ফৌজদারি আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান চ্যালেঞ্জ করে রিট

আগের সংবাদ

রাতারাতি ডাবল সেঞ্চুরি : ফের টালমাটাল পেঁয়াজের বাজার > অভিযানে নেমেছে ভোক্তা অধিদপ্তর > দেশি পেঁয়াজ হাওয়া

পরের সংবাদ

তারল্য সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজুন : ৪০ ব্যাংকের টাকা ধার

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

খবরে প্রকাশ, দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ৪০টি ব্যাংকই নগদ টাকা ধার করে চলছে। গত বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিলাম থেকে এই ব্যাংকগুলো দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে টাকা ধার নেয়। সাম্প্রতিক সময়ে একসঙ্গে এত বেশি ব্যাংকের টাকা ধার করার নজির নেই। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, আমানতের ধীর প্রবৃদ্ধি ও ঋণ আদায়ের ধীরগতি ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের বেশির ভাগ ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। ফলে ব্যাংকগুলো ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছে। এছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমেছে। আস্থার সংকটে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে হাতে রাখছে অনেকে। তাছাড়া বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মোটা অঙ্কের জমা টাকা তুলে নেয়ায় অনেক ব্যাংকে তারল্যে টান পড়েছে। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মূল ভূমিকায় নামতে হবে। বুধবার এসব ব্যাংকসহ দুটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) রেপো ও তারল্য সহায়তা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ২৩ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা নিয়েছে। টাকার পরিমাণের দিক থেকেও এই অর্থ সাম্প্রতিক সময়ে একদিনে সর্বোচ্চ। এর বাইরে গত বৃহস্পতিবার কল মানি মার্কেট থেকেও ৬ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা ধার নিয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক। ফলে ব্যাংকগুলোর ধারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্ব অর্থনীতির নানা সংকট দেখিয়ে ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব সুযোগ নিয়ে ব্যাংকগুলোর অনেক বড় বড় গ্রাহক বছরের পর বছর ঋণ বাড়াচ্ছে, কিন্তু টাকা ফেরত দিচ্ছে না। আবার অনেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এবং নানা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করে দিয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংক থেকে যেভাবে টাকা বেরিয়েছে সেই হারে ফেরত আসছে না। অর্থনীতি ও উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলার খবর পুরনো। চরম অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। ব্যবসা পরিচালনার নামে দেশের তফসিলি ব্যাংক থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা নিয়ে হজম করে ফেলেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। যেহেতু ব্যাংকিং খাতের টাকা জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের আমানত, তাই এ খাতের দুর্বৃত্তদের কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার অবকাশ নেই। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক দলের নেতারা আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ব্যাংকের পরিচালকরা অনেক সময় প্রভাব বিস্তার করে ঋণ অনুমোদন করে। অনেক সময় যথাযথ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান না করে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করা হয়। এসব ঋণ সময়ের ব্যবধানে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতির এবং সমৃদ্ধির উজ্জ্বল চিত্র আমাদের উল্লসিত করলেও আমাদের সব উচ্ছ¡াস থেমে যায় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির অঙ্ক দেখলে। দেশের ব্যাংক খাতে সংকটের বর্তমান প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য, সরকারি এবং বেসরকারি দায়িত্বকে পুনর্জীবিত করার জন্য সুশাসন শব্দটি এখন গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে হলে প্রথমেই ঋণখেলাপিসহ প্রতিটি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা-পরিচালকদের সাজা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের সম্পদ জব্দ করে জনগণের শ্রম-ঘামের আমানত উদ্ধার করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়