রুহুল কবির রিজভী : দলছুটদের দিয়ে নতুন দল বানাচ্ছে সরকার

আগের সংবাদ

তারুণ্য অভিজ্ঞতা স্বচ্ছতা : ২৯৮ আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ

পরের সংবাদ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গতিশীল হোক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর বাড়তি চাপ কমাতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিভুক্ত কলেজসমূহের মানোন্নয়ন করার উদ্দেশ্য সামনে রেখে। দেশের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচ্চশিক্ষা মূলত এই বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিভুক্ত সরকারি এবং বেসরকারি কলেজ সংখ্যা ২ হাজার ২৭৪টি। এই কলেজগুলোর মাধ্যমে সারাদেশের ৩৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়। বিশ্ববিদ্যালয়টি ৩০ বছর পেরিয়ে ৩১ বছরে পা দিয়েছে। তবে চোখে পড়ার মতো তেমন কোনো দৃশ্যমান উন্নতি নেই বললেই চলে। ফলে যেই প্রত্যাশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তার সঙ্গে প্রাপ্তি যেন মেলে না। শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য এখন পর্যন্ত নেই পর্যাপ্ত ক্লাসরুম বা পরীক্ষার হলরুম সুবিধা। এমনকি অধিভুক্ত অধিকাংশ কলেজেই শিক্ষক ঘাটতি রয়েছে; ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের নানাভাবে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
২০১৮-১৯ সেশনে যখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে ভর্তি হই, তখন সেশনজট অনেকাংশে কমে গিয়েছিল। আর এ প্রসঙ্গেই ২ মার্চ ২০১৯ তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এমন একটি মন্তব্য করেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এখন দ্রুতগামী ট্রেন বা দ্রুতগামী আন্তঃনগর ট্রেন’। যা কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় যখন দেখেছিলাম, তখন চোখ দুটো চকচক করে উঠেছিল। এই সংবাদ দেখে আনন্দিত হয়েছিলাম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্স ৪ বছর মেয়াদি একটি কোর্স। সে হিসাবে ২০২২ সালে স্নাতক পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা; কিন্তু করোনা মহামারির জন্য তা আর সম্ভব হয়নি। তবে ঢাকা, রাজশাহী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে সেশনজট কমিয়ে আনতে নানারকম উদ্যোগ নিয়ে সেশনজট কমিয়ে আনে এবং ২০১৮-১৯ সেশনের স্নাতক (সম্মান) কোর্স শেষ করে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কোভিড পরবর্তী সময়েও আগের মতোই মন্থর গতিতে কার্যক্রম চালানোর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি সেশনজটের কবলে পড়ে।
সেশনজটে পড়ার কারণে একই সেশনের বন্ধুরা যখন স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তর করছে বা চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর বিপরীতে আমরা কবে স্নাতক শেষ করতে পারব, তা নিয়েই চিন্তা করছি। চার বছরের স্নাতক কোর্স দীর্ঘ ৫ বছর পেরিয়ে ৬ বছরেও শেষ না হওয়া এবং স্নাতক শেষ মুহূর্তে আসার কারণে না পারছি এটা ছাড়তে; আবার না পারছি এই স্নাতকের বোঝা বয়ে বেড়াতে। ফলে স্নাতকটাই যেন গলায় কাঁটার মতো বিঁধে আছে! ৪ বছরের জায়গায় ৬ বছর বা এর বেশি সময় নেয়ার ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে অন্তত দুই বছর হারিয়ে যাবে। এর দায় কে নেবে?
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট সমস্যা ছাড়াও আরো বেশকিছু সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম, নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর ২১০ দিন ক্লাস অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড পরীক্ষা, ইনকোর্স পরীক্ষাসহ বিভিন্ন কারণে গড়ে মাত্র ৫০ দিনের বেশি সময় ক্লাস নেয়া হয় না। এর দায় কিছুটা অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের থাকলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েরও এই দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস বা পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়েও নানা মহলের মন্তব্য রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, কিছু পরীক্ষা ভালো হওয়ার পরও পরীক্ষার ফলাফল খারাপ আসে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এত বড় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সংকট হয়তো একেবারে নিরসন করা যাবে না। তবে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে এটাই কামনা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংকট নিরসন করবে এবং সত্যিকার অর্থেই দ্রুতগামী ট্রেনের মতো একটি বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দেবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তবেই শিক্ষার্থীদের সব প্রত্যাশা পূরণ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সুখ্যাতি নিয়ে এগিয়ে যাবে।

বরকত আলী : শিক্ষার্থী, দিনাজপুর সরকারি কলেজ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়