও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধীরা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হলে গণতন্ত্রের নামে চলমান সহিংসতার হোতারাও মানবতাবিরোধী। দেশ ও জাতির উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার বৃহত্তর স্বার্থে, সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা এবং সর্বোপরি মানবাধিকার অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে রাষ্ট্রকে সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। এটিই হোক বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে দেশ ও জাতির অঙ্গীকার।

হাসান-উজ-জামান : লেখক ও মহাসচিব,
মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়