প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
শিশুশ্রম রোধে সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ যেন কাজে আসছে না। দিন দিন যেন শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। দেশে বিপজ্জনক ও নিকৃষ্টতম শিশুশ্রম বিদ্যমান। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপের তথ্যমতে, দেশে এখন শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ১৭ লাখ ৭৬ হাজার। তাদের বয়স ৫ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। এদের ১০ লাখ ৬৮ হাজারই ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে যুক্ত। গতকাল ভোরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধে সরকার ২০১০ সালে নীতিমালা প্রণয়ন করে। সেই সময়ে ২০১৬ সালের মধ্যে দেশ ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম মুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। পরে তা ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর মধ্যেও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধ না হওয়ায় নতুন করে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। বারবার সময়সীমা বাড়িয়েও সরকারের শিশুশ্রম মুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি উদ্বেগের। রাষ্ট্র, সমাজ ও আমাদের সবার দায়িত্ব শিশুদের অধিকার রক্ষা করা। গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে শিশুদের নির্যাতনের খবর আমরা পাই। কর্মক্ষেত্রে শিশুরা শিকার হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের। এসডিজির অন্যতম লক্ষ্য হলো, কেউ পেছনে থাকবে না। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে অবশ্যই শিশুশ্রম বন্ধ করা প্রয়োজন। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিশু শ্রমিক আছে আমাদের মতো এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে। শিশুশ্রম নিরসনে ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত একটি লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। ২০২২ সালের মার্চে এডুকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এডুকো) প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে শিশুশ্রম বেড়ে ৮৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে প্রায় ৫৬ শতাংশ শিশু শ্রমিক সংসারে বাবা-মাকে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন কাজ করেছে। পরিবারের আর্থিক দুরবস্থা কাটাতে না পারায় ৪৬ শতাংশ শিশু শ্রমিক স্কুলে ফেরেনি। বাংলাদেশ জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন (এসডিজির) লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম দূর করতে চায়। কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জনে আমাদের প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ শ্রম আইনে নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে, ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে কাজে নেয়া যাবে না। ১৪ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত কাজে নেয়া যাবে, তবে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নেয়া যাবে না। আর শিশুদের জন্য ৩৮ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নেয়া নিষিদ্ধ করা হয়। শিশুশ্রম হলো সামাজিক শোষণের দীর্ঘস্থায়ী এক হাতিয়ার। যে কোনো দেশে শিশুশ্রমকে, সে দেশ উন্নয়নে কতটা পিছিয়ে দেয় তার নির্দেশক হিসেবে ধরা হয়। তাই শিশু অধিকার নিশ্চিত ও শিশুশ্রম বন্ধ করতে আমাদের সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। শিশুশ্রম রোধ করতে হলে শিশু শ্রমিকদের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে। শিশুশ্রম নিরসনের মতো এত বড় কাজ হয়তো শুধু সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য মিডিয়া, সুশীল সমাজ, শিক্ষাবিদসহ সমাজের সব স্তরের নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।